আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সমাজের বিরুদ্ধ স্রোতে চলা, মানসিক রোগের অভিযোগ ও আমার নির্বাসন দন্ড

.......অতঃপর মৃত্যুর প্রতীক্ষা

১৯৯৭ সাল। নটরডেম কলেজের গণিতের অধ্যাপক নিমাই চন্দ্র দাসের দোর্দন্ড প্রতাপ। প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় গণিতে ফেল করা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, পাশ নম্বর নিয়ে ইজ্জত রক্ষা হয়েছে পরবর্তীকালের অনেক স্ট্যান্ড ধারীর। গণিতের বড় বড় গুরুদেবের জন্মদাতা এ কলেজে এমন প্রতাপশালী মূর্তিমান ত্রাস থাকাই স্বাভাবিক। সে সালেই নটরডেমে ভর্তি হয় এক বিস্ময়কর প্রতিভা।

বুয়েটের গুরুদেব সুমন কুমার নাথ বা বুয়েট মার্শাল মনিরুল আবেদীন পাপ্পানার পর তাদের থেকেও ভয়ংকর প্রতিভা বেরিয়ে আসবে সেটা কল্পনা করে নি কেউই। ১ম পার্ট পরীক্ষার ফলাফলে যথারীতি ফেলের মহোৎসবের মাঝে একজন ১০০ তে ১০০ পেল। নড়ে চড়ে বসলেন নিমাই দাস। নিয়ম মাফিক ২য় পর্বের পরীক্ষার প্রশ্ন সহজ করেন তিনি, প্রথম দফায় ছাত্রদের করুন দশা দেখে। কিন্তু এই বার তার ব্যাতায় ঘটল।

১০০ পাওয়া ছেলেকে ডাউন দিতে নিমাই দাস থ্রি ডি জিওমেট্রির কোনিকসের ভয়ংকর কিছু সমস্য দিলেন। নিমাই দাসের মুখ কালো করে আবার ১০০ তে ১০০। মাঝ খান থেকে গুরু-শিষ্য লড়াইয়ে অন্যান্য ছাত্রদের জান প্রাণ ওষ্ঠাগত। জেদ চেপে গেল নিমাই দাসের। ৩য় দফায় প্রচেষ্টার পরও অসুরের দানবীয় শক্তি দেখিয়ে সে ছাত্র যথারীতি ১০০ তে ১০০।

৪র্থ দফা সরাসরি ঘোষণা দিয়ে সর্ব শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লেন নিমাই। এ দফাতেও ১০০ তে ১০০, বিস্ময়ে হতভম্ব ও ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দিলেন নিমাই চন্দ্র দাস। বজ্র কন্ঠে ঘোষণা দিলেন, বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় এই ছেলেটাই প্রথম হবে। বায়োলজি নিয়ে কিন্তু বায়োলজিতে লেটার না পেয়েও ৬টার মাঝে মাত্র ৩ টা বিষয়ে ৮০%+ নিয়ে ৯৩০+ স্কোর তুলে ঢাকা বোর্ডে ১২ তম স্থান অধিকার করেছিল সে প্রতিভা। বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় যথারীতি বিনা প্রতিদন্দ্বিতায় প্রথম।

ছেলেটির বাবা মৃত। রত্ন গর্ভা মা র এক মাত্র সন্তান। বুয়েটে ক্লাশ শুরু হবার মাস খানেক আগে ভাইরাল ফিভারে মারা যায় এ কাল জয়ী প্রতিভা নিয়াজ। ওর মা এখন কোথায় কিভাবে নিঃসঙ্গ যাপন করছেন, কতটুকু কষ্ট ধরে বেচে আছেন জানতে ইচ্ছা করে খুব। গল্প্ এখানেই শেষ।

