আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুড়ি মাখানি

"বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না। "শিহরণে সত্তায় তুমি, হে আমার জন্মভূমি"

ইফতারী! আহ্, সামনে সব উপাদেয় খাবার নিয়ে রোজা পাকা করার মহড়া দেয়া! কি যে ভালো লাগে! আমার বেশি ভালো লাগে কারণ অন্য মাসগুলোতে বিকেলের নাশতা হিসেবে একটার বেশি দু'টা আইটেম পাওয়া যায় না। কিন্তু রোজার মাসে শুধু আইটেম আর আইটেম। গলা পর্যন্ত খেলেও আইটেম আর শেষ হয় না। সে যেখানেই ইফতারী খেতে যাই, নিজের বাসায়, অন্য কারও বাসায় কিংবা ইফতার পার্টিতে।

বাসায় ইফতার খেতে বসলে আমরা সবাই ছোলা, পেঁয়াজু,বেগুনি, হালিম এসব সামনে নিয়ে বসে থাকতাম এই গতবছরও আমাদের বাসার সর্বকনিষ্ঠ সদস্যের ঠিক আগেরজনের অপেক্ষায়। শরবত, খেজুর, কাস্টার্ড এসব চক্ষের নিমিষে শেষ হয়ে গেলেও অন্যান্য আইটেমগুলো আমরা আগলে বসে থাকতাম। বাসার সেই সদস্য দেখা যেত প্রায়দিনই ইফতারের টাইমটা রাস্তায় বসে আছে। বেচারার অফিস থেকে বাসায় টাইমলি পৌঁছানো এককথায় দুষ্কর। তবু আমরা তার প্রতীক্ষায় থাকতাম।

কারণ রেসিপি জানা থাকলেও তার হাতের যশটা আমাদের কারও নেই। মুড়ি মাখানো যে এত দুর্দান্ত হতে পারে, ইয়াম্মী!! এটা পারে একমাত্র সুজন, আমার ছোট ভাই। রেসিপিটা কিন্তু খুবই সহজ - আন্দাজমতো ছোলা, পরিমাণমতো মুড়ি নিন। টমেটো কুচি, শসা কুচি, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি,ধনে পাতা,লেবুর রস,কয়েক ফোঁটা সরিষার তেল,সামান্য লবণ একসাথে দিয়ে মেখে ফেলুন। ছোলা, মুড়ি, পিঁয়াজু, বেগুনি ঐ মাখা জিনিসগুলোর সাথে মেশান।

হালিম থাকলে এক বা দু চামচ হালিমও মেখে নিন। হালিম না থাকলে গরুর মাংসের ঝোল। এই এক আইটেম না খেলে কোনভাবেই সেই গত বছরও আমাদের ইফতার পূর্ণাঙ্গ হতো না। এ বছর আমরা কেউ মুড়ি মাখানি খাই ই নি। সুজন নেই যে! সুজন এখন প্রবাসী।

দিনের শেষে একসাথে ইফতারির টেবিলে বসা, কথার আদান প্রদান, মুড়ি মাখানিতে আমাদের পুরো পরিবারটা আসলে আদর স্নেহ এসবও ভাগাভাগি করে নিত। এবারের রোজায় কেউ আর দৌঁড় ঝাঁপ করে সুজনের মুড়ি মাখানির আইটেমগুলো তৈরী করেনি। আলাদা করে রাখেনি নিজের নিজের ভাগের পিঁয়াজু, বেগুনি। নিজের মতো করে যে যার ইফতার খেয়েছে আর বলেছে ইস্, সুজনটা নেই! পালা বদল তো এভাবেই ঘটে যায়। বিচ্ছিন্নতার দিনগুলো স্মৃতির ঘরে উঁকি দিয়ে দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বয়েই চলে।

জীবিকার টান যে বড় টান।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।