নভেম্বর মাসে সিডনীতে গরম শুরু হয়ে গেছে। তার মানে এখন যেতে আমার আপত্তি নেই। অতিরিক্ত শীত আমার ভাল লাগেনা। গতমাস থেকে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন বাংলাদেশকে সেই সকল দেশের কাতারে এনেছে যাদেরকে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমন করতে পাসপোর্টে ভীসা স্টিকার সংযুক্ত করতে হয়না। ভীসা আবেদন করার পর তারা যে অনুমোদনপত্রটি প্রদান করেছে সেটির এক সেট ফটোকপি হলেই পাসপোর্টটি হাতে নিয়ে নির্দিধায় অস্ট্রেলিয়া ভ্রমন করা যায়।
কিন্তু ঘটনাটি নতুন এবং বিষয়টি বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনকে জানানো হয়েছে কিনা জানা নেই। আর জানানো হলেও একটু গড়িমশি করতে পারে বলে মনে হল, কারন নতুন কোনো নিয়ম না মেনে এ সংক্রান্ত কিছু জটিলতা সৃষ্টি করার মধ্যে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক ধরনের আনন্দ খুঁজে পান। পরিচিত অস্ট্রেলিয়াগামী লোকেদের কাছ থেকে জানতে পারলাম তারা ইমিগ্রেশনে প্রশ্নের সম্মুখিন হয়েছেন,তবে শেষমেষ সমস্যা হয়নি।
আমি চলে গেলাম ঢাকার গুলশানস্থ অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনে। আমাকে জানানো হল পূর্বে এপয়েন্টমেন্ট না করে এখানে দেখা করার নিয়ম নেই।
আমাকে একটি ফোন নাম্বার ধরিয়ে দেওয়া হল এবং আমি সেখানে দাড়িয়ে ২ ঘন্টা যাবৎ অনবরত ফোন করেও সংযোগ না পেয়ে মহা প্রতাপশালী বাঙ্গালী নিরাপত্তারক্ষীর সাথে কথা বলে জানলাম,এটিই একমাত্র পন্থা। চেষ্টা করতে করতে নাকি এক সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে আমার কথা হবে। বেশ কয়েকবার সংযোগ পেলেও অতিরিক্ত চাপে পড়ে প্রত্যেকবারই লাইনটা কেটে যাচ্ছিল। বিকেলে আমি কথা বলতে সক্ষম হলাম কিন্তু কথার মাঝপথেই লাইনটা কেটে গেল। এরপর আর আমি কথা বলতে সক্ষম হয়নি কারন আমি আর কথা বলার চেষ্টা করিনি।
তবে শেষ চেষ্টা হিসেবে তাদেরকে ইমেইল করলাম এবং খুবই সংক্ষেপে আমার নাম,পাসপোর্ট নাম্বার এবং আমি পাসপোর্টে ভিসা স্টিকার লাগাতে চাই এমনকি এতে ১৫ কর্মদীবস সময় লাগবে,সে ব্যাপারেও আমি রাজি আছি জানালাম। একঘন্টা পর ফিরতি মেইল পেলাম যে,আপনি আগামী বুধবার সকালে আসুন। বেশ ভাল লাগল এই কারনে যে, খুব সহজে কাজটি হল। আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল পাসপোর্টে ভীসা স্টিকার দেখতে অভ্যস্ত ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা আমার সাথে বেশ তর্ক বিতর্কে লিপ্ত হবে,একপর্যায়ে হয়ত টাকা পয়সা সংক্রান্ত বিষয় উঠে আসবে। আমার পূর্ব অভিজ্ঞাগুলোই এক্ষেত্রে দায়ী।
যাইহোক পরবর্তী বুধবারে নির্বিঘেœ পাসপোর্ট জমা দিয়ে আসলাম। সেসময় আমি আমার মত অনেক ভূক্তভোগী পেয়েছি যারা সরাসরি যোগাযোগ করতে উদগ্রীব ছিল। তাদেরকে আমি মেইল করার পরামর্শ দিয়ে চলে আসলাম।
