সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!! জানোয়ার কাদের মোল্লার রায় ঘোষিত হয়েছে। অপরাধের হার বিবেচনা করলে বাচ্চু রাজাকার তুলনামূলকভাবে অনেক কম অপরাধ করেছে। কিন্তু আদালত বাচ্চুকে ফাঁসী আর কাদের মোল্লাকে দিয়েছে যাবজ্জীবন। এখন মনে হচ্ছে বাচ্চু রাজাকার ফেরার না হলে তাঁকেও কাদের মোল্লার মতো দায়মুক্তি দেয়া হতো। বিচিত্র রায়! যাদের-কে খুন করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে তাদের প্রতি কি নির্মম পরিহাস! গণহারের সবাই আদালতকে দুষছেন।
এদেশের বিচারালয়ের ইতিহাস পর্যবেক্ষণে এ দুষারোপ আমার কাছে খুব একটা যৌক্তিক মনে হয় না। আদালতকে দোষারূপ করে কোন লাভ নেই। আমাদের আদালতের মেরুদণ্ড এতোটা শক্ত নয় যে, তারা ক্ষমতাসীনদের বিপক্ষে যাবে। বিচারালয়ের ইতিহাস তাই বলে। তাই আদালতের বাইরে কোন চুক্তি হয়েছে কিনা সেটা অনুসন্ধানের চেষ্টা করুন।
প্রাসঙ্গিক বিধায় আপনাদের কিছু পুরাতন কাহিনী বলি। যদিও কাহিনীগুলো আপনারা সবাই জানেন। ১৯৫৮ সালে জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জা (মীর জাফরের অধঃস্তন পুরুষ) পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করেন। তখন অনেক আইনজীবী উচ্চ আদালতে যান এবং বলেন যে, মাননীয় আদালত আপনি সংবিধানের রক্ষক, দয়া করে এই অসাংবিধানীক সরকারের হাত থেকে পাকিস্তানের গণতন্ত্র এবং সংবিধানকে রক্ষা করুন। জানেন , আদালত তখন কি সিদ্ধান্ত দিয়েছিল? আদালত বলেছিল সকল সাকসেসফুল সামরিক ক্যু বৈধ।
পাকিস্তানের উচ্চ আদালতের এই রায়কে আফ্রিকার অনেক সামরিক শাসক নজির হিসেবে ব্যবহার করে তাদের শাসনকে বৈধ বলে জাহির করার চেষ্টা করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানের আদালতে আবার মার্শাল ল, এর বিরুদ্ধে মামলা হয়। ক্ষমতায় তখন ভুট্টোর বেসামরিক সরকার। আদালত তখন রায় দেয় উচ্চ আদালতের পূর্বের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। মার্শাল কখনই বৈধ নয়।
তবে শাসনকার্যের ধারাবাহিকতার স্বার্থে তাদের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলোকে স্বীকৃতি দেয়া যেতে পারে। পরে জেনারেল জিয়াউল হক ভুট্টোকে ক্ষমতা থেকে সরান। ভুট্টোর স্ত্রী নুসরাত ভুট্টো আদালতে যান। আদালত তখন বলে ইতিপূর্বে নেয়া উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তটি ভুল। সামরিক শাসন দেশের প্রয়োজনে বৈধ।
আমাদের দেশেও ৭৫ এর পরের সামরিক শাসনের সময়ে এর বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছিল। আদালত তখন বলেছিল যতোদিন মার্শল ল থাকে ততোদিন সংবিধান সর্বোচ্চ আইন নয়। কিন্তু দেশে যখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলো বেসামরিক সরকার আসল তখন খায়রুল হক বললেন , সকল সামরিক সরকার অবৈধ। আমি নিশ্চিত দেশে যদি আবার সামরিক শাসন আছে তখন ঐ শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকেরা সামরিক বাহিনীর বুটের তলা থেকে সংবিধানকে ফিরিয়ে আনবেনা। বরং বলবে প্রত্যেক সাকসেসফুল ক্যু বৈধ।
কাজেই ইতিহাস বলে আমাদের আদালত খুব কমই সরকারের বিপক্ষে গেছে। তাদের ঐ মেরুদণ্ড নেই। দয়া করে ঐসব মেরুদণ্ডহীনদের না দোষে দেখুন আদালতের বাইরে কোন চুক্তি হয়েছে কিনা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।