অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
কোনো একদিন ২১শে আগস্ট নিয়ে উপন্যাস লিখবার ইচ্ছা আছে। সমসাময়িক এই ঘটনা নিয়ে হঠাৎ করেই ২৪ শে আগাস্ট রাতে লিখা শুরু করেছিলাম গল্পটা। কিছুটা আত্মজৈবনিক, কিছুটা ফিকশন, তবে অধিকাংশ লেখার ভবিষ্যত মাঝ পথে আটকে যাওয়া। এটাও তেমনই মাঝপথে আটকে আছে, সমাপ্তি প্রত্যাশা করছে হয়তো।
১
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ডাকা সর্বাত্বক হরতালের প্রথম দিন শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাপ্ত হয়েছে ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদেও সদস্য তপন চৌধুরির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান স্কয়ারের একটি শো রুমে কতিপয় দুষ্কৃতিকারীর বর্বোরোচিত ভাংচুরের প্রতিবাদে সরকার এই হরতালের ডাক দেয় । অনির্দিষ্ট কালব্যাপী ঘোষিত এই হরতাল আগামিকালও পালিত হবে ।
আহূত এই হরতালের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে সরকারি-বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান, হরতালের সমর্থনে সবচেয়ে আশ্চর্য কর্মসূচি দিয়েছে মোবাইল কোম্পানিগুলো, তারা হরতালের সমর্থনে তাদের সকল কর্মসূচি স্থগিত রাখে, ফলে আজ বৃহস্পতি বার বিকেলে সামান্য সময়ের জন্য হরতাল শিথিল করা হলেও কেউই কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি,
এই হরতাল অবসানের কোনো সময়সূচি বেঁধে দেয় নি সরকার, তবে তাদের পরবর্তী কর্মসুচি দেখে মনে হচ্ছে এ হরতালের মেয়াদ আগামি ৩০শে অগাস্ট পর্যন্ত হতে পারে, তবে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যদি পরিস্থিতির উন্নতি হয় তবে যেকোনো সময়ই হরতাল বাতিলের ঘোষনা আসতে পারে ।
শান্তিপূর্ন এই হরতাল চলাকালে কোথাও কোনো গোলোযোগের খবর পাওয়া যায় নি, জনগণের স্বতস্ফুর্ত সমর্থন ছিলো, তারা রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে পিকেটারদের উৎসাহ দেয় । পিকেটারের দায়িত্ব পালনকারি পুলিশ অফিসারেরা সফল ভাবে তাদেও দায়িত্ব পালন করায় প্রধান উপদেষ্টা তাদের সাধুবাদ জানান, এ উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, দেশের ক্রান্তিলগ্নে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে তাদের নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থেকে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করতে হবে ।
এরপর তিনি জনগণকে হরতাল সফল করবার জন্যে অভিনন্দিত করেন।
বিশ্বে সর্বপ্রথম এমন একটা সর্বাত্বক হরতাল পালিত হলো যেখানে কোনো ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে নি, কোথাও কোথাও পিকেটাররা জনগণকে ধাওয়া দিলেও তারা সহনশীলতার পরিচয় রাখে, তারা জনগণকে রাস্তা থেকে দুরে থাকবার অনুরোধ জানায়। এ উপলক্ষে সামরিক বাহিনীর প্রধান তার ভাষণে জানান- বিশ্বেও ইতিহাসে বাংলাদেশ আজকের হরতালের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে, তিনি আরও বলেন এই হরতালে জনগণের রায় প্রতিফলিত হয়েছে, জনগণ জানিয়েছে সুশাসনের পক্ষে তাদের অবস্থান স্পষ্ট, তারা দুস্কুতিকারিদেও প্রত্যাখ্যান করেছে আজ। তিনি জনগণদের ধৈর্য্য ধারণের জন্য অনুরোধ করেছেন, যেকোনো হঠকারিতা রুখে দিয়ে তাদেও অবস্থান পরিস্কার রাখবার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, বিজয় সুনিশ্চিত জেনেই দুস্কৃতিকারিরা জনগণের বিজয় ছিনিয়ে নিতে চাইছে, তিনি এ অপতৎপরতা রুখে তাদের জবাব জানিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান জনগণকে।
