mhfoez@gmail.com
মুড়ি বাঙ্গালীর খাদ্য তালিকায় অন্যতম স্থান দখল করে আছে। মুড়ি খায়না এরকম বাঙ্গালী খুঁজে পাওয়া যাবেনা। বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী ভোলা বরিশালের চরাঞ্চলে উৎপন্ন বিশেষ জাতের ‘ঘিগজ’ ধানের মুড়ি এর বৈশিষ্টের জন্য বিখ্যাত। এ মুড়ির রং খুব হালকা গোলাপী আভা, দেখতে সুন্দর, খেতে মচমচে এবং সুস্বাদু। অন্যান্ন সাধারন ধানের চাল দিয়েও মুড়ি ভাজা যায়।
তবে ঘিগজের মুড়িই সবার কাছে জনপ্রিয়। এ মুড়িকে ঘিরে কয়েকটি স¤প্রদায় গড়ে উঠেছে। এদের বেশীর ভাগই হিন্দু স¤প্রদায় ভূক্ত। অন্যের্ওা একাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। তবে সংখ্যায় কম।
যারা মুড়ির কাজ করে তারা অধিকাংশই নারী। নারীরা বাড়িতে মুড়ি ভাজে, পুরুষরা তা বাজারে বাজারে বিক্রি করে। যুগযুগ ধরে পৈত্রিক ব্যবসা হিসাবে তারা একাজকে বেছে নিয়েছে। অতি স¤প্রতি বাজারে চাল ও জিনিষ পত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর খরচও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় বাজার দখল করতে থাকে নিু মানের চালের মেশিনে ভাজা মুড়ি।
এগুলো ভাজার সময় দেয়া হয় ইউরিয়া হাইপো ইত্যাদি ধরনের মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর কেমিকেল। দাম সস্তা দেখে বাজারে এগুলো খুব বিক্রিও হয়। কিন্তু সনাতন পদ্ধতিতে মুড়ি ভাজার সাথে জড়িত পরিবারগুলো এ অবস্থায় বেকার হয়ে পড়ে। কয়দিন যাওয়ার পর তারা দেখলো, কাজ নাকরে বসে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। একসময় তারা বাড়িতে শুরু করলো নিু মানের চাল দিয়ে কেমিকেল মিশিয়ে মুড়ি ভাজা।
খরচও অনেক কম। দামে সস্তা হওয়ায় ওদের মুড়ি বিক্রিও হতে লাগলো। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে তারা বুঝতে পারলো তাদের শরীরের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। ইতিমধ্যে অনেকের হাতে ঘা দেখা দিযেছে। মারাত্মক হাঁপানীতে আক্রান্ত হলো অনেকে।
সবচেয়ে ভয়াবহ যেটি তা হলো ছয় সাত মাসে অনেক গর্ভবতীর গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে বিকলাঙ্গ শিশুও জন্ম লাভ করেছে। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারা বুঝতে পারলো মুড়ি ভাজতে কেমিকেলের প্রভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তারা এ কাজটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
অন্য কোনো কাজ তারা জানেনা। দু এক জন এদিক সেদিক কাজ করে সুবিধা করতে পারছিলোনা। অনেকে দেশ ছেড়ে চলেও যায়।
এরকম পরিস্থিতিতে নোয়াখালীর চরবাটার আশিটি পরিবার নিজেরা সংগঠিত হয়ে আবার স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে মুড়ি তৈরি করতে থাকে। কারোকাছে হাত না পেতে এরা নিজেদের উৎপাদিত পন্য বাজারজাত করতে সচেষ্ট হলো।
এরা কেউ সাহায্য কিংবা অনুদানে আগ্রহী নয়। কারন ইতিমধ্যে এরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে আকন্ঠ নিমজ্জিত হয়ে আছে। এখন এরা এদের তৈরী পন্যের ন্যায়্য মূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পেতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রামে কয়টি নিদৃষ্ট এলাকায় গ্রাহক সৃষ্টি হয়েছে। বাঙ্গালীর এই অতি জনপ্রিয খাদ্যের মানও তারা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট রয়েছে।
তাদের এই মুড়ি এখন বিদেশেও রফতানীর চিন্তা ভাবনা হচ্ছে। সবচেয়ে জরুরী বিষয় হচ্ছে এই কাজটি সম্পুর্ণ নারীদের উপরই নির্ভরশীল । তারা এখন স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে অত্যন্ত যতেœর সাথে ঘরে ঘরে মুড়ি ভেজে প্যাকেটজাত করছে। বাজারে এদের পন্যের চাহিদাও রয়েছে খুব। এ কাজ করতে করতে নারীরাও এখন সচেতন হয়ে উঠছে।
তারা নিজেরা এখন আত্মনির্ভরশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।