বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে অনেকেই বলে থাকেন ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা না থাকলে ইতিহাস অন্যরকম হতে পারত।
আবার অনেকেই বলে থাকেন ভারত তার স্বার্থের জন্যই বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছিল। কিন্তু উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশকে প্রচুর সাহায্য করেছে- এটি অস্বীকারের উপায় নেই। বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের দেশে আশ্রয় দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, মুক্তিযুদ্ধে সেনা সহায়তা দেওয়াসহ সব ধরনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদ দিয়েছিল ভারত। ভারতের সামরিক বাহিনীর সহায়তায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে স্পষ্টভাবে পরাজিত করতে সক্ষম হয়।নয়া দিল্লি,
ডিসেম্বর ৬, ১৯৭১
মান্যবর জনাব তাজউদ্দীন আহমদ,
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী,
মুজিবনগর।
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনি ও সম্মানিত ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ৪ ডিসেম্বর আমাকে যে বার্তা পাঠিয়েছেন, তা ভারত সরকারের মধ্যে আমার সহকর্মী ও আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। আপনারা যার আত্দোৎসর্গী নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার যে অনুরোধ করেছেন তা আবারও বিবেচনা করেছে ভারত সরকার। আমি আনন্দের সঙ্গে আপনাদের জানাচ্ছি যে, বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে ভারত সরকার এ স্বীকৃতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে আজ সকালে আমাদের পার্লামেন্টে আমি একটি বিবৃতি দিয়েছি। তার অনুলিপি এর সঙ্গে যুক্ত করলাম।
বাংলাদেশের জনগণকে অবর্ণনীয় দুর্দশার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। আপনাদের যুবসমাজ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য আত্দোৎসর্গী সংগ্রামে নিয়োজিত। একই মূল্যবোধ রক্ষার লড়াই করছে ভারতের জনগণও। আমার কোনো সন্দেহ নেই যে, উদ্যমে ও ত্যাগে এই বন্ধুত্ব মহান উদ্যোগে আমাদের আত্দনিবেদন ও আমাদের দুই দেশের জনগণের মৈত্রী সুদৃঢ় করবে। পথ যত দীর্ঘই হোক এবং ভবিষ্যৎ নির্মাণের ডাকে আমাদের দুই দেশের জনগণের ত্যাগের পরিমাণ যতই হোক, আমি নিশ্চিত যে আমরা বিজয়ী হব।
আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে, আপনার সহকর্মীদের এবং বাংলাদেশের বীর জনগণকে আমার অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমি একই সঙ্গে আপনার মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে আমার সর্বোচ্চ সম্মান জ্ঞাপন করছি।
আপনার বিশ্বস্ত,
(ইন্দিরা গান্ধী) এর বাইরেও ভারতের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থনদান বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের ছিল। মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামরিক ব্যক্তিকে আশ্রয়দানের সুযোগ দেয়। কলকাতায় একটি প্রবাসী সরকার গঠনের ব্যবস্থা করে।
এ ছাড়া পূর্ববাংলার স্বাধীনতার জন্য স্বল্প পরিমাণে সামরিক সহায়তা দিতে থাকে এবং মুক্তিযুদ্ধের অনুকূলে আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়ার জন্য ভারত কূটনৈতিক প্রচারণা অব্যাহত রাখে।
মে মাসের শুরু থেকে জুনের শেষ পর্যন্ত এ সময় বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে প্রবেশ করে। যার কারণে ভারতীয় সরকার পূর্ববাংলার মুক্তি আন্দোলন নিয়ে ব্যাপকভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। এই সময় ভারত পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলকে সমর্থন দিতে থাকে। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এ সময় ভারত পূর্ববাংলার সমস্যার প্রত্যাশিত সমাধানের জন্য কূটনৈতিক ও সামরিক প্রচেষ্টা জোরদার করে।
১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি দল পূর্ববাংলায় মোতায়েন করা হয়। ভারত কর্তৃক প্রেরিত তিনটি সৈন্যবহরের দুটি ছিল সপ্তম পদাতিক একটি ছিল নবম পদাতিক যাদের ভারত পূর্ববাংলার সীমান্ত এলাকায় মোতায়েন করে। এ সময় ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সব ধরনের সমর্থনদানে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে কার্যকর কূটনীতিক ও নৈতিক সমর্থন পায়। ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর এ সময় ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করে। ফলশ্রুতিতে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।