আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেন্ট মার্টিন্স: পর্যটকদের সচেতনতা প্রয়োজন (৬)

ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিন্স। এ দ্বীপের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে স্বল্প পরিসরে বহু সংখ্যক প্রবাল প্রজাতি দেখা যায়। এছাড়াও এই দ্বীপে অন্যান্য দ্বীপের চেয়ে বেশি প্রজাতির শামুক, ঝিনুক, কড়ি, শৈবাল প্রভৃতি পাওয়া যায়। তবে এসব প্রাকৃতিক সম্পদ মাত্রাতিরিক্ত সংগ্রহের ফলে বর্তমানে দ্বীপটির প্রাকৃতিক ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে। এ দ্বীপের জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ টিকিয়ে রাখার স্বার্থে পর্যটকদের সচেতনতা খুব জরুরী।

এজন্য ঘর সাজানোর জন্য শখের বশে প্রবাল, শামুক, ঝিনুক, কড়ি প্রভৃতি প্রাকৃতিক সম্পদ কেনাকাটা বা সংগ্রহ করা উচিত নয়। সাগরের যে অংশে প্রবাল, শৈবাল, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদির পরিমাণ বেশি, সেখানে সাতার কাটা উচিত নয়। এর ফলে দ্বীপের পরিবেশের ক্ষতি হয় এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। প্রবাল তৈরী হতে অনেক সময় লাগে। ক্ষেত্রবিশেষে একটি প্রবাল গুচ্ছ পরিপূর্ণ রূপ নিতে ১৫ থেকে ২০ বছর সময় নেয় অথচ এটি সাগরের তলদেশ থেকে সংগ্রহ করতে সময় লাগে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট।

এই দীর্ঘ সময়ে গঠিত হওয়া প্রবাল গুচ্ছ মাত্র কয়েক মিনিটে ধ্বংস হয়ে যায়। তাই প্রবাল কেনা থেকে বিরত থাকা এবং সাগরের তলদেশ থেকে প্রবাল আহরণকারীদের প্রতিহত করা উচিত। সমুদ্র সৈকতে কোনো ধরনের আবর্জনা ফেলা উচিত নয়। সিগারেটের প্যাকেট, পরিত্যক্ত অংশ, নষ্ট ব্যাটারি, লাইটার ও বিস্কিট, চানাচুর প্রভৃতির প্লাস্টিকের মোড়ক যেখানে সেখানে না ফেলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা উচিত। যেহেতু সেন্ট মার্টিন্স একটি দ্বীপ তাই এগুলো সম্ভব হলে সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ ত্যাগের সময় সঙ্গে করে নিয়ে মূল ভূখণ্ডে ফেলা উচিত।

প্রাকৃতিক পাথরের আশ্রয়ে প্রবাল গুচ্ছ বৃদ্ধি পেয়ে ও সমুদ্রজাত অন্যান্য পদার্থ বছরের পর বছর জমা হয়ে দ্বীপ গঠিত হয়েছে এবং দ্বীপের পরিধি বেড়েছে। কিন্তু সাগরের তলদেশ থেকে প্রবাল ও পাথর নির্বিচারে সংগ্রহ করা হতে থাকলে দ্বীপের পরিধি বাড়বে না বরং হ্রাস পাবে। তাই প্রবাল ও পাথর সংরক্ষণ করা এবং দ্বীপের অস্তিত্ব রক্ষায় এগিয়ে আসা সবার দায়িত্ব। ভাটার সময় শিলার ওপর চলাচল করা ঠিক নয়। প্রবাল, শৈবালসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ পাথুরে শিলার উপর জন্মায়।

ফলে ভাটার সময় শিলার উপর চলাচল এদের প্রাকৃতিক বাসস্থান নষ্ট করে। তাই এসব অঞ্চলের পাথরের উপর চলাচল না করে শুধু বালুকাময় সৈকতে চলাচল করা উচিত। পলিথিন মোড়ক এবং পলিথিন ব্যাগ অপচনশীল পদার্থ যা মাটি ও পানির প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করে। এ দ্বীপে পলিথিন শপিং ব্যাগের পরিবর্তে চটের বা কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করা উচিত। এ বিষয়ে সরকারের নজর জরুরী।

নৌপথে ভ্রমণের সময় সমুদ্রের পানিকে দূষিত করতে পারে এমন যে কোন ধরনের অপচনশীল আবর্জনা পানিতে ফেলা উচিত নয়। পানির বোতল সমুদ্র তীরে কিংবা পানিতে ফেলা উচিত না। সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম পাড়ায় বিঘ্ন ঘটায় এমন ধরনের কিছু করা উচিত নয়। সন্ধ্যার পর কচ্ছপের ডিম পাড়ার সৈকতে চলাচল করা, টর্চ লাইট জ্বালানো, হইচই করা, গান বাজনা করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা উচিত। উপকূলে ভ্রমণ বা চলাচল করার সময় সামুদ্রিক কচ্ছপ দেখা যেতে পারে।

সে সময় নীরবতা পালন করে পেছন থেকে দেখা, কুকুরের আক্রমণ থেকে কচ্ছপকে রক্ষা করা এবং ফ্লাশ ব্যবহার করে কচ্ছপের ছবি তোলা উচিত নয়। সাগর থেকে উঠে ডিম পাড়ার পর সৈকতে থাকা কচ্ছপের পায়ের ছাপ মোছা উচিত নয়। কেননা এ থেকে গবেষকরা প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। কচ্ছপের ডিম হাতে ধরা উচিত নয়। কেননা ডিম জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে।

কচ্ছপ ভয় পেতে পারে এমন কাজ করা উচিত নয়। ছেড়াদিয়া দ্বীপ এলাকায় নৌ-ভ্রমণের সময় জীবন্ত প্রবালের উপর নৌকা, ট্রলার, স্পিডবোট ইত্যাদি নোঙর করা উচিত নয়। জীবন্ত প্রবালের উপর হাটাচলা না করাই ভালো। সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে এসে হইচই, গান-বাজনা বা মাইক বাজিয়ে শব্দ দূষণ করা উচিত নয়। সাগর পাড়ে কোনো বাজি বা পটকা ফোটানো, আগুন জ্বালানো ইত্যাদি থেকে বিরত থেকে সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের উদ্ভিদ, প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা উচিত।

সেন্ট মাটিন্স দ্বীপে রয়েছে অসংখ্য কাকড়ার সমাহার। এদের বিরক্ত না করে প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘুরে বেড়াতে সাহায্য করা উচিত। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই দ্বীপটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দ্বীপের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয় এরকম যে কোনো ধরনের কাজ না করে দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। [তথ্যসূত্র: পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত পুস্তিকা ও ওয়েবসাইট]
 


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।