ভালো আছি
নীতুর এবার কাঁদবার পালা। যার জন্য ও বেঁচে রয়েছে আর সে কিনা ওকে চিনতে পারছে না। কোন রকম কান্না সামলিয়ে ওখান থেকে চলে যাচ্ছিল নীতু । আজ তার কাছে মনে হচ্ছে যে শফিক ওকে চেনে না তো দুনিয়ার কেউ ওকে চেনে না। হঠাৎ শফিক বলে উঠল-
- নীতু দাড়াও, যেও না ।
প্লীজ আমার দুটি কথা শুনে যাও। নীতু দাড়াল।
- নীতু আমি তোমার পরে রাগ করে বিদেশ চলে গিয়েছিলাম। কারন আমি চেয়েছিলাম যে তুমি যখন সত্যটা জানবে এবং একা থেকে কষ্ট পাবে তখন নিজের ভুলটা নিজেই বুঝতে পারবে।
- কষ্ট তো সত্যিই আমি পেয়েছি।
যখন বুঝলাম যে ভুলটা আসলে আমারই ছিল । তোমার প্রতি আমি অনেক অবিচার করেছি। ঠিক তখন থেকে নিজেকে কষ্ট দিতে থাকলাম । যত দিন তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে না নেব, তত দিন নিজেকে এভাবে কষ্ট দেব বলে ঠিক করেছিলাম। শফিক সত্যিই আমি ভুল করেছি।
আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।
- সত্যি বলছ তুমি ।
- হ্যাঁ।
- নীতু আমি এখনও তোমাকে ঠিক আগের মতই ভালবাসি। তুমি বিশ্বাস কর এই দিনটির জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম।
আমি জানতাম একদিন তোমার ভুল ভাঙবেই।
মহা ধুমধামের সাথে নীতু আর শফিকের বিয়ে হয়ে গেল। শফিক এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে দেশে এসেছিল । তার ছুটির আর একদিন আছে। তাই গোছগাছ করে নিচ্ছে।
কিন' শফিক নীতুকে এখনই নিয়ে যেতে চাইনা । সে চায় ওখানে যতদিন নিজে একটা ভাল অবস'ানে না যাবে ততদিন নীতু ওর মার কাছেই থাকবে।
- কি হলো সব গোছানো হয়েছে তো ।
- এইতো প্রায় সব শেষ।
- তাড়াতাড়ি করো।
দশটার ফ্লাইট ধরতে হবে।
- তাড়াতাড়িই করছি তো ।
- দেখো কিছু যেন বাদ না পড়ে।
- না না কিছু বাদ পড়বেনা। তুমি নিশ্চিত থাকতে পার।
এখন আটটা বাজে। নীতু সব গুছিয়ে ঠিক করে দিল । তারপর শফিকের টাই বাঁধতে বাঁধতে বলল-
- যাচ্ছো যাও। কিন' খবরদার গিয়েই ফোন করবে।
- আচ্ছা।
- আর নিয়মিত চিঠি দেবে।
- আচ্ছা।
- খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম করবে না। প্রত্যেকদিন অন-ত দু’বার করে ফোন করবে।
- আচ্ছা বাবা আচ্ছা ।
দু’দিন যেতে না যেতেই পাকা গৃহিণী হয়ে গেলে দেখছি।
- কই আর পাকা গৃহিণী হলাম। আমি তো ঠিক মত রান্নাই করতে পারি না।
দু’জনেই এক সাথে হেসে উঠল। নীতুর হাসির শব্দে শফিক তাকিয়ে থেকে বলল, আহ! কি সন্দর ।
- কি, কি সুন্দর।
- তোমার হাসি।
- আর আমি খারাপ নাকি।
- না তা বলেছি কখনও। এই যা ফ্লাইটের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আচ্ছা আমি আসি।
- এসো, নীতুর চোখে পানি টলমল করছে। কোন বিরহের নয়,আনন্দের। আজ তার মনের আশা র্পূণ হয়েছে। নীতু চোখ বন্ধ করে বিধাতার কাছে শুকরিয়া আদায় করল ও শফিকের জন্য র্প্রাথনা করল ও যেন ঠিক মত পৌছতে পারে।
শফিক বেরিয়ে গেল। নীতু কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকল। তারপর আনমনে জানালা দিয়ে সুদর দিগনে-র দিকে চেয়ে রইলো। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল।
- হ্যালো!
- হ্যালো, কে বলছেন?
- আমি বিমান বন্দর থেকে বলছি।
- জ্বী আপনার পরিচয়।
- আমি শফিকের বন্ধু বলছি।
- কি ব্যাপার আপনার গলা এমন কাঁপা কাঁপা লাগছে কেন?
- শফিকের যে বিমানটায় যাওয়ার কথা ওটা...........
- ওটা.. ও..ওটা কি ? কথা বলছেন না কেন হ্যালো!
- শফিক যে বিমানে গেছে সেটা বিমান বন্দর থেকে টেক-অফ করার সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়েছে।
- কি! হ্যালো হ্যা.............................
নীতুর মাথায় যেন সমস- আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করল ও।
ঘন্টা খানেক আগে যে শফিককে নিয়ে সে স্বপ্নের পৃথিবীতে বিরাজ করছিল। সেই শফিক নেই! নীতু প্রায় পাথরের মত জমে গেছে। টেলিফোন হাতে সেইভাবে দাড়িয়ে আছে। কি করবে এখন- ও।
অনেকক্ষণ কলিং বেল বাজার পর নীতু সচকিত হল।
ওর মনে হচ্ছে কলিং বেল যেন ওর মাথার ভেতর বাজছে। দরজার দিকে এগুতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিল। তাড়াতাড়ি করে সোফা ধরে গতিরোধ করল। দরজার কাছে এসে দরজার পাল্লা খুলে ভূত দেখার মত চমকে উঠল । দরজার ওপাশে শফিক দাড়িয়ে রয়েছে।
শফিক একগাল হেসে বলল-নীতু আমার ব্রিফকেসটা ফেলে গিয়েছিলাম। ওটাতে ভাইয়ার জরুরি কাগজপত্র রয়েছে। তাই চলে এলাম। এই ফ্লাইটে আর যাওয়া হল না।
র্মূতির মত দাড়িয়ে নীতু শফিকের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
চোখের দৃষ্টি ঘোলা,মনে হচ্ছে কিছু দেখছে না।
- কি হলো ভেতাে ঢুকতে দেবে না?
নীতু তবুও দাড়িয়ে রয়েছে। শফিক নীতুকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
- এই নীতু কি হয়েছে।
- এ্যাঁ! না কিছু না----------তু-- তুমি?
- ব্রিফকেসটা ফেলে গিয়েছিলাম, ওটা আলমারি থেকে বের করে দাও।
নীতু আলমারি থেকে ব্রিফকেসটা এনে শফিককে দিল।
শফিক সোফায় বসে রয়েছে। নীতু ওর পাশে এসে বসল। মনে মনে ভাবল কিছুক্ষণ আগের ঘটনাটা । ওটা কি তাহলে ওর কল্পনা ছিল্ । ওকি দুঃস্বপ্ন দেখেছে।
নিশ্চয় ও দুঃস্বপ্ন দেখেছে। ওর স্বামী তো ওর পাশে বসে কাগজ পত্র দেখছে। নীতু নিশ্চিত মনে শফিকের কাঁধে মাথা রেখে র্দীঘশ্বাস ফেলল। ওটা যেন শুধুমাত্র দুঃস্বপ্নই .............হয়।
সমাপ্ত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।