আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দৈত্য



মূল : ইয়াছিন রিফাঈ অনুবাদ : ফায়সাল বিন খালেদ লোকটা উপর হয়ে বসে পা খুটছে। তার বউ ঘরে এক কোনে একটা চাটাইয়ের উপর পড়ে কাতরাচ্ছে। গোঙ্গাচ্ছে ক্ষীণ সুরে। পায়ের ফাটা গোড়ালী খুটতে খুটতে লোকটা বলল : - কি যে পাপ করছিলাম, আল্লায় আমগোরে কেন যে এই শাস্তি দিতাছে ! বউটা ক্ষীণ সুরে বলল : - এই দুনিয়াডা আমাগোর লেগা নাগো.. - পোলাডার লেগা চিন্তা লাগে.. বড় হয়া তো ভিক্ষা করব। - ..আর জন্মের দোষ দিব।

খালেদ ঘরে ঢুকল। দেখল তার মা চোখ বুজে শুয়ে আছে। দর দর করে ঘাম ঝরছে কপাল বেয়ে। বাপের দিকে ফিরে বলল : - বাজান মায় কি অসুস্থ ? - হো, তোর মায় মনে হয় আর বাচবো না। খালেদ তার শুকনো ঠোঁট চাটছে।

মায়ের কাছে গিয়ে বসল। ফিস ফিস করে বলল : - মা আমার খিদা লাগছে... মা হাত দিয়ে ইশারা করে ঘরের অন্য কোণের পুরোনো আলমারীটা দেখাল। ছেলেটা গিয়ে আলমারির পর্দা সড়িয়ে ভিতরে দুই হাত ঢুকিয়ে খাবার খুঁজতে লাগল। তার বাপ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেলেটা ছোট ছোট হাত দুটোর দিকে। কিছুণ খোঁজে হতাশ হয়ে সে খালী দুই হাত বের করে বাপ-মাকে দেখাল : - কিছু নাই মা ! বাপ বলল : - সাগর পারে গিয়া দেখ বাজান তোমার লেগা আর আমাগোর লেগা কিছু পাও নাকি খালেদ বেরিয়ে সাগর পার গেল।

এখানে শহরের ডাস্টবিনগুলোর আবর্জনা এখানে এনে জমা করা হয়। খালেদ অবর্জনার স্তুপের পাশে ঘুড়ে ঘুড়ে খাবার মত কিছু খুঁজতে লাগল। অনেণ খুঁজল। কিন্তু লাভ নেই। কুকুর বিড়াল ইঁদুরগুলো তার আগেই এসেছে ছিল নিশ্চই এবং তার জন্য কিছুই রেখে যায় নি।

আজ প্রচণ্ড রোদ পড়েছে। সাগর পারের কড়া রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কান্ত হয়ে গেল ও। পাশে একটা গাছের ছায়ায় গিয়ে বসল। গুজো হয়ে পেটে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে কাঁদতে লাগল। কিছুণ কেঁদে কান্ত হয়ে ধীরে শান্ত হয়ে এল।

বসে বসে কি যেন ভাবছে ছেলেটা আর পা দিয়ে নাড়ছে অবর্জনাগুলো। হঠাৎ তার পায়ে শক্ত কিছু একটা লাগল। অবার নাড়া দিল। হা পায়ে কি যেন একটা লাগছে। ওঠে গিয়ে বের করল জিনিসটা : একটা চেরাগ।

হঠাৎ তার মনে পড়ল বাপের মুখে শোনা আলাদিনের চেরাগের কথা। গল্পটা মনে পড়তেই ভয়ে উত্তেজনায় ও’ কাঁপতে লাগল। চেরাগটা নিবে নাকি নিবে না এই ভাবতে ভাবতে অবশেষে ভয়ে ভয়ে চেরাগটা তুলে নিল। ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে দেখল অনেণ। মনে পড়ল আলাদিন চেরাগ ঘসে কিভাবে তার সেই বিশাল দৈত্যটাকে হাজির করত, যে তার হুকুমে যা চায় তাই এনে হাজির করে।