মৃত্যু, অশ্রু, ক্ষুধা, ধর্ম, স্রষ্টা, পাপ বোধ কথা গুলো বারবার আসে আমার মুখে, মানুষ জন বিরক্ত অসুস্থ বোধ করে বার বার। নিয়াজের কথা ভাবি। গুরুদের দেবতা হয়ে কি হল? আজ ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে শেরিফ হাসপাতালের বিছানায় শয্যাগত। পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, গবেষণার বিপুল উদ্যমের মাঝ খান হতে হঠাৎ সোজা হাস পাতালের বিছানায় শুয়ে ধর্ম, স্রষ্টা, মৃত্যু, পরকালের কথা গুলো নিঃসাড় ভাবে স্মরণ করতে থাকা। নিয়াজ আস্তিক ছিল।

বাচার আকুতি ছিল স্বাভাবিকভাবেই, কিন্তু বড় কোন পাপের দংশন ছাড়াই সে পরকালে স্রষ্টার কাছে ফিরে গিয়েছে। চুল দাড়ি কাটা হয়নি বহুদিন হয়ে গেল। চেয়েছি কাজ দিয়ে মানুষ আমাক চিনবে, চুল দাড়ি দিয়ে নয়। ধর্মীয় সমাবেশে কেন পাঞ্জাবি পরিনা বা ছাত্র পড়ানোর কালে কেন চুল-দাড়ি কাটিনা সমাজ প্রশ্ন করে বার বার, আমার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হানা দেয়। নীল রক্ত ধারীদের পানশালা ও বিপনীগুলো এড়িয়ে চলি মানুষের সন্দেহের বিব্রতকর দৃষ্টি এড়াতে।

ভুল করে কেউ আবার হুজুর বলে ডাক দিলে চৈতন্য ফিরে। যে দেশে শিক্ষা বলে কিছু নেই, যে দেশে শিক্ষকগণ ছাত্রদের হাতে নিগৃহীত হন, সে দেশ বাসীর কপাল পোড়া। শিক্ষা, মুক্ত চিন্তা, ব্যক্তি মানসের দর নেই এ দেশে। কেজি দরে গড্ডালিকার উপকরণ, অনর্থক ব্যক্তি পূজার অঞ্জলি কেনা ব্যক্তিত্ব বিনাশী হুজুগে বাঙালির মানসিক মুক্তির উপায় দেখিনা। শেরিফ, এখানে থাকতে হলে শেভ করে আসতে হবে, ক্যাটস আই আর ওয়েস্টেক থেকে পোশাক না কিনলে এখানে প্রবেশ নিষেধ।

বিয়ের আসরে ফটো সেশনে পাত্র-পাত্রীর সামনে দাড়াতে হবে ভদ্র লোকের পোষাক পরে ভদ্র লোক সেজে, তোমাকে হাসতে জানতে হবে, মেয়েদের সাথে মিশতে শিখতে হবে, সামাজিক হতে হবে, উৎসব অনুষ্ঠানে আসতে হবে, বিয়ে করতে হবে, স্বপ্ন দেখতে হবে, ঘর বাধতে হবে, টাকা জমাতে হবে, মৃত্যু আর পরিণতির কথা ভেবে উন্মাদ হওয়া যাবেনা। আমার উত্তর ছিল একটাই। "অসম্ভব"। নিজের মত স্বাধীনভাবে বাচতে চাই। স্বজাতির ঢং আর সহ্য হয়না।

এর চেয়ে যাযাবর ভিক্ষুক হওয়া ঢের ভাল। যিনি ক্ষুধা দিয়েছেন, অন্নের জোগাড় তিনিই করে দিবেন, স্বাভাবিক মৃত্যু না আসা পর্যন্ত জান নিয়ে বেচে থাকাই এখন জীবনের লক্ষ। আমার পরিবার-পরিজনের কাছে যেখানে আমার ঠায় হয়না, সুদৃষ্টি পাইনা, স্বদেশে ক্ষুন্নিবৃত্তির সুসার নাই যেখানে, দেশান্তরি হবার বিকল্প পেলাম না। কর্ম চ্যুত, পরিবার চ্যুত, সমাজ চ্যুত হবার পর স্বদেশ থেকে নির্বাসিত হবার দন্ডাদেশ এখন মাথায়। আজন্ম হতাশার উপর অপরাধবোধ ও অপমানটুকু কাজ করবে যথারীতি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.