https://sphotos-b.xx.fbcdn.net/hphotos-ash3/1044271_677079348975727_901576309_n.jpg
আমি কয়েকজন বিদেশীকে চিনি। প্রকৃতি যাদের সঙ্গে সবচে নিষ্ঠুর খেলাটি খেলছে।
আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের একটা প্রিয় খেলা ছিল। কাচের বৈয়ামে ভ্রমর ঢুকিয়ে বৈয়ামের মুখ বন্ধ করে দিতাম। তারপর কাচের বৈয়ামটি কানের কাছে ধরে ভ্রমর-সংগীত শুনতাম।
কি অপুর্ব ছিল সেই সংগীত! কিছুক্ষণ ভ্রমরটি সংগীত পরিবেশন করার পর চুপ হয়ে যেত। আমরা বলতাম "ক্যাসেট শেষ হয়ে গেছে। " তারপর সেটা ছুড়ে ফেলে আরেকটা ভ্রমর ধরে বৈয়ামে ঢুকাতাম। আমাদের সংগীত-পিপাসা যতক্ষন না মিটত ততক্ষনই চলত সেই খেলা। একটু বড় যখন হলাম তখন বুঝতে পারলাম আসল ঘটনা কি।
বৈয়ামের ভিতরে অক্সিজেনের অভাবে ভ্রমরটি মারা যেত। আমরা যেই সংগীত শুনতাম সেটা ছিল ভ্রমরের বেচে থাকার আর্তনাদ। ব্যকুল কন্ঠের মৃত্যু-সংগীত।
আমার পরিচিত বিদেশীদের সাথেও প্রকৃতি সেই খেলাটি খেলছে। প্রকৃতি তাদের স্বাভাবিক অক্সিজেন গ্রহনের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে।
অদৃশ্য এক বৈয়ামের ভিতরে তাদের আটকে ফেলেছে। একটু খানি অক্সিজেনের জন্য তাঁরা যখন ছুটা-ছুটি করে তখন হয়ত আমার ছোটবেলার খেলার আনন্দের মত প্রকৃতিও সেই আনন্দ অনুভব করে। পৃথিবীতে একটু বেশীদিন বেচে থাকার জন্য তাদের সেকি আপ্রাণ প্রচেষ্টা! দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা সাথে করে একটা অক্সিজেন সিলিণ্ডার বয়ে বেড়াতে হয় তাদের। একটা সিলিণ্ডারের অক্সিজেন কমে আসলেই আরেকটা কেনার জন্য দোকানে ছুটতে হয়।
ব্যপারটা আমি যখন আমার ক্ষেত্রে চিন্তা করি ভয়ে-আতংকে শিউরে উঠি।
কোন কারণে যদি অক্সিজেন সিলিণ্ডারে গোলমাল দেখা দেয়। অথবা নির্দিষ্ট সময়ের আগে যদি সিলিন্ডার খালি হয়ে যায়! তখন কি হবে! কয়েক মিনিটের অক্সিজেনহীনতায় নির্ঘাত মৃত্যু।
_______________________________________________
আমরা যারা স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছি সেটা আমাদের কত বড় পাওয়া তা কখনোই বুঝিনা। কেন বুঝিনা? কারণ এখনোও পৃথিবী নামক গ্রহটিতে অক্সিজেনের পর্যাপ্ততা আছে। বেচে থাকার পরিবেশ আছে।
কিন্তু তা বেশীদিন থাকবেনা। সভ্যতা নামক হিংস্রতা আমাদের সেই বাসযোগ্য পৃথিবীটাকে দিনে-দিনে বসবাসের অযোগ্য করে ফেলছে। তার জন্য দায়ী পুঁজিবাদী সংগঠনগুলো।
আমাদের বাংলাদেশীদের শত-জনমের পুণ্যের ফসল সুন্দরবন। অনেকে এটাকে বাংলাদেশের ফুস-ফুসও বলে।
দক্ষিন-এশিয়ার এই বনাঞ্চলটা এই এলাকার অক্সিজেনের চাহিদা মেটানোর পাশা-পাশি অসংখ প্রাকৃতিক দোর্যোগের ধ্বংস-যজ্ঞের হাত থেকে আমাদের বার-বার রক্ষা করেছে। বনের নিরিহ গাছগুলো বাতাসের কার্বণ-ডাই-অক্সাইড হজম করে পরিবেশের ভারসম্য বজায় রাখছে। হাজার-হাজার জীব-জন্তু ছাড়াও অসংখ মানুষ এই বনকে কেন্দ্র করে বেচে আছে।
আর আমরা তার কী প্রতিদান দিয়েছি? বছরের পর বছর ধরে অবৈধ ভাবে সে বনের গাছ কাটছি। পশু শিকার করছি।
আমাদের সেই ফুস-ফুসের উপরে সবচেয়ে বড় আক্রমনটি হতে যাচ্ছে রাষ্ট্রিয় ভাবে। সরকার ভারতের সাথে যৌথভাবে সেখানে কয়লা-পোড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে। বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করে দিবে বাংলাদেশ। আর নিকষ-কালো অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজণ্মকে। কিন্তু সরকার এটা কেমন করে করতে পারে এটাই আশ্চর্য বিষয়।
সরকারতো কোন পুঁজিবাদী সংগঠন না!
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে যদি মাত্র ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। তাহলে আমরা ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের সঙ্গে যে ক্ষতিকর উপাদানগুলো পাব।
•৩৭ লক্ষ টন কার্বণ-ডাই-অক্সাইড!
•১০ হাজার দুইশত টন নাইট্রোজেন অক্সাইড!
•২২০ টন হাইড্রো-কার্বন!
•৭২০ টন কার্বন-মনোক্সাইড!
•১৭০ পাউণ্ড মার্কারী!
•২২৫ পাউন্ড আর্সেনিক!
•১১৪ পাউণ্ড লেড! *(সূত্র: আয়েশা মেহের আপুর স্ট্যটাস। )
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে- সেখান থেকে নির্গত ক্ষতিকর উপাদান এবং কাঙ্খিত বিদ্যুৎ দুটো পাশা-পাশি রেখে লাভ-লোকসানের হিসাব করলে দেখা যাবে লাভতো কিছু হচ্ছেইনা বরং যে ক্ষতি হবে তা কখনোই পূরণ করা সম্ভব হবেনা। তাহলে কার জন্য এই উদ্যেগ? কার স্বার্থে পরিবেশ ধংসের এই নীল-নকশা?
বিবেচনা আপনার।
প্রতিবাদ করবেন নাকি ঘরে বসে থাকবেন।
(শাহজাহান আহমেদ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।