২
জরুরি অবস্থা জারি করা গুরুত্বপূর্ণ ছিলো, বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিছু হটে যাওয়ার পরে সরকারের দুর্বলতা প্রকট হয়ে যাওয়ায় একটা কঠোর অবস্থান গ্রহন বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়, যদিও প্রকারান্তরে ঘটনার দায়ভার বর্তায় সামরিক বাহিনীর ঔদ্ধত্যের উপরেও তবে ক্ষমতাসীনদেও এই ঔদ্ধত্য চিরকালীন ব্যধি, সামরিক বাহিনীর সাথে সাধারন মানুষের দুরত্ব বর্ণমালার একই অক্ষরে শুরু হওয়া থেকে নির্ণয় করা সম্ভব নয়, বরং সিভিলিয়ান এর সি এবং মিলিটারির এম এর মতো অলঙ্ঘনীয়, মাঝে অনেকগুলো অক্ষরের পাহাড় ডিঙ্গিয়ে পারি দিতে হবে, এ দুরত্ব ঘুচবার নয়।
বরং অক্ষরদুটো পাশাপাশি সাজালে প্রথম যে শব্দটা মনে পড়ে সাধারন মানুষের মিলিটারি বিষয়ে অনুভবটা এমনই।
আমরা এ আলোচনায় ফিরে আসবো পুনরায়, তবে সাধারন মানুষের বিদ্বেষ আর প্রত্যাশা ভঙ্গের গল্পটা অন্যরকম, ১১ই জানুয়ারি যখন শিখন্ডী সামনে রেখে সামরিক বাহিনী ক্ষমতাগ্রহন করেছিলো প্রত্যাশার বেলুন ফুলিয়ে অনেকেই ভেবেছিলো দুঃখরজনী শেষে নতুন ঊষার আলো অমানিশা শেষে ভোরের শীতল বাতাস এটা, যদিও সামরিক রংএ সাজানো কোনো পরিচ্ছদই শেষ পর্যন্ত রক্তের দাগ আড়াল করতে পারে নি বরং নিয়মিত রক্তস্লানে মলিন হয়েছে । এরপরও মানুষের আশা ছিলো এবার হয়তো বন্ধু বেশেই এসেছে শেয়াল, কুমীরের ছানার কোনো গল্প শোনাবে না তারা, বরং শেয়ালের কাছে মুর্গী বর্গা দিলে ব্যপক লাভের অঙ্ক হিসেবে ব্যস্ত ছিলো যারা তারা বুঝে নি দুধ- কলা দিয়ে সাপ পুষলেও ছোবল সে দিবেই একদিন।
২০শে আগষ্ট ২০০৭, এলিফ্যান্ট রোড থেকে শাহবাগ সম্পূর্ন রাস্তায় ছিলো উৎসবের আমেজ, দুপুর ১২টায় আজিজ কোঅপারেটিভ মার্কেটের সামনে একটি মিলিটারি জীপ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়- এই উল্লাসের উৎস খুঁজতে যেতে হবে আরও ৬ মাস পেছনে-
১১ই জানুয়ারি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পরপরই ব্যপক ধরপাকর শুরু হলো। সে সময়ে অনেক মানুষের জীবিকার সংস্থান সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।
এইসব আধাপেটা খাওয়া মানুষেরা ভেতরে ভেতরে ফুঁসেছে তবে অলিখিত জরুরী অবস্থায় স্থগিত মানবিক অধিকার চর্চা নিষিদ্ধ থাকা এবং রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অগণতান্ত্রিক চরিত্রের কারণে জনবিচ্ছিন্ন একদল দুবৃত্তের আস্তানা হয়ে যাওয়ায় এই দুঃসময়ে আসলে তাদের পাশে কেউ দাঁড়ায় নি।
বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য এখানে যেকোনো গণআন্দোলনের সূচনা করে এদেশের সুবিধালোভী মধ্যবিত্ত শ্রেণী, তারাই নীতি-নৈতিকতা এবং গণজাগরণের স্বর বুঝে, তারা প্রতিবাদী হয়ে রাস্তায় নামলেই সরকার বদলে যায় পুরোপুরি।
এমন দীর্ঘ মেয়াদী অমানিশা হয়তো বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনই আসে নি।
৩
