আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আঁতুর ঘর (৭)



বড়দের ঐ জগৎটা যেখানে দ্রুত চলমান সেখানে ছোটোদের তাল মেলাতে বেশ কষ্ট । তবু দেশময় যে অনিশ্চয়তা নিরাপত্তাহীনতা তা একসময় ছোটোদেরও গ্রাস করে ফেলে । পড়াশুনা নেই । তবু লন্ঠনের আলোয় গোল হয়ে ছোটো ভাইবোনদের সঙ্গে বসতে হয় । কারণ বাইরে বড়রা কথা বলছে ।

ওখানে যাওয়া বারণ । নিঃশব্দে শুধু বাইরের বারান্দার কথা শোনা । কান খাঁড়া করে নানা মারাত্মক কথাবার্তা শোনা । তাও আবার রাতে ! একসময় আমাদের ভুতের ভয় ছিল । ছিল চোর ডাকাতের ভয় ।

এখন যে ভয় তৈরী হয়েছে তার নাম জানিনা । তবে এটা জানি যে এই ভয়ে মরে যেতে হবে । কারণ আমাদের মেরে ফেলা হবে । কারণ আমরা হিন্দু । আমাদের মারবে কারা, না মুসলমানরা ।

মুসলমান বলতে কারা, আমাদের আধিয়ার রজব আলী সাবুদ আলী , আমার ক্লাশে ফার্ষ্ট হয় হাজেরা খাতুন, সহপাঠি শামসুদ্দিন,পিয়ারা---ধুর এরা না । তখন অবধি চাচা বলতে সাবুদ আলী রজব আলীকেই জানি । কাকা জেঠা পিসার মত চাচাও আমাদেরই কেউ । বিশাল চেহারার দুই চাচাকে দেখে কোনোদিনইত ভয় লাগেনি । তারা মুসলমান এটা বোঝার বয়স হওয়ার পরেও না ।

না এরা না । হ্যাঁ, সত্যিই এরা না । এরা যেমন আমাদের ভয়ের কথা জানতো তেমনি জানতো আমাদের কয়েকজনের দেশ ছাড়ার গোপন প্রস্তুতির কথা । সাধারণতঃ রাতে কখনো চাচাদের আমাদের বাড়ীতে দেখা যেতোনা । কিন্তু ঐসময় দেখতাম চাচারা অনেক রাত পর্যন্ত বাড়ীতে থাকতো ।

বারান্দার ঐ পরামর্শ সভায়ও যোগ দিত কখনো কখনো । তবে অন্য গাঁ'এর আলতাফ স্কুলে আমাদের ক্লাসে ভর্তি হওয়ার পরপরই একদিন ঘোষনা করে দিল যে তরা হিন্দু,তরার দেশ হিন্দুস্থান, তরার অইহানে যাওন লাগব ---আমরা মুসলমান, এইডা আমরার দ্যাশ । এই শুনে আমরা বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম । আলতাফ শহরের স্কুল থেকে গ্রামে এসেছিল । সে পোশাকেআসাকে পড়াশুনা খেলাধূলায় অনেক এগিয়ে ।

এতদিন আমরা জানতাম মুসলমান কেউ টিউবওয়েল পাম্প করলে হিন্দু কেউ জল খাবেনা । আলতাফ এসে ঠিক করে দিল হিন্দুরা পাম্প করলে মুসলমানরাও খাবেনা । এরকম আরো অনেক কান্ড ঘটিয়ে আলতাফ একটা সাড়া ফেলে দিল । বিষয়টা হেডমাষ্টার শচীন্দ্রবাবুর কানে যেতে আলতাফ একটু ঠান্ডা হলো । অবশ্য আলতাফের আরেকটা সুবিধা ছিলো যে তার দাদা শামসুদ্দিন আমাদের স্কুলেরই 'মাস্টমশয়' ।

খুব সুদর্শন । স্কুল ছুটির পর উনি বাড়ি না গিয়ে স্কুল সংলগ্ন নিপু চৌধুরীর বাড়িতে রাত পর্যন্ত একা একা আড্ডা দিতেন । একে মুসলমান তায় মাষ্টার--বাড়ির কারোর সাহস হয়নি তাকে কিছু বলার । পরবর্তীতে শুনেছি তিনি নাকি বার দুয়েক চা খেতেন । আর প্রতিবারেই বাড়ির কাজের লোক এসে চা দিয়ে যেতো ।

এতে একদিন বাপের বয়সী নিপু চৌধুরীকে এমন শাসিয়ে ছিলেন এবং হুমকি দিয়েছিলেন এই বলে যে বাড়ির উপযুক্ত তিনটি মেয়েকেই নাকি তিনি শাদি করে দেখিয়ে দেবেন । এর প্রতিক্রিয়া হয়েছিলো ঠিকই,কিন্তু তা খুবই নিচু গলায় । ---------------(চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।