২০১২ সালের নভেম্বরের ১৩ তারিখ আমি রওনা হলাম,সাথে তিন মন ওজনের তিনটি ব্যাগ। উদ্দেশ্য সিঙ্গাপুর হয়ে সিডনী।
সিঙ্গাপুরে মাত্র এক ঘন্টার ট্রানজিট। একটা বিষয় লক্ষ করেছি দূরপাল্লার টিকেট যাত্রার বেশকিছুদিন পূর্বে কাটলে খানিক কম দামে পাওয়া যায় কিন্তু যাত্রার সময় নিটকবর্তী হলে ট্রাভেল এজন্টরা বেশী দামে টিকেট বিক্রী করে থাকে,এটাই আমার ক্ষেত্রে ঘটেছিল।
বিমানবন্দরে দেখলাম প্রচুর বাংলাদেশী শ্রমিক,যারা বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে স্বজনদেরকে অর্থ সাহায্য পাঠান। এদেরকে বরাবরই শ্রদ্ধা করি। এরা যখন স্বজনের কাছ থেকে বিদায় নেয় তখন বেশ কান্নাকাটি করে।
অনেক কঠিনপ্রান যুবককেও আমি হাওমাও করে কাঁদতে দেখেছি। অনেক খারাপ চরিত্রের যুবককে দেখেছি দীর্ঘদিন বিদেশে থেকে মানুষের মত মানুষ হয়েছে,তবে অমানুষের সংখ্যাও কম নয়। অনেকে বিদেশে গিয়ে স্বজনদের প্রতি মমতাময়ী হয়ে ওঠে। দূরত্ব আপনজনদের মধ্যে সু-সম্পর্ক বৃদ্ধি করে। এরা যখন স্বজনদের জন্যে বিদেশ থেকে নগদ অর্থ,উপহার সামগ্রী পাঠায় তখন আমি মনে মনে তার আপনজনদের মতই পুলকিত হই।
ভাবতে থাকি একটি পরিবারের অভাব দূর হতে চলেছে।
ঢাকা থেকে আরব,মালেশিয়া,সিঙ্গাপুরগামী বিমানে বাঙ্গালীদের আধিক্য থাকে তাই ভেতরে তাদের কথা চিন্তা করেই খাবারে খানিকটা বাঙ্গালীভাব আনা হয়। তবে আমার পাশের সিটের দুজন বাঙ্গালী ছাড়া অন্য কাওকে বিয়ার খেতে দেখিনি। অনেক বাঙ্গালী ভাব নেওয়ার জন্যে এমন কিছু করে যা তার মোটেও মানায় না। এদের চেহারা দেখে আমার মনে হয়নি যে,এরা মদে অভ্যস্ত।
আশপাশে বহু বিদেশী ছিল,তারা পানি,জুস নিলেও বাঙ্গালী দুজন বেশী স্মার্টভাব দেখালো(তাদের আচরণ দেখে সেটা মনে হল)। একবার আমার জিমে ঢুকে একজনের কাছে গল্প শুনছিলাম,সে দুবাই এবং সিঙ্গাপুর ভ্রমন করে এসেছে। সে খুব উৎফুল্ল চিত্তে গর্বের সাথে গল্প করতে লাগল যে,প্লেনে সে পানিই খায়নি,একের পর এক বিয়ার ছাড়া। শেষে ক্রুদেরকে অনুরোধ করে বিয়ার নিয়ে খেয়েছে। তার এই গর্বের কারণ আমি বুঝিনি।
তবে অনুমান করতে পারছি একভাবে। ছোটবেলায় আমি নানান রকমের শয়তানী করে গর্ব প্রকাশ করতাম। খারাপ কাজের পরিমান যতটা বেশী হত,গর্বের পরিমানও তত বেশী। একবার আমাদের বাড়ির পেছনে আওয়ালদের মেটে বাড়ির উঁচু বারান্দায় এক বুড়ো বসে ছিল। আমার ফুফাত ভাই-বোনদের প্ররোচনায় আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম যে ওই বুড়ার মাথায় আমি গুড়ো রং দিয়ে আসব।
আমার কাছে লাল রং ছিল। আমি অতি গোপনে পেছন দিক দিয়ে বারান্দায় উঠে বুড়ার মাথায় গুড়ো রং ছিটিয়ে দিয়ে গোপনে চলে আসলাম। বুড়া গোসলের সময় বুঝতে পারবে এবং গরমে মাথা ঘামলেও বুঝবে,আরও বুঝবে বালিশে মাথা রাখার পর। এভাবে আরও অনেক অপদার্থের মত কাজ করে গর্ব অনুভব করতাম।
নভেম্বর মাসে সিডনীতে গরম শুরু হয়ে গেছে।