বুধ বার বিকেলে যখন রাস্তায় নামলাম তখন জানা ছিলো না অনেক চমক আছে সামনে, বাসা থেকে বেড়িয়ে গলি থেকে রাজপথে পৌঁছে যে দৃশ্য দেখলাম সেটা অপ্রত্যাশিত ছিলো না মোটেও, ১১ই জানুয়ারি বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে পুরোপুরি, সকল রাজনৈতিক ব্যকরণ বদলে ফেলেছে, মানুষ ছদ্ম সামরিক শাসনে অভ্যস্ত হতে পেরেছে এমন নয় তবে অভাবিত কিছু দেখলে অবাক হয় না মোটেও, বস্তি উচ্ছেদ, ফুটপাত হকার মুক্ত করা, নানা রকম গরীব মারা ফাঁদ পেতে অনেক মানুষ শিকার করে দুদক আর বাঙালীকে হাইকোর্ট চেনানোর কার্যক্রম দেখেও মানুষ চুপ করে ছিলো নতুন দিনের আশায়- তবে সময়ের সাথে এ স্বপ্নের রং ফিকে হয়েছে- আরও বেশী পূঁজিবাদী এবং জনবিচ্ছিন্ন একটা সরকার যাদেও সাধারণ মানুষের প্রতি কোনো সহমর্মিতা নেই এমন একটা পরিচয় দাঁড়া করতে সক্ষম হয়েছে ১১ই জানুয়ারীর অনির্বাচিত সরকার। সংবিধানের পোশাক পড়ে সবচেয়ে অসাংবিধানিক রুঢ় সরকার এসেছে সামরিক তত্ত্বাবধানে-
উপদেষ্টাদের কোনো ধারণা নেই জীবন কিভাবে কাটে ৯০% বাংলাদেশীর।
তারা কল্পনায় যুক্তরাষ্ট্র- ইউরোপ আর উন্নত বিশ্বেও মডেল সামনে এনে বলতে থাকেন পৃথিবীর কোথায় কোন দেশ এ মডেলের অনুসারি। তারা অনভিজ্ঞ এটা অনুমান করা যায় তবে তারা পরামর্শ গ্রহনে অপরাগ-। এই ব্যধি কাটানোর কোনো সুযোগ নেই, হলি ডে মার্কেট আর আমাদের হকার ভিন্ন দুই শ্রেণী এ সত্য বুঝতে তাদের সময় লেগেছে ৮ মাস। তারা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কয়েকটি স্থানে হকারদের পূনর্বাসিত করা হবে। অর্থ্যাৎ কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে স্থায়ী দরিদ্র মার্কেট তৈরীর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তবে এখনও তা বাস্তবায়নের অপেক্ষায়।
পুলিশ যখন অস্থায়ী বাজারে হামলা করে তখন সেটা পেটে লাথি হয়ে যায় এখানে জীবিকার লড়াইয়ে লিপ্ত মানুষের। হকারদের ক্ষোভ অনুভব করা যায়, ধারাবাহিক প্রত্যাশা ভঙ্গেও আগুনে পুড়ছে তারা। তাই তাদের মাত্রাছাড়া প্রতিক্রিয়ায় অবাক হতে পারি নি, বরং এটাই স্বাভাবিক মনে হয়েছে-
শেরাটনের সামনের রাস্তায় সারি সারি মানুষের মিছিল, নীলক্ষেত, নিউ মার্কেট সায়েন্স ল্যাব গাওসিয়া আর ঢাকা শহরের আর সব স্থানের স্বতঃস্ফুর্ত প্রতিবাদ, লড়াই আর রক্তপাত স্বাভাবিক ক্ষুধার্ত মানুষের প্রতিক্রিয়া, এর ভেতরেও টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট, লাঠিচার্য । এবং এর সবটুকুই শোভন মধ্যবিত্বের ড্রইংরুম পলিটিক্সের উপাদান হবে এমনটাই নিয়তি নির্ধারিত। সারি সারি মানুষ হাতে স্যান্ডেল ঝুলিয়ে হাঁটছে - তাদের কাঁধে টিফিন ব্যাগ, তাদের চেহারায় তাড়া, নারী পুরুষ নির্বিশেষে তারা হাঁটছে- শহরে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট প্রায় নেই বললেই চলে, মানুষের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে আমাদের অন্তরঙ্গ আলাপন,
4
