আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুঁজিবাদী পোস্ট: টাকা কামানোর সহজ উপায়

যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে, ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

ভূমিকা: ভাবছিলাম কি নিয়ে লেখা যায়? অনেকদিন লিখিনা, লেখার সময়ও পাইনা, আবার বিষয়ওনা! যেহেতু তিনদিনের ছুটি পেলাম আজ সন্ধ্যা থেকে (মানে উইকএন্ডের দুইদিনের পর সোমবার অজানা কোন এক কারণে ছূটি এখানে), ভাবতে বসলাম কি নিয়ে লেখা যায়। "অলস মস্তিষ্ক শয়তানের আড্ডাখানা" -- গুরুজন বলে গেছেন, কাজেই দ্বিমত করার কোন অবকাশ নেই। সেকারণেই হয়ত বিষয় নিয়ে ভাবতে গিয়ে এই অলস মাথায় "টাকা কামানোর সহজ উপায়" ছাড়া আর কিছু খেললনা। ইদানিং প্রায়ই ব্লগে অনলাইনে কিভাবে টাকা কামানো যায়, লটারীতে জিতে কিভাবে কোটিপতি/বিলিওনিয়ার হওয়া যায় -- এসব পোস্ট দেখি। ভাবলাম, আমারই বা লিখতে দোষ কোথায়? কৌতুক দিয়ে বিসমিল্লা করি সে অনেক অনেক আগের কথা, তখন গাধা নামক প্রাণীটির এযুগের টয়োটা-দাইহাৎসু পিকআপের মতোই নাম-দাম ছিলো।

তো, এক গাধার ফার্মের মালিক গাধা বিক্রী করতে হাটে যাচ্ছিলো, কিন্তু পথের মাঝে শখের গাধাই ঝামেলা বাঁধালো। মানে, হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গাধাটা মরেই গেলো। মালিকের তো মাথায় হাত! এখন কি হবে!! বিরাট লোকসান! এযুগে কল্পনা করলে, ধরুন, আপনি আপনার শখের টয়োটা কামরীকে পার্ক করে একটু ম্যাকে ঢুকলেন বার্গারে দু'চারটা কামড় বসাতে, আর এসে দেখলেন কোন এক হতচ্ছাড়া "টেরোরিস্ট" বোমা মেরে গাড়ীটাকে দিলো উড়িয়ে!! তো, গাধার ফার্মের মালিক হলেও লোকটা মোটেও "গাধা" ছিলোনা। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ার কিছুক্ষণের মাঝেই তার মাথায় এক বিশেষ বুদ্ধি খেলে গেলো। সে জানে এই পথে অনেক লোক আজ হাটে যাবে।

আর চিন্তা কি! প্রথমে সে তার মরা গাধাকে টেনে হিঁচড়ে একটা ঝোপের আড়ালে নিলো। তারপর, পথে যে বিশাল বটগাছটা পড়ে, তার গায়ে একটা নোটিশ টাঙালো। তাতে লেখা, "লটারী!!লটারী!!! মাত্র দুই টাকা দাম। পুরস্কার: একটি গাধা!" দুই টাকার লটারী কিনে গাধার মালিক হওয়া চাট্টিখানি কথা না! লোকে হুড়মুড় করে লটারী কেনা শুরু করলো। বেলা গড়াতে না গড়াতেই লোকটা দেখলো যে তার গাধার দামের দ্বিগুন টাকা চলে এসেছে লটারী থেকে।

তার খুশী আর দেখে কে? সন্ধ্যায় লোকে এসে জড়ো হলো বটগাছের সামনে। লটারীর পুরস্কার ঘোষনা হবে। আমাদের গাধার ফার্মের মালিক একটি বিজয়ী নাম্বার ঘোষনা করলেন, ভিড়ের ঠেলে একটা লোক লাফাতে লাফাতে, "আমি জিতছি, আমি জিতছি" বলতে বলতে সামনে চলে এলো। গাধার মালিক বিজয়ীকে অভিনন্দন জানিয়ে বললো, "আগামীকাল দুপুরে এখানে আসবেন আপনার পুরস্কার গ্রহন করতে। " বিজয়ী খুশী মনে, বাকীরা ব্যাজার হয়ে নিজের পোড়াকপালকে দোষ দিতে দিতে বারইি চলে গেলো।

পরদিন দুপুরে বটগাছের মোড়ে এসে হাজির সেই বিজয়ী। দেখে, গতকালের লটারীওয়ালা সেখানে দাঁড়িয়ে, তার পাশে একটা মরা গাধা। সে বলল, " কি ব্যাপার?"। গাধার মালিক বললো, "ভাই, আমি তো কোথাও বলি নাই যে জ্যান্ত গাধা দেয়া হবে। " "ভন্ডামী বাদ দ্যান বুঝলেন! আমার দুই টাকা ফেরত দেন!!" "পুরস্কার নিবেননা? ঠিক আছে, কি আর করা! এই নেনে আপনার দুই টাকা আপনারে ফেরত দিলাম।