তার মানে এখন যেতে আমার আপত্তি নেই। অতিরিক্ত শীত আমার ভাল লাগেনা। গতমাস থেকে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন বাংলাদেশকে সেই সকল দেশের কাতারে এনেছে যাদেরকে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমন করতে পাসপোর্টে ভীসা স্টিকার সংযুক্ত করতে হয়না। ভীসা আবেদন করার পর তারা যে অনুমোদনপত্রটি প্রদান করেছে সেটির এক সেট ফটোকপি হলেই পাসপোর্টটি হাতে নিয়ে নির্দিধায় অস্ট্রেলিয়া ভ্রমন করা যায়। কিন্তু ঘটনাটি নতুন এবং বিষয়টি বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনকে জানানো হয়েছে কিনা জানা নেই।
আর জানানো হলেও একটু গড়িমশি করতে পারে বলে মনে হল, কারন নতুন কোনো নিয়ম না মেনে এ সংক্রান্ত কিছু জটিলতা সৃষ্টি করার মধ্যে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক ধরনের আনন্দ খুঁজে পান। পরিচিত অস্ট্রেলিয়াগামী লোকেদের কাছ থেকে জানতে পারলাম তারা ইমিগ্রেশনে প্রশ্নের সম্মুখিন হয়েছেন,তবে শেষমেষ সমস্যা হয়নি।
আমি চলে গেলাম ঢাকার গুলশানস্থ অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনে। আমাকে জানানো হল পূর্বে এপয়েন্টমেন্ট না করে এখানে দেখা করার নিয়ম নেই। আমাকে একটি ফোন নাম্বার ধরিয়ে দেওয়া হল এবং আমি সেখানে দাড়িয়ে ২ ঘন্টা যাবৎ অনবরত ফোন করেও সংযোগ না পেয়ে মহা প্রতাপশালী বাঙ্গালী নিরাপত্তারক্ষীর সাথে কথা বলে জানলাম,এটিই একমাত্র পন্থা।
চেষ্টা করতে করতে নাকি এক সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে আমার কথা হবে। বেশ কয়েকবার সংযোগ পেলেও অতিরিক্ত চাপে পড়ে প্রত্যেকবারই লাইনটা কেটে যাচ্ছিল। বিকেলে আমি কথা বলতে সক্ষম হলাম কিন্তু কথার মাঝপথেই লাইনটা কেটে গেল। এরপর আর আমি কথা বলতে সক্ষম হয়নি কারন আমি আর কথা বলার চেষ্টা করিনি। তবে শেষ চেষ্টা হিসেবে তাদেরকে ইমেইল করলাম এবং খুবই সংক্ষেপে আমার নাম,পাসপোর্ট নাম্বার এবং আমি পাসপোর্টে ভিসা স্টিকার লাগাতে চাই এমনকি এতে ১৫ কর্মদীবস সময় লাগবে,সে ব্যাপারেও আমি রাজি আছি জানালাম।
একঘন্টা পর ফিরতি মেইল পেলাম যে,আপনি আগামী বুধবার সকালে আসুন। বেশ ভাল লাগল এই কারনে যে, খুব সহজে কাজটি হল। আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল পাসপোর্টে ভীসা স্টিকার দেখতে অভ্যস্ত ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা আমার সাথে বেশ তর্ক বিতর্কে লিপ্ত হবে,একপর্যায়ে হয়ত টাকা পয়সা সংক্রান্ত বিষয় উঠে আসবে। আমার পূর্ব অভিজ্ঞাগুলোই এক্ষেত্রে দায়ী। যাইহোক পরবর্তী বুধবারে নির্বিঘেœ পাসপোর্ট জমা দিয়ে আসলাম।
সেসময় আমি আমার মত অনেক ভূক্তভোগী পেয়েছি যারা সরাসরি যোগাযোগ করতে উদগ্রীব ছিল। তাদেরকে আমি মেইল করার পরামর্শ দিয়ে চলে আসলাম।
