soroishwarja@yahoo.com
সারা দেশে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। জোট বেধে নির্বাচনে নামছে আওয়ামী লীগ। তাদের জোট মহাজোট। বিএনপির জোট তো ঐক্যজোট নামেই পরিচিত। এবার এই দুই জোটের নির্বাচনী লড়াইয়ে নতুন অনেক চমক আছে।
তারই একটি হচ্ছে এরশাদের মহাজোটে যাওয়া। আওয়ামী লীগ স্বৈরশাসক এরশাদকে মহাজোটের ছায়াতলে আশ্রয় দিয়েছে। অনেকেরই ব্যাপারটা ভালো লাগেনি। ব্যাপারটা আমারও ভালো লাগছে না।
স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী লোকজনের অনেকেই আওয়ামী লীগের অনেককিছু মেনে নিয়ে বাধ্য হয়েই দলটির প্রতি এতদিন তাদের সমর্থন বহাল রেখেছিল।
প্রতিপক্ষ বিএনপি তাদের জোটের ছায়াতলে রাজাকারদের আশ্রয় দেওয়ায় তারা আওয়ামী লীগের প্রতি তাদের সমর্থন ধরে রাখতে বাধ্য ছিল। এখন এরশাদ আওয়ামী লীগের ছায়ায় আশ্রয় নেওয়ায় তারা নতুন করে বিপাকে পড়েছে। তারা না পারছে রাজাকারের সঙ্গে জোট বাধা বিএনপির দিকে যেতে, না পারছে স্বৈরাচারের সঙ্গে জোট বাধা আওয়ামী লীগের দিকে যেতে।
মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতার চেতনার সমান্তরাল হচ্ছে স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের শত্রু আর স্বাধীনতার বিরোধীরা যেমন দেশ ও জাতির জন্য শুভশক্তি নয়, তেমনি নয় স্বৈরাচারও।
যারা রাজাকার ও স্বৈরাচারবিরোধী তারা এখন কোথায় যাবে?
আমার এ প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সমর্থক আমার এক বন্ধু বললেন, দেখ বন্ধু, ভোটের রাজনীতি করলে আর ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছা করলে এরশাদকে আশ্রয় দেওয়া ছাড়া উপায় নাই। স্বৈরাচার দিয়ে যদি রাজাকারদের ক্ষমতায় যাওয়া ঠেকানো যায় তবে তাই করা ভালো। আওয়ামী লীগের এখনকার নির্বাচনী রাজনীতির মূলকথা হচ্ছে স্বৈরাচার দিয়ে রাজাকার ঠেকাও।
আমার ওই বন্ধুর কথা আমি মানতে পারি না। আমি তাকে বলি, দেখো, রাজাকার ঠেকাতে গিয়ে ঘরে স্বৈরাচারকে ডেকে আনার বিষয়ে আমার বানরের কাছে রুটি ভাগের দায়িত্ব দেওয়ার গল্পটা মনে পড়ছে।
জামায়াতের সঙ্গে জোট করার ফলে বিএনপির যে ক্ষতি হয়েছে নগদ লাভের মোহে বিএনপি তা বুঝতে পারছে না। ঠিক তেমনি নগদ লাভের মোহে জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট করার পরিণাম আওয়ামী লীগও বুঝতে পারবে না।
আমার বন্ধূ আমার কথার জবাবে বলেন, ভবিষ্যতের চিন্তা করলে বাংলাদেশের বামপন্থিদের মতো অবস্থা হবে আওয়ামী লীগের। ভোটের রাজনীতিতে সুদূর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার সুযোগ নাই। এক্ষেত্রে এক্কেবারে প্রায়োগিক, এক্কেবারে প্রাগম্যাটিক হতে হয়।
তাছাড়া এরশাদ এক সময় স্বৈরাচার ছিল এখন তো আর তার সেই আচার নাই।
আমি বললাম, তাহলে জামায়াত কী দোষ করল! তারা এক সময় রাজাকার ছিল। এখন তারা তাদের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন এনে দেশের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলোকে স্বীকৃতি দিয়েছে? এরশাদ যেমন এক সময় স্বৈরাচার ছিল বলছিস, তেমনি তো এক সময় মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, তবে কেন এক সময়ের মুক্তযুদ্ধের স্বপক্ষের কথা বলে নিজেদের দিকে আওয়ামী লীগ জনমত টানতে চায়?
আমার বন্ধু এবার বলে, মানুষ অতীতের ভালোটাই নেয়, আমরাও অতীতের ভালোটা নিচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের কথা বলছি, স্বাধীনতার কথা বলছি।
আমি আবার বললাম, এরশাদ কি অতীতের ভালো?
আমার বন্ধু এবার বলে, এরশাদ অতীতের ভালো না হলেও বর্তমানের ভালো।
আমরা বর্তমানের ভালোকেও নেবো।
আমি বলি, আচ্ছা ঠিক আছে। তোমরা বর্তমানের ভালোকে নেবে আর অতীতের ভালোকে নেবে। কিন্তু আমরা যারা স্বাধীনতাবিরোধী আর স্বৈরাচারকে নেব না তারা কোথায় যাব?
আমার বন্ধু তার বিরক্তি আর চেপে রাখতে পারে না। আমার এসব প্রশ্নের জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে এতক্ষণে আমার বন্ধু মোক্ষম কথাটা বলে।
মোক্ষম কথাটা হল, তোরা কই যাবি!তোরা জাহান্নামে যা! বলে সে আর দাঁড়ায় না। সে দ্রুত হেঁটে চলে যায়।
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার বন্ধুর শেষ কথাটা নিয়ে ভাবতে থাকি। ভাবতে ভাবতে আমার মাথা নিচু হয়ে আসে। হতাশায়, দুঃখে ও অপমানে আমি মাথা নিচু করে চুপচাপ ধীরে ধীরে হাঁটতে থাকি।
হাঁটতে হাঁটতে আমি ৫২'র কথা ভাবি, '৬৯ এর কথা ভাবি, '৭১ এর কথা ভাবি, '৯০ এর কথা ভাবি। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আমার মনে হয়, যারা ভাষা আন্দোলনের মিছিলে নেমেছিল, যারা গণঅভ্যুত্থানে ছিল, যারা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল, যারা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেমেছিল তারা সবাই আমার সাথে মাথা নিচু করে চুপচাপ হেঁটে হেঁটে ধীরে ধীরে জাহান্নামের দিকেই যাচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।