নাজিল আযামীর ব্লগ সাইট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ অঙ্গনে সমাহিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবর ভাঙ্গাকে নিয়ে দেশব্যাপী একটি অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে মনে হয়। জানা গেছে যে, তার সমাধিটি ভেঙ্গে সেখানে আরো কিছু ব্যক্তির কবরের সাথে তা একত্র করে তার নতুন নামকরণ করা হচ্ছে। সংস্কার ও পুনর্বিন্যাসের পর তা আর জাতীয় কবির মাযার হিসেবে পরিচিত হবে না, অন্যান্য কিছু ব্যক্তির নাম সংযোজন করে তার নতুন পরিচয় দেয়া হবে। দেশের বরেণ্য কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই সংস্কার ও পুনর্বিন্যাসের নামে জাতীয় কবির কবর ভাঙ্গার নিন্দা করেছেন এবং অবিলম্বে এই তৎপরতা ব করার আহ্বান জানিয়েছেন। আমরাও তাদের সাথে একমত এবং তার মাযার ভাঙ্গা ও অন্যান্য ব্যক্তিদের সাথে তাকে একই মর্যাদায় দেখার সরকারি প্রবণতাকে জাতীয় কবির অবমাননা বলে মনে করি।
কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। তিনি একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ, স্বাধীনতার নকীব, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ, অশান্ত বিদ্রোহী একজন কবি যার দৃষ্টান্ত বিশ্ব সাহিত্যে বিরল। তিনি আমাদের ঐতিহ্যের কবি, ইসলামী পুনর্জাগরণ তার কবিতার সুর মূর্ছনা এবং আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তার কবিতার সর্বজনীনতা এবং গানের ব্যপ্তি ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্ব কবিকে ডিঙ্গিয়ে যেতে দেখা গেছে। প্রতিভা বিকাশের হেমন্তকালেই তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হন এবং বসন্তে পা রাখতেই এই ষড়যন্ত্র তাকে শুধু কণ্ঠরুদ্ধ করেনি তাকে অচলও করে দেয়।
তথাপিও তার কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও গান শুধু বাংলা ভাষাভাষীদের নয় বিশ্ববাসীকেও উদ্বুদ্ধ করে। এ প্রেক্ষিতে তার মর্যাদা আমাদের কাছে অনেক উঁচু।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ অঙ্গনে এই মহান কবিকে সমাহিত করা এবং সেখানে তার মাযার তৈরির পেছনে তার মর্যাদা যেমন কাজ করেছে তেমনি তার একটি আকুতিও কাজ করেছে। কবি তার একটি গানে মৃত্যুর পর তাকে মসজিদের পাশে কবর দেয়ার আকুতি জানিয়েছিলেন যাতে করে কবরে শায়িত অবস্থায় মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পান। শিক্ষার পবিত্র অঙ্গন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এই বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করে বিশ্ববিদ্যালয়কেও সম্মানিত করা হয়েছিল বলে মনে করি। কবি হিসেবে তিনি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এবং শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। তার এই স্বাতন্ত্র্য ও শ্রেষ্ঠত্বকে অস্বীকার করা যায় না এবং করা হলে তা জাতীয় কবির প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদার পরিপন্থী হবে বলে আমাদের ধারণা।
আমরা জানি না সংস্কার ও পুনর্বিন্যাসের নামে জাতীয় কবিকে অন্যান্য ব্যক্তির সাথে এক করে দেখার ধারণার উৎস কোথায় এবং যারা তা করছেন তাদের পরিকল্পনার পেছনে কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা। জাতীয় কবি একজনই হন এবং তার মর্যাদা ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করা জাতিরই দায়িত্ব।
কবির মাযারটি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হলেও তার সংরক্ষণের দায়িত্ব থেকে সরকার অব্যাহতি পেতে পারেন না। বাংলাদেশে অনেক সমস্যা নিয়েই আমরা হিমশিম খাচ্ছি। জাতীয় কবির মাযার নিয়ে নতুন কোনও সমস্যার সৃষ্টি হোক আমরা তা চাই না। কাজেই মানুষ আবেগাপ্লুত হয়ে কোনও অঘটন ঘটানোর আগেই সরকার সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব করে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার চেষ্টা করবেন বলে আমরা মনে করি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।