সকল ব্লগারদের অবগিতর জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সকল প্রকার ভাল মন্তব্য সাদরে গ্রহন করা হবে। কোন বা
সরকার সম্প্রতি দেশে সিটিজেন চার্টার নামে জনসেবার একটি নতুন পদ্ধতি চালু করেছেন। এই পদ্ধতির অধীনে সরকারি সেবার কাস্টমার হিসেবে জনগণের অবস্খানকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলীকে সহজলভ্য করা এবং তাদের পছন্দ ও চাহিদার ভিত্তিতে সেবার মান উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরানুযায়ী প্রাথমিকভাবে সংস্খাপনসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়কে এই চার্টারের অধীনে আনা হয়েছে। পাঠকরা হয়ত স্মরণ করতে পারেন যে, ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে সর্বপ্রথম তৎকালীন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তার দেশে সরকারি সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সিটিজেন চার্টার প্রবর্তন করেন।
জনগণের ইচ্ছা এবং চাহিদাকে সম্মান দেখিয়ে মান সম্মত সরকারি সেবা নিশ্চিত করাই ছিল এর প্রধান লক্ষ্য। প্রত্যেক নাগরিক প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ট্যাক্সের আকারে সরকারি সেবার মূল্য পরিশোধ করে থাকেন এবং এ প্রেক্ষিতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে যুক্তিসংগত মূল্যে উঁচুমানের সেবা পাবার তাদের অধিকার রয়েছে এই উপলব্ধির অভিব্যক্তিই ছিল সিটিজেন চার্টার। এর মূলকথা ছিল, সিটিজেন বা নাগরিক চার্টারের লক্ষ্য হচ্ছে নাগরিকদের আরো বেশি ক্ষমতা প্রদান। প্রকৃতপক্ষে এটি রাষ্ট্রীয় অধিকতর রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের রেসিপি নয় বরং জনগণের অধিকার সম্পর্কে সরকারের যে বিশ্বাস সে সম্পর্কে তাদের অবহিতকরণ এবং তাদের পছন্দ-অপছন্দকে সম্মান প্রদর্শনের একটি প্রামাণ্য বিবৃতি।
প্রত্যেক নাগরিককে সরকারি সেবাসমূহের খদ্দের গণ্য করে সিটিজেন চার্টারে বেশ কিছু নীতি বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে।
এই নীতিকে সামনে রেখে তার ইচ্ছা, অভিরুচি, চাহিদা প্রভৃতির ভিত্তিতে পণ্যের মান ও যুক্তিসংগত মূল্য নিশ্চিত করে নির্ধারিত সময় ও স্খানে সরবরাহ করা হয়। এক্ষেত্রে যে নীতিগুলোকে দৈনন্দিন ব্যবস্খাপনার অপরিহার্য অংগ হিসেবে গণ্য করা হয় সেগুলো হচ্ছে নিম্নরূপ :
] সেবাধর্মী সরকারি প্রতিষ্ঠান ও এজেন্সিসমূহের সেবার সুস্পষ্ট মান নির্ধারণ, প্রকাশ ও মনিটরিং। এজেন্সিগুলো সেবার পরিসর ও পদ্ধতি নাগরিকদের অবহিত করার পর তাদের কাজের মূল্যায়ন এবং সাফল্য ব্যর্থতা নির্ধারণকরত সরকার সংশ্লিষ্ট এজেন্সি বা বিভাগ অবস্খার উন্নয়নের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।
] তথ্য ও তার উন্মুক্ততা : মানুষ কিভাবে কখন কার কাছ থেকে কি মূল্যে তার চাহিদা অনুযায়ী সেবাটি পাবে (যেমন জমির দলিলের মিউটেশন, খাজনা পরিশোধ সংক্রান্ত তথ্য, দাখিলা, আরএস খতিয়ান, বিএস খতিয়ান, সিএস খতিয়ান অথবা নির্দিষ্ট দাগ ও খতিয়ানের জমি হস্তান্তরের তথ্য অথবা তার দলিলের কপি) সে সম্পর্কে সহজ ভাষায় সঠিক তথ্য প্রকাশ, দফতরের সামনে এ সম্পর্কিত তথ্যাবলী লটকিয়ে দেয়া, কারুর কাজে বিক্ষুব্ধ হলে অথবা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ সেবা প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে, বিনা কারণে অবহেলা বা হয়রানি করলে প্রতিকার পাবার স্খান ও দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রভৃতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা প্রদান।
] পছন্দ পরামর্শ : নাগরিকরা খাজনা দেয়, তাদের করের টাকায় দেশ চলে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা বেতন পায়।
