ফ্রম দ্যা হার্ট অফ ডার্কনেস
আদার ব্যাপারির জাহাজের খবর-১
রাজায় রাজায় লড়াই
উলুখাগড়ার প্রাণ যায়।
তবুও উলুখাগড়া রাজ-রাজাদের লড়াই দেখতে চেয়ে প্রাণপাত করতে রাজি না হলেও সময়পাত করে অতি অবশ্যই। শৌর্য-বীর্য-অর্থের আপাত সংঘাত যুগযুগ ধরেই আমাদের মোহাবিষ্ট করেছে। যুগে যুগে বিজয়ীদের বীরত্বগাথা, মহৎ বিজিতদের জন্য শোকগাধা তারই স্মারক বহন করে।
যা কিছু উচ্চ,যা কিছু বৃহৎ তা মানুষের দৃষ্টি আকৃষ্ট করে সহজেই।
সমতলের দিগন্ত রেখায় পর্বতমালার উপস্থিতি আমাদের মনোযোগ কাড়ে নিমিষেই।
বলছিলাম আমেরিকায় নির্বাচনের কথা আরকি!। তাবৎ দুনিয়া দাপিয়ে বেড়ানো একক মোড়লের আসনটিতে কে বসবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই,টিভি-
চ্যানেলগুলোতে বকবকানির বিরতি নেই, সাংবাদিকদের ঘুমের অবসর নেই।
আলোচনার ঢেউ বেশীকথা বলা বাঙালদের দেশ থেকে বঙোপসার ভায়া ভারত মহাসাগর হয়ে পুর্ব আফ্রিকার উপকূলে আছড়ে পড়ছে। পুর্ব আফ্রিকার দেশ,কেনিয়াতে যা কিনা প্রার্থী ওবামার জেনেটিক পিতার জন্মভুমি, শুনতে পাই সেখানে দলে-দলে সাংবাদিক,টিভি ক্রু তাদের সরন্জামাদি নিয়ে ঘাঁটি গেড়েছেন ওবামার ভাই-বেরাদরদের বাড়ীর আশেপাশে তিনি ইলেকশনে খাঁড়ানোর পরদিন থেকেই।
পত্রিকার পাতায় ডজনডজন কলামিষ্ট শয়েশয়ে কলাম লিখছেন ওবামার বিভিন্ন বক্তৃতার সারমর্ম বোঝাতে,ওবামা লিগ্যাসি কিভাবে আফ্রিকার মানুষকে উদ্দীপিত করবে, কিংবা ভবিষ্যতে ইউএসএইডের মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলারের অনুদান এইরকম হাজারো সম্ভাবনায় উজ্জীবিত হয়ে । এই সবকিছুর পিছনে তার বর্ণপরিচয় যে মুখ্য, তা বুঝে নিতে বেগ পেতে হয়না। সবজায়গাতেই কিছু ঘাড়তেড়া পাব্লিক থাকে। তেমনি এক ঘাড়তেড়া সাংবাদিক প্রশ্ন তুলছেন ওবামা তো অর্ধেক কালো, পেঁচিয়ে বললে অর্ধেক সাদা আর বুশ প্রশাসনের কন্ডোলিজ্জা রাইস পুরা কালো,তার উপরে নারী। বর্ণ পরিচয় কিংবা লৈংগিক পরিচয় বিবেচনায়, তাইলে তো বলতে হয় রিপাবলিনকানরা, বুশ প্রশাসন তো অনেক বেশি প্রগতিশীল।
সেই প্রগতিবাদীতার সুফল অবশ্য আফ্রিকাবাসী, বিশ্ববাসী ভালোই টের পাচ্ছেন।
ওবামার নাম প্রথম জানতে পারি ফেইসবুকের কল্যানে। একদিন পরপর আর,এস,এস ফিডে মেসেজ আসে অমুক হ্যাজ্ জয়েন্ড্ "ক্যাম্পেইন ফর ওবামা",তমুক হ্যাজ্ জয়েন্ড্ "ক্যাম্পেইন ফর ওবামা"। ওবামার মুসলিম পিতৃপরিচয়, বর্ণ এবং যেকোন মূল্যে পরিবর্তন-প্রত্যাশা-এইসব ছিলো সমর্থনের ভিত। ইতমধ্যে তাকে নিয়ে মুসলিম-প্রত্যাশা(সাথে অন্যসব) যে ভেঙ্গেচুরে খান খান হয়ে গেছে তা বলাইবাহুল্য।