পটুয়াখালীর রাশেদ যখন জসিমুদ্দিন হল ছেড়ে অবশেষে রাস্তায় নামলো ব্যগ গুছিয়ে তখন সন্ধ্যা ৭টা, ঢাকার রাস্তা তখন মোটামুটি জনশুণ্য- কোনো পাবলিক বাস চলছে না, দুয়েকটা রিকশা আর সিয়েঞ্জি যদিও চলছে তবে সেখানে ত্রস্ত মানুষের কাফেলা, শাহবাগের মোড়ে বাসের অপেক্ষায় আরও ৪০ মিনিট কাটিয়ে দেখলো প্রায় শুনশান রাস্তায় কয়েকটা কুকুর আর জাদুঘর আর মালঞ্চের সামনে ৩ গাড়ী পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে- কাঁধে হালকা ব্যাগ ঝুলিয়ে কোথাও যাওয়ার উপায় নেই- ফুটপাতের সিগারেটের দোকান বন্ধ করে দোকানিরাও চলে যাচ্ছে, মিরপুরে মামার বন্ধুর বাসায় রাত কাটানোর উপায় নেই- বিপ্লব ভাইয়ের মোবাইল নাম্বারে ফোন করে জানলো আরও ২ জন তার আজিজের ১৩ বি ফ্ল্যাটে উঠেছে, একটা রাতের বিষয়- দেশের পরিস্থিতি থমথমে।
রাশেদ আজিজ মার্কেটের উপরে যখন পৌঁছালো তখন ঘড়ির কাঁটা ৮টা ছুই ছুই। মা মোবাইলে ফোন করেছে- কথার মাঝখানেই লাইন কেটে গেলো- অনেক চেষ্টায় আর কল ব্যক করাও সম্ভব হলো না। টানা ১২ ঘন্টা সমস্ত মোবাইল লাইন বন্ধ ছিলো। আশ্চর্য উপায়ে মানুষ জনের ভেতরে সন্ত্রস্ত একটা অনুভূতি তৈরি করা যায়। মানুষ এতই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে মোবাইলে যোগাযোগ করেছে এতদিন যে এটা যে হঠাৎ কখনও বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমনটা কারো অনুমাণে ছিলো না।
সবাই বরং নিজের মোবাইলের সমস্যা বুঝে বারংবার নাম্বার চেপেছে, অবশেষে সবাইকে দেখে নিশ্চিত হয়েছে কোনো এক কারণে মোবাইলের সার্ভিস বন্ধ। এবং গৃহী মানুষেরা উত্তেজনা এবং অনিশ্চয়তায় উদ্বিগ্ন কাটিয়েছে। যারা দুরের যাত্রী তারা কার্ফ্যু শুরু হওয়ার আগে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে কি না এ নিয়ে শঙ্কা ছিলো। শঙ্কিত পরিবারের জন্য পরিবারে সদস্য ফিরে না আসা পর্যন্ত অসংখ্য ভীতিপ্রদ সম্ভাবনার সবগুলো খতিয়ে দেখা এবং অসহায়ত্বে কেঁপে কেঁপে উঠা ভিন্ন অন্য কোনো উপায় ছিলো না।
ঘুম আসছিলো না- গত ২ দিনের উত্তেজনায়- এমন অভিজ্ঞতা এই প্রথম তার- অসংখ্য মানুষের ভেতরে জড়িয়ে যাওয়ার এ আনন্দ কখনই পাওয়া হতো না তার যদি বিশ্ববিদ্যালয় শরীরচর্চা কেন্দ্রে ক্ষমতাউন্মত্ত এক সৈনিক ছাত্রের গালে চড় না মারতো-।
এই একটা থাপ্পর আসলে পড়েছে দেশের সকল শিক্ষিত মানুষের গালে- যারা মিলিটারি শাসনের আনন্দে ধেই ধেই নেচেছিলো আর যারা অনুমাণ করেছিলো এমনটাই ঘটবে- সবার গালেই পড়েছিলো এ থাপ্পর,
সার্বক্ষণিক নজরবন্দী থাকবার এ অনুভুতি একেবারেই অভিনব, হাত- পা আড়ষ্ট হয়ে থাকতো প্রায় সারাক্ষণ- মিলিটারি ক্যাম্পের মানুষেরা তাদের মতোই থাকতো, শরীর চর্চা করতো, তবে সম্পর্ক গড়ে উঠবার কোনো সুযোগ ছিলো না, ছেলেরা এর ভেতরেই মাঠে খেলতে যেতো তবে দিনদিন কমেছে এ সংখ্যা, নিচের চেনা ক্যাম্পাসে অনাহুত অতিথি হয়ে থাকবার এই অনুভুতিও নতুন।
মিছিলের প্রথম অনুভুতি তেমন ভালো লাগে নি তার, পুলিশের লাঠিচার্যের পর তার অহংকারে ধাক্কা লেগেছিলো এটা সত্য হলেও ভয়ের অনুভুতি আর শিহরণে মত্ত হয়ে উঠতে পারে নি সে, নিতান্ত গেঁয়ো ভীতু মানুষের মতোই মিছিল থেকে দুরে ছিলো। পরদিনের উত্তাল সময়টাতে সে নিস্ক্রিয়ই ছিলো বলা যায়। মঙ্গল বার সন্ধ্যায় যখন ঘোষনা আসলো মিলিটারি ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হবে তখনও নীলক্ষেতে আর ঢাকা কলেজের সামনে রণক্ষেত্র। তবে এ আঁচ বুঝা যায় নি, এফ রহমান হলের সামনের জটলা আর কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়া নাকে আসলেও কোনো ভাবেই সেখানে যেতে মন টানে নি তার।
