আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিজানুর রহমান শমশেরী : একজন অকালপ্রয়াত প্রতিভাধর কবি

এটা আমার জন্য অনেক সুখকর যে, আমি এখন ব্লগ ও ফেইসবুক থেকে নিজেকে আসক্তিমুক্ত রাখতে পারছি। পরিবার ও পেশাগত জীবনের কর্মব্যস্ততা অনেক আনন্দের। ... ব্লগে মনোযোগ দিতে পারছি না; লিখবার ধৈর্য্য নেই, পড়তে বিরক্ত লাগে।

কবিপরিচিতি কবি মিজানুর রহমান শমশেরী ৮ই কার্তিক ১৩৫৩ বঙ্গাব্দে (১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে) ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার অন্তর্গত সুতারপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২৯ আষাঢ় ১৩৮৮ বঙ্গাব্দে (১৪ জুলাই ১৯৮১) বিয়ের পূর্বরাতে হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অকালে প্রয়াত হোন । তবে এ-ও জনশ্রুতি আছে যে, আরাধ্য মানবীকে না পেয়ে বিয়ের আগের রাতে তিনি আত্মহত্যা করেন।

তাঁর পিতার নাম শমশের উদ্দিন। সর্বজ্যেষ্ঠা এক বোন ও পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে শমশেরী ছিলেন পঞ্চম। একান্ত কৈশোর থেকেই লেখালেখির প্রতি শমশেরীর আগ্রহ গড়ে ওঠে। সাহিত্যসাধনা ও সাহিত্যচর্চা ছিল তাঁর প্রাণ। স্কুল-কলেজের বন্ধু-বান্ধবী ও এলাকার তরুণ-কিশোরদের নিয়ে গড়ে তোলেন সাহিত্যচর্চা বিষয়ক আসর 'পদ্মাপার খেলাঘর'।

এর পূর্বে আদমদজী নগরের 'অগ্নিকন্যা খেলাঘর' আসরের সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে তিনি তাঁর খেলাঘর জীবন শুরু করেন। শমশেরী ৭০ দশকের কবি। ধূমকেতু, দৈনিক বাংলার বাণী, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সমাচার সহ তদানীন্তন গুটিকতক জাতীয় দৈনিকের সবকটাতেই এবং অন্যান্য লিটল ম্যাগাজিন ও সাময়িকীতে তিনি নিয়মিত লিখতেন। দৈনিক বাংলার বাণীতে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে লিখতেন উপ-সম্পাদকীয়। তাঁর জীবদ্দশায় একটিমাত্র কাহিনীকাব্য 'অশ্রুমালা' প্রকাশিত হয়েছিল।

তাঁর অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপির আয়তন সুবিশাল। তাঁর একটি পাণ্ডুলিপি আমার কাছে রক্ষিত আছে। এই পাণ্ডুলিপিতে যে বইগুলোর নাম উল্লেখ আছে তা হলো : জীবন যন্ত্রণা, বসন্ত পরাগ, একাত্তরের চিঠি, শিকল ভাঙ্গার গান (গান) ও হিজলফুলের মালা (কাহিনীকাব্য)। এখানে রয়েছে সর্বমোট ১৩৭টি কবিতা, ৪০টি ছড়া ও ৫২টি গান। ****************************** তুমি কি আমার কথা ভাবো ? তুমি কি আমার কথা ভাবো? কঠিন প্রাচীরে কান পেতে শুনি মুক্তির দিন একদিন আসবেই সেইদিন তোমাকে আবারো কাছে পাবো।

