আমার ব্লগে আপনাকে ............... স্বাগতম
প্রাচীনকালে অজ্ঞ, মুর্খ ও বোকা লোকেরা সমাজে বাহাদুরী দেখানো ও নিজের বীরত্ব প্রকাশের জন্য নিজেদের শরীরের চামড়ার ওপর নানা ধরণের চিত্র আঁকতো। যারা এসব চিত্র এঁকে দিতো ফারসী ভাষায় তাদেরকে দাল্লাক বলা হয়। দাল্লাকরা মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশে পশু পাখি, ফুল, সূর্য বা অন্য কিছু অংকন করে দিতো। তাদেরকে শরীরের যেখানে চিত্র আকতে বলা হতো প্রথমে সেখানে তারা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতো। তারপর সেখানে কালি দিয়ে চিত্র আঁকতো।
এরপর সুঁই দিয়ে কালি দিয়ে আঁকা ছবির ওপর ফুটো বা ছিদ্র করা হতো। ছিদ্র করা শেষ হলে বিশেষ ধরণের লতাপাতার রস দিয়ে সেখানে মালিশ করা হতো। এরপর যখন চামড়া বেদনা জলে যেত তখন সুঁই দিয়ে ছিদ্র করা জখমের ওপর এমন এক পাকা কালি লাগানো হতো যা শরীরের ঐ জায়গায় চিরদিনের জন্য লেগে থাকে। মুর্খ লোকেরা এভাবে চিত্র একে সমাজে গর্বে করে বেড়াতো।
তো একবার এক কুস্তিগীর এলো এক চিত্রকরের কাছে তার শরীরের সিংহের ছবি আঁকতে।
কুস্তিগীর যুবকটি ছিল অত্যন্ত ভীরু প্রকৃতির। সিংহের ছবি আঁকা নিয়ে তাদের মধ্যে যেসব কথাবার্তা হয় তা ছিল এরকম-
কুস্তিগীর : এই যে দাল্লাক ভাই, আমার শরীরে একটা চিত্র এঁকে দাও তো !
দাল্লাক : চিত্র আঁকতে চাও ? বেশ ভাল কথা। তা তুমি কিসের চিত্র আঁকতে চাও ?
কুস্তিগীর : আমি একজন কুস্তিগীর পাহলোয়ান। সিংহের মতো শক্তি আমার গায়ে। তাই সিংহের ছবিই এঁকে দাও।
দাল্লাক : সাব্বাস পাহলোয়ান বেটা, সাব্বাস ! তোমার শরীরে সিংহের ছবিই মানাবে ভাল । তা শরীরের কোন জায়গায় সিংহের ছবি আঁকাতে চাও তুমি ?
কুস্তিগীর : আমার ডান হাতের পেশীতে আঁকতে চাই।
দাল্লাক : ঠিকাছে, তুমি বাহু খুলে এখানে বসে পড়। আমি এক্ষুণি সিংহের ছবি আঁকা শুরু করছি।
কুস্তিগীর পাহলোয়ান যুবকটি বাহু খুলে বসার পর চিত্রকর তার কাজ শুরু করলো।
প্রথমে পাহলোয়ানের বাহু গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নরম করলো । এরপর কালি দিয়ে সিংহের ছবি এঁকে আসল কাজে হাত দিলো। দাল্লাক যেইমাত্র তার সুঁই পাহলোয়ানের বাহুতে প্রথম ফুটোটি করলো তখন সে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো :
কুস্তিগীর : ওরে বাবারে, মরে গেলাম রে ! আমার হাত একেবারে অবশ হয়ে গেলরে । ওই বেটা দাল্লাক কি করছিস তুই ?
দাল্লাক : রাগ কর ক্যান ? তোমার কথা মতোই তো কাজ করছি। তুমি কি আমাকে সিংহ আঁকতে বলো নাই ?
কুস্তিগীর : তাতো বলেছি।
এখন বল, কোথা থেকে শুরু করেছিস ?
দাল্লাক : সিংহের লেজ থেকে শুরু করেছি। লেহের ঠিক শেষ মাথাতে সুঁই বসিয়েছি।
কুস্তিগীর : বেশ হয়েছে। এখন লেজ বাদ দিয়ে মাথা বা শরীরের অন্য কোথাও থেকে শুরু কর্। আমার সিংহ লেজ ছাড়াই হবে।
লোকজন কিছু বললে বলবো, এটা লেজকাটা সিংহ!
