ছেলেটি ঠোট টিপে হাসছিলো।
পুরপরি অসচেতনতায় নিমগ্ন সে ছিলো না। সকচিত চাহনি ছুয়ে ছুয়ে যাচ্ছিলো উদ্দিপ্ত দু’জোড়া চোখ। সাধারন্যে বসবার স্থান সচরাচর যেখানে হয় বন্ধুদের আড্ডা। কিভাবে কে কার তার থেকে ছাপিয়ে উঠে একে অন্যের বিদ্যুতের তরঙ্গায়িত ঊপভোগ্য সান্নিধ্য।
কথামালায় উচ্ছসিত চারপাশ। হাসির রোলে মাতোয়ারা দোকানের নিভৃত কোন।
তবুও ছেলেটি ঠোট টিপে হাসছিলো। চমৎকার করে বহু দিকনির্দেশনায় ছাটা চুল এবং ধোপ-দুরস্ত পোষাকে তাকে দেখাচ্ছে যাকে বলে “Well presented”. ধরে নেই তার নাম ‘ক’।
মেয়েটিরও যত্নে গড়া পিছল চুল এবং সপ্রতিভ উপস্থিতি যথেষ্ঠ আকর্ষণীয়া।
আমরা এক্ষেত্রে অকৃপন হতে পারি। বর্নণায় আরো কিছু শব্দ যোগ করি। বাহ ! কি চমৎকার !
এরপরের ঘটনা বোধকরি সহজেই অনুনেয়। সকলেই বুঝে ফেলেছেন। আপন অভিজ্ঞতার ঝুলি কুড়িয়েছে কি কম? দিনের শেষে মুঠোফোন নম্বর আদান প্রদানপূর্বক আনাগত সম্ভাবনায় দিনের আড্ডার পরিসমাপ্তি।
দিন যায় কথা হয় না। কে আগে ভাংগবে বুকের পাথর।
তবে আপনারা এই ভাববেন না যে মুঠোফোনে কথার আর্গল বুঝি ওদের বন্ধ ছিলো। তা কখনো হবার নয়। চলতি নিশি কথার সংগীর অভাব এই বয়সীদের কখনো হয় না।
শুধু প্রয়োজন ইচ্ছার ব্যক্ত ঘটানো।
এক প্রায় রাতে ভেঙ্গে যায় পাথর। বাঁধ ভাঙ্গা স্রোতের মতো কথামালা দু’কূল ছাপিয়ে যায় রাতের পর রাত দিনের পর দিন। পাথর ভাঙ্গার সে গল্প না হয় আরেকদিন শুনা যাবে।
এখন এখানে ফ্লেক্সি হচ্ছে।
রিচার্জ হচ্ছে। মোবাইল চার্জ হচ্ছে। হাসি হচ্ছে। টুকরো টুকরো কথার খেলা হচ্ছে। মান-অভিমান হচ্ছে।
ভবিষ্যতের স্বপ্ন আঁকা হচ্ছে। যেনো তৈরী হচ্ছে একটি ভ্যানগগের কানকাটা তৈল চিত্র অথবা মধূসুধনের সাগড়দাড়ির কাব্য।
একদিন কথার দিন ফুরাল এলো দেখার দিন।
এলো প্রজাপতির মতো ঘুরে বেড়ানোর দিন।
ফাষ্টফুড, রেস্তোরা, ক্যাফে, প্রদর্শণী, কেনা-কাটার শীতাতপ বাজার, তারা মার্কা সিনেমা হল।
চষে বেড়ানো আর হ্যা কিছুটা স্থুল হলেও হলো চোয়ালের ব্যায়াম। রোগা মানিব্যাগ কখনো ঈষৎ স্ফীত পার্স নিরব কালের নিরবধি।
সম্পর্কের অবসম্ভাবিক ঊপাদানের অনুপস্তিথিতে কিছুটা অবাক হচ্ছেন কি?
যোগাযোগের প্রাচীনতম মাধ্যমের প্রতি আমাদের অবহেলায় বোধকরি মাধ্যমটিকে সওয়ার করেছে এখানে।
সাধারন কথায় তুচ্ছ বিষয়ে মান-অভিমানে। বিচিত্র থেকে বিচিত্রতর বিশেষ দিবসগুলোয় যার উপর যুগলদের অবলম্বন।
ভিনদেশী প্রতিষ্ঠানের ভিনদেশী কথায় আবেগের বানিজ্যিক প্রকাশ। দোকান থেকে দোকানে। কার্ড থেকে কার্ডে।
সম্পর্ক স্থানান্তরিত উন্মুক্ত স্থান থেকে আবদ্ধ চার দেয়ালে। স্খলনে পতনের সাথে।
উন্মত্ততায় মিথ্যের বেসাতীতে। কর্ষণে মন্থণে। প্রেমভাব অথবা অন্য কোন স্তরে।
তারপর একদিন কথা যায় থেমে নতুনের আবাহনে। অথবা বাস্তবতার ঘূরন্ত চাকায়।
সময়ের ফেরীওয়ালা অসময়ে যায় চলে। নীরবে রয়ে যায় কিছু পালক ছেড়া সুখ, অকিঞ্চিত বেদনায়। সে গল্পও না হয় আরেকদিন হবে।
আপনাদের মনে আছে ছেলেটির নাম দিয়েছিলাম ‘ক’। শূন্যতা নেমে আসে ক এর জীবনে।
হাহাকার নিঃসীম বেদনা উড়িয়ে নেয় কাঁচের মৃদু ঝংকারে অথবা আবেশময় ঝাঁঝালো ধোয়ায়। তারপরও শূন্যতা। কিচ্ছু ভালো না লাগা।
মেয়েটির কোন নাম দেয়া হয় নাই। আচ্ছা ধরি ওর নাম ‘অ’।
জানালার ধারে কোন দূরাগত প্রান্তরে চোখ রেখে জানালার বোকা শিকগুলোকে সঙ্গী করে অ এর অনন্তর শুধু চেয়ে থাকা।
কেটে যায় দিন হয়তবা মাস।
বহুদিন অথবা কিছু দিন পরে।
নীরব রাতে কে যেন মুঠোফোনের কথায় আঁধার রাতের গান গায় অ এর কানে।
হয়তো কোন অনুষ্ঠানে অথবা উন্মুক্ত স্থানে সকচিত চোখের তারা।
হাসির অস্ফুট দু’এক ধ্বনি ভালোলাগার আবেশ জড়ানো। টুকরো টুকরো কথামালা।
ছেলাটির ঠোটে মুচকি হাসি। সকচিত দৃষ্টি ছুয়ে ছুয়ে যায় মেয়েটির চোখের তারা। ক এর ভালো লাগে ‘ম’ এর চোখ।
এই বেশ চলে যায় রাতের গান ভোরের শিশিরে সিক্ত হয়ে আমাদের নিরন্তর ভালোবাসায় ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।