মিলিটারি ভ্যান একে একে ক্যাম্পাস ছেড়েছে।
পরদিন উল্লাসে সে যুক্ত ছিলো। বিজয়ের আনন্দ ছিলো চারপাশে, বাঁকা চোরা গাছের ডাল হাতে সারাদিন টিনের সেপাই সেজে টহল দিয়েছে, বিকেলে যখন স্যারেরা বললো ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত তারা মানবেন না তখন সবাই আনন্দে হাততালি দিয়ে স্বগত জানিয়েছে এটা। কি থেকে কি হলো? কেনোই বা ২ ঘন্টা পরেই স্যারেরা রং বদলে বললেন এটা সবার জন্য ভালো। সরকারের নির্দেশ মেনে তারা হল ভ্যাকেন্টের নির্দেশ জানালেন।
আর তখন কারোই কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই, কার্ফ্যু ঘোষণার পর তাই কোথাও যাওয়ার উপায় ছিলো না তার।
এর ভেতরেই কলিং বেল বাজলো, একটানা-
দরজায় লাথি পড়লো
বিপ্লব ভাই যখন দরজা খুললেন সেখানে যমদুতের মতো মিলিটারি দাঁড়িয়ে।
সামনের প্যাসেজে অনেক চেনামুখ- প্রায় সবাই হলে থাকে- নিয়মটাই এমন-
হল ছেড়ে এখানে মেস করে থাকে ছেলেরা
হলের পরিচয়ের সুবাদে অনেকেই এখানে আশ্রয় নিয়েছে।
এমন অনেকগুলো মুখের মিছিলে রাশেদ নিজেকে দেখে অভিযুক্তের কাতারে-
খানকির ছেলেরা মিছিল করো? মিলিটারিকে হুমকি দাও? শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট করো?
বল কে কে ছিলো? তোদেও বাপের নাম ভুলাবো শুওরের বাচ্চারা-
আই ডি নিয়ায়-
তিন সারিতে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, সামনে মিলিটারি, ছাত্র এক সারিতে, অন্য সারিতে পরিচয়হীন মানুষেরা আর পেছনের সারিতে পরিচয় পত্রসহ অনান্য মানুষেরা-
প্রথম লাঠির বাড়িটা পিঠে না মনে হলো কোনো ভয়ের স্রোতের বাঁধ ভেঙে দিলো- আল্লাগো- বাবাগো, মাগো- নানারকম কাতোরোক্তির ভেতরে নিজের স্বর চিনতে পারছিলো না রাশেদ। লাথি- ব্যাটনের বাড়ি আর লাঠি- ঠিক মনে নেই -৩ কিংবা ৪ গুনবার আগেই সম্বিত হারিয়েছিলো সে।
আশেপাশের গুঞ্জন আর হৈচৈয়ের ভেতরে কেউ একজন বলছিলো এভাবে মারছেন কেনো? যদি অপরাধ করে ওদেও পুলিশে দেন- আহ শব্দের পরে যখন মুর্চ্ছা কাটলো তখন আশেপাশে আবছা অন্ধকার- উহ-আহ শুনে বুঝলো এই অন্ধকূপে একা নয় সে, অন্ধকার সয়ে আসবার পরে আরও অন্তত ৩০ জনকে কাতরাতে দেখেছে সে। কয়েকজনকে চেনা মনে হলো তবে অধিকাংশই অচেনা তার।
২৫।
৫০০ ওয়াটের বাতিটা দুলছে- একটা টেবিলে বসে আছে রাশেদ, সময়জ্ঞানবোধ অনেকআগেই লুপ্ত হয়েছে তার- তৃষ্ণার্ত ছিলো সে, তবে এখন আর কোনো তৃষ্ণা নেই তার- চোখটা কড়কড় করছে- মাথাটা ফাঁকা লাগছে- শুণ্যতার বোধ - কোনো কিছু বুঝে উঠবার আগেই সে জ্ঞান হারালো।
কাপড়টা ভেজা, শীতশীত লাগছে- আহ আরাম- চোখের উপরে কোনো আলো নেই- আশেপাশে লোকজন নেই, ঠোঁটের উপরটা জ্বলছে- উমম রক্ত- শক্ত হয়ে লেগে আছে- উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই মনে হলো পৃথিবীটা দুলছে- শালা
কাকে বললো এ বিষয়েও ধারণা নেই তার- সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না, গোড়ালীর কাছে জ্বলছে- আর পায়ের পাতায় ভীষণ যন্ত্রনা হচ্ছে- নোখের চারপাশ ফুলে আছে- আওয়াজ হচ্ছে কোথাও-কয়েকটা পা এগিয়ে আসছে।
শুওরের বাচ্চা বল কে তোকে টাকা দিছে? নামটা বল তুই-
কেউ না।
প্রচন্ড একটা থাপ্পরে পৃথিবী দুলে উঠলো তার।
কে টাকা দিয়েছে?