এ প্রেক্ষিতে সরকারি খাতের এজেন্সিগুলোকে অবশ্যই সময়ে সময়ে নাগরিকদের সাথে তাদের সেবার মান, পরিসর এবং মূল্য সম্পর্কে পরামর্শ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয় এবং সম্ভব হলে তাদের পছন্দের ভিত্তিতে সেবার বিকল্প পন্থাও নির্ধারণ করার ব্যবস্খা করতে হবে। সেবার মান নির্ণয়ের প্রাক্কালে ব্যবহারকারীদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। যারা খাজনা দেন, যাদের অর্থে দেশ চলে তারা প্রভুত্বের অধিকারী। ভৃত্যরা প্রভু হয়ে প্রভুদের সাথে ভৃত্যের আচরণ স্বাধীন দেশের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েই সিটিজেন চার্টারের ধারণা বিকশিত হয়।
] শিষ্টাচার ও সহযোগিতা : সরকারি কর্মচারীদের বিনয়ী এবং ভদ্র হওয়া বাঞ্ছনীয় । নাগরিকরা তাদের স্যার স্যার বলবেন আর তারা তাদের সাথে অধ:স্তনের ন্যায় ব্যবহার করবেন এই রীতি স্বাধীন দেশের রীতি নয়। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচিতি ব্যাজ থাকবে যাতে করে তাদের সহজে চেনা যায় এবং প্রয়োজন হলে উর্ধ্বতন বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট তাদের নাম ধরে অসদারণের জন্য নালিশ করা যায়। অভিযোগ তদন্ত ও প্রতিকারের পন্থা : প্রত্যেক সরকারি দফতরে অভিযোগ বাক্স থাকবে এবং এই বাক্সে কিভাবে অভিযোগপত্র জমা দিতে হবে, গৃহীত ব্যবস্খা সম্পর্কে কখন কিভাবে খোঁজ-খবর নিতে হবে তার প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্খা থাকতে হবে।
আবার সেবা সংস্খাগুলোকে স্বল্পমূল্যে স্বল্প সময়ে সর্বোচ্চ মানের সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
যাতে করে নাগরিকরা তাদের সরকার ও শাসন ব্যবস্খা সম্পর্কে কখনো হতাশা ব্যক্ত করতে না পারেন।
সিটিজেন চার্টারের কনসেপ্টটি যুক্তরাজ্য ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফন্সান্স, জার্মানীসহ বিশ্বের বেশ কিছু উন্নত দেশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। বৃটিশ রেল এবং লন্ডন আন্ডার গ্রাউন্ডে এই চার্টারের ইম্প্যাক্ট অত্যন্ত সুস্পষ্ট। এক্ষেত্রে রেল চলাচলের নির্ভর যোগ্যতা এবং সময়ানুবর্তিতার এটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য মাত্রা এবং তাকে আরামদায়ক রাখার প্রতিশ্রুতি প্রণিধানযোগ্য। এখানে যদি কোনও ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে বা গন্তব্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হয় এবং আরোহীরা কষ্ট পায় তাহলে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্খা রাখা হয়েছে।
লন্ডন আন্ডার গ্রাউন্ডের কাস্টমার চার্টার অনুযায়ী দ্রুত, নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য এবং স্বল্প ব্যয়ে ট্রেন সার্ভিস দেয়া কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। এতে যদি তারা ব্যর্থ হন, কোন আরোহী যদি প্লাটফরমে এসে ২০ মিনিটের বেশি অপেক্ষা করতে বাধ্য হন তাহলে তিনি তারা রিটার্ন ভাউচার পাবার যোগ্যতা অর্জন করেন অর্থাৎ তিনি ভাড়ার টাকা ফেরত পাবেন। ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছতে ১৫ মিনিট দেরী হলেও ভাড়ার টাকা ফেরত দেয়া হয়। প্রত্যেক স্টেশনে এ নিয়মটি পোস্টারের মাধ্যমে বহুল প্রচারের ব্যবস্খা করা হয়েছে এবং তা কার্যকর হচ্ছে কিন্তু আমাদের দেশে কি হচ্ছে? আমি বেশ কয়েক বছর ঢাকা-সিলেট রুটে আন্ত:নগর ট্রেনের যাত্রী ছিলাম, টিকেট প্রাপ্তির বিড়ম্বনা, ট্রেনের বিলম্ব এবং যাত্রী হয়রানি ও দুর্ভোগ যে কত মর্মান্তিক হতে পারে তা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ আমার হয়েছে। এখানে কারুর কোনও দায়িত্ব নেই।
টিকেটের পয়সা নিয়ে খালাস। গন্তব্যে পৌঁছতে একটি আন্ত:নগর ট্রেনের ৩ ঘন্টা থেকে ১৮ ঘন্টা পর্যন্ত বিলম্ব হতে দেখা গেছে। রেল কর্তৃপক্ষের এই অযোগ্যতার কোনও জবাবদিহিতা নেই এবং আরোহীদের হয়রানি এবং ক্ষয়ক্ষতির খেসারতেরও কোনও ব্যবস্খা নেই।
বাংলাদেশে অফিস-আদালতে সেবা পাবার বিড়ম্বনা এবং ঘুষ লেনদেনের কালচারের কথা আমি এখানে বলবো না। কর্তৃপক্ষীয় মহলের কেউ কেউ মনে করেন যে সাম্প্রতিক দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে ঘুষ দেশ থেকে পালিয়েছে।
তা যে এখন ঝুঁকি ভাতাসহ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়ে বেশির ভাগ অফিস থেকে বাড়ি-হাট-বাজার চলে গেছে তার খবর কতজন রাখে?
