নিপু চৌধুরীর সেই তিন মেয়ের তারপর কী গতি হয়েছিলো জানিনা । তবে ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আমাদের বাল্যকালীন ভাললাগার পরিবেশটাও কেমন ভয়ার্ত হয়ে উঠেছিলো ।
তবে আমাদের বাড়ির প্রাত্যাহিক সন্ধ্যেবেলার বারান্দার সভাতেও এই আলোচনা উঠে এলো । অবিবাহিতা কন্যাদের নিয়ে বোঝা গেলো দুশ্চিন্তাটা সবচেয়ে বেশী । অবিবাহিত কন্যা মানে রাতে ঘুম নেই ।
অবিবাহিত কন্যা মানে পুতুল খেলা ছাড় । অবিবাহিত কন্যা মানে জামার ঝুল আরো নামাও । অবিবাহিত কন্যা মানে ইস্কুলতো বন্ধই, এখন দুমদাম বাইরের লোকের সামনে চলে আসা চলবেনা । অবিবাহিত কন্যা মানে ছেলে খোঁজো,বয়স যাই হউক,হোক না দোজবর---। অবিবাহিত কন্যা মানেই পার করো তারে ।
কোথায় পার হবে মা---আমার প্রশ্নের উত্তরে মা উত্তর দিয়ে ছিলেন 'যমদুয়ারে' ।
অবশ্য তারও অনেক পরে জেনেছি যম কি বা যমদুয়ার কি । বুঝেছি মা'র এই উত্তরের মর্মার্থ ।
এইসব ছোটো ছোটো ঘটনাক্রমগুলো নিয়ে বাড়ির বয়স্কদের তৎকালীন অবস্থাটা এখন মনে হয় যেন ছিল একটা সর্বাত্মক সহায়হীন অবস্থা । যদিও সব আছে--রাস্ট্র,প্রশাসন,পুলিশ,মিলিটারি ।
কিন্তু আসলে কিছুই নেই । সহায়তা চাইলে বিপদ যেন আরো বেশী । আর এই অবস্থায় প্রতিটি রাত যেন একেকটা বিপজ্জনক সেতু । নিরাপদে ভোর হওয়া যেন নতুন জীবন ।
এই সেদিন পর্যন্ত ভীষণ রাগী বাবা, কিছুটা কম রাগী মা', অথবা প্রিয় ঠাম্মা --সবাই যেন কী এক ভয়ে প্রায় আমাদের মত ছেলেমানুষ হয়ে গেছে ।
কথায় কথায় কাঁদে, হা হুতাশ করে । যদিও এসবের আমরা কীই বা বুঝি তখন । তবু এই আমরা ছোটোরাই যেন তাদের সাথী হয়ে গেছি ।
কোথা থেকে যে খবর আসতো কে জানে----তারপরই কথাবার্তায় শুরু হতো, তাতে মেশানো থাকতো আরো গভীর কান্না, যেন --সব নিয়ে যাও, শুধু আমাদের মেয়েদের ছেড়ে দাও । ওদের কিছু করোনা ।
মান সম্পত্তি সব ফেলে রেখে চলে যাব,শুধু পরিবারটি নিয়ে চলে যেতে দাও ।
ষাটের দশকে যখন অবস্থাটা এমন, ভাবনাটা যখন এতটাই প্রাণান্তকর তখন দেশটার অবস্থটা কেমন একটু দেখা যাক্ । ----------(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।