আশেপাশে তাকে দেখল কেউ নেই। এমনকি বিড়াল-কুকুরগুলোও খেয়ে দেয়ে জিড়াতে গিছে। কেউ নেই। কেউ দেখছে না। এক হাতে চেরাগটাকে বুকের সাথে চেপে ধরে অন্য হাতে তার উপর ঘসতে লাগল, কান পেতে থাকল তার উপর।

হঠাৎ তার মনে হল, কিছু একটা আওয়াজ শোনা যাচ্ছে এবং সে আর চেরাগটা ধরে রাখতে পারল। হঠাৎ ভীষণ ভারি হয়ে যাওয়া চেরাগটা পড়ে গেল তার হাত থেকে। খালিদ অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল চেরাগটা থেকে শো-শো করে ধুঁয়া বের হচ্ছে.. অকে ধুঁয়া.. একেবারে আকাশ পর্যন্ত ওঠে যাচ্ছে ধুঁয়ার কুণ্ডলি। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে খালেদ দেখল সেই ধুঁয়া ধীরে ধীরে একটা বিশাল মানুষের আকৃতি লাভ করছে। খালেদ দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে চাইল।

কিন্তু পায়ে এক ফোটা জোড় নেই। পড়ে গেল এবং তখনই শুনতে পেল দৈত্যের কন্ঠ : - বান্দা হাজির মনিব ! বলুন কি চাই। ভয়ে খালেদ প্রায় বোবা হয়ে গেছে। মুখ থেকে একটা শব্দও বের হল না। কিন্তু কিছুণ পর তার মনে হল দৈত্যটা হাত জোড় করে বেশ বিনয়ী ভঙ্গিতে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

মনে পড়ল আলাদিনের গল্পের কথা : ভয় পাওয়া যাবে না, সাহস করে আদেশ দিতে হবে, তাহলে যা আদেশ করা হবে দৈত্যটা তাই করবে, যা চাইবে তাই এনে হাজির করবে। ধীরে ধীরে দৈত্যটা দিকে তাকিয়ে আতংকিত ও ভাঙ্গা ভাঙ্গ স্বরে খালেদ বলল : - রুটি.. রুটি.. শহরে যে লাম্বা লাম্বা রুটি গুলা পাওয়া যায় আমারে সেখান থিকা একটা রুটি আইনা দেন ...! কিন্তু দৈত্যটার নড়াচড়ার কোন নাম নেই। অবাক হয়ে তার শিশু মনিবের দিকে তাকিয়ে রইল। তাকে খুব বিব্রত, হতভম্ব দেখাচ্ছে, এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। মনে হচ্ছে সে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না।

এভাবে অনেণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল দৈত্যটা। তারপর ছেলেটা দেখল ধীরে ধীরে বিশাল দৈত্যটা আবার ধুঁয়া হয়ে যাচ্ছে.. ধুঁয়া হয়ে ঢুকে যাচ্ছে চেরাটার ভিতর, তারপর হঠাৎ চেরাটা ফুটে গেল এবং নিমেষে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। হতাশ ক্ষুধার্ত ছেলেটা ভারে পায়ে ধীরে ধীরে ফিরে যাচ্ছে বস্তিতে। মনে মনে ভাবছে বাড়িতে গিয়ে বাপ-মাকে খুলে বলতে হবে ঘটনাটা এবং এখনকার দৈত্যরা যে একটা রুটিও এনে দিতে পারে না, তা তাদের জানাতে হবে। কিন্তু দরজার পা রেখেই খালেদ শুনতে পেল তার বাপ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।

ঘরের অন্য পাশে তাকিয়ে দেখল চাটাইটার উপর স্থীর হয়ে পড়ে আছে কাঁথায় ঢাকা মায়ের লাশ... চেরাগ দৈত্য এবং ক্ষুধা.. সব ভুলে গিয়ে খালিদ চিৎকার করে ওঠল : মা মা !! ৫/৭/২০০৮ ইং ফায়সাল বিন খালেদ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।