সেই চতুর্দশ শতাব্দীতে যখন সুবিশাল সুগা নদীর বুকে ভেসে ওঠা বিরাট বাকলা চন্দ্র দীপ ভূ-খণ্ডে জনবসতির সূত্রপাত হয়। তখন থেকেই মৌজা দরিয়াবাদ তথা চাখার এতদ্বঞ্চলের রাজনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক অঙ্গনে বিরাট ভূমিকা পালন করে আসছে। রাজা রাম চন্দ্ররায় তখন চন্দ্রদ্বীপের রাজা। রাজধানী মাধপপাশা। ১৬১১ খৃ: মোগল বশ্যতা অস্বীকার করলে মাধপপাশার অদূরে সপ্তাহব্যাপী এক যুদ্ধে রাজা রামচন্দ্র পরাজিত এবং বন্দী হন।
চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য স্বাধীনতা হারায়। চুক্তির মাধ্যমে রাজ্যের একটি অংশ আগা বাকের খাঁ এবং অপরাংশ চাখারের জমিদারীর আওতায় আসে। পরে অবশ্য শায়েস্তাবাদের জমিদার পরিবার চাখারে বিয়ে করে শেষোক্ত জমিদারীর কিয়দংশের ভোগাধিকার লাভ করে।
পরবর্তীকালে এই চাখার গ্রামে বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন এসে বসতি স্খাপন করে। সেই যুগে এখানে দু'টি পরিবার বিখ্যাত ছিলো।
একটি সৈয়দ ও অপরটি মিঞা পরিবার। যারা আজও সেই ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করে যাচ্ছে। এই সৈয়দ পরিবারের চাখার শরীফ বাড়ির সৈয়দ ফজর আলীর এক কন্যা ফাতেমা খাতুনকে বিয়ে দেয়া হয় বর্তমান পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানাধীন বিলবিলাস গ্রামের কাজী মোহাম্মদ আমিনের সাথে। কাজী আমিনের পিতা মো: মর্তুজা ভারতের উত্তর প্রদেশের ভাগলপুর গাজীপুর থেকে বিলবিলাস আগমন করে স্খায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। মো: আমিন মূলত মিঞা বংশের লোক কিন্তু পেশাগত কারণে পরবর্তীকালে কাজী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
কাজী আমিনের পুত্র কাজী মোহাম্মদ আকরাম ১৮২০ খৃ: বিলবিলাস গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক কোন্দালের শিকার হয়ে তিনি বিলবিলাস গ্রাম থেকে চাখারে এসে স্খায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। কাজী আকরাম আলী দুই পুত্র ও পাঁচ কন্যা রেখে মৃত্যুবরণ করেন। জ্যেষ্ঠ পুত্র হচ্ছেন কাজী মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী বিএ, বিএল। তিনি ১৮৪৩ খৃ: জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি বঙ্গদেশের ৩য় মুসলমান গ্র্যাজুয়েট এবং ২য় মুসলমান আইন গ্র্যাজুয়েট। তিনি ১৮৭১ খৃ: রাজাপুর থানার সাতুরিয়া গ্রামের সম্ভ্র্রান্তশালী মিঞা পরিবারের সৈয়দুননেছা নাম্নী জনৈকা মহিলাকে বিবাহ করেন। তারই গর্ভে ১৮৭৩ খৃ: ভারতীয় রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ২৬শে অক্টোবর মধ্যরাতে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। সৈয়দুননেছা অষ্টাদশ শতকের প্রখ্যাত সাধক শেখ সাহাবুদ্দিনের বংশধর। তিনি ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আরব মূলক থেকে প্রথমে দিল্লীতে ও পরে বাগেরহাটে এসে স্খায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
অত:পর পিরোজপুরের রায়েরকাঠী জমিদার বাড়িতে কিছুকাল অবস্খানের পর কাউখালী থানার পার সাতুরিয়া গ্রামে এসে স্খায়ীভাবে বসবাস করেন। অত্র থানার শুক্তাগড় গ্রামে তার মাজার রয়েছে।
শেরে বাংলা ফজলুল হকের পিতা বরিশাল বারের একজন প্রখ্যাত আইনজীবী থাকার সুবাদে কিশোর ফজলুল হকের শৈশবকাল বরিশাল শহরে কাটে। তিনি ১৮৮৯ খৃ: বরিশাল জিলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এনট্রান্স এবং ১৮৯১ খৃ: কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এফএ পাস করেন। অত:পর ১৮৯৩ সালে গণিত, পদার্থ বিদ্যা ও রসায়ন শাস্ত্র এই তিন বিষয়ে একই সঙ্গে প্রথম শ্রেণীতে বিএ পাস করেন।
১৮৯৫ সালে অংকে প্রথম শ্রেণীতে এমএ পাস করেন। ফজলুল হক ১৮৯৭ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে ডিস্ট্রিংশনসহ বিএল পাস করে স্যার আশুতোষ মুখার্জির শিক্ষানবীশ হিসেবে কলকাতা হাইকোর্টে যোগদান করেন।
তিনি ১৯০০ সালে কলকাতা হাইকোর্ট ও ১৯০১ সালে বরিশাল জজ কোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৯০৬ সালে তিনি নবাব স্যার সলিমুল্লাহর সাথে মুসলিম লীগ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ঐ সনেই তিনি ডেপুটি মেজিস্ট্রেট পদে চাকরিতে যোগদান করেন।