যেখানে সূর্যের সোনালি বিচ্ছুরণ এখনো হোঁচট খায় পড়ন্ত বিকেলের বসন্ত যৌবনে যেখানে ধ্বনিত পাখির কাকলি প্রাচীরের বাঁধ ভেঙ্গে চলে যাবো তুমি আর আমি পায় পায় সেই নির্জনতায়। রাত্রির নিঃসঙ্গতায় একা জেগে আছি আমার চোখে নেই ঘুম, চোখের সামনে প্রাচীরের গায় স্বপ্নের পাখিগুলো ডানা ঝাঁপটায় মুক্তির অন্বেষা খুঁজিতেছে পথ সুপুষ্ট মৌসুম। এখনো আমার চোখে নেমে আসে সন্ধ্যার পশ্চিম আকাশ, পলাশের লাল রঙে রঙিন পদ্মাপার পারভাঙ্গা তীরে নব কিশলয়ে পালতোলা নায়ে স্বচ্ছ সলিলে গোধূলির সুস্পষ্ট প্রকাশ। এই নির্জনতায় বসে বসে ভাবি আবারো তোমায় কাছে পাবো গানে আর কবিতায় কাটাবো প্রহর মধুরাত এনে দিবে চাঁদের সুষমা তারার মালিকা গেঁথে কবরী সাজাবো। তুমি কি আমার কথা ভাবো? আমার কথা কি ভাবো? এই মাটি এই মন এখানে নরম মাটি কাদামাখা ঘোলা জল আমি তো চাইনি সবুজ ফসলের মাঠ চেয়েছিলাম বাদামি রঙের তামাটে ফসল এবং অঘ্রাণের শীতের সকাল, উন্মুক্ত কপাট।

ফুল পাখি নদী জল কালো চোখ এলো চুলে সাজানো হরিৎ ক্ষেত্র সুশোভিত নদীতটে আমার বাসনা নেই; শুধু বলিষ্ঠ আঙ্গুলে কাস্তে চেপে এঁকে যাবো ছবি আমার প্রচ্ছদপটে। পাখি যদি গান গায়, কুমারী ধানের ক্ষেতে জেগে থাকে প্রজাপতি রাতের শিশিরে আমি শুধু দেখে যাবো দূর থেকে আলপথে যেহেতু আমার মন মিশে আছে মাটির গভীরে। কান্ত দেখে হাসি আমার কান্ত দেখে হেসে মরি বুকের ভিতরে টক টক টক দু হাত দোলন যেন বেজে চলে সময়ের ঘড়ি। খাবার বাসন নেইনসিগ্রেটের বাক্সটা পকেটের পুঁজি মনের দর্পনে ঘুরে ফিরে আপন সত্তাকে আমি খুঁজি। চোখের কোটরে আঁটা একজোড়া চোখ যেন সুপারির মতো নিঃশেষে আমাকেই গ্রাস করে যাবে এমন উদ্ধত।

অন্তহীন পথে হেঁটে চলি মাইল ক্রোশ পাঁচ দশ বিশ আমার গতিকে রুখতে পারে না সিগন্যাল ট্রাফিক পুলিশ। সারাদিন গাড়ি চলে, ধোঁয়া ছুঁড়ে গাড়ি চলে ট্রাক বাস রেল আমি চলি দ্রুতগামীনকারা যেন ডেকে বলেনফেল ফেল ফেল। তুমি চলে গেছো তুমি চলে গেছো তাই চলে গেছে স্বপ্নের সে দিনগুলি তুমি চলে গেছো তাই দূরে সরে গেছে সন্ধ্যা-গোধূলি। মেঘের পরতে লিখা আছে শুধু বাতাসে ওড়ানো বেগ তুমি চলে গেছো তাই বুঝি আর আসেনি শ্রাবণ মেঘ। ওই বনপথ রেখে দিয়েছে আজো বিদায়ী চরণ লিখা জোনাকি মেয়েরা তাই বুঝি আর জ্বালেনি প্রদীপ শিখা।

