অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
আজ সকালটা ভালোই গেলো বলতে হবে। এমনিতেই সকাল বেলা বাসার দরজা খুলে রাস্তায় নেমেই কোনো রিকশাকে হাতছানি দিয়ে- এ্যাঁই যাবে বললেই প্রথামোতাবেক প্রত্যুত্তর আসবে না যাবো না। রিকশা খালি বসে থাকবে কিন্তু কেউ কোথাও যেতে রাজী নয়- এমন সকালই বেশীর ভাগ দিন আসে। কপালগুণে কোনো কোনো দিন অন্তত আগ্রহী হয়ে জায়গার নাম জানতে চায়। অসম্ভব একটা ভাড়া চেয়ে বসে- তারপর এমন একটা ভাব নিয়ে তাকায় - শালা ফকিরের বাচ্চা সাত সকালে হকারের মতো রিকশা ভাড়া নিয়া দরদাম শুরু করলো কেন।
সেই দিক থেকে আজকে সকালটা ব্যতিক্রমই বলা যায়। সাত সকালে দরজা খুলেই প্রথম রিকশাকে হাতছানি দেওয়া মাত্রই থামলো সামনে এসে- উঠেন।
ব্ল্যাঙ্ক চেক হাতে নিয়ে বসে আছি মনে হলো, এখন একে নিয়ে যেখানে ইচ্ছা সেখানেই যাওয়া যায়। তার কাছে সব দুরত্বই সমান, সে যাবেই। তবে আমার আপাতত বাসায় ফিরতে হবে, সারা রাত বন্ধুর বাসায় কাটিয়ে ফিরছি, ফিরতে হবে আরামবাগ দিয়েই।
সামনে অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে- ভাবলাম বিজয় দিবস, বোধ হয় বিজয় দিবসের র্যালি, মাথায় বাঁধা সবুজ পাগড়ী দেখেও মনে হয় নি অন্য কথা। ভাবলাম হয়তো পতাকা বেঁধেছে, ইদানিং জাতীয় দিবসগুলোতে এই ফ্যাশানের চল হয়েছে, গালে , কপালে, মাথায় পতাকা আঁকা, লাল সবুজ জামা পাঞ্জাবী পড়ে অতিমাত্রায় দেশপ্রেমিক হয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো।
তবে আজ বাবে রহমত, আওলাদে রসুল সৈয়দ এমদাদের জন্মদিন ছিলো। তেমন বিখ্যাত কেউ নয় ইনি, তবে দেওয়ানবাগী পীর সম্ভবত- তিনি হয়তো প্রয়াত, হয়তো তার কোনো বংশধর এখন গদিনশীন পীর। এবং এই পীরের ভক্তরাও কোনো না কোনো ভাবে পীরের সমর্থন করা রাজনৈতিক দলের সদস্য কিংবা স্বেচ্ছাসেবী।
সুতরাং তারা বিজয় দিবসে ঘটা করেই আওলাদে রাসুলের জন্মদিন পালন করতে পারে। এমন কি ১২ই রবিউল আউয়ালের পরে এটাই যে স্থানীয় মুসলমানদের জন্য বিশাল এক আনন্দের দিন এমনটাও দাবি করতে পারে। তবে ফাতরামি মনে হলো এই কারণেই যে, এই সব পীর সাহেবদের জন্মদিন আগে হিজরী ক্যালেন্ডার মেনে পালিত হতো। তাতে পীরবাবার ভক্তেরা বিভিন্ন মৌসুমে আওলাদে রসুলের জন্মদিন পালনের সুযোগ পেতো তবে ইদানিং রোমান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা শুরু করেছে বলেই আজ ১৬ই ডিসেম্বর তার জন্মদিন পালিত হচ্ছে মহাসমারোহে।
মর্নিং শো'জ দ্যা ডে, প্রবাদটা মিথ্যা নয় তার প্রমাণ পেলাম ঠিক সন্ধ্যার মুখে।
মতিঝিল কলোনিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী সভা এবং বিজয় দিবস উদযাপনের প্রক্রিয়া চলছে, অন্যতম শরীক দল বিএনপির মিছিলও সেখানে যাচ্ছে। হাবিবুন নবী সোহেল এখানকার প্রার্থী সম্ভবত। শিবিরের কর্মী ও সাথী ভাইদের অনুরোধ করছি আপনারা সরে গিয়ে মহিলা ও মেয়েদের বসবার জায়গা করে দিন। আপনারা অনুগ্রহ করে মা বোনদের বসবার জায়গা করে দিন।
রাজার বাগ পুলিশ লাইনের সামনে জামায়াতের আওয়াজ পৌঁছে গেছে, সেখান থেকে আরামবাগ, মালিবাগ, চামেলিবাগ, শহীদবাগ, সব দিকেই মাইকে শোনা যাচ্ছে এই আহ্বান।
রাজারবাগ, ঢাকা শহরের অন্যতম একটা যুদ্ধক্ষেত্র যেখান থেকেই প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের সূচনা হয়। ২৫শে মার্চ রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের রাস্তা আর ব্যারাক রক্তে পিচ্ছল হয়ে গিয়েছিলো। বড়ই আশ্চর্য ঘটনা- মাত্র ৩৭ বছর পরেই সেখানে জামায়াতের কর্মীদের আহ্বান শোনা যাচ্ছে, নিস্ক্রিয় পুলিশ ভ্যান পাহারা দিয়ে রাখছে জামায়াতের কর্মীদের।
অবিশ্রান্ত ধর্ষণের অনুভুতি নিয়ে সমস্ত রাস্তা দাঁতে দাঁত চেপে পার হতে হলো। সহিংসতা রাজনৈতিক মতবাদ হিসেবে আমার তেমন পছন্দ নয়, তবে যখন মুজাহিদ, নিজামী, কামরুজ্জামান, আব্দুল কাদের ঠিক এই দিনটাতেই বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানায় তখন অশালীন সত্যটা প্রকাশিত হয়-
৩৭ বছর ধরেই অদৃশ্য শিশ্নে ধর্ষিত হচ্ছে বাংলাদেশ।
৭১ এ যেইসব নারীরা লাঞ্ছিত হয়েছিলো এইসব দালাল বাহিনীর হাতে সেইসব লাঞ্ছিত মেয়েরা বাংলাদেশে অচ্ছুত বিবেচিত হয়েছিলো, কিন্তু এইসব শুয়োরের বাচ্চারা ঠিক রং আর পেখম বদলে বাংলাদেশের মাটিতেই বহাল তবিয়তে টিকে আছে, শুধু তাই নয়, তারা বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা বানীও পাঠায়।
যারা নিহত হয়েছিলো, তারাই বস্তুত ভালো আছে, আমরা মৃত মানুষেরা বাংলাদেশের পথে আর গৃহে শুয়ে বসে সঙ্গম করে ঘোলা চোখে তাদের উদ্ধত উলম্ফন দেখি। আমাদের রক্তে বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ জাগে না।
মানবিকতা ধ্বংস হয়ে গেলে গণধর্ষণও মানুষের উপভোগ্য বিনোদন। আমরা মিছিলের মতো ধাবমান, আমরা বিজয় দিবসে পুনরায় গ্যাং রেপ উপভোগ করি টিকেট কেটে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।