আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কৈশোর ২

চতুর্মাত্রিক.কম (choturmatrik.com)

কৈশোর ১ ২য় আর ৩য় পর্বের মাঝে ছুটিতে বগুড়া এলো আমার মা আর বোন। আমার উপরে দায়িত্ব পড়ল বিকালে বের হলে বোনকে চোখে চোখে রাখা। সাধের সাইকেল চালানো মাটি!!! কী আর করা, বোনের হাত ধরে পার্কে নিয়ে যাই, সে মনের আনন্দে খেলে, আমি ব্যাজার হয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকি। সাইকেল চালানোর সাথীরা অনেকক্ষণ রেস্‌ দিয়ে এসে পার্কে জমা হয়। তখন যা একটু ভালো লাগে।

ক্লাস চলাকালীন সময়ে মনে হয় কবে ছুটি আসবে! আর ছুটিতে কি কি করবো তার পরিকল্পনা চলতে থাকে। কিন্তু কেন জানি ছুটিগুলো খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যেত আর তারপরে আবার ইউনিফর্ম পরে সক্কাল সক্কাল ক্লাস!! অনেকগুলো তিন গোয়েন্দার ভলিউম পেয়েছিলাম, পড়া শেষ হলো না। সাইকেল চালিয়ে একদিন মাঝিরা (ক্যান্টনমেন্টের নাম) ছাড়িয়ে বগুড়া শহরে যাবার প্ল্যান ছিল, তাও বাস্তবায়ন হলো না। সব মিলিয়ে অতি অনুৎপাদনশীল ছুটি। একটু "নন-রিফ্রেশ্‌ড" ভাব নিয়ে ৩য় পর্বের ক্লাস শুরু হলো।

এই পর্বে একটা ফাইনাল হবে, তার আগেই বৃত্তির জন্য "মেধাবী" (!!##*&#??)-দের কোচিং হবে ক্লাসের পরে বিকেলবেলায়। আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল! মানে!!! বিকেলবেলায় কোচিং?? বিকেলে কেউ কীভাবে পড়াশোনা করবে? বিকেল হলো খেলার টাইম। সেসময় স্কুলে এসে মডেল টেস্ট নামক বিভীষিকার মুখে পড়তে হবে যখন অন্য বন্ধুরা বাইরে সাইকেল চালিয়ে বেড়াবে!! এটা আমাকে আগে বললে মনে হয় পরীক্ষায় ইচ্ছা করে খারাপ রেজাল্ট করতাম। নিজেকে তখন রীতিমত প্রতারিত মনে হচ্ছিল। যাই হোক, স্কুল কমিটির প্ল্যানারদের মনে হয় শান্তি হয় নাই।

আমার দূর্দশা দেখে, তারা আরো চমৎকার জিনিশের ব্যবস্থা করেছেন। একটা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার ব্যবস্থাও করেছেন। টার্ম শুরু হতেই দেখি সাজসাজ রব। ৩টা করে ক্লাসের এক একটা বিভাগ, সব বিভাগে অনেকগুলা করে আইটেম, গল্পবলা, অভিনয়, কবিতা আবৃতি, ক্বেরাত, নাচ, গান, বানান সব মিলিয়ে একটা এলাহী কাণ্ড। আমিও কী মনে করে গুটি গুটি পায়ে গিয়ে নাম দিয়ে এলাম।

আর কোন কাজ ছিল না স্কুলে বসে বসে। পড়াশোনার ব্যাপারে তখন একটা বিতৃষ্ণা চলে এসেছে, এমনিতেই আমাকে কোচিঙে গাধা পিটিয়ে ঘোড়া বানিয়ে দিবে। তাই মনে হয় নিজের অজান্তেই ক্লাস-শিক্ষার ওপর আমার আস্থা চলে গিয়েছিল! কিছু বিভাগে খুব কম নাম পড়েছে, যেমন ক্বেরাত (কারণ এটা সবাই পারে না, আর এগারো বছরের বালকের নিকট ইহা অতি বোরিং একটা কাজ!), গল্পবলা (এটা অনেকেই পারে, কিন্তু বড় হয়ে গেছি ভাব আনতে এই শিশুতোষ টপিকে অনেকেই নাম দেয় নাই )। আর কিছু কিছু ইভেন্টে সবাই নাম দিয়েছে, তার মধ্যে একটা হলো বানান। সবার মনে হয় তখন ধারণা হয়েছে যে বানান প্রতিযোগিতা আর কী-ইবা এমন কঠিন হবে! আমি নাম দিলাম অভিনয়, গল্পবলা আর বানান-এ।