তুমি চলো গেছো ঝরে গেছে তাই কুসুমের হাসি মুখ তুমি চলে গেছো ভরে আছে তাই বেদনায় কঁচি বুক। শেষের কবিতা এই দেখা যদি শেষ দেখা হয় তবে কেন আসিলাম, ভালোবাসা যদি বেদনাই হয় কেন ভালোবাসিলাম। ফুটিবার আগে যদি ঝরে ফুল কী হবে প্রহর গুনে, জানিবার আগে যদি যাই ভুলে কী হবে কাহিনী শুনে! আকাশ জেনেছে চাঁদের সুষমা সাগর জেনেছে পানি, তুমি যে আমার এতো কাছাকাছি তবু নেই জানাজানি। রাতের আকাশে চাঁদের মরীচি যখন সুষমা আনে সাগরের জল পারভাঙ্গা তটে কথা কয় কানে কানে। সারা তপোবন ঘুমায় যখন রাত্র গভীর হলে নিমতলা থেকে ডাক দেয় পাখি বউ কথা কউ বলে।

বহুদিন হতে সে ডাকে আমার দু চোখে এসেছে নিদ সেই ফাঁকে এসে জানি না কখন কেটেছো মনের সিঁদ। লুটে নিয়ে গেছো তনু-মন-প্রাণ জীবনের যতো ধন সব নিয়ে গেছো, রেখে গেছো শুধু ব্যথা আর ক্রন্দন। হাতের বাঁশরি বাজে না তো আর তালছাড়া হয়ে যায় সুরের লহরী আসে না তো আর আজিকার কবিতায়। শেফালি কুসুম আতিয়া যখন শুনিবে সকল কথা ওদের চোখেতে যদি আসে জল কোথা রবে মানবতা! বিরহবেদনা বুকে নিয়ে যদি আমারই সময় কাটে একবারও তুমি কাঁদিবে না এসে সেই পুকুরের ঘাটে! যেখানে রয়েছে কচুরি ফুলেরা লাজুক বঁধুয়া বেশে হংসমিথুন জলকেলি করে প্রতিদিন যথা এসে, সন্ধ্যা কি কভু নামিবে না আর সোনালি ধানের শীষে? এতোটুকু সমৃতি রহিবে না বুঝি জীবনের সাথে মিশে। সব কিছু তুমি ভুলে যেতে পারো, পারিবে কি ভুলে যেতে আসবে যখন নিশিজাগা চাঁদ তোমাদের আঙ্গিনাতে? মনের বনেতে মন হারাবার এসেছিল যতো রাত বহু রজনীর একটি প্রমাণ ঘুমভাঙ্গা ওই চাঁদ।

আমি চলে যাবোনবহু দূরে যাবো, আসিব না কোনদিন, দু ফোঁটা চোখের জল ফেলে ওগো শোধ করে যাবো ঋণ। সমতার ঝড় একটা ঝড় উঠুক, একটা ঝড় ভেঙ্গে চুরে যাক প্রাসাদ কানন ক্ষুদ্র কুটিরের চালান খড়, একটা ঝড় উঠুক, একটা ঝড়। উঠুক না বেজে প্রলয় বিষাণ ভয় কিরে আজ ভয় কিরে আর, সে ঝড়ে জাগুক শ্রমিক কৃষাণ আশার স্বপন ভেঙ্গে গেছে যার। আসুক তুফান প্রলয় বেগে ভাঙ্গুক রে সব ভাতের বাসন বাতাসে উড়ুক ছিন্ন কাঁথা ধুলিতে পড়ুক রাজার আসন। বিশ্বে পড়ুক হায় হুতাশা নিঃস্ব যারা খুঁজুক রুটি সকল মানুষ এক সাথে ফের নতুক করে বাঁধুক খুঁটি।

প্রভাত প্রতীক্ষা রাত জেগে বসে আছি প্রভাতের প্রতীক্ষায় জানি না কখন ফুরাবে তিমির রাত, রাতের দীনতা চিরে আলোর বন্যায় অবশ্য তোরণ দ্বারে আসবেই সুপ্রভাত। রাতের ~েনঃশব্দে শুনি আলোর মহোৎসব চোখে মোর সম্ভাবনার উজ্জ্বল জ্যোতি কান পেতে শুনি ধৃষ্ট আত্মার কলরব মৃত্যুর করাল ভেদি জীবনের স্তুতি। রাতের দীনতায় এসে অদৃশ্য তৃতীয় হাত বারবার বিভ্রান্ত করেছে বন্দি আত্মার চূড়ান্ত পরাজয়ে যখন টুটবে রাত অবশ্যই বুঝে নিবে কী স্বাদ ধৃষ্টতার। ব্যর্থ যৌবন তোমাদের কঠিন প্রহরায় প্রত্যহ এখানে নিঃসঙ্গ প্রহর কেটে যায়। এখানে পড়ন্ত রোদে উড়ায় পথের ধুলি, ঝরে যায় নব যৌবনের বসন্ত গোধূলি।