" এবার আসি বাস্তবের গল্পে আমেরিকায় ইদানিংকার অর্থনৈতিক মন্দার কথা সবাই জানেন। এটার মূলে ছিলো হাউজিং ব্যবসার পতন, মানে লোকজন ধারকর্জ করে বাড়ী কিনেছিলো ধূমসে, কিন্তু মাসে মাসে ধারশোধ করতে গিয়ে অনেকেই আর কুলোটে পারেনি। ফলে প্রচুর লোক বাড়ী বিক্রী করে দিতে চাইলো, চাহিদার চেয়ে সাপ্লাই বেশী হওয়ায় যা হয় তা--ই হলো, বাড়ীর দাম গেলো কমে। যারা বাড়ী বিক্রী করলো, তাদের অনেকেরই কমবেশী লোকসান দিয়ে বাড়ী বিক্রী করতে হলো। তো, এই সময়েই এক ভদ্রমহিলা আমাদের ঐ গাধাওয়ালার মতো একই কাজ করলেন।

তিনি দেখলেন, নাহ, এভাবে বিক্রী করে তাঁর তিন/চারলাখ ডলারের দামী বাড়ীর যথার্থ দাম পাবেননা। তো, তিনি যেটা করলেন, তা হলো, ইন্টারনেটে লটারী ছাড়লেন। লটারীর দাম হয়তো এক/দু'শো ডলার, পুরস্কার একটা গোটা বাড়ী! এই আক্রার বাজারে, যেখানে লোকে ধার শোধ করতে না পারার কারণে বাড়ী বিক্রী করে তাঁবুতে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে, সেখানে মাত্র দু'শ ডলারের লটারীটে যদি গোটা একটা বাড়ী পাওয়া যায় -- খারাপ কি! যদি লাইগা যায় বলে কথা! হুলস্থুল পরে গেলো! লটারী বেচে ভদ্রমহিলার আয় কত হয়েছিলো জানেন? ছয় লাখ ডলার। ওটা দিয়ে ওরকম দেড়/দুটা বাড়ী কিনতে পারবেন তিনি। আরেকটু সিরিয়াস উপায় এটা আরো খাসা উপায়।

এই উপায়টা এসেছিলো এক বিজনেস প্ল্যানারের মাথা থেকে যে তার প্ল্যানটি বিক্রী করে এক এ্যাড ফার্মে -- বিশাল অংকের বিনিময়ে। আশি বা নব্বইয়ের দশকের কথা। আমেরিকায় এক ধরনের ট্যাবলেট পাওয়া যেতো যেটাকে পানিতে ছেড়ে দিলে বুদ্বুদ উঠে গ্লাসের পানি সোডা-ড্রিংকসে পরিণত হয়! কি তামশা!! তো আমাদের এই বুদ্ধিমান লোকটি যা করল, তা হলো, ঐ ট্যাবলেট কোম্পানীর বিজ্ঞাপন শাখায় গিয়ে বলল, আমার কাছে মারাত্মক এক আইডিয়া আছে, যেটা দিয়ে তোমাদের বিক্রী প্রায় ডাবল হয়ে যাবে। এত পার্সেন্ট লাভ দিলে তোমাদের আইডিয়াটা দিয়ে দেবো। বিজ্ঞাপনওলারা তার আইডিয়া শুনে রাজী হয়ে গেলো।

আইডিয়াটা ছিলো এমন -- বিজ্ঞাপনে দেখানো হবে যে রোদে-ক্লান্ত একজন ঘরে ঢুকে একগ্লাস পানি নিলো। তারপর ঐ ট্যাবলেটের পাতা থেকে দুটো টয়াবলেট ছেড়ে দিলো গ্লাসে, ক্লোজআপে বুদ্বুদ দেখানো হলো, তারপর দেখানো হলো যে এক নিমিষে ক্লান্তি দূর। এখানে ঘটনা কোথায়? ঘটনা হলো, একগ্লাস পানিতে ট্যাবলেট আসলে একটা ছাড়লেই যথেষ্ট, দুটো ছাড়াতে পানির সোডাভাবটা একটু শক্তিশালী হয় মাত্র! কিন্তু এ্যাডে বারবার দুটো করে ট্যাবলেট ফেলা দেখিয়ে কোম্পানীর বিক্রীটা হয় যতটুকু হবার কথা তার দ্বিগুণ। এ্যাড দেখিয়ে মানুষের কমনসেন্স তৈরী করে ফেলা যে একগ্লাস পানিতে দুটো ট্যাবলেট লাগবে -- এই আর কি! শেষকথা ছোটবেলায় সুন্দরী মডেলের গালভর্তি দন্তবিকশিত হাসির ক্লোজআপ টুথপেস্টের এ্যাড দেখতাম। একেবারে টুথব্রাশ জুড়ে প্রায় এক সে.মি. পুরু টুথপেস্ট নিয়ে সজোরে দাঁটের আর মাড়ির ওপর অত্যাচার! সাথে মিহি কন্ঠে গান।

প্রশ্ন: আপনি দাঁত মাজার সময় কি পরিমাণ টুথপেস্ট ব্যবহার করেন?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.