অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
আচমকা চারপাশ নিস্তব্ধ, নিথর হয়ে যায়, বাগানবাড়ীর এক চিলতে মাঠ, স্যাঁতস্যাঁতে দেয়াল, দেয়ালের উপরে ঝুঁকে থাকা কামিনী গাছ, বিকেলের তীর্যক রোদ, সব মিলিয়ে যায় দৃশ্যপট থেকে। এখন অপেক্ষার সময়, দুপুর গড়িয়ে বিকেল আসবে কখন? কখন বাজবে ৪টা?
ঘড়িট টিকটিক শব্দও আড়াল হয়ে যায়, বরই গাছের মাথায় জমে থাকা স্বর্ণলতার সোনালী ঝিলিক, ডুমুর গাছের সারা গায়ে ফোস্কার মতো ফুটে থাকা ডুমুর, সারা গায়ে মাকড়সার জাল মেঝে দাড়িয়ে থাকা স্থলপদ্মের গাছটা- আর চিলতে মাঠের কোনায় শরীফ একাই দাঁড়িয়ে আছে। ভেঙে যাওয়া দেয়ালের ফাঁক দিয়ে ঢুকতে কোনো সমস্যা হয় নি এখানে। বরং দেয়ালে পা ঝুলিয়ে বসে থাকবে। আজই চুড়ান্ত ফয়সালা হয়ে যাবে।
লিটন আসবে বলেছে ৪টায়। সেই ৩টা থেকে ঠায় বসে আছে শরীফ এখানে। সময়ই যেনো কাটছে না। রোদ গাছের গা বেয়ে বেয়ে উপরে উঠছে- তিড়িং তিড়িং লাফাচ্ছে ১টা শালিক ।
সকালের ঠান্ডা রাগটা আস্তে আস্তে বাড়ছে, ওর সমস্ত অস্তিত্ব দখল করে ফেলেছে সেই বোবা রাগ।
পকেটের কোনায় পড়ে থাকা ৬ ইঞ্চি টিপ ছুড়ির শীতল স্পর্শ্বটা উপভোগ করছে মনে মনে।
স্কুল থেকে ফিরবার পথে লাবনীর সাথে দেখা, লাবনী ওর সহপাঠী, মাথায় হালকা ভাঁজ খেলানো চুল, ফর্সা গোলাপী ঠোঁট, পুতুলের মতো হাসে, গালে টোল পড়া লাবনীকে দেখে ভেতরটা কাদার মতো নরম হয়ে যায় ওর। নিশ্বাসের বেগ বেড়ে যায়, লিটনের আচরণ মেনে নিতে পারে নি ও।
লাবনীর ওড়না ধরে টানাটা একদম ঠিক হয় নি, নতুন উঠা মার্কেটের পাশের গলিতে নিয়ে কয়েকটা ঘুষি জ্বলুনি যায় নি। লিটন বলেছিলো যদি বাপের ব্যাটাই হইস তো বিকালে চৌধুরিদের বাগানবাড়ীতে আসিস, দেখা যাবে কার রক্তের তেজ কতো?
দুপুরের খাবারের কোনো স্বাদ ছিলো না, জ্বরের ঘোরে কিভাবে কলতলা গিয়ে গোসল করেছে, কিভাবে দুপুরে খেয়েছে মনে নেই তার।
টিপছুড়িটা নিয়ে অনেক দিন খেলেছে ও। তবে এমন একা হয়ে যাওয়া অনুভুতিটা এই প্রথম।
লিটনের হাতের রডটার দিকেই এখন ওর সম্পূর্ণ মনোযোগ। লিটন এসেছে যখন তখনও ও আনমনা ছিলো, তবে দেয়ালের উপরে পা তুলে বাসে ছিলো বলেই কাছাকাছি আসতেই বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো। সম্বিত ফিরে পেতেই লাফ দিয়ে নীচে নামলো।
সমস্ত দৃশ্যগুলোই এক একটা ছবির মতো মনে হচ্ছে ওর। এখন রোদটা আমড়া গাছের মাথায় ঝুলে আসে- ডিসেম্বরের বিকেলের ঠান্ডা হাওয়া লাগছে গায়ে। লোম খাড়া হয়ে গেছে ওর। তবে জেদটা পোড়াচ্ছে- একা লাগছে ওর। এমন সময় আগে কখনই আসে নি।
এই ভাবে মুখোমুখি ক্ষধার্ত পশুর মতো রক্তপিপাসু, এমন জিঘাংসার বোধ এই প্রথম।
পকেটে হাত ঢুকিয়ে ছুড়িটা স্পর্শ্ব করলো, সমস্ত ভয়ই মুহূর্তে কেটে গেলো তার।
এখন আর কিছুতেই কিছু যায় আসে না। এসপার ওসপার হয়ে যাবে আজকে, অন্তত রক্ত না দেখে এই ছুড়ি আজ ঘরে ফিরবে না। লিটনের হাতর রডটাতেই সবটুকু মনোযোগ তার।
রডটা নড়ছে লিটনের সাথে সাথে, লিটনের পায়ের উপরে চোখ রেখে দাঁড়িয়েছে সে। রডটা যেকোনো মুহূর্তে উপরে উঠবে, হাতের মুঠিতে ছুড়িটা নিয়ে অপেক্ষা করে শরীফ।
সময় আগের মতোই নিথর, নিস্তব্ধ চারপাশ।
তোর গায়ে লাগলো ক্যান?
তুই ওড়না টানবি ক্যান শালা।
তোর কি হইছে তাতে।
ও কি তোর প্রেমিকা লাগে?
মুহূর্তেই শরীফের কানের পাশ লাল হয়ে যায়। শীতল ঘাম গড়িয়ে পড়ে পিঠ বেয়ে। নাহ প্রেম খুব খারাপ। লাবনী খুব ভালো মেয়ে- সুন্দরী কিন্তু ওর সাথে প্রেম , নাহ সম্পর্কটা এরকম না।
দ্যাখ আমরা এইভাবে মারামারি করলে কি হবে।
তুই ওর কাছে গিয়া মাফ চাইবি তাইলে শেষ হবে নাইলে না। আজকেই এইটার শেষ হবে, এইখানে,
কি রে শরীফ মাস্তান হয়্যা গ্যাছোস তুই। পাঙ্খা গজাইছে? আইজকা যদি তোর বাপেরে না কইছি। তোর বাপের সম্মানের কোনো খ্যাল আছে তোর।
ঐ শালা লিটইন্যা হাভাইত্যার পুত।
রড নিয়া নাপতামি করো। থাবড়া দিয়া ঘুরায়া ফেলাবো, যাহ ভাগ এইখান থেকে।
আস্তে আস্তে চিলতে মাঠের পাশের গাছগুলো স্পষ্ট হয়। আমড়া গাছের মাথা ছাড়িয়ে বিকেলের সোনা রোদ বিষনিমের গাছের মাথায় পাখির বাসায় লুটোপুটি খাচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।