প্রত্যহ এখানে রুদ্ধ হয় জীবন প্রশ্বাস, স্নায়ুতে স্নায়ুতে জড়তা জড়ানো যৌবনোচ্ছ্বাস। মৃত্যুর পদাবলি প্রত্যহ এখানে শুনি নিঃসঙ্গ নির্জনতায় তাই তো প্রহর গুনি। কতোদিন বাকি আর মুক্তির আসন্ন প্রভাত, ব্যর্থ হলো জীবনের যৌবন বসন্ত রাত। 'অবাক পৃথিবী' 'অবাক পৃথিবী, অবাক করলে' অবাক তোমার কাজ, ওই ক্ষুধাতুর কাঁদে রাজপথে রাজপথও কাঁদে আজ। মহারাজ পোষে কুকুর প্রহরী দারোয়ান দিয়ে ছুটি কুকুরে চিবায় মাংস পোলাও মানুষ পায় না রুটি।

জঠর জ্বালায় চলে গেছে মাতা শিশুরে করিয়া নিঃস্ব কাক শকুনেরা মাংস খেয়েছে হায়রে অবাক বিশ্ব! চারিদিকে শুধু লাশ আর লাশ ভরেছে গোরস্থান, বিসমৃত আঁখি খুঁজে ফিরে হায় কোথা এর সমাধান! দেয়ালিকা পাষাণ মানুষ বুঝলে না কেউ জীবনের অভিপ্রায়, তাই লিখে যাই অমর কাহিনী মূক দেয়ালের গায়। আঁধার জীবনে আলেয়ার আলো স্বপ্নসৌধ গড়ে, দিনের আলোতে রাতের স্বপন নিমেষে নিমেষে ঝরে। চলতি পথের এধারে ওধারে নিত্য বাসনা কুড়াই, রোশনিবিহীন বাস্তবতায় ধুলিতে যে তা ওড়াই। তিমির রাতের আঁধার ভাঙ্গিয়া স্বপ্ন-আহত পাখি নিয়ত খুঁজিছে আলোর পরশ তন্দ্রাবিহীন আঁখি। মানবতাহীন মানব সমাজনহায়রে কঠিন বিধা! মানুষ চিবোতে মানুষের হাড় কেউ তো করে না দ্বিধা।

মানুষে মানুষে এতো ব্যবধান! কালের প্রবাহ শেষেন হায়, বুঝি আজ সব খোয়ালাম বিংশুতি যুগে এসে! আশা-নিরাশার এই ছোট নীড়নএখানে স্বজন নাই, দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে এ কাহিনী লিখে যাই। ইতিহাস তোমরা যারা ইতিহাস লিখো ইতিহাস হয়ে থাকবে, ক্ষুধার্ত মানুষের মৃত্যুর শ্বাস বিষাক্ত করে গেলো বিশুদ্ধ বাতাস ওদের কথা কি লিখে রাখবে? তোমরা যারা ইতিহাস পড়ো ইতিহাস নিয়ে থাকবে পা টিপে পেলো যারা শত পদাঘাত লাঞ্ছিত মানুষের বঞ্চিত সাধ চিরদিন চাপা পড়ে থাকবে। তোমাদের ইতিহাস ছাড়া আরো কিছু ইতিহাস আছে, তোমরা তা পড়ো নাই, আমরা পড়েছি বাস্তবের কাছে। তোমরা লিখেছো জয়-পরাজয় যুদ্ধের প্রলয়-উচ্ছ্বাস, আমরা পড়েছি বাস্তবের কাছে সাধারণ ইতিহাস। তোমরা এঁকেছো ভৌগলিক সীমা আমরা তা দেখি নাই আমরা দেখেছি বাস্তবের কাছে আমাদের সীমা নাই।

