‘উচ্চ আদালতের প্রতি অবমাননা বন্ধ করতে’ পত্রিকাটির যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন আরেকজন আইনজীবী।
সম্প্রতি বাংলা দৈনিকটিতে প্রকাশিত মিজানুর রহমান খানের দুটি লেখায় আদালত অবমাননার অভিযোগের ওপর বৃহস্পতিবার শুনানি শুরু হয়।
রোববার দুপুরের পর মুলতবি শুনানি আবার শুরু হয়।
ওই রুলে বিবাদি হিসাবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানও রয়েছেন।
শুনানির এক পর্যায়ে আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, “আদালত অবমাননার রুল হওয়ার পর প্রথম দিনই স্পষ্ট করতে হয়, তিনি এই রুলে লড়বেন নাকি ক্ষমা প্রার্থণা করবেন।
তিনি সেটা করেননি। তার মানে তিনি এই রুলে লড়বেন।
“আদালত অবমাননা করা তার (মিজানুর) অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এর আগে তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মারাত্মক মন্তব্য করেছিলেন।
“এর আগেও তার বিরুদ্ধে কয়েকটি আদালত অবমাননার রুল দেয়া হয়েছে।
তিনি (মিজানুর) মনে করেন, এটাতো একটা রুল মাত্র। ”
আইনজীবী সালাহউদ্দিন দোলন বলেন, “কারও মিনিমাম জ্ঞান থাকলে আদালত নিয়ে কেউ এরকম প্রতিবেদন করতে পারে না। সে আদালতের বিরুদ্ধে মানুষকে উস্কানি দিচ্ছে।
“তার বিরুদ্ধে চারটা রুল দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন আছে। কেন সেই রুলগুলোর সমাধান হয়নি? এতোগুলো রুলের পরও তার ভাবখানা এমন যে, তাকে (মিজানুর) কেউ ছুঁতে পারবে না।
”
আবার বিচারাধীন মামলা নিয়ে সাংবাদিকদের বক্তব্য বিবৃতির বিষয়ে দোলন বলেন, “এটা একটা সস্তা স্টাইল। যখন তুমি ফেইল করবে, তখন তুমি কমিউনিটিকে জড়াবে। ”
আদালতের কাঠগড়ায় মিজানুর রহমান খানের উপস্থিতিতে বেলা আড়াইটার দিকে শুনানি শুরু হয়।
শুরুতেই আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে কয়েকটি সংগঠনের দেয়া বিবৃতি প্রকাশ করায় দৈনিক সমকাল ও নয়া দিগন্তের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে হাই কোর্ট।
এছাড়া ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও বরিশাল বিভাগ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বুধবার আদালতে তলব করা হয়েছে।
শুনানির শুরুতেই বিচারক রোকন উদ্দিন মাহমুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “আমরা এই মামলা শুনতে পারি কি-না, এই প্রশ্নটি কোন এক পর্যায়ে উত্থাপিত হতে পারে। ”
তখন রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, “আদালতের আদেশ অমান্য করলে যে আদালত অবমাননা হয়, তার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট বেঞ্চ রয়েছে। সেখানে এর শুনানি হবে। তবে বিচার বিভাগকে আক্রমণ করা হলে, কোনো বিচারককে আক্রমণ করা হলে যে কোন বিচারক সেটা শুনতে পারেন। ”
তখন বিচারকও এতে সায় দিয়ে বলেন, “বিষয়টি স্পষ্ট করে নিলাম, যাতে পরে এই প্রশ্ন উত্থাপিত হলে সমস্যা না হয়।
”
শুনানিতে আইনজীবী কাজী আক্তার হামিদ বলেন, “মিজানুর রহমান খান জানতেন, তিনি যদি এই বেপরোয়া খবর ছাপান, তাহলে আদালতের সুনামহানি হবে। আদালত ও আইনজীবীদের সম্মানহানি করা ও ভুল করার জন্য তিনি এ পর্যন্ত অফিসিয়ালি তার পত্রিকায় ক্ষমা প্রার্থণা করেন নাই।
“মিজানুর রহমান খান আইনজীবী ও বিচারকদের নিয়ে মন্তব্য করেছেন তার লেখায়, তাতে মনে হয় যে, তিনি সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ।
“তথাকথিত সূত্রের মাধ্যম থেকে ভুয়া বক্তব্য ব্যবহার করেছেন। যথাযথ গবেষণার পরিবর্তে পত্রিকার বিক্রি বাড়াতে চটকদার শিরোনাম করা হয়েছে।
“তিনি কৌশলে ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করেছেন। তিনি স্ক্যান্ডাল-বিক্রেতা এবং তিনি সর্বদা সেনসেশনালিজম চান। কাটতি বাড়াতে তিনি সেনসেশনালাইজড খবর পরিবেশনের চেষ্টা করেছেন। বিবেচনার ক্ষেত্রে তার ঘাটতি রয়েছে এবং তিনি অনৈতিকভাবে খবর তৈরি করেছেন। এটাকে ‘নুড জার্নালিজম’, ‘ইয়োলো কিড জার্নালিজম’ এবং ‘ইয়োলো জার্নালিজম’ বলে।
”
আইনজীবী মো. আসাদ উল্লাহ বলেন, “কোর্ট অব রেকর্ড হিসাবে আপনাদের এখতিয়ার রয়েছে, এই রুলের শুনানি করা। আপনারা সেই হিসাবেই রুল জারি করেছেন, সেই হিসাবেই রুল শুনতেও পারেন। ”
মিজানুর সম্পর্কে তিনি বলেন, “উনি খুব হিসাব করে বিচার বিভাগকে খাটো করেছেন। ”
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, “তিনি আদালতকে হেয় করতে এটা করেছেন। আমাদের সংবিধান এই অধিকার কাউকে দেয়নি।
আমরা দুই পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে আসি। সাবমিশন রাখি। আপনারা যা বলেন, ভুল হোক ঠিক হোক আমরা মেনে নিয়ে যাই। ”
এ সময় বিচারক বলেন, “ভুল হলে উচ্চতর আদালতে যেতে পারেন। ”
জয়নুল আরো বলেন, “জামিন প্রদানে আদালতের এখতিয়ার না থাকলে তো আমাদেরকে পুলিশি শাসনে চলে যেতে হবে।
”
আজমালুল হোসেন কিউসি বলেন, “প্রত্যেক ব্যবস্থার মধ্যেই সমস্যা থাকে। কিন্তু এটার মাধ্যমে (মিজানের লেখা) বিচারব্যবস্থার ওপর সরাসরি আক্রমণ করা হয়েছে। ”
এসময় আদালত মিজানুর রহমান খানের আইনজীবী শাহদীন মালিককে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তার (মিজানুর) প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা (ব্যাকগ্রাউন্ড) আইনে না সাংবাদিকতায়? সে নিজের ইচ্ছায় সাংবাদিকতায় এসেছে কি না? এসব হলফনামায় উল্লেখ করবেন। ”
আদালতে প্রথমে দাঁড়িয়ে থাকলেও দুই ঘণ্টা পর আইনজীবীর আবেদনে তাকে কাঠগড়ায়ই বসতে দেয়া হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।