আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
অনেকদিন পরে আজ চটপটি খেলাম। ঢাকা শহরে চারিদিকে চটপটি কিন্তু খাওয়া হয়ে উঠে না। আজ কেন যেন, চটপটি খেতে ইচ্ছে করছিল। সন্ধ্যার পর তিন বন্ধু মিলে গেলাম পোস্তাগোলায় বুড়িগঙ্গা ব্রীজের উপরে, সেখানেই চটপটি খাওয়া। তেমন আহামরি কিছুই না, একেবারেই রাস্তার আনহাইজেনিক চটপটি।
তবুও ভাল লাগল, মনে পড়ল ছোটবেলার কিছু স্মৃতি।
আমি তখন ঢাকার নারিন্দা গর্ভমেন্ট স্কুলে ক্লাস ফাইভে পড়ি। আমাদের স্কুলের সামনে চটপটিওয়ালা ছিল, দুই টাকা প্লেট। টিনের ছোট্ট পিরিচে বিক্রি হত সেই চটপটি। এখন মনে পড়ে একদম পাতলা ছিল, যেন পানিতে বুটের ডাল সিদ্ধ।
তবে তাতে টকঝালের কম্বিনেশন এতই পারফেক্ট ছিল যে সেই চটপটির স্বাদ এখনও জ্বীবে লেগে আছে। প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর সেই চটপটি খাওয়া রুটিনেই ছিল। কখনও পেট খারাপ করেছে বলেও মনে হয় না। নারিন্দা স্কুল ছেড়ে আসার পর আর সেই চটপটি খাওয়া হয়ে উঠল না। চটপটি ওয়ালার পাশেই বিক্রি হত ঘুগনি, ও আমার অন্যতম প্রিয় খাবার আলু সিদ্ধ।
অর্ধেক আলু সিদ্ধ করে ঝাল মসলা দিয়ে মাখিয়ে বিক্রি করত। ঘুগনি ও আলু সিদ্ধ খাবার চামচটাও ছিল ভিন্নধর্মী। বেশি কিছুই না, সিগারেটের প্যাকেটের মোটা কাগজ। এখনও এইসব উপাদেয় খাবার রাস্তায় বিক্রি হতে দেখি, কিন্তু খাওয়ার ভক্তি হয় না।
তবে একবার ছোট্ট বেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বাবার সাথে ঘুরতে এসে চটপটি খেয়েছিলাম, যার স্বাদ কখনই ভুলবার নয়।
অসাধারণ ছিল যেমন টক তেমনই ঝাল!! ছোটকালে বাবা আমাদের প্রায়ই স্বাধীনতা দিবস, পহেলা বৈশাখ বা বিজয় দিবসে ঢাবি ক্যাম্পাসের মেলায় ঘুরতে নিয়ে আসত। তখন এখনের মত এত ভীড় হত না। যতদূর মনে পড়ে তখন এই সব দিবসে কনসার্ট ও কোনায় কোনায় বহুজাতিক কোম্পানির প্রচারনার স্টল থাকত না। তখন অবশ্যই খেতাম মুড়ালি ও নকুল। মুড়ালির ভেতর লাল রঙের গুলোর বেশি পছন্দের ছিল, আজ কারসিনোজেনিক ডাইয়ের ভয়ে সেগুলো গলা দিয়ে ঢুকাতে কষ্ট হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হবার পরে সেই জায়গাতে থেকেও আজ চটপটিও খাই না, না মেলায় গিয়ে মুড়ালি কিনি!!
ক্লাস সেভেনে ভর্তি হলাম নবাবপুর গর্ভর্মেণ্ট স্কুলে, ঠাটারি বাজারের ভেতর। আমাদের স্কুলের সামনে বিক্রি হত ঘুগনি ও শরবত। ঘুগনি আমার কাছে উপাদেয় ছিল না কখনই, তবে শরবতের কথা না বললেই নয়। বড় এক ডেকচিতে বিশাল এক বরফের চাক ভাসত। আর তার মাঝেই থাকত লেমন ফ্লেভারের অসাধারণ সেই শরবত।
উপরে ডেকচির ঢাকনাতে পাঁচ-ছয় গ্লাস শরবত ডিসপ্লেতে থাকত। প্রতি গ্লাস মাত্র এক টাকা, এক টাকা, এক টাকা। টিফিনের ফাঁকে একগ্লাস শরবত গলায় ঢেলে দেবার পরে মনে হত প্রান ফিরে এসেছে। আর সেই শরবত আমি এককালে খেয়েছি তা এখন কল্পনা করতেও কষ্ট হয়।
সেই ছোট্টবেলার এই ছোট্ট ছোট্ট বিষয় গুলোও লেখার উপকরণ হতে পারে তা ভাবতে পারি নি কখনও।
ছোট্টবেলার ছোট্ট স্মৃতিগুলো ছাড়া হয়ত আজ বড় হতে পারতাম না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।