তোমরা লিখেছো রাজাদের কাছে প্রজাদের অধিকার, আমাদের ইতিহাসে স্পষ্টই লিখা কিছুই পাইনি তার। ইতিহাস সে তো ভুল নয় তোমাদের আমাদের আছে, সবার ওপরে রয়েছে আকাশ প্রশ্ন করো তার কাছে। সময়ের বিবর্তনে ভেসে গেলো কতো মৃত্যুর ইতিহাস, তোমরা লিখোনি, আমরা লিখিনি সবকিছু লিখেছে আকাশ। বন্যা বন্যা এলো বন্যা গো শ্যামল মায়ের কন্যা গো বন্যা এলো দেশে দেশ ভাসালো গাঁও ভাসালো মাঠ ভাসালো ঘাট ভাসালো পাগলা হাসি হেসে। যায় ভেসে কার ভিটে-মাটি হালের বলদ ঘটি-বাটি মাঠভরা সব ধান, কৃষাণ বধূর মিষ্টি হাসি ভাসিয়ে দিল সর্বনাশী উল্লাসী তার প্রাণ।

হতাম যদি হতাম যদি আমি কোন গাঁও গেরামের চাষা মাটির সাথে থাকতো আমার নিগূঢ় ভালোবাসা। নদীর পারে থাকতো আমার ছো- সোনার গাঁও উজান-ভাটি স্রোতের টানে চলতো আমার নাও। মাঠের পাশে থাকতো পাতা মাচান-বাঁধা খড় বাড়ির পাশে থাকতো আমার ছো- গোয়ালঘর। গোয়াল ভরা থাকতো গরু আথাল ভরা গাই সারা গাঁয়ের মানুষ আমায় ডকতো কৃষাণ ভাই। লাঙ্গল কাঁধে মাঠে যেতাম সূর্য ওঠার আগে স্বপ্ন আমার সফল হয়ে ফুটতো নবীন রাগে।

দাদুর পায়ে খড়ম দাদুর পায়ে খড়ম নাকের ডগায় চশমা আঁটা মেজাজ বড় গরম। মাথায় বড় পাগড়ি আঁটা লম্বা বেজায় পাতলা গাঞ্চটা দুই হাতেতেই লাঠি-সোটা বন্ধু যেন পরম। বন্ধু তাহার জুটলো আরেক বয়স তাহার কুড়ি চারেক মুচকি হেসে ডাকলো বারেক মেজাজটা তার নরম। দিন কয়েক হয় মরছে দাদি তাইতো দাদু করবে সাদি বন্ধু শুনে খবর আদি বললো, ছিঃ ছিঃ শরম! বিদ্রোহী পিঁপড়েরা সব জোট করেছে রাজার কাছে বিচার চাই, দেখছো না তাই এক মিছিলে চলছে কেমন চলনটাই! ওদের রাজা বেজায় পাজি ওদের প্রতি নজর নেই, রাজা থাকেন তিনতলাতে ওদের বাসা গাছতলাতেই। ওরা ফলায় শস্য-ফসল রাজা করেন হুকুমজারি, রাজবাড়িতে থাকবে জমা দেখছো কেমন অত্যাচারী! নিত্য রাজা খায় যে পোলাও মাংস চিনি ঘি লুচি হাভাতে সব শ্রমিকেরা ওদের বুঝি নেই রুচি! ওদের রাজা অত্যাচারী তাই করেছে বিদ্রোহ দেখছো না তাই এক মিছিলে কেমন চলার আগ্রহ! প্রতিভা ইতিহাস বিজ্ঞান ধারাপাত অঙ্কর একগাদা বই পড়ে ও-পাড়ার শঙ্কর।

