ভালো আছি
নীতু একা পর্াকের একটা বেঞ্চিতে বসে আছে। এভাবে বসে থাকতে আর ভাল লাগছে না তার। তাছাড়া একা একটা মেয়েকে পর্াকের বেঞ্চিতে বসে থাকতে দেখে অনেকেই যেন কেমন করে চেয়ে থাকে। নীতুর দিকেও দু-একটা লোক অমন ভাবে তাকাচ্ছে। নীতুর অস্বসি- লাগছে।
শফিকটা যে কি? কোন দিন ওর আক্কেল বলতে কিছু হবে না। কখনো সময় মত আসে না।
আজও শফিক দেরি করে এল। নীতু কৃত্রিম রাগে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে রাখল। প্রত্যেক দিনের ব্যতিক্রম আজও হল না।
শফিক এসে নীতুর রাগ ভাঙানোর জন্য বলল-
- কি ব্যাপার নীতু এক্কেবারে সময় মত চলে এসেছ দেখছি। আমি তো জানতাম আমিই শুধু সময় মত আসি, আর তোমার সময়জ্ঞান বলে কিছু নেই। কিস' এখনতো দেখছি ব্যাপারটা উল্টো তুমিই আসছ সময় মত আর আমারি আসতে দেরি হচ্ছে। অবশ্য আজকে আমি মনে হয় ঠিক সময় এসেছি কোন দেরি করিনি, কি বল?
- কি দেরি করোনি। পুরো তিরিশ মিনিট দেরি করে এসেছ তুমি।
তারপর আবার বলছ দেরি করোনি। যাও তোমার সাথে আমার কোন কথা নেই। নীতু এবার আরও রেগে গেল।
- দেরি করেছি কোথায়। আমি তো তোমার পরে এসেছি।
এবার ও প্রশংসা করতে শুরু করল-
- নীতু আজকে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে । মনে হচ্ছে যেন আসমান থেকে সদ্য ডানা ভাঙ্গা একটা পরী উড়তে না পেরে এই র্পাকের বেঞ্চিতে পড়ে গেছে। এমন কথা শোনার পর কোন মেয়ের কি রাগ করে থাকা চলে, নীতুও রাগ করতে পারলনা। বলল-
- তুমি একটা পাগল, কি আমি পাগল, তাহলে তুমিও পাগল।
- না না আমি পাগল হতে যাব কেন, আমিতো পাগলী।
দুজন এক সঙ্গে হেসে উঠল। নীতুর হাসি শফিকের কাছে খুব ভাল লাগে। নীতু মনের আনন্দে এক নাগাড়ে হেসেই চলল।
এভাবে ওদের প্রত্যহ দেখা হত , আর রাগ, অভিমান, হাসি ঠাট্টা সব মিলিয়ে ওদের ভালবাসাটা এক অকৃত্রিম ভালবাসায় পরিণত হয়েছিল। প্রত্যেকদিন শফিক দেরি করে আসত।
আর নীতু রেগে যেত। শফিকও ঐ একই কৌশলে নীতুর অভিমান ভাঙাত। কিন' একদিন নীতু এমন অভিমান করল যে, শফিক অনেক চেষ্টা করেও সে অভিমান ভাঙতে পারল না।
দু’বছর পরের ঘটনা,
নীতু প্রত্যহ র্পাকের সেই বেঞ্চিটায় গিয়ে বসে থাকে। আর ভাবে একা একা।
আসলে দোষটা ওরই ছিল । কেন সে শফিককে ভুল বুঝেছিল? কেন সে শফিককে নিয়ে ওর মামাতো বোনের সাথে জড়িয়ে একটা বাজে ধারণা মনের মধ্যে স'ান দিয়েছিল । কেন সে শফিককে অপমান করতে গিয়েছিল? শফিক কিন' ওকে কিছুই বলেনি তখন । মুখ বুজে সব অপমান সহ্য করেছে। শুধু যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিল নীতু তুমি ভুল করলে, চরম ভুল।
এই ভুলের মাশুল তোমাকে একদিন দিতে হবে। কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে শফিক চলে গিয়েছিল ।
কিছু দিন পর শফিকের মামাতো বোনের যখন বিয়ে হয়ে গেল। তখন নীতু বুঝতে পারল ভুলটা ওরই। শফিক শুধু ওকেই ভালবাসতে পারে।
আর কাউকে নয়। এর পর শফিককে নীতু অনেক খুঁজেছে। কিন' পাইনি। সেই থেকে নীতুর মনে একটা অপরাধ বোধ ভর করে । এক অতিচেনা অথচ নাম না জানা কষ্টে ওর বুক ভেঙ্গে যায়।
নিজের ভালবাসাকে ও নিজেই গলাটিপে হত্যা করেছে। নীতু প্রতিজ্ঞা করে শফিকের সাথে ওর যদি কখনও দখা হয় তাহলে ও ক্ষমা চেয়ে নিবে। সেই থেকে শফিককে দেখার মিথ্যা আশায় রোজ এই পর্াকের বেঞ্চিতে সে বসে থাকে।
নীতুর সেদিনের সেই আচরণে শফিক খুবই দুঃখ পেয়েছিল এবং মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছিল। শেষে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে বিদেশ চলে গিয়েছিল ওর বড় ভাইয়ের কাছে।
গত দুদিন হলো দেশে এসেছে। প্রতিদিনের মত আজও নীতু পর্াকের সেই বেঞ্চিটাতেই বসে আছে। বসে বসে শফিকের কথা ভাবছে কিন' হঠাৎ কিসের শব্দে যেন নীতুর ভাবনায় ছেদ ঘটে। আর তখনই দেখে ওটাকে। নীতুর কাছ থেকে প্রায় দুই গজ দুরে রয়েছে।
ভয়ে নীতুর প্রায় আধমরা অবস'া হবার যোগার । চোখ বন্ধ করে ভয়ে চিৎকার করতে গেল, কিন' গলা দিয়ে শব্দ বের হওয়ার পরির্বতে ঘড়ঘড় আওয়াজ বের হলো।
- প্লীজ নড়াচড়া করবেন না আমি দেখছি কি করা যায়। একটি পুরুষ কন্ঠ শুনতে পেল নীতু । ওর কাছে গলাটা খুব পরিচিত মনে হল।
কালো কমপ্লিট স্যুট পরা একটি ছেলেকে দেখা গেল । খুব র্স্মাটভাবে একটা পাতাবাহার গাছের ডাল ভেঙ্গে নিল। তার পর খুব ধীরসি'র ভাবে সাহসের সাথে ডালটির আগাদিয়ে সাপটিকে ছুড়ে পর্াকের পুকুরে ফেলে দিল।
- এবার চোখ খুলুন। ওটা জলঢোড়া সাপ, কামড়ায় না।
নীতু চোখ খুলে যা দেখলো তা দেখবে বলে ও কখনও স্বপ্নেও কল্পনা করেনি। ও কয়েক মুর্হুুতের জন্য নিস-ব্দ হয়ে গেল। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল-
- শফিক তু..তুমি? আ..আ..আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না!
- আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে। আমাকে চেনেন?
- শফিক তুমি আমাকে চিনতে পারনি ।
- না
- সত্যিই কি?
- হ্যাঁ।
- শফিক, সত্যিই তুমি আমাকে চিনতে পারছ না। আমি নীতু
- নীতু নামে আমি কাউকে চিনতাম বলে তো মনে পড়ছে না। (চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।