প্রথম দুইটা মোটামুটি নিস্তরঙ্গভাবে পার হলো। ধুম ধাড়াক্কা ঘটনা ঘটলো বানান দিতে গিয়ে। যেহেতু সব ইভেন্টের জন্য একটা করে ক্লাসরুম বরাদ্দ সেহেতু বানানের জন্যও একটা রুম। বুদ্ধি করে একটা বিরাট হলরুম রাখা হয়েছিল। আমি সময়মত গিয়ে দেখি পুরা রুম ভর্তি খালি মাথা আর মাথা।

কাউকেই চিনতে পারছি না! ক্লাস ফোর, ফাইভ আর সিক্সের সবাই মনে হয় এটাতে নাম দিয়েছে। একবার ভাবলাম চলে যাই, অযথা দিয়ে কী লাভ! পুরস্কার তো পাব না। তারপরেও গিয়ে কেন জানি বসে পড়লাম পিছনের দিকে গাদা গাদি করে। তিনজন স্যার ম্যাডাম মিলে হুঙ্কার দিয়ে দিয়ে এক একটা শব্দ বলেন, আর আমরা কাগজে তার বানান লিখি। মাথা গুঁজে কোনমতে শেষ করলাম।

বের হতে ঠেলাঠলি, গরমে ঘামে ভিজে আমি তখন বিরক্তির চূড়ান্তে চলে গেছি। স্কুল থেকে বেরিয়ে হাঁটা ধরলাম। পেছন থেকে কে যেন ডাক দিল নাম ধরে, "অ্যাই শোন!" ফিরে দেখি আমাদের ক্লাসের একটা মেয়ে, নাম মুমু। কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, "কেমন দিলে বানান?" -"ভালোই। তবে অনেকগুলা ভুল করসি।

" -"ভুল করসো, তাহলে ভাল বললা কেন?" (ঐটাতো আমি এমনি বলসি ভদ্রতা করে, বেকুব মেয়ে! ) -"না মানে, ইয়ে, হইসে আরকি কোন রকমে। আমি বেশি ভালো পারি না বানান। "(মিথ্যা কথা বললাম, আমি অনেক ভালো বানান পারি ) -"আমিও মনে হয় অত ভালো দেই নাই, তুমিই যখন খারাপ বলতেসো, তাইলে আমার তো..." -"তুমি ক্যামনে জানলা যে আমি তোমার চেয়ে ভালো?" -"ওমা! তুমি বৃত্তি কোচিং-য়ে চান্স পাইসো না? আমি তো পাই নাই? বাসায় অনেক বকা খাইসি এজন্য। আর আমি তোমার ক্লাসের খাতা দেখসি, তুমি অনেক ভালো লিখো। " (ওয়াও! এত প্রশংসা!! হে হে আমি তাইলে অনেক বস্‌ পাব্লিক!! ) -"না, না, তুমি হয়ত একটা টার্মে খারাপ পরীক্ষা দিসো তাই চান্স পাও নাই।

এটা কোন বড় কিছু না। " ( অবশ্যই বড় কিছু! বৃত্তি পরীক্ষা দেয়া কি সোজা কথা! আমার মনে তখন সাইকেল না চালাতে পারার দুঃখ উধাও) এরকম টুকটাক কথা বলতে বলতে আমরা দু'জন বাসার কাছাকাছি চলে এলাম। মুমুর বাসা ছিল আমাদের পাশে বিল্ডিং-য়ে। টাটা বাই বাই দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। মনের মাঝে ঘুরঘুর করতে থাকল কথোপকথনের মধু।

(চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।