জানি না?
আবার একটা থাপ্পর-
৫০০ ওয়াটের বাতি জ্বলছে- দুলছে এদিক ওদিক-
কিছুক্ষণ পরে মাথাটা ফাঁকা হয়ে যায় আর কোনো কষ্ট নেই- কোনো তৃষ্ণা বা ক্ষুধা বোধ নেই, বোধহীন একটা জগতে চলে যায় রাশেদ-
কতদিন কেটেছে মনে নেই তার- জ্ঞান ফিরে আসবার পরে ২ জন এসে ধরে তুলবে তাকে- এর পর একটানা একটা প্রশ্নই বাজবে মাথার ভেতরে-
কে টাকা দিয়েছে? কে? কে?
অথচ এর সহজ জবাবটা মানতে রাজী না যারা প্রশ্ন করছে-
তাকে কে কেনো টাকা দিবে কিংবা দিয়েছিলো মনে নেই তার-
অথচ এই একটা উত্তর জানলেই কষ্ট থেকে মুক্তি পেতো সে।
ঘুমের ভেতরেও তার ভেতরেও অবিরাম প্রশ্নটা চলতেই থাকে- কে টাকা দিয়েছিলো? কে? কোনো টাকা দিয়েছিলো?
পাওনা টাকা? বিরবির করে রাশেদ- তার মুখটা নড়তে থাকে- মাথার ভেতরে গুনগুন করে প্রশ্নটা- কে কে কে- সে নাম মনে পড়ে না তার।
স্মৃতি বিস্মৃতির ভেতরে দিন কাটে- অবশেষে প্রশ্নকর্তার মুখটা দেখতে পায় সে, ক্লিন শেভড কঠোর একটা মুখ, নিস্কম্প একজোড়া চোখ- চিৎকার করে রাশেদ-
আমাকে বলেন কে টাকা দিয়েছে- কার টাকা ফেরত দিতে হবে? কি নাম তার- আর পারি না, মা, মা , মা, শিশুর মতো ফুপিয়ে কাঁদে রাশেদ- অজ্ঞান হয়ে যায় - আবার জ্ঞান ফেরে পানির ঝাপটায়-
রাশেদ দুর্বল হাতে খামচি দেওয়ার চেষ্টা করে ঐ মুখে- কানের পাশে একটা ধাক্কা লাগে- শোঁশোঁ শব্দ হয় মাথার ভেতরে-
সামনে একটা কাগজ- নির্দেশিত স্থানে সাক্ষর করে রাশেদ যখন ছাড়া পেলো তখন বিকাল- হাতে এতটুকরা কাগজে তার স্বীকারোক্তি- আমার উপরে কোনো নির্যাতন হয় নি,
সে চোখকুঁচকে সামনে তাকায়- এলোমেলো পায়ে সামনে আগাতে থাকে-
ঘড়িতে তখন ৫টা ৪২, দিনটা ১২ই সেপ্টেম্বর ২০০৭।
৫.