মাথা নয় যতোটুকু পড়ে বই ততোধিক সারাদিন পড়াশুনা, চেহারাটা লিকলিক। রামপাল শিক্ষক তারে যিনি পড়াতেন প্রতিভাটা দেখে তিনি মাঝে মাঝে ডড়াতেন। এতো ঞ্চান কোথা পেলো এতোটুকু ভাণ্ডে? রামপাল ভাবেন বসে প্রতিদিন সানডে। ছড়াকারের ছড়া এক. সুকুমার বড়ুয়া ঝানু পাকা পড়ুয়া যতোসব কথা বলে সবকিছু ঘরোয়া। ছড়া-গড়া মনটা নেই উৎকণ্ঠা সপ্তাহে মনে পড়ে দুই চার ঘন্টা।

দুই. ছড়া কাটে ছড়াকার মুখ ভরা দাঁড়ি তার পল্টনে লোকটারে দেখা যায় বারবার। কী যেন কী নাম তার পড়ে বই নামতার এক টাকা পাঁচ সিকে এক দুই তিন চার। কবিতার জন্য কবিতা লিখি নাই তোমরা বুঝবে না আমার কবিতার ভাষা আমি কবিতার জন্য কবিতা লিখি নাই। হৃদয় কন্দরে হতাশার জমাট অন্ধকার ক্ষুধার মানিক খোঁজে পথ, কোথায় পথ, আহার্যের এক টুকরো রুটির ঠিকানা! বিড়ম্বিত জীবনের অনন্ত জিঞ্চাসান তোমরা বুঝবে না আমার কবিতার ভাষা। আমি ক্ষুধার্ত, জঠর জ্বালায় ছুটে যাই উচ্ছিষ্ট রুটির সন্ধানে কোথায় সাহেব-বিবির বালাখানা ডাষ্টবিনে আবর্জনার সাথে মিশে থাকা রুটির টুকরো এবং উচ্ছিষ্ট সালুন, আমি ছুটে যাই হোটেলে হোটেলে কোথায় পরিত্যক্ত ভাতের ফ্যান বাঁচার তাগিদে ছুটে যাই শুধু খেতে চাই তোমরা বুঝবে না আমার কবিতার ভাষা আমি কবিতার জন্য কবিতা লিখি নাই।

আমি মানুষ! আমার বিশ্বাস হয় না সভ্যতার বিংশুতি যুগে আমার পরনে বস্ত্র নেই রাতে ফিরার মতো এক টুকরো চলার ঠিকানা খাবারের বাসন যা প্রয়োজন প্রত্যহ মানুষের আমার তা নেই। আমার রাত্র কাটে খড়কুটোয় প্রত্যহ নতুন আস্তানায় আমার শীতের কাঁথা আঁধারের কালো কুজ্ঝটি বুকের কঞ্চখান হাড়ে চাপা পড়ে থাকা প্রাণ মানে না নিয়ন্ত্রণ। স্নায়ুতে স্নায়ুতে আনে কঠোর যন্ত্রণা বিংশুতি যুগে আমি মানুষন এ আমার বিশ্বাস হয় না। হায়রে জীবন, এটাই যদি জীবন হয় এমন জীবন চেয়েছিল কারা? সভ্যতার উষালগ্নে আমার মনে আদিম প্রবৃত্তি খাবারের জন্যই কেবল ব্যস্ততা যেখানে যা কিছু পাই কেবল খেতে চাই। ইচ্ছে হয় সভ্যতার বেড়াজাল অগ্রাহ্য করে আদিম হিংস্রতায় ফিরে যাই; তোমরা বুঝবে না আমার কবিতার ভাষা, আমি কবিতার জন্য কবিতা লিখি নাই।