শ্রোতামঞ্চের সম্মুখভাব থেকে জনৈক মুসলিম তরুনীকে কৌশলে সরিয়ে দেয়া, নিজেকে ইজরাইলি লবীর কাছে অধিকতর আস্থাভাজন করতে পুরো জেরুজালেমকে ইজরাইলী দখলদ্বারিত্বেরর স্বীকৃতি দান,”ভিক্ষুকের ঘরে রাজার পা” এই স্টাইলে ফিলিস্তিনি কতৃপক্ষে সাথের ৪০মিনিটের সময়ক্ষেপন; এরপরে ওবামা মিয়া যদি চিল্লায় “আমার আন-আমেরিকান পরিচয়, মুসলিম ইন্হেরিটেন্সের সংশ্রব থেকে মুক্তি পেতে আমি আর কি করতে পারি? আপনি কিন্তু তাকে দোষ দিতে পারবেন না।
খেয়াল কৈরা দেখা যায়, সে এমনকি ইরাক থেকে আমেরিকান সোলজার পুল-আউট করার ব্যাপারে আগের অবস্থান থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন। আগে যেমন সিংহের গলায় বলতেন তিনি সৈন্য প্রত্যহার করবেন,এখন মিনিমিন স্বরে বলেন আমেরিকার কৃতভুলগুলি শোধরাণোর চেষ্টা করবেন।
বারাক ওবামা নিয়ে অনেক এক্টিভিষ্টের আশাবাদ ছিলো তিনি নির্বাচনি ব্যায় পাব্লিক ফান্ডিং থেকে মেটাবেন,কর্পোরেট পুজির কাছে হাত পাতবেন না। কিসের কি “যে লাউ সেই কদু”।
কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান গুলোর নাম লিখে আপনার ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে চাইনা। মজার ব্যাপার হলো, মাইক্রোসফট,দ্যা সিটি ব্যাংক এই প্রতিষ্ঠানগুলির নাম
জন ম্যাককেইনের এবং
বারাক ওবামার দুই জনেরই ডোনার লিষ্টিতেই পাবেন।
সুনীল গাঙ্গুলি’র একটা গল্পের কথা মনে পড়ে। কবিখ্যাতি পাওয়ার আগে সুনীল বাবু আমেরিকার ছোট্ট একটা শহরে ছিলেন। সেই শহরে চালু দুইটা পত্রিকা,দুইটার মাঝে দা-কুমড়া সম্পর্ক,একটা সবসময় আরেকটার পিছে লেগে থাকে।
পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো,দুইটা পত্রিকার মালিক একই ব্যাক্তি। তাদের চুলোচুলি অবস্থান বাড়তি কাটতি যোগায় কারণ আমজনতা উত্তেজনা পছন্দ করে।
প্রেসিডেন্ট আইজেন হাওয়ার তাঁর বিদায়ে ভাষনে মিলিটারি-ইন্ডাস্ট্রিয়ালিষ্ট কমপ্লেক্সের আঁতাত সম্পর্কে আমেরিকাবাসিকে আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তাতে খুব বেশি লাভ হয়েছে কি;তেল কোম্পানির টাকার তলে চাপা খাওয়া ডেমোক্রাট আর অস্ত্র বিক্রির টাকায় চলা রিপাব্লিকনদের মধ্যে পার্থক্য কতটুকু? আমাদের মতো আওয়ামি-বি,এন,পি দ্বিদলীয় রাজনীতিতেই আটকা পড়েছে আমেরিকান রাজনীতি। ওবামা কিংবা ম্যাককেইন যেই আসুক;কারুরই হ্যাডাম নাই ওই তেল কিংবা অস্ত্র কোম্পানির বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করতে।
আপাতভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যাক্তিটি আদতেই দাবার খুঁটি।
আমার এক বন্ধুর ভাষায় বলতে গেলে লাদেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হলেও ঠিকই ইরাক আর আফগানিস্তানে বোমা মারবো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।