আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েল



বাংলাদেশের এমন কোনো শহর বা গ্রাম নেই যেখানে দোয়েল নেই কিংবা দোয়েলের প্রাণ মাতানো শিস বা গান নেই। গোলায় কিংবা শুকাতে দেয়া ধানে যখন দোয়েল নাচে তখন মনে হয়, বাংলাদেশ ধান-দোয়েলের দেশ। আবার শাপলা ও পদ্ম ফুলের মাথা ছুঁয়ে উড়ে যায় তখন মনে হয় যেন পদ্ম কিংবা শাপলা-দোয়েলের দেশ। দোয়েলের চালচলনে একটা আভিজাত্যের ছাপ রয়েছে। সে শহরের দালান কোটার ফাঁকফোকরে কিংবা ভেন্টিলেটরে বাসা তৈরী করে।

বাসা বাঁধার পছন্দসই জায়গা নির্বাচন করতে গিয়ে ২ থেকে ৪ দিন ব্যয় করে। এই পছন্দের ব্যাপারে ওদের কিছু একগুয়েমী আছে। ওরা অনেক সময় চড়ুই পাখি, বসন্তবৌরি, কাঠঠোকরা, টিয়াদের বাসাও পছন্দ করে ফেলে । একবার কোন বাসা পছন্দ করে ফেললে দোয়েল ওই বাসা দখলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। দোয়েলের বারবার আক্রমনে অন্যান্য পাখি সাধারণত নিজের বাসা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।

তবে টিয়া পাখির সঙ্গে দোয়েল পেরে ওঠে না। পরের বাসা দখলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্য কোন পাখিকে এমন মরিয়া হতে খুব কমই দেখা যায়। বাসা বাঁধা কিংবা দখল করা শেষ হলেই তারা ডিম পাড়ে। দোয়েল সাধারণত ৪টি ডিম পাড়ে। এ ডিম গুলো আবার ৩দিনের মধ্যেই পাড়ে।

১৪দিন পর প্রথম ডিমটি ফুটে বাচ্চা বের হয়। পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় বাকী ৩টি ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। দোয়েলের ডিমের রঙ নীলচে, তার ওপরে অতি সূক্ষ্ম লালচে আভা থাকে। লালচে আভার ওপরে ঘন লালচে-বাদামি ছোপও থাকে। এসব ডিম লম্বায় হয় ২.৫ সেন্টেমিটার আর চওড়ায় প্রায় ১.৫ সেন্টিমিটার।

দোয়েল বিশ্বের অন্যতম সেরা গায়ক পাখি। বিশ্বের নামকরা গায়ক পাখি রবিন ও বুলবুলের চেয়েও সে ভাল গান গান। তবে মজার ব্যাপার হলে, স্ত্রী দোয়েল কিন্তু একদম গান পারে না। তবে প্রয়োজনে ডাকতে পারে কর্কশ স্বরে। পুরুষ দোয়েল লম্বায় ১৮ থেকে ২২ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে।

উত্তেজিত হলে তার লেজ পিঠের ওপরে ৯০ ডিগ্রি কোণে খাড়া হয়ে থাকে। সাদা-কালোর মিশ্রণে পুরুষ দোয়েল এক অনন্য সুন্দর পাখি। অপরদিকে স্ত্রী দোয়েল দেখতে যেমন ছোট, তেমনি পুরুষ দোয়েলের মত দেখতে সুন্দর নয়। দোয়েল উপকারী পাখি। সে কত রকমের ক্ষতিকর পোকামাকড় যে খায় তার কোন হিসাব নেই।

দোয়েলের খাদ্য তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়,কীটপতঙ্গ, কেঁচো, সাপের ছোট বাচ্চা, শিমুল-মাদার ফুলের মধু, খেজুরের রস, পিঁপড় ও পিঁপড়ের ডিম, ফড়িং ইত্যাদি। সে ধানের বন্ধু, পাটের বন্ধু, শাকসবজির বন্ধু -এককথায় পরিবেশের বন্ধু্। কিন্তু তারপরও মানুষ অকারণে গুলতি দিয়ে কিংবা হাতপাকানোর জন্য এয়ারগান দিয়ে এদেরকে মারে। অকারণে বাচ্চাও নষ্ট করে। সবার উচিত যারা এসব করে তাদের বাধা দেয়া।

কারণ, একটি পাখিকে অকারণে কষ্ট দেবার কোনো অধিকারই আমাদের নেই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.