শেষ কবিতা শত বেদনার অঙ্কুর বুকে চলিনু বন্ধুগণ যে কথা কখনো বলিতে পারিনি, বলি তা কিছুক্ষণ। সেই শুভদিনে লুটাবো ধুলায়নশুনে রাখো মোর বাণী, যারা ছিলে মোর বন্ধু সুদিনেনফেলো না চোখের পানি। অশ্রুতে নয়, ক্রন্দনে নয়, ভালোবাসা দিয়ে মোরে সুজন বন্ধু তোমরা আমারে বেঁধে রেখো প্রেম-ডোরে। যেখানে নরম ঘাসের সবুজে নিশীথে জোনাক জ্বলে বিটপীর শাখে যেখানে পাখিরা অনন্ত কথা বলে, যেখানে বাতাস ধীরে বহে ধীরেন্সন্ধ্যা যেখানে আনে বন্ধু আমার সুখের বাসর বেঁধে দিও সেইখানে। যে রাতে চলিব সুদূরের পথে জ্বালিয়ে আগরবাতি বন্ধু আমার বিদায়-শ্রাদ্ধ করে দিও রাতারাতি।

দিনের আলোকে যন্ত্রণা আনে, রাতের আঁধারে ঘুম, জোছনার সাথে মঞ্জরীগুলো যখন খাইবে চুম, গোসল করাতে হবে না বন্ধু, হবে না কাফন দিতে কখনো তো আর আসিব না এই মানুষের পৃথিবীতে। আতর-গোলাপ মাখিলে কী হবে, কবরে ঢাকিবে দেহ, তোমরা যে মোর বন্ধু স্বজন যাইবে না সাথে কেহ। বাসর শয়নে ঘুমুবো যখন, ঘুমুবো অহর্নিশি, সে ঘুম ভাঙ্গাতে যাবে না কখনো আজিকার প্রতিবেশী। রাখী-বন্ধন খুলিবে বন্ধু, আর কিছু আনিবে না, কী সুখে প্রহর কাটাবো সেখানে কেউ তাহা জানিবে না। আকাশ মাটিতে ক্লান্ত বালক খেলেছি কতো না খেলা, সবকিছু তার ভুলে যাবো আমিনভুলে যাবো এই বেলা।

আমি যে ঘুমুবো কবরের দেশে তবু তো আমার লাগি তারকা ফুটিবে, চন্দ্র উঠিবে আকাশ রহিবে জাগি। আমাকে খুঁজিয়া ক্লান্ত বাতাস ধানক্ষেতে দিবে নাড়া, শিয়াল ডাকিবে কবরের পাশে, তবু তো দেবো না সাড়া। পাষাণ গ্রথিতে বেঁধো না বন্ধু আমার কবরখানা, শ্রাবণ-মেঘেরা ঢালে যদি জল, আহা কী যে সান্ত্বনা! জোছনার সাথে ফোটে যদি কভু হাসনাহেনার দল, নরম ঘাসের সবুজে সবুজে ভরিবে কবরতল। ঝিঁঝির মেয়েরা কবরের পাশে গাহে যদি কভু গান, ইঁদুর বেজিরা বুঝে নিবে তবু এখানে কবরস্থান। আঁধার নিশীথে জ্বেলো না বন্ধু মোম কী মাটির দীপ, আমি যে কখনো জাগিব না আর ঘুমিয়ে রহিব ক্লীব।

আসিব না আর তোমাদের সাথে কহিতে অনেক কথা আমি যে বন্ধু বুকে টেনে নিব চিরন্তন নীরবতা। রাতের আঁধারে ফুটিবে যখন আকাশে অনেক তারা তারই সাথে মোর জেগে রবে কিছু ছোট-খাটো বেদনারা। মৌসুমি বায়ু আনে যদি কভু ফসলের কিছু তান, তারই সাথে মোর শুনিবে বন্ধু জীবনের কিছু গান। যে কথা শুনিতে জেগে রবে তুমি রাতের পরেতে রাত ফাগুনের বনে পাখির কণ্ঠে শুনিবে অকসমাৎ। কেউ বুঝে নিবে, কেউ না বুঝে কাঁদিবে সেদিন জানি তবু অনুরোধ কেঁদো না বন্ধু পুরনো সে ব্যথা টানি।

যে ব্যথা ভুলিতে চলে গেছি আমি দূর হতে দূর দেশে তোমরা সে কথা ভুলে যেও ভাই আমাকেই ভালোবেসে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.