তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে।
ঈদ উপলক্ষ্যে ছুটি না বলে বছরে ছুটিগুলো শেষ করতে হবে ভাবনায় ঈদের দিনটি বেছে নিলাম। শনি,রবি সাপ্তাহিক ছুটি। সোম, মঙ্গল ছুটি নেওয়াতে বেশ বড়ো একটি ছুটি পেয়ে গেলাম। ছুটির দিনগুলোতে যে ভালোভাবে লম্বা সময় করে ঘুমাবো সেই অভ্যাস অনেকদিন থেকে নেই।
বরং ছুটির দিন তাড়াতাড়ি ঘুমের ছুটি। প্রতি ঈদে কিছু তৈরী করার ইচ্ছে থাকে। এই ঈদে চটপটি আর আইরিন সুলতানা'র রেসিপি থেকে মিষ্টি আইটেম বানালাম। মা সন্দেশ সহ অনেক কিছুই বানালেন। যদিও মিষ্টি বাসায় মোটামুটি ফ্লপ।
মা-বাবা রবিবার আরাফাত ডে উপলক্ষ্যে রোযা রাখার প্লান করেছেন। ছুটি দেখে নিজেও রাখার ইচ্ছে প্রকাশ করলাম। দিন ছোট, ডায়েটের পাশাপাশি সওয়াবেরও কাজ। এক ঢিলে যে কতো পাখি মারা।
দুই সপ্তাহ পর স্কুল ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে লম্বা ছুটি হবে।
এই সময়ে স্কুলগুলোতে পরীক্ষার চাপ থাকে বেশি। ছোটবোন স্কুল পরীক্ষার জন্য দৌড়ের উপর। বাসায় ঈদের কোন আমেজই উপস্হিত নেই। অন্যান্য রাতের মতোই ঈদের রাত।
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা নামাযে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন উনি ঘুম জড়ানো চোখে সালাম আর ঈদ মোবারক দিয়ে স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
খুব ঠান্ডা পড়েছে। সকালে প্রায় সময়ই তাপমাত্রা মাইনাস থাকে। সাথে বোনাস হিসেবে বৃষ্টি। কষ্টেসৃষ্টে নামায পড়ে সেমাইয়ের দাওয়াত রক্ষার জন্য অন্য একজনের বাসায় গিয়ে অনেকগুলো চটপটি খেয়ে শপিংয়ের কিছু কম্ম সম্পাদন করে দুপুরের পর বাসায়। ভাই-ভাবী সবাই কাজে ব্যস্ত থাকবে তাই আসতে পারবে না বলেও চলে আসলেন।
বিকেলের খাবার সবাই একসাথে খাবো ভেবে মা অনেক আইটেমই রান্না করলেন। উনাদের সাথে টেবিলে বসে চামচ দিয়ে কিছু নাড়াচাড়া করে উঠে পরলাম।
অফিসের ক্রিসমাস পার্টি ছিলো বিকেল ৫টায়। প্রতি বছর শহরের বাইরে কোন একটি হোটেলে হতো। পার্টি শহরের বাইরে, সাথে ঠান্ডা তাই অন্যান্য বছর এটেন্ড করা হয়নি।
এই বছর একদম অফিসের সাথে ফাইভস্টার হোটেলে। অনেক আগে থেকেই বুকিং করা তাই ইচ্ছে না থাকা সত্বেও যেতে হলো। বস ফোন দিয়ে কোথায় আছি জানতে চাচ্ছে। পার্টি শুরু হওয়ার ১৫ মিনিট পর হাজির হলাম। প্রায় ৫০জনের মতো লোকজন এটেন্ড করেছে।
সবাই শেম্পেনের গ্লাস পূর্ন করে আড্ডায় ব্যস্ত। আমি অরেঞ্জের কি একটি জাপানি ড্রিংস নিয়ে ব্লা ব্লা তে যোগ দিলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই ভারী খাবারের ডাক পড়লো। এতো এতো আইটেমের খাবার। আমি মাছ আর সবজিতেই থেকে মোটামুটি ঘন্টা খানেকের মধ্যে পার্টি শেষ করলাম।
প্লেটে খাবার কম দেখে বস জিঞ্জেস করলো ঘটনা কি? ওর নিজের প্লেটেও খাবার কম। বল্লাম তুমিও তো কম নিয়েছো। বলে, আমার মা বলেছেন, প্লেট ভর্তি করে একসাথে খাবার না নিয়ে বারবার নিয়ে আসা ভদ্র দেখায়। আমিও মুছকি হেসে বল্লাম আমার অবস্হা ভিন্ন। সারাদিন থেকে খেতে খেতে অভারফ্লো চলতেছে।
এখনএসেছি শুধু হাই হেলো বলার জন্য। এখানে থেকে যাবার পর রাতে আরো একটি পার্টিতে এটেন্ড করতে হবে। শুনে ঠাসকি খাইলো। অভয় দিয়ে বল্লাম প্রায় পার্টতেই হালকা সালাদ, সিদ্ধ মাছ, সবজি দিয়েই কাম সারতেছি। শুধু বাসায় ভারী খাবার হয়ে যায়।
পার্টি রাত ১০/১১টা পর্যন্ত চলবে। কোন রকমের ডেজার্টের কাছাকাছি না গিয়ে আমি ৮টার সময় আলবিদা। বিভিন্ন টাইপের শেম্পেন, বিয়ার, মদ দেখে দেশি বন্ধুদের খুবই মিছ করলাম। এইসব জিনিসের জন্য ওদের কতো কষ্ট করতে হয়। আর আমি পেয়েও খাচ্ছি না।
পার্টিগুলো কেন যে সপ্তাহের শেষে করা হয় না। তাহলে অনেক সময় নিয়ে এনজয় করা যেতো।
রাতে ছিলো দেশী পার্টি। ওখানে যে ভারী খাবার হবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাসায় খেয়ে অভ্যাস খুবই খারাপ হয়েছে।
কারো বাসায় গিয়ে কষ্ট করে খাবারগুলো গলা দিয়ে নামাতে হয়। বাসায় সময় নিয়েই খাওয়া হয়। আস্তে করে খেতে থাকলে খাবারের অনেক দোষ-গুন চোখে পড়ে। পার্টিগুলোতে কমেন্ট না করে চুপচাপ খাওয়ার চেষ্টা করি। সারাদিনের খাবারের জন্য শরীরের ওজন এমনিতেই বেড়ে গেছে।
ভারী খাবারের দিকে হাত না বাড়িয়ে আস্তে করে অনেকগুলো সালাদ নিয়ে সবার সাথে রাতের খাবারটা শেষ করে বাসায় আসতে আসতে রাত ১১টা।
পরের দিন বাসায় দাওয়াত। আম্মাজান হরেক রকমের রান্না করেছেন। ডেজার্ট হিসেবে আইসক্রিমের সাথে আমার বানানো সুজির মিষ্টি। চান্সে পাবলিকদের খাইয়ে হালাল করার চিন্তা।
গত সপ্তাহে মাদাগাস্কার-২ দেখা হলো। বেশ মজার কার্টুন। আমি প্রথম পার্ট দেখিনি কেন সেই দু:খে প্রথমটাও দেখে ফেল্লাম। এই রকমের কার্টুনগুলো আসলেই জোশ।
আগামীকাল থেকে আবার দুই সপ্তাহের কাজের ঝামেলা।
তারপর দুই সপ্তাহের ছুটি।
সবাইকে ঈদ মোবারক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।