প্রতিক্রিয়ায় সামরিক সমর্থিত সরকারের সামনে পরোক্ষ নৈতিকতার বানী সামনে নিয়ে আসা ভিন্ন অন্য কিছুই করার থাকে না, ২০০১ সালের নির্বাচনের সফল কৌশলের পূনারাবৃত্তি ঘটে সম্ভবত ৫ম বারের মতো। এখন ঘরে ঘরে ভিডিও ক্যামেরা, সবাই শখের ডকুমেন্টারি বানাতে পারে ইদানিং। কোনো যোগ্যতা প্রয়োজন হয় না, আর সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাওয়া টিভি চ্যানেল, প্রচুর ভিডিও ক্লিপিংস অনায়াসেই যোগার করা যায়। কৌশলগত কারণেই হয়তো এখন সেনাবাহিনীর অনেকেই ভিডিও এডিটিংএ দক্ষতা অর্জন করেছে, তারা সময়ের প্রয়োজনে নিয়মিত মিলিটারি প্রশস্তি গাঁথা রচনা এবং চিত্রায়ন করছে। এবং যেকোনো উন্নয়নশীল দেশেন মতোই এখনও সরকার সবচেয়ে বলিষ্ঠ বিনিয়োগকারি, অন্য কোনো বেসরকারি সংস্থা এখনও অর্থনৈতিক ক্ষমতা বিবেচনায় রাষ্ট্রযন্ত্রকে ছাড়িয়ে যেতে পারে নি, এবং সরকার যেহেতু দৃশ্যমানভাবেই সকল প্রচার সংস্থার উপরে নিয়ন্ত্রন বজায় রেখেছে তাই ২০ থেকে ২২শে আগষ্ট ঢাকাসহ সারাদেশে সরকারের বিরুদ্ধে যে অনাস্থা এবং ক্ষোভ প্রকাশিত হয়েছিলো এটাকে ভিন্ন মাত্রা দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে,
যদিও সমসাময়িক তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীণ সামরিক বাহিনীর ক্ষমতার অশালীন প্রকাশ এবং একই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্রে রেখে যে অসন্তোষের প্রকাশ ঘটেছে শহরের অন্যান্য অংশে তার কারণ ভিন্ন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার কেন্দ্রে শুধু জিমন্যাসিয়ামে মিলিটারি ক্যাম্প স্থাপনের এবং খেলার মাঠের ঘটনার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া না, বরং এসবের পরোক্ষ প্রতিক্রিয়া, সার্বক্ষণিক নজরদারির ভেতরে থাকবার কারণে ক্রমশ বেড়ে ওঠা পরাধীনতার বোধ ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কারণে এই ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে-
যেকোনো ছাত্র-অসন্তোষ অনতিবিলম্বে দমন করবার চেষ্টায় এই বোধটা সব সময়ই ছাত্রদের ভেতরে কাজ করেছে- এটাই নিজেদের পরাধীন ভাববার জন্য যথেষ্ট, অন্য কোনো কারণ নেই এখানে মিলিটারি ক্যাম্প স্থাপনের। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অরাজনৈতিক সরকারের সময় কোনো বহিরাগত কিংবা রাজনৈতিক ক্যাডারের হাতে থাকে না তেমন ভাবে, সরকার বদলের সাথে সাথে ক্যাম্পাসে ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে যায়- যদি ক্যাম্পাসের উপর খবরদারিটা এত বেশী গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু না হয়ে উঠতো তবে তারা চাইলেই পল্টনের ময়দান, কিংবা আজিমপুরের মাঠে এই ক্যাম্প রাখতে পারতো- ঢাকা মেডিক্যাল কিংবা চাঁন খাঁর পুলের কিংবা বঙ্গবাজারের নিরাপত্তার জন্য উদ্বিগ্ন নয় সরকার কিংবা ছিলোও না তারা- প্রতিটা পদক্ষেপ কেউ না কেউ প্রকাশ্যে পর্যবেক্ষণ করছে এটা কোনো সময়ই স্বস্থিকর কোনো অনুভব না- এই সার্বক্ষণিক মনিটরিংজনিত পরাধীনতার বোধকে উপেক্ষা করা যায় না।
ক্যাম্পাসে ক্যাম্প রাখবার কোনো যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে সক্ষম হবে না এই সরকার- তাই খেলার মাঠে যখন কোনো ছাত্রকে হেনেস্তা হতে হয় তখন এর প্রতিক্রিয়াও হয় তাৎক্ষণিক- থাপ্পর মারবার পরের মুহূর্তেই হয়তো এ খবর প্রচারিত হয়ে যায় ক্যাম্পাসের ভেতরে- সেখান থেকেই মিছিল আসে - মিছিলে শ্লোগান আসে ক্যাম্প হটানোর- পুলিশ সরিয়ে নেওয়ার দাবি আসে- স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের অনুমতি ছাড়া পুলিশেরও প্রবেশাধিকার নেই ক্যাম্পাসে- উপাচার্য অনুমতি দিলে তারা এখানে অবস্থান করতে পারে- নিরাপত্তার কারণে উপাচার্য কখনও কখনও পুলিশের সহায়তা চাইতে পারেন- তবে ক্যাম্পাসের ঠিক পাশেই থানা- নীলক্ষেত মোড়ের উপরে-