২০১২ সালের নভেম্বরের ১৩ তারিখ আমি রওনা হলাম,সাথে তিন মন ওজনের তিনটি ব্যাগ। উদ্দেশ্য সিঙ্গাপুর হয়ে সিডনী। সিঙ্গাপুরে মাত্র এক ঘন্টার ট্রানজিট।
একটা বিষয় লক্ষ করেছি দূরপাল্লার টিকেট যাত্রার বেশকিছুদিন পূর্বে কাটলে খানিক কম দামে পাওয়া যায় কিন্তু যাত্রার সময় নিটকবর্তী হলে ট্রাভেল এজন্টরা বেশী দামে টিকেট বিক্রী করে থাকে,এটাই আমার ক্ষেত্রে ঘটেছিল।
বিমানবন্দরে দেখলাম প্রচুর বাংলাদেশী শ্রমিক,যারা বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে স্বজনদেরকে অর্থ সাহায্য পাঠান। এদেরকে বরাবরই শ্রদ্ধা করি। এরা যখন স্বজনের কাছ থেকে বিদায় নেয় তখন বেশ কান্নাকাটি করে। অনেক কঠিনপ্রান যুবককেও আমি হাওমাও করে কাঁদতে দেখেছি।
অনেক খারাপ চরিত্রের যুবককে দেখেছি দীর্ঘদিন বিদেশে থেকে মানুষের মত মানুষ হয়েছে,তবে অমানুষের সংখ্যাও কম নয়। অনেকে বিদেশে গিয়ে স্বজনদের প্রতি মমতাময়ী হয়ে ওঠে। দূরত্ব আপনজনদের মধ্যে সু-সম্পর্ক বৃদ্ধি করে। এরা যখন স্বজনদের জন্যে বিদেশ থেকে নগদ অর্থ,উপহার সামগ্রী পাঠায় তখন আমি মনে মনে তার আপনজনদের মতই পুলকিত হই। ভাবতে থাকি একটি পরিবারের অভাব দূর হতে চলেছে।
ঢাকা থেকে আরব,মালেশিয়া,সিঙ্গাপুরগামী বিমানে বাঙ্গালীদের আধিক্য থাকে তাই ভেতরে তাদের কথা চিন্তা করেই খাবারে খানিকটা বাঙ্গালীভাব আনা হয়। তবে আমার পাশের সিটের দুজন বাঙ্গালী ছাড়া অন্য কাওকে বিয়ার খেতে দেখিনি। অনেক বাঙ্গালী ভাব নেওয়ার জন্যে এমন কিছু করে যা তার মোটেও মানায় না। এদের চেহারা দেখে আমার মনে হয়নি যে,এরা মদে অভ্যস্ত। আশপাশে বহু বিদেশী ছিল,তারা পানি,জুস নিলেও বাঙ্গালী দুজন বেশী স্মার্টভাব দেখালো(তাদের আচরণ দেখে সেটা মনে হল)।
একবার আমার জিমে ঢুকে একজনের কাছে গল্প শুনছিলাম,সে দুবাই এবং সিঙ্গাপুর ভ্রমন করে এসেছে। সে খুব উৎফুল্ল চিত্তে গর্বের সাথে গল্প করতে লাগল যে,প্লেনে সে পানিই খায়নি,একের পর এক বিয়ার ছাড়া। শেষে ক্রুদেরকে অনুরোধ করে বিয়ার নিয়ে খেয়েছে। তার এই গর্বের কারণ আমি বুঝিনি। তবে অনুমান করতে পারছি একভাবে।
ছোটবেলায় আমি নানান রকমের শয়তানী করে গর্ব প্রকাশ করতাম। খারাপ কাজের পরিমান যতটা বেশী হত,গর্বের পরিমানও তত বেশী। একবার আমাদের বাড়ির পেছনে আওয়ালদের মেটে বাড়ির উঁচু বারান্দায় এক বুড়ো বসে ছিল। আমার ফুফাত ভাই-বোনদের প্ররোচনায় আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম যে ওই বুড়ার মাথায় আমি গুড়ো রং দিয়ে আসব। আমার কাছে লাল রং ছিল।
আমি অতি গোপনে পেছন দিক দিয়ে বারান্দায় উঠে বুড়ার মাথায় গুড়ো রং ছিটিয়ে দিয়ে গোপনে চলে আসলাম। বুড়া গোসলের সময় বুঝতে পারবে এবং গরমে মাথা ঘামলেও বুঝবে,আরও বুঝবে বালিশে মাথা রাখার পর। এভাবে আরও অনেক অপদার্থের মত কাজ করে গর্ব অনুভব করতাম।
চলা শুরু হল....... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।