এই রিপোর্ট অনুযায়ী একজন রফতানিকারককে তার আমদানি পণ্যের কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের জন্য সমুদ্র ও বিমান বন্দরে ১২ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, রফতানিপণ্য শিপমেন্টের ক্লিয়ারেন্স নিতে লাগে ৯ থেকে ৭৫ দিন এবং রফতানি সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি হতে সময় লাগে ৭ থেকে ৩০ দিন। আবার সরকারি এজেন্সিগুলো বিশেষ করে কাস্টমস, বন্দর কর্তৃপক্ষ, কর অফিস, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং বিভিন্ন দফতরের সাথে রফতানি সংক্রান্ত কাজে যোগাযোগ করতে গিয়ে যে সময় লাগে তা রিপোর্টের ভাষায় এতে আরো বলা হয়েছে যে ব্যবসায়ী সংস্খাগুলোকে আমাদানি-রফতানি প্রক্রিয়ার বিলম্ব মোকাবেলার জন্য তাদের বিক্রয়লব্ধ আয়ের প্রায় ৭ শতাংশ সরকারি এজেন্সিগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে দিতে হয়। এ অর্থ সরকারি কোষাগারে যায় না। যায় তাদের পকেটে। সরকার ডিউটি ড্র ব্যাকের একটা সুযোগ ব্যবসায়ীদের দিয়ে থাকেন।
দেখা গেছে যে, ড্র ব্র্যাক অফিস থেকে এ সংক্রান্ত একটি চেক পেতে পড়ে ৫৮ থেকে ১২০ দিন সময় লাগে এবং এজন্য ব্যয় অতিরিক্ত ছয় শতাংশ অর্থ। আবার সরকারের এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় ৭৩% রফতানিকারক তাদের রফতানি অর্ডারও হারিয়ে ফেলেন। ব্যবসায়ীরা পয়সা দিতে পারেন। পয়সা দিয়ে তারা পার পেয়ে যান। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ যাকে আমরা নাগরিক বলি তার পয়সা দেয়ার ক্ষমতা কতটুকু? আর দিলেও তাকে দিতে হয় জমি বা হালের বলদ বিক্রি করে।
এই হয়রানির শেষ কি হবে?
বাংলাদেশে সেবাধর্মী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সুনাম খুবই কম। ঘুষ এবং স্পীড মানি না হলে এখানে ফাইল নড়াচড়া করে না। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও টেলিফোন অফিসের দুর্নীতি সকলের মুখে মুখে। বাড়ি-ঘর ও শিল্প-কারখানায় বিদ্যুৎ কানেকশান পেতে হলে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, এখনো ঘুষ দিতে হয়। যারা এক মাসের মধ্যে এই কানেকশান চান তাদেরকে হাইটেনশান তারের বেলায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা এবং লো টেনশান তারের বেলায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়।
ঘুষ না দিলে তার থাকে না, তার থাকলে ক্যাপাসিটি থাকে না ইত্যাদি নানা জটিলতায় দেড় দু'বছর পার হয়ে যাবে সংযোগ পাওয়া যাবে না। গ্যাসের বেলায় ৪০ হাজার টাকা এবং পানির বেলায় এই ঘুষের পরিমাণ ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিস্তৃত বলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা যায়। আবার ট্রেড লাইসেন্স, ফ্যাক্টরী নির্মাণের লাইসেন্স প্রভৃতির জন্য চড়া হারে ঘুষ দিতে হয়। গাড়ীর রেজিস্ট্রেশন ট্যাক্স টোকেন প্রভৃতি নবায়নের কাজও ঘুষ ছাড়া হয় না। উপরোক্ত অবস্খায় সরকার বিভিন্ন দফতরে সিটিজেন চার্টারের প্রবর্তন করে সেবার মান ও সরবরাহ নিশ্চিত করার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তা প্রশংসার যোগ্য।
তারা এ কাজটি শুরু করেছেন সংস্খাপন মন্ত্রণালয়কে দিয়ে। আমার জানা মতে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ বদলি, পদায়ন, পদোন্নতি এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে শৃকôখলামূলক ব্যবস্খা গ্রহণ প্রভৃতি হচ্ছে সংস্খাপন মন্ত্রণালয়ের প্রধান কাজ। সাধারণ মানুষের সেবার সাথে এই মন্ত্রণালয়ের ঘনিষ্ঠ কোনও সম্পর্ক নেই। অবশ্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যথাক্রমে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দফতরের সাথে জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় জড়িত আছে। আবার এই দফতরগুলোর উপর মন্ত্রী পরিষদ বিভাগেরও যৌথ কর্তৃত্ব রয়েছে।
