আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি একজন ননলাইসেন্সড পেশাদার ড্রাইভার

বাংলাদেশ ব্লগারস এসোসিয়েশন সদস্য নং: ১০ । facebook.com/milton3d

একবার মাথায় ঝোঁক উঠলো ড্রাইভিং শিখবো। শিখলাম এলাকার একটি ড্রাইভিং কারে। রোজ ভোরে উঠে ড্রাইভিং প্র্যাকটিস। টয়োটা পাবলিকায় শিখলাম।

পুরা ঢ্যাঢ ঢ্যারা। ওস্তাদ বললেন, আপনাকে তো লার্নার লাইসেন্স করতে হবে। কথা মতো আরেক বন্ধুকে নিয়ে রিআরটিএ অফিসে গিয়ে ছবি আর ফি জমা দিলাম। ড্রাইভিং লাইসেন্সের ধরন দেখে ফরম জমাকারী একবার আপাদমস্তক আমার দিকে তাকিয়ে দেখলেন। জিজ্ঞেস করল, "পেশাদার" দিয়েছেন কেন? আমি সরাসরি বললাম, "টেক্সিক্যাব চালাবো"।

এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু না বলে ফরমটি জমা নিলো। নির্দিষ্ট দিনে হলুদ লার্নার পেলাম। দিন পনেরো ড্রাইভিং প্র্যাকটিস করলাম। একদিন গাড়ীর লেফট ইন্ডিকেটর দেয়ালের সাথে ধাক্কা লাগিয়ে ভেঙ্গে ফেললাম। ওস্তাদ হাসি দিয়ে বললেন, "নো প্রোবলেম।

" যাই হোক আমার মনে হয় যারা বলেন, টাকা না দিলে ড্রাইভিং পরীক্ষায় পাশ করা যায় না, এই কথাটা মনে হয় ভুল। কেউ যদি সব কিছু পারে তবে তাকে আটকানোর কোন পথ নেই এটা সত্য। নির্দিষ্ট দিনে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহন করলাম। প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর করলাম সঠিক। রেজাল্ট চার্টে নিজের নাম দেখলাম সাথে ভাইভার ডেট পেলাম।

সবাই ভয় দেখালো কিছু টাকা না দিলে ভাইভাতে পাশ করাবে না। একটা কথা সত্য "পেশাদারদের" বেলায় একটু কড়া করে পরীক্ষা নেয়া হয়। দেখলামও তাই। ভাইভা দিলাম। দেখলাম ভাইভা বোর্ডে তিনজন বসে আছে।

সবাই আবারো একই প্রশ্ন। কি করেন? বললাম বেকার। "পেশাদার" এর জন্য এপ্লাই করেছেন কেন, দেখে তো মনে হচ্ছে না পেশাদারী গাড়ী চালাবেন? আমি বললাম, "টেক্সিক্যাব চালাবো"। ওনারা একটু হাসলেন আর বললেন, "আপনি কি জানেন, যে পেশাদার লাইসেন্স সহজে দেয়া হয় না। এর পরীক্ষা খুবই কঠিন করে নেয়া হয়।

কোন ছাড় দেয়া হয় না। অল্প ভুল হলেই বাদ দিয়ে দেয়া হয়। " বললাম, "আমি জানি স্যার। আমি মনে করি আমি পারবো। " পুরো ১৭ মিনিট আমাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করলেন।

কোন প্রশ্নেই আটকাতে পারলেন না। ওনারা তিনজন গাড়ীর সব ব্যাপারে আর সব ট্রাফিক সিগন্যাল সিম্বলের ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করে মুখে ফেনা তুলে দিলেন। বললেন, "বাবারে এতক্ষনে পাইসি একজন। আপনারে আরো কিছু প্রশ্ন করি, আপনার কোন সমস্যা আছে? আমরা সবাইকে দুই/এক মিনিটেই ছেড়ে দেই। কিন্তু আপনাকে ছাড়বো না।

" বললাম, "কোন সমস্যা নেই স্যার আপনি আমাকে আরো প্রশ্ন করতে পারেন। " অবশেষে আমাকে পাশ রেজাল্ট দিয়ে ছেড়ে দিলেন। এবার জিগজ্যাক, Ramp, রোড টেষ্ট। দারুন প্রস্তুতি নিলাম। এক দিনেই তিনটি পরীক্ষা।

বুকে প্রবল সাহস। একটিতে পাশ করলে আরেকটি পরীক্ষা কিছুক্ষণ পরে। যথারীতি সময়ে আমার নাম ধরে ডাকলো হ্যান্ডমাইকে। জিগজ্যাকের জন্য ৫০ টাকা দিয়ে একটা গাড়ী ভাড়া করলাম ওখানেই। খুব সুন্দরভাবে সবগুলো কাটিয়ে এগিয়ে গেলাম এবার ব্যাকগিয়ারে, এবাও চলে আসলাম খুব সুন্দর করে।

শেষে এসে মাখিয়ে ফেললাম। ব্যাক বাম্পারের লেফট সাইডে লেগে একটা ষ্টিক গেলো পড়ে। ব্যাস সব শেষ। আবারো ডেট পড়লো জিগজ্যাকের। কিন্তু হঠাত করে চাকুরীতে ঢুকে পড়লাম আর পরীক্ষা দেওয়া হলো না।

আমি একজন ননলাইসেন্সড পেশাদার ড্রাইভার হয়ে থাকলাম আজীবন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.