ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপটি এর অপরূপ শোভা দিয়ে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। শহুরে পর্যটকদের দ্বীপে অবাধ বিচরণ দ্বীপের নিজস্ব ইকলজিকে বিপন্ন করে তুলছে। প্রবাল দ্বীপটিতে বর্ষাকালে পর্যটকরা প্রায় আসে না বললেই চলে। অন্যদিকে শীতকালে পর্যটকদের ধুম পড়ে যায়। এ সময় গড়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক তিন থেকে চার ঘন্টার জন্য বেড়িয়ে যায়।
আবার ১ থেকে ২ দিন রাত যাপন করে এমন সংখ্যাও প্রচুর। এ সময় পর্যটকদের পছন্দনীয় শহুরে খাবার যেমন- জুস, ঠাণ্ডা পানীয়, চিপস, নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের বিস্কিট, চানাচুর, সিগারেট ইত্যাদি প্রচুর বিক্রি হয়। কিন্তু এ সব পণ্যের প্যাকেট বর্জ্য রূপে দ্বীপেই থেকে যায় বা জমা হতে থাকে প্রতিদিন। এতে দ্বীপের সহজ পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ছে।
দ্বীপবাসীর কাছে এ বিষয়টি উত্থাপন করলে তারা পরিবেশ ধ্বংসের বিষয়টি বুঝতে পারছে বলে জানায়।
কিন্তু পর্যটক বাড়ার কারণে তাদের আয়ও আগের তুলনায় বাড়ছে। এক্ষেত্রে সরকারি নজরদারির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা যায়।
পরিবেশ রক্ষার্থে সরকারি-বেসরকারি কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রবাল দ্বীপটি বড় রকমের বিপর্যয়ের শিকার হবে।
নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে এখন প্রচুর পর্যটক ভিড় করছেন। পর্যটকরা প্রত্যেকেই কিছু না কিছু সামগ্রী নিয়ে ফিরছেন।
অনেকেই সংগ্রহ করার জন্য সামান্য দামে কিনে নিচ্ছেন দ্বীপের মূল্যবান প্রবাল। মাঝে মাঝে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন পর্যটকদের কাছে প্রবাল আছে কিনা তল্লাশী করলেও তা নিয়মিত নয়।
এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী এবং পর্যটকদের সামুদ্রিক প্রবাল, শামুক এবং ঝিনুক সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ার কারণে সেন্ট মার্টিন্সের প্রবাল শেষ হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীসহ প্রচুর লোক সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের প্রবাল সংগ্রহ করে তা দেশের বিভিন্ন মার্কেটে সরবরাহ করছে। চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের মার্কেটগুলোতে পাওয়া প্রবালের একাংশ সেন্ট মার্টিন্স থেকে আসে বলে জানা যায়।
প্রবালের তৈরি এসব সামগ্রী পর্যটকরা অনেক দামে কিনে নেন।
সরকারি কর্মকর্তারা আইন প্রণয়ন করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছেন। কিন্তু এই আইনের তদারকি করার জন্য সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে কোনো সরকারি কর্মকর্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সেন্ট মার্টিন্সে গিয়ে দেখা যায়, ফেরিওয়ালাসহ ছোট ছোট বাচ্চাও মূল্যবান প্রবালের টুকরো পর্যটকদের কাছে বিক্রি করছে। কিছু ছোট ছোট দোকানে প্রবাল, শামুক এবং ঝিনুকের টুকরো অবাধে বিক্রি হচ্ছে।
পর্যটকরা দ্বীপের জীববৈচিত্র্যও ধ্বংস করছে। পর্যটকদের ফেলে যাওয়া পলিথিনসহ বিভিন্ন দূষিত পদার্থের প্রভাবে সেন্ট মার্টিন্সের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সেন্ট মার্টিন্স সংলগ্ন সাগরে এখন আগের চেয়ে অনেক কম মাছ পাওয়া যায়। স্থানীয় কয়েকজন জেলে জানান, সেন্ট মার্টিন্সের আশপাশের সাগরে শুধু বাংলাদেশের জেলেরাই মাছ ধরে না, মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডের জেলেরাও মাছ ধরে। অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণেই মাছ কমে যাচ্ছে।