দাল্লাক : ঠিকাছে, আমার কি বাপু । তোমার ইচ্ছে না থাকলে লেজ ছাড়াই আঁকবো।
এবার দাল্লাক সিংহের লেজ ছেড়ে মাথা থেকে শুরু করলো। সে যখনি সিংহের কেশর ও ঘাড় বরাবর সুঁই ঢুকালো অমনি পাহলোয়ানের গলা ফাটা চিৎকারের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠলো।
কুস্তিগীর : বাবাগো, মাগো, ব্যথায় একবোরে মরে গেলাম রে ! ওই বেটা দাল্লাক করছিস কি শুনি ?
দাল্লাক : আরে বাপু এমন করছো কেনো ? সিংহের ছবিই তো আঁকছি।
একটু ধৈর্য্য ধরো, কতক্ষণের ব্যাপার !
কুস্তিগীর : আমাকে ধৈর্য্য ধরার কথা না বলে এবার বল্ সিংহের কোন অংশ আঁকছিস ?
দাল্লাক : ঘাড়ের ঠিক ওপরে কেশর আঁকছি।
কুস্তিগীর : আরে বাপু সিংহের গর্দান আর কেশর কখন থেকে এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেলো ? আমার সিংহের কেশর আঁকার দরকার নেই। ওসব বাদ দে। শরীরটা এঁকে দিলেই যথেষ্ট।
দাল্লাক : ঠিক আছো, তুমি যখন সহ্য কেশরও না হয় বাদ দিলাম।
এরপর দাল্লাল ভাবতে লাগলো কি করা যায়। লেজ থেকেও হলো না, মাথার দিক থেকেও হলো না। তাই সে পা থেকে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিল। এরপর সিংহের পায়ের নকশার ওপর সুই খাড়া করে বসিয়ে দিতেই পাহলোয়ান মাগো মাগো বলে ফরিয়াদ শুরু করলো। ব্যথায় তার সারা শরীর যেন কাঁপছে।
তীব্র ব্যথায় ককিয়ে ওঠে জিজ্ঞেস করলো :
কুস্তিগীর : আবার কোন জায়গায় সুই ঢুকিয়েছিস?
দাল্লাক : এটা সিংহের পায়ের থাবা।
কুস্তিগীর : আরে বাবা তুই তো আজব চিত্রকর ? এতোসব খুটিনাটি বিষয়ে ওস্তাদী দেখাচ্ছিস কেন? সিংহের পায়ের থাবা আর নখ তো কারো চোখেই পড়ে না। আমি কি তোকে আমার শরীরে চীনের চিত্রশালা বানাতে বলেছি ? শুধু সিংহের একটা সুরত হলেই চলে। শোন্, আমার সিংহের থাবা-টাবা দরকার নেই। এমন কিছু কর্ যাতে ব্যথা কম হয় আর আমি তাড়াতাড়ি বিদায় হতে পারি ।
এরপর চিত্রকর কালি দিয়ে আকা সিংহের ছবিটি ভাল করে খেয়াল করলো। তার নজর গেল সিংহের পেটের ওপর। নজর পড়া মাত্রই সে সুঁইয়ের মাথা খাড়া করে পাহলোয়ানের চামড়ায় বসিয়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে কান ফাটা চিৎকার দিয়ে সে বলে উঠলো:
কুস্তিগীর : আরে বাপু আমাকে মেরে ফেলবি নাকি ? করছিস কি ? এটা আবার কোন জায়গা ?
দাল্লাক : এটাই তো সিংহের আসল জায়গা মানে পেট। এটা ছাড়া সিংহ হবেই না।
কুস্তিগীর : হবে না বললেই হলো। এমন কিছু কর যাতে সিংহও হয় আবার পেটও যেন না থাকে।
এবার চিত্রকর। হতভম্ব হয়ে গেল। মুখে আঙ্গুল দিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করলো।
তারপর সুইটি ঢিল মেরে ফেলে দিয়ে বললো :
দাল্লাক : জনাব পাহলোয়ান ! আমি এ যাবত কমপক্ষে এক হাজার লোকের গায়ে চিত্র একেছি আর একশো লোকের শরীরের শুধূ সিংহই একেছি। কিন্তু লেজ, ঘাড় থাবা, কেশর আর পেট ছাড়া কোন সিংহ হতে দেখিনি। তুমি আমাকে আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ করে দাও। আর শোন, সুইয়ের মাথার আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা যখন তোমার নেই তখন তোমার বাহু খালি থাকাই ভাল। এখান থেকে এক্ষুনি তুমি বিদায় হও।
আর কক্ষনো পাহলোয়ানগিরির গল্প করতে এসো না, বুঝলে !
সংগ্রহীত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।