সোম বার বিকেলেই মোটামুটি ভাবে অবরুদ্ধ ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়- সন্ধ্যা থেকেই চারপাশে কড়া পুলিশ পাহাড়া। হাই কোর্টের সামনে থেকে কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারে নি এখানে। হেঁটে যাওয়া যাচ্ছিলো, নীলক্ষেত কিংবা শাহবাগ হয়ে প্রবেশ করা গাড়ী হাইকোর্ট হয়ে বের হতে পারছিলো, আমি কোনো কিছু সম্পর্কেই অবহিত ছিলাম না।
পুরোনো ঢাকা যাওয়ার জন্য শাহবাগ থেকে রিকশায় উঠবার পরে টি এস সির সামনে সারি বেধেঁ দাড়িয়ে থাকা প্রস্তুত পুলিশ দেখে আমার প্রাথমিক ভাবে মনে হয় আজ বোধ হয় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের কোনো নাজুক সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার তাই প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবেই পুলিশের এমন সাজ। দোয়েল চত্ত্বর হয়ে আমার যাওয়ার কথা ছিলো একুশে হলের সামনে দিয়ে- সে রাস্তায় না উঠে আমার রিকশা সোজা হাইকোর্টের দিকে মোড় নেওয়ার পরে আব্দুল গণি সড়কের সামনে কঠোর পুলিশের সামনে পরলাম-।
ক্ষমতার দম্ভ নয় তবে বারংবার একটা সত্যই সামনে চলে আসে- কর্তব্যরত পুলিশের ব্যবহারে সৌজন্যতার অভাব- বাংলাদেশের শিক্ষার হার ৪০ শতাংশ মেনে নিয়েও বলতে হয় নিয়মহীনতার কিংবা নীতিহীনতার জায়গাটাতে অশিক্ষিত মানুষের অংশগ্রহন সামান্য- তবে কায়িক শ্রমের অবমূল্যায়নে কিংবা শ্রমিকের প্রতি ঘৃনা বর্ষণে কটু শব্দের প্রয়োগ না করলে সম্ভবত নিয়মপ্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না এমন কোনো শিক্ষা বা নির্দেশনা পুলিশ অধিদপ্তর থেকে দেওয়া আছে- তাই অশালীন বাক্য প্রয়োগে সিদ্ধহস্ত পুলিশ যথেচ্ছাচারী হয়ে কটু বাক্য বর্ষণ করতে থাকে হাইকোর্টের সামনে। রিকশাওয়ালা- ড্রাইভার কিংবা পথচারী সবার মায়েরাই পালা বদল করে কর্তব্যরত পুলিশের সাথে সহবাস করে- পরিস্থিতি উতপ্ত হয়ে উঠলে এদের বাবা এবং ভাইয়েরাও পুলিশের মর্জিমফিক তাদের শয্যাসঙ্গী হয়- সঙ্গমরত পুলিশকে পেছনে রেখে আমি আব্দুল গণি সড়কে উঠি-
ফিরে আসবার পথে জানলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র- পুলিশ সংঘাতের খবর- ক্যাব ড্রাইভার খবর জানায়-
পরের দিন সকালে পেপারে জানলাম জিমন্যাসিয়াম মাঠে আন্তঃবিভাগীয় ফুটবল ম্যাচ দেখতে যাওয়া এক ছাত্র মহান সামরিক বাহিনীর সদস্যের দৃষ্টিপথে দাঁড়িয়ে থাকায় তার সাথে ছাত্রের ক টু বাক্য বিনিময় হয় এবং এরপরে ঘটনা হাতাহাতিতে বদলে যায়- প্রতিবাদী এক ছাত্রকে ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে বেধরক পিটিয়েছে করিতকর্মা সেনাসদস্যরা-
এর প্রতিবাদেই মিছিল আর ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়ার আন্দোলন।
প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে সরকারি নির্দেশনা অবজ্ঞা করেই আমি ছাত্রদের আন্দোলনকে সমর্থন করি।
দুপুরের দিকে জানতে পারলাম ছাত্ররা আজিজের সামনে মিলিটারি জীপ জ্বালিয়ে দিয়েছে-
পরের দিন সকালেই পরিস্থিতি বদলে যায় - সারা রাতের থমথমে অবস্থার পরের সকালে রাস্তায় মিছিল নামে- পুলিশের ধারাবাহিক লাঠিচার্যের জবাবে ইটের টুকরা ছুড়ে ছাত্ররা- পুলিশ আহত হয়- ছাত্ররা রক্তাক্ত হয়- আহত ছাত্ররা ঢাকা মেডিক্যাল আর বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়- পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ক্যাম্পাসে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।