২৫ বছর আগে দ্বীপ সংলগ্ন সাগরে প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। কিন্তু বর্তমানে সাগরের গভীরে ছাড়া মাছ তেমন পাওয়া যায় না।
প্রবাল যেখানে পাওয়া যায় সেই সমুদ্রের পানিতে সাধারণত প্রচুর রঙিন মাছ, সাপ এবং সামুদ্রিক বিভিন্ন রঙিন প্রাণী পাওয়া যায়। সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপটির আশপাশেও কিছুদিন আগে প্রচুর কাকড়া, র্যাটল স্নেক এবং বিভিন্ন প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন সেগুলো কমই দেখা যায়।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় সামুদ্রিক প্রাণী কমে যাওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। সেন্ট মার্টিন্সের আশপাশের সমুদ্রে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় ১৯৯৭-৯৮ সালে একটি জরিপ করে। জরিপে ৫৮ প্রজাতির জীবিত এবং ২১ প্রজাতির মৃত প্রবাল, ১০১ প্রজাতির ঝিনুক এবং শামুক পাওয়া যায়। কিন্তু পরবর্তী কালে এ সংখ্যা অনেক কমে যায়। বর্তমানে সেখানে মাত্র ২২ প্রজাতির প্রবাল এবং ৫৬ প্রজাতির ঝিনুক এবং শামুক পাওয়া যায়।
সেন্ট মার্টিন্সে বর্তমানে বেশ কয়েকটি বহুতল হোটেল তৈরি হয়েছে। এই হোটেলগুলো তৈরির আগে এগুলোর পরিবেশগত প্রতিক্রিয়া কি হবে সে সম্বন্ধে কোনো জরিপ করা হয়নি। প্রবালের জন্ম এবং বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত স্বচ্ছ সমুদ্রের পানি দরকার হয়। কিছুদিন আগেও সেন্ট মার্টিন্সের আশপাশের পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ ছিল। বর্তমানে মানুষের পরিবেশ বিধ্বংসী বিভিন্ন কারণে পানি অস্বচ্ছ হয়ে যাচ্ছে।
সেন্ট মার্টিন্সের শামুক এবং ঝিনুক
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে প্রচুর শামুক এবং ঝিনুক পাওয়া যায়। শামুক এবং ঝিনুক প্রধানত জলজ প্রাণী। এদের বেশির ভাগই সামুদ্রিক তবে কিছু স্বাদু পানিতে এবং কিছু স্থলেও পাওয়া যায়। এরা খুব আস্তে চলাফেরা করে। চলার সময় হামাগুড়ি দিয়ে চলে, আবার গর্তে লুকায়, কখনও সাঁতার কাটে।
তাদের পা এই তিন কাজের উপযোগী করেই তৈরী।
পরিবেশ রক্ষায় ঝিনুকেরও অবদান আছে। জীব বৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ঝিনুক নিয়ে গঠিত। সামুদ্রিক খাদ্যচক্রকে সচল রাখতে ঝিনুক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা মৃত জৈব বস্তু খেয়ে জলজ পরিবেশের স্বচ্ছতা বাড়ায়।
শামুক এবং ঝিনুক সামুদ্রিক কচ্ছপ ও বিভিন্ন প্রকার মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সেন্ট মার্টিন্সের পূর্ব দিকের উপকূলে বালির সাথে মিশে আছে রাশি রাশি শামুক ও ঝিনুকের খোলস
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের শামুক এবং ঝিনুক কমে যাচ্ছে। জেলেদের জালে আটকে পড়া ঝিনুক সাধারণত মেরে ফেলা হয়। এছাড়াও মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনে ঝিনুক ব্যবহার হয়। যেমন, হাস-মুরগি ও মাছের খাবার হিসেবে এবং অলঙ্কার ও হস্তশিল্পে এগুলো ব্যবহার করা হয়।
বিভিন্ন পরিবেশ দূষণের কারণে এবং জাহাজ থেকে নির্গত তেলের কারণে শামুক এবং ঝিনুকের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। বিভিন্ন কাজে সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের ঝিনুকের ব্যবহার বন্ধ করা এবং সামুদ্রিক দূষণ বন্ধের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া খুবই জরুরি।
[ছবি: লেখক]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।