এ প্রেক্ষিতে সংস্খাপন মন্ত্রণালয়ে সূচিত সিটিজেন চার্টার জেলা উপজেলা পর্যায়ে কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে কিনা তা ভেবে দেখার বিষয়। সংস্খাপন মন্ত্রণালয় ছাড়া অন্য যে কয়টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সিটিজেন চার্টার প্রবর্তন করা হয়েছে সেগুলোর অবস্খাও একই রকম। আবার এই চার্টার সচিবালয়ের বাইরের কোনও দফতরেও যে প্রচলন করা হয়েছে তার তথ্য পত্র পত্রিকায় দেখা যায়নি। বিদ্যুৎ ও গ্যাস অফিস, ওয়াসা, টেলিফোন দফতর, আয়কর, কাস্টমস, স্খল, নৌ, সমুদ্র ও বিমান বন্দর, রেলওয়ে ও বিমান পরিবহন, আমদানি-রফতানি অফিস, থানা, ডিসি, এসপি, টিএনও অফিস এগুলোকে উন্মুক্ত রেখে নির্বাচিত কয়েকটি জনসম্পৃক্তিহীন দফতরকে সিটিজেন চার্টারের আওতাভুক্ত করে এর লক্ষ্য অর্জন সম্ভবপর হবে বলেও আমার মনে হয় না।
দেশে এখন দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চলছে।
দু'জন সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক সাবেক মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, শ্রমিক নেতা এখন জেলে এবং বিচারাধীন রয়েছেন। সাধারণ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুর্নীতি বিরোধী এই পদক্ষেপকে অভিনন্দন জানিয়েছিল। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই মনে হচ্ছে দুর্নীতি বিরোধী তৎপরতা গন্তব্য হারিয়ে ফেলছে অথবা সমাজ জীবন থেকে তা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা সপরিবারে জেলে যাচ্ছেন অথবা আদালত থেকে তাদের জেল জরিমানা করা হচ্ছে কিন্তু মানুষের জীবনযাত্রার উপর তার প্রভাব পড়ছে না। কালোবাজারী মুনাফাখোরী বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সচিবালয়সহ রাজধানী, বিভাগ, জেলা, উপজেলাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্খাপিত সরকারি বিভাগ ও এজেন্সিসমূহের দফতর ও তৎপরতায় দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রমের প্রতিফলন দেখা যায় না। হাট-বাজার, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রভৃতিতে তো নেই বললেই চলে। এর কারণগুলো অনুসান করা দরকার। সরকারি উদ্যোগ ও পরিকল্পনার সথে জনগণের সম্পৃক্তি বৃদ্ধি করতে না পারলে কোনও কার্যক্রমই সফল হতে পারে না। দুর্নীতি বিরোধী অভিযানকে সফল করতে হলে মানুষের মন মানসিকতার পরিবর্তন আনার জন্য যে শিক্ষা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন তার ব্যবস্খা করাও অপরিহার্য।
শুধু ফরমাস দিয়ে কোনও কাজ আদায় করা যায় না। এর জন্য মানুষের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকতে হয়। এই সংক্ষিপ্ত কথাগুলো বলার পর সিটিজেন চার্টারের বিষয়টিও কিছুটা বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
সিটিজেন চার্টারে সাধারণ মানুষকে কাস্টমার হিসেবে গণ্য করে তাদের অবস্খানকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ লক্ষণীয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ৭ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অফিস আদালত ও সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহে কাস্টমার হিসেবে তাদের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার প্রাক্কালে আমাদের অবশ্য মনে রাখতে হবে যে উন্নত দেশগুলোর ন্যায় আমাদের দেশে নেই, এই মার্কেটে লেনদেনের শর্ত নির্ধারণ করেন বিক্রেতারা, ক্রেতারা নয়।
বিক্রেতাদের অবস্খান এখানে অনেক শক্তিশালী। সিটিজেন চার্টার তৈরি করে হঠাৎ করে তাদের অবস্খানকে দুর্বল করা খুবই কঠিন কাজ হবে। প্রভুর মানসিকতা ছেড়ে সরকারি অফিসারদের পক্ষে রাতারাতি সাধারণ নাগরিকদের বু হিসেবে গ্রহণ করা আরো কঠিন কাজ। এ জন্য পরিকল্পিতভাবে শিক্ষা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানসিকতার পরিবর্তন এবং অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।