আমার জন্ম বাংলাদেশের ঝিনাইদহে।
শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে যেতে হত। রানাঘাটে ট্রেন থামলে খুব মজা হত। ছোটকাকা আমাদের জন্য প্রচুর খাবার কিনে আনতেন। শালপাতার ঠোঙায় করে সিঙাড়া,নিম্কি ও রানাঘাটের পান্তুয়া খেতাম।
তার যে একটা অপূর্ব গন্ধ ছিল আজকাল আর কোনো খাবারেই পাওয়া যায় না। তারপর ট্রেন ছেড়ে দিত। চুয়াডাঙ্গা আসলে নেমে যেতাম। ওখান থেকে পালেদের বাস চলত। সেই বাসে করে আমরা ঝিনাইদহে পৌছাতাম।
বাড়িটার কথা এখনও ছবির মত মনে আছে। টাউনের উপর বিরাট পাকা বাড়ি। উচুঁ উচুঁ থাম দেওয়া,দরজা বিরাট বড় কাঠের সিংহদুয়ার তারপর দেউড়ি। দেউড়ি পেরিয়ে বিশাল উঠান ,উঠানের দুপাশে তিন খানা করে ঘর,তারপাশে ঘোরানো সিঁড়ি। সিঁড়ি পেরিয়ে রান্নাঘর,খাবার ঘর,ভাড়ার ঘর উঠানের একপাশে বাঁধানো ইঁদারা।
তারপাশে স্নান ঘর উঠানের পেছনে গোয়ালঘর। যেখানে তিনটে গরু ও বাছুর বাধা থাকত,লক্ষী,সরস্বতী,সুরভী। সামনের দিকে এগোলে ফুলের বাগান,অন্যদিকে কাকাবাবুর ডিস্পেন্সারী।
কাকবাবু ছিলেন হোমিওপ্যাথ ডাক্তার। প্রচুর পসার ছিল।
তিনি ওই বাড়িতেই থাকতেন। ঠাকুরদাদা মাএ ৩৪ বছর বয়সে মারা যায়। তিনি সিমেন্ট বালি,সুড়কির ব্যবসা করতেন। বিশাল গুদাম ঘর ছিল। বাইরের দিকে প্রছুর বালি জড়ো করা থাকত।
আমরা তার ওপর উঠে চোর চোর খেলতাম। মা,কাকিমা চিঁড়ে কুটতেন,যাঁতায় করে ডাল ভাঙতেন,সর দিয়ে ঘি তৈরী করতেন। বড় বড় মেটে হাঁড়ি কাঁধে ঘোল নিয়ে বিক্রী করতে আসত। ঘোলের মধ্যে বড় বড় বলের মত মাখন ভাসত দেখতাম। সে মাখনের খুবই স্বাদ ছিল।
হাটের দিকে চাষীরা তরিতরকারী,আম নিয়ে বিক্রী করতে যেত। কাকবাবু চার টাকা করে পন হিসাবে দু ঝুড়ি করে আম কিনতেন। বাড়ির সামনে একটা সিনেমা হল ছিল। তারপর ছিল হাঁসপাতাল। তারও কিছু দূরে ছিল মদনমোহনের মন্দির।
সেখানে ঘুরে ঘুরে বেড়াতাম।
কখনো কখনো বাজারে যেতাম। সেখানে কাছিম দেখে ভাবতাম এ আবার কি একবার মুখ বের করছে আবার ঢোকাচ্ছে তারপাশেই দেখতাম বাস যাচ্ছে,বাসের কাঁচে চুন দিয়ে লেখা “মাগুরা”,তা দেখে কল্পনা করতাম মাগুরা কতদূর। দেখতাম ময়রারা বড় বড় সাইজের রসগোল্লা তৈরী করছে,দু পয়সা করে একএকটা রসগোল্লা পাওয়া যেত।
বাজারের কাছে বাবাদের কাকা থাকতেন।
তিনি বিলাতে গিয়ে মেম বিয়ে করেছিলেন। পিসিমা কোনোকোনোদিন আমাদের ওখানে নিয়ে যেতেন। আমার তিন পিসিমা ছিল। মেজোপিসিমা বিধবা ছিলেন। তার মেয়ে আমার বয়সী ছিল।
আমরা দুজনে তার বাড়িতে যেতাম,পিসিমা যেতেন সেলাই শিখতে। মেম ঠাকুমাকে দেখতে খুব সুন্দর। তিনি বাঙালীদের মত শাড়ি,সিঁদুর পরতেন। আমরা বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখতাম কি সুন্দর দেখতে। উনি দিদিকে ফ্যানিস আর আমাকে ডলিস বলে ডাকতেন।
ছোটোবেলায় দেখেছি পিসিমারা আর অন্য পাড়ার মেয়েরা একসাথে ছোরা খেলা শিখত। বাঘাযতীন ঝিনাইদহে থাকতেন শুনেছি তিনি ঠাকুরদার বন্ধু ছিলেন। আমাদের বারির উনানে অস্ত্রসস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন। আমার ঠাকুরদা অল্প বয়সে মারা গিয়েছিলেন। আমরা তাঁর ঠাকুরদা ঠাকুমাকে দেখেছি।
কনেজপুরে বাবাদের আর একটা বাড়ি ছিল। সে বাড়িতে আমরা গিয়েছি। বাবার ঠাকুরদা আগে ওখানেই থাকতেন পরে ঝিনাইদহে বাড়ি করেছিলেন।
ঝিনাইদহের সেই বাড়ির স্মৃতি আজও আমার মনে গেঁথে আছে। আর কি কখনও সেখানে যেতে পারব?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।