আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্ত্রী জোহরা রাহমানের স্বপ্নে কবি শামসুর রাহমান : আজ কবির ৮০তম জন্মদিন

এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে

কবি শামসুর রাহমান নেই। তাঁর কবিতা আছে। কবিতার মধ্য দিয়ে শামসুর রাহমান এখনও অগণিত পাঠকের কাছে আসেন। স্ত্রী জোহরা রাহমান, বিয়েবাড়ির হ্যাজাকের আলোয় যাঁকে একনজর দেখে প্রেমে পড়েছিলেন কবি, তাঁর কাছে কীভাবে আসেন? এ প্রশ্নের এক ঝলক উত্তর আছে এই পোস্টে। যেহেতু শামসুর রাহমান আজ আমাদের মধ্যে নেই, পোস্টটি পড়ে মন কিছুটা উদাসও হয়ে যেত পারে।

সংস্কৃতিবিমুখ শাসক-রাজনীতিকের রাষ্ট্রে মানবতাবাদী কবি-শিল্পীরা যে নিজ দেশে পরবাসী, সেই অপ্রিয় সত্যটিও, আশা করি, ধরা পড়বে চোখে। কবি শামসুর রাহমানের ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে কয়েকদিন আগে কবির কবিতাসহ একটি পোস্ট সংরক্ষণ করেছি ব্লগে। এরমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দুই খ্যাতিমান কবি মৃণাল বসু চৌধুরী ও আবু হাসান শাহরিয়ারের পত্রালাপভিত্তিক বই 'নৈঃশব্দ্যের ডাকঘর' পড়ে শামসুর রাহমানকে নিয়ে নতুন এই পোস্টটির চিন্তা মাথায় আসে। শিল্প-সাহিত্যের অতীত-বর্তমানের অনেক তথ্যে ভরপুর 'নৈঃশব্দ্যের ডাকঘর' মাস দুয়েক আগে বাজারে এসেছে। প্রকাশক 'ভাষাচিত্র'।

গত মাসে আজিজ মার্কেট থেকে বইটি কিনেছি। এককথায় ব্যতিক্রমধর্মী একটি বই। বইটিকে নিয়ে আলাদা একটি পোস্টই হতে পারে। আপাতত সেদিকে না-গিয়ে দুই কবির দুটি চিঠি থেকে শামসুর রাহমান ও জোহরা রাহমান প্রাসঙ্গিক দুটি অংশ নিচে হুবহু তুলে দিচ্ছি। (৮০ তম জন্মদিনে কবিকে স্মরণ করার পাশাপাশি তাঁর সহধর্মিনীকেও জানাচ্ছি অশেষ শুভেচ্ছা, কবিকে যিনি ছায়ার মতো আগলে রেখেছিলেন বহু বছর।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি মৃণাল বসুচৌধুরী ও আবু হাসান শাহরিয়ারের কাছেও, যাদের বই থেকে উদ্ধৃতিই এই পোস্টের প্রাণকথা। ) ১৭ এপ্রিল ২০০৮ মৃণাল বসু চৌধুরীকে আবু হাসান শাহরিয়ার লিখেছেন : "বিয়েবাড়ি হচ্ছে কুমারীকন্যাদের মিনাবাজার। সেজেগুঁজে চিত্র-বিচিত্র হয়ে এসেছে সবাই যদি আগামী লগ্নের জন্য কেউ চিহ্নিত হতে পারে। 'অমুক বিয়েবাড়িতে অমুক মেয়েটিকে দেখেছিলাম; তাকে বেশ ভালো লেগেছিল, তাকে বাড়ির বউ করে আনলে কেমন হয়?' ...এভাবেই অনেক কন্যা পণ্যা হয়ে দেখা দেয়। অনেক পুতুল প্রতিমা হয়ে উঠে।

" শুধু কবিতার প্রিয় পঙক্তিই নয়; গল্প-উপন্যাসের অনেক ব্যঞ্জনাময় বাক্যও মুখস্থ থাকত এক সময়। ওপরে উদ্ধারকৃত অংশটি সেরকম। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের 'নূপুরের শব্দ' উপন্যাসে আছে। কোনও এক বিয়েবাড়িতে হ্যাজাকের আলোয় দেখে জোহরাকে ভালো লেগেছিল যুবক শামসুর রাহমানের। তারপর বিয়ে।

গতকাল জোহরা ভাবীর সঙ্গে অনেকণ কথা হল ফোনে। অনেকদিন খোঁজখবর নিতে না-পারার জন্য ক্ষমা চেয়ে জানতে চেয়েছিলাম, "রাহমান ভাইকে কেমন মনে পড়ে?" : খুব মনে পড়ে। সেদিন উনি স্বপ্নে আসছিলেন। : কী কথা হল তার সঙ্গে? : উনি বললেন, "তোমরা কেমন আছো, দেখতে আসলাম?" আমি জিগ্যেস করলাম, "আপনি এখন কোথায় থাকেন। " উনি বললেন, "আমি এখন বিদেশে থাকি"।

: বিয়েবাড়ির হ্যাজাকের আলোয় যিনি আপনাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন, সেই রাহমান ভাইকে স্বপ্নে দেখেছেন? : না, আরও পরের। : শাদা চুল? : না, কালো চুল। সুমি (কবির বড় মেয়ে) হওয়ার পর যেমন ছিলেন উনি। জোহরা ভাবীর সঙ্গে কথা বলার পর অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের 'নূপুরের শব্দ'র ঐ কথাগুলো চকিতে মনে পড়ে গিয়েছিল। ১৯ এপ্রিল ২০০৮ আবু হাসান শাহরিয়ারকে মৃণাল বসুচৌধুরী লিখেছেন : জোহরা ভাবীর সঙ্গে তোমার ফোনে কী কী কথা হয়েছিল লিখেছো।

অসাধারণ কথোপকথন। লিখেছো-- জোহরা ভাবীর স্বপ্নে শামসুর রাহমান এখন বিদেশে থাকেন। মৃত্যুরও ঐপারে কোনও মানববসতি যদি থাকে, তা তো বিদেশই। একটা কথা জিজ্ঞেসা করতে ইচ্ছে করছে খুব। মৃত্যুর ঐপারে কেন, মৃত্যুর আগেও কি শামসুর রাহমান বা পূর্ণেন্দু পত্রী 'বিদেশে'র মতো 'স্বদেশে' থাকতেন না? একজন কবি যে জগতের বাসিন্দা, তাঁর মনোজগতে স্বদেশের যা রূপ, সহকর্মী, পাড়া প্রতিবেশী, মানুষজন সব মিলে যে আদর্শ সমাজ তাঁরা কল্পনায় দেখতে চাইতেন, সে সব কি তাঁরা পেয়েছেন স্বদেশে? স্বদেশ বা দেশ মানে কি শুধুই মাটি? কিছু কিছু মানুষের লোভ, ঈর্ষা, ব্যাভিচার, অমানবিক আচরণ কিংবা অশিক্ষিত আত্মপ্রচারের করুণ লালসা, কখনো কখনো কি স্বদেশকে বিদেশের চেয়েও অপরিচিত, নির্মম বা নিষ্ঠুর করে তোলে না? আমার মনে হয় এইসব বরেণ্য মানুষদের জন্যে আমাদের অন্তরের অন্দরমহলে একটা বিদেশ বা স্বদেশ আছে, সেইখানে তাঁরা স্বচ্ছন্দে বসবাস করেন আর আমাদের পরিপূর্ণ করে তোলেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.