বাংলাদেশকে নিয়ে শংকিত
জোহরা শিউলী: নারী মন্ঞ
ইফফাত আরা মিতু। স্মাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। একদিন বিকেলে আবাসিক হলে ফিরলেন দুই হাতের কনুই, কবজি ও কাঁধে ব্যান্ডেজ নিয়ে। দুর্ঘটনার উৎস তাঁর ওড়না। রিকশায় বসে ওড়নাটা গুছিয়ে বসেননি, চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে কনুই, কাঁধ ছড়ে গেছে।
উপরন্তু ওড়নাটা ছিল জর্জেটের। চামড়ায় ঘষা খেয়ে দগদগে ঘা হয়ে গেছে। বেশ কয়েক সপ্তাহই তাঁকে ভুগতে হয়েছে এর জন্য। সেই সঙ্গে ক্ষতি হয়েছে পড়াশোনারও।
শুধু মিতু নন, মেয়েদের ক্ষেত্রে এ ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
অসাবধানতায় ওড়না পেঁচিয়ে নানা দুর্ঘটনার শিকার হন তাঁরা, মাঝেমধ্যে যা মৃত্যুর ঝুঁকির পর্যায়েও চলে যায়। তেমনই এক ঘটনা বললেন আঞ্জুমান আরা, ‘গত বছর আমার খালা ও তাঁর বর মোটরসাইকেলে করে বাসায় ফিরছিলেন। হয়তো মনে ছিল না, খালা ওড়নাটা সাবধানে রাখতে পারেননি। সেই ওড়না পেঁচিয়ে তাঁর শ্বাসরোধকর অবস্থা। সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
অল্পের জন্য খালা বেঁচে যান। এখনো তাঁর গলায় দাগ আছে। এখন তিনি নিজে তো সাবধান হয়েছেনই, যখন যে বাইরে যায় তাকেও বলে দেন ওড়না-আঁচল সাবধানে রাখতে। ’
বাঙালি নারীর ঐতিহ্যের ধারক-বাহক শাড়ি। আর তরুণীদের পরনে সালোয়ার-কামিজে ওড়না থাকবেই।
আর শাড়িতে আঁচল। একটু অসাবধানতায়, বেখেয়ালে তাই ঘটে যেতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা! শুধু দুর্ঘটনাই নয়, নানা সময় তরুণীদের পড়তে হয় কিছু বিব্রতকর অবস্থায়ও। গণিত বিভাগের ছাত্রী শারমীন সুলতানার একদিন টিউশনিতে যাওয়ার সময় ওড়না পেঁচিয়ে গা থেকে খুলে যায়। রিকশাওয়ালা এবং একজন পথচারী মিলে চাকা ঘুরিয়ে সেই ওড়না বের করে আনেন। পথের মধ্যে ওড়নাবিহীন এ রকম কয়েক মিনিট তাঁর কাছে লেগেছিল কয়েক যুগ।
সে এক বিব্রতকর ও লজ্জাকর পরিস্িথতি।
তিনজন একটি রিকশায় করে বেড়াতে যাওয়ার সময় একই ঘটনা ঘটে প্রায়ই। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী জানান− ‘ওড়না কখন কীভাবে পেঁচিয়ে গেছে গল্পের তোপে টের পাইনি। পেছনে অনেক যানবাহন থাকায় রিকশা থামানো সম্ভব ছিল না। ওড়না পেঁচিয়ে, জামা ছিঁড়ে যায়।
সেই সঙ্গে ঘাড়ে তীব্র ব্যথা পাই। ক্লাসব্যাগ কোনোরকম বুকে জড়িয়ে হল পর্যন্ত আসি। মানুষের বিপদ কখন কোন জায়গা দিয়ে আসে, বলা যায় না। ছোট্ট একটা অসাবধানতা থেকে জীবননাশের হুমকি হয়ে যায় এটা। ’ দুই কন্যাসন্তানের মা ফরিদা আক্তার শেলী বলেন, ‘আমার মেয়ে দুটো বাইরে গেলে সব সময় আতঙ্কে থাকি।
বেখেয়ালে এক মেয়ের ওড়না একদিন রিকশার চাকায় বেজে গিয়েছিল। বাইরে বের হওয়ার সময় আমি নিজে সব সময় আমার ও মেয়েদের এ ব্যাপারটা খেয়াল রাখি। একটু সচেতন থাকলে ছোট্ট এ ঘটনা থেকে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে না। ’
তাই রিকশায় বসব, গন্তব্যস্থলে যাওয়ার তাড়ায় ভুলে যাব না নিজের ওড়না বা শাড়ির আঁচলটুকু গুছিয়ে রাখতে। ভুলোমনা নয়, সচেতন-সাবধান হতে হবে এ ব্যাপারে।
নিজে সচেতন হয়ে পাশে যে বান্ধবী কিংবা আত্মীয়টি আছেন, তাঁকেও সচেতন করতে হবে। তাহলেই দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা কমে যাবে।
শেষ করি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা দিয়ে। শুধু কি ওড়না-আঁচল সাবধানে রাখলেই হবে? সচেতন থাকতে হবে নিজের ব্যাপারেও। রিকশায় বসার সময় ধরে বসলে হঠাৎ ব্রেক কষা নয়তো পেছনের যানবাহনের ধাਆায় মাঝরাস্তায় পড়ে গিয়ে আহত হতে হবে না।
তাই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে রিকশায় বসার ক্ষেত্রেও।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।