আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অভ্যন্তরীণ পর্যটন: প্রজেক্টের নাম আরণ্যক

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ

নোমান অনেকদিন পর এল। কাল দুপুরে ওর সঙ্গে ভাত খেলাম। মিস্টি কুমড়ার ভাজি, ডাল আর কি একটা মাছ ছিল।

খেতে খেতে নোমানকে অভ্যন্তরীণ পর্যটন সম্পর্কে আমার সাম্প্রতিক চিন্তাভাবনা খুলে বললাম। ও মিথুন রাশি। দারুণ উৎসাহ দেখাল। বলল, উনছি প্রাঙ-এ অভ্যন্তরীণ পর্যটনের একটি কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়। ওর কথা শুনে মনে আশা জাগল।

এতদিন থিউরি কপচাচ্ছি। এখন যদি তত্ত্বটা প্রয়োগ করা যায় তো মন্দ কি। নোমান উনছি প্রাঙ-এর কথা বলল। তা উনছি প্রাঙ কি? উনছি প্রাঙ একটা জায়গার নাম। একটা গ্রাম।

টেকনাফে। মানে টেকনাফ যেতে দু-তিন স্টেশন আগে। নীলার নাম শুনে থাকবেন। তারও আগে। ওই উনছি প্রাঙ -এই নোমান-এর বাড়ি।

ঢাকায় ল পড়ছে। একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইন্টারটা আমাদের বাড়িতে থেকেই পড়েছিল। কাজেই, ঘনিষ্টতা তুমুল। খাওয়া শেষ করে আমার ঘরে এসে বসেছি।

বলল, আমার থিউরি কি বোঝা গেছে? গেছে মামা। নোমান বলল। তা হলে বল কি বুঝলা? আমি সক্রেটিসের মতন সন্দিহান হয়ে উঠি। ও যা বলল তাই গুছিয়ে লিখছি। আদিবাসী গ্রাম আছে উনছি প্রাঙ-এ।

ওখানে আমাদের জমি আছে। ওখানেই কটেজ তুলব। দু-তিন রুমের। বাথরুমের দিকটা খেয়াল রেখ। বললাম।

হ্যাঁ। বাথরুম হবে ঘরসংলগ্ন। পরিস্কার। পানির ব্যবস্থা কর। প্রথমে পেপারে বিজ্ঞান দেব।

বিজ্ঞাপানের ভাষা হবে ঘরোয়া। আন্তরিক। আসুন, আদিবাসী গ্রাম বেরিয়ে যান। বাড়ির কাছেই পাহাড়ি ঝর্ন। আমাদের লোক বাস স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকবে।

নিরাপত্তার ভাবনা নেই। ইত্যাদি। পর্যটকদের সঙ্গে গাইড থাকবে। উনছি প্রাঙ-এর পিছনটা পাহাড়। মাঝে মাঝে হাতি নামে।

ফরেস্ট অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করে নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা করব। গ্রামের একটা ম্যাপ করব। সেটার কপি অতিথিদের দেব। তা ছাড়া গাইড থাকবে সঙ্গে। আর আদিবাসী গ্রামে একটি স্থায়ী প্রদর্শনী কেন্দ্র গড়ে তুলব।

ওখানে আদিবাসী নারীপুরুষের তৈরি নানা রকম জিনিস থাকবে। তবে দাম গলাকাটা হবে না। আসলে আমার কটেজের কোনও কিছুর দামই মাত্রাতিরিক্ত হবে না। উনছি প্রাঙ-এ ডাক্তার আছে। সব সময় যোগাযোগ থাকবে।

তা ছাড়া দরকারি অষুধপত্র কটেজেই রাখব। অতিথিরা রাতে টিভি দেখবে না। বরং আদিবাসীদের গান শুনবে উপকথা শুনবে। গ্রামের বেকাররা হবে গাইড আর কটেজ-এর কর্মচারী। ঠিক হল প্রজেক্টের নাম হবে -আরণ্যক।

আমি প্রধান উপদেষ্টা। আর ও প্রজেক্টের চেয়ারম্যান+সি ই ও ...ইত্যাদি ... আগডুম বাগডুম ... নোমান-এর বয়স এখন ২২। মেধাবী ঝকঝকে তরুন। অভ্যন্তরীণ পর্যটনের প্রয়োজনীয়তা সহজেই বুঝতে পেরেছে। বললাম, শহরের লোকদের দু-তিন দিন সুখশান্তি দিয়ে যে টাকা পাবে তা থেকে তোমার খরচ মিটিয়ে সামান্য লাভ তুলে বাকি টাকা স্থানীয় মানুষের কল্যাণে ব্যয় কর।

সীমান্ত এলাকায় বাস করে তোমার পূর্বপুরুষ এতকাল যা করেছে -তুমি আর ওসব করো না। কাঠের ব্যবসা, চিংড়ির ঘের যথেস্ট হয়েছে। এবার একুশ শতকে ভিন্ন রকমের চিন্তাভাবনা কর। আগে ল পড়াটা শেষ কর। তারপর ঢাকায় প্র্যাকটিস কর।

তোমার একটা ভালো সামাজিক পরিচয় থাকলে কটেজ ব্যবসার ভালো হয়। তার পাশাপাশি আরণ্যক চলবে। একটা সময় দেখবে তোমাকে আর ঢাকা থাকতে হচ্ছে না। নোমান মাথা নাড়ল। ওর একটা বড় সুবিধে এই যে- ওরা দীর্ঘদিন টেকনাফে স্থানীয়।

ওর পরিবার টেকনাফে বেশ ডাকসাইটে। চিংড়ি ঘেরের ব্যবসা। থানার সঙ্গে ওঠাবসা রয়েছে। কাজেই নোমানের পর্যটনের ব্যবস্থা স্থানীয় বখাটেদের উৎপাতে ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর প্রজেক্ট আরণ্যক এর শুভ সূচনা।

আপনাদের এখনি আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.