আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিচারবহির্ভূত হত্যা চলতে পারে না: মিজানুর

সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানোর অভিযোগের মধ্যে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।

’৭২ এর সংবিধান নিয়ে ওই আলোচনায় মিজানুর বলেন, “বাহাত্তরের সংবিধানের প্রতি যদি আমাদের সত্যিকার অর্থে আস্থা থাকে, তাহলে বুঝতে হবে বিচার বহির্ভূত কোনো কিছুই একটি সভ্য সমাজে হতে পারে না। যে কোনো অজুহাতেই হোক না কেন, এটা হতে পারে না।

“বন্দুকযুদ্ধের কল্পকাহিনী, ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার এগুলো কিন্তু আইনের শাসনের পরিপন্থি। এগুলো সভ্যতা ও মানবাধিকারের পরিপন্থি।

“এগুলো চললে শেষ পর‌্যন্ত বিচার বিভাগ, বিচার অঙ্গন, আইনজীবীদের কোনো প্রয়োজনই এই সমাজে থাকবে না। নিশ্চয়ই সেই অবস্থায় আমরা যেতে চাই না,” বলেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।

বিরোধী নেতা-কর্মীদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার অভিযোগ করলেও সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যারা নিহত হয়েছে, তারা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে।

ধর্মীয় রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন

মিজানুর রহমান ধর্মকে আশ্রয় করে রাজনীতির বিরোধিতা করে বলেন, এতে সংবিধানের ব্যত্যয় ঘটছে।

“যেহেতু সংবিধানে ১২ অনুচ্ছেদ ফিরেছে। এখন কিভাবে দেশে কেউ কেউ ধর্মীয় লেবাসে রাজনীতি করতে পারে? কেন ধর্মের নামে রাজনৈতিক দল পেশিশক্তি প্রদর্শনের সুযোগ পায়?”

সংবিধানে ১২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িকতা, রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদাদান, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার, কোনো বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তার ওপর উৎপীড়ন বিলোপ করা হবে।

জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে এক্ষেত্রে রাষ্ট্র নির্দিষ্ট ‘একটি দল’কে ‘বদান্যতা’ দেখাচ্ছে বলেও  দাবি করেন মিজানুর, যদিও দলটির নাম উচ্চারণ করেননি তিনি।

“সংবিধানের প্রস্তাবনার ওপরে আমরা বিসমিল্লাহ যুক্ত করেছি। এটা থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে।

আমরা যেভাবেই বলি না কেন, এটি কিন্তু ৭২’র সংবিধানে ছিল না। ”

‘বাহাত্তরের সংবিধান : বাংলাদেশের অস্তিত্বের দলিল’ শীর্ষক ওই আলোচনা সভায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “আমরা যদি আরো ৫ বছরসরকার চালাতে পারি, তাহলে ১৯৭২’র সালের সংবিধানে ফিরে যাওয়া যাবে। ”

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের পর আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করেছিলেন, বাহাত্তরের সংবিধান ফেরত এসেছে।

আনিসুল হক বলেন, ধাপে ধাপে বাহাত্তরে সংবিধানে ফেরত যাচ্ছেন তারা।

“আমরা ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছি।

আমার বিশ্বাস, সম্পূর্ণভাবে হয়ত পারব না। তার কারণ হচ্ছে, ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সালে মধ্যে সে সব ঘটনা ঘটেছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে বেশ কিছু বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। ”

“তাই সম্পূর্ণভাবে হয়ত আমরা বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যেতে পারব না। কিন্তু আদর্শ যেটা ছিল, মূলকথা যেটা ছিলো, সেগুলোতে আমরা নিশ্চয়ই ফিরে যাব। ”

‘প্রশাসক দিয়ে সিটি চালানো গণতন্ত্রবিরোধী’

সংবিধানের সর্বত্র গণতান্ত্রয়নের  কথা বলা হলেও প্রশাসনের সর্বস্তরে নির্বাচন না হওয়ায় তার ব্যত্যয় ঘটেছে বলে মনে করেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর।

“আমরা শুধু জাতীয় সংসদের নির্বাচন করব এবং প্রশাসনের অন্যান্য স্তরে কি আমরা নির্বাচন করব না? সেখানে কি আমরা অন্যদের চাপিয়ে দেব? সেখানে কি আমরা প্রশাসক দিয়ে বছরের পর বছর চালাব?”

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে প্রশাসকের  দায়িত্ব পালনের বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে একথা বলেন তিনি।

“এটা গণতন্ত্রবিরোধী,এটা হওয়া উচিত নয়। গণতন্ত্রের কথা বলতে হলে আমাদেরকে গণতন্ত্রের পুরোটা গ্রহণ করতে হবে। ”

সাংবিধানিক প্রক্রিয়া সব সময় চালু থাকার কথা থাকলেও স্বাধীনতার পর তা থেকে সরে আসা নিয়েও কথা বলেন মিজানুর।

“আমাদের এই ৪৩ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আদালতে মাত্র দুজন বিচারপতির সাক্ষাত আমরা পেয়েছি, যারা সাহস দেখাতে পেরেছিলেন যে সামরিক আইন কখনো সংবিধানের ওপরে স্থান পেতে পারে না।

এদের একজন বিচারপতি প্রয়াত কে এম সোবহানকে মরণোত্তর সম্মান দেয়ার দাবি জানান মিজানুর।

“আরেকজন হচ্ছেন বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। এজন্য তাকেও নানাভাবে নিন্দিত হতে হয়েছে। অথচ এই জিনিসটি কিন্তু আমাদের ৭২’র সংবিধানের ভিতরে লুকিয়ে আছে। ”

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাকে গণতন্ত্র পরিপন্থি উল্লেখ করে মিজানুর বলেন, “এই গণতন্ত্রবিরোধী বিষয়টাকে নিয়েও আমাদের অনেক আইনবোদ্ধা কথা বলেন।

এই বিশ্বাস দেবার চেষ্টা করেন যে, এটা না হলে আমাদের রাষ্ট্রই নাকি উচ্ছন্নে চলে যাবে। এই ভুল ব্যাখ্যাগুলো থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসা দরকার। ”


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.