১৯১২ সালে তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন। ১৯২৪ সালে অভিভক্ত বাংলা শিক্ষা ও স্বাস্খ্যমন্ত্রী হন। ১৯৩৫ সালে কলকাতার প্রথম মুসলশান মেয়র নির্বাচিত হন। ১৯৩৭-১৯৪৩ পর্যন্ত অভিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফন্সন্ট থেকে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১৯৫৫ সালে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর, ১৯৫৬-৫৮ ঢাকা হাইকোর্ট বারের সভাপতি, ১৯৪৮-৫৬ পূর্ব পাকিস্তান সরকারের এটর্নি জেনারেল এবং অসংখ্য বার বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। পাকিস্তান সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৪০ সালে তিনি লাহোর প্রস্তাব পেশ করেন। ১৯২৮ সালে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সভাপতি ও নিখিল ভারত জাতীয় কংগ্রেসে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি লন্ডনে ১৯২৯-৩০ প্রথম ও ১৯৩১-৩৪ সালে ২য় গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করে মুসলমানদের জন্য স্বাতন্ত্র্য নির্বাচন প্রথা দাবি করেন।
কায়েমী স্বার্থচক্রের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও তারই একক প্রচেষ্টায় বিভিন্ন সময়ে জনকল্যাণমূলক বিল আইনে পরিণত হয়। এসব আইনের মধ্যে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন ১৯২৮, বঙ্গীয় কৃষিখাত আইন ১৯২৮, বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব সংশোধন আইন ১৯৩৯ ঋণ শালিসী বোর্ড এবং মহাজন আইন ১৯৪০ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মহান জাতীয় নেতা শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের আজ ২৭শে এপ্রিল ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। জাতির হৃদয়ে পরম শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত শেরে বাংলা তার সুদীর্ঘ, বর্ণাঢ্য ও সফল কর্মময় জীবনের শেষে ১৯৬২ সালে এই দিনে ইন্তেকাল করেন। রাজনৈতিক অঙ্গনের এক মহান ব্যক্তিত্ব এবং জীবদ্দশায়ই কিংবদন্তীর নায়ক শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের ইন্তেকাল শতাব্দীর এক গৌরব উজ্জ্বল রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান ঘটে।
আজ আমরা তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।
উপমহাদেশের কতিপয় বরেণ্য ব্যক্তি শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের বহুমুখী প্রতিভার মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে যে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করেছেন তার উপরে খানিকটা আলোকপাত করবো।
শেরে বাংলার শৈশব কালের কথা। ঘোড়ার গাড়িতে করে বরিশাল থেকে চাখারে যাচ্ছেন। পথিমধ্যে রাস্তা সংলগ্ন জীর্ণ কুটির থেকে একটি শিশুর প্রচণ্ড কান্না, চিৎকার ও লোকজনের শোরগোল শুনতে পান অত:পর গাড়ি থামিয়ে সেখানে গিয়ে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন।
একজন কৃষক মহাশয়ের খাজনার দায়ে ভিটা বাড়ি নিলামে ওঠাসহ গৃহের মালামাল ক্রোক করেন জমিদার মহাশয়। তার পাইক-পেয়াদারা ক্রোককৃত মালামাল উঠানে জড়ো করছে। সব কিছু নামালেও গৃহকর্তার এক অবুঝ শিশু তার খাবারের প্রিয় কাঁসার থালাটি দিতে নারাজ। সেটি বুকের মধ্যে সজোরে আগলে ধরে ক্ষুদ্র শক্তি দিয়ে তা রক্ষা করার প্রাণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছে। শোরগোলের মধ্যে এক ফাঁকে ছেলেটি তার প্রিয় থালাটি নিয়ে দেছুট।
কিশোর ফজলুল হকের এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে চোখে পানি আসে। অত:পর কত টাকার বিনিময়ে ভিটেবাড়ি নিলামে চড়েছে তা জ্ঞাত হয়ে পকেট থেকে সেই অর্থ নায়েব মহাশয়কে প্রদান করে অচিরেই এই কৃষকের নিলামকৃত সম্পদ ফেরত দেয়ার অনুরোধ জানান। পরবর্তীকালে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে কোটি কোটি অসহায় কৃষকের স্বার্থে জমিদার তালুকদার মহাজনদের জুলুম-নির্যাতন থেকে রক্ষা কল্পে বেশ কয়েকটি আইন পাস করেছিলেন।
১৯৪২ সালের কথা। তখন কলকাতায় খৃস্টান মিশনারীদের উদ্যোগে এ্যাফিকেনী নামে একটি পত্রিকা বের হতো।
সেই পত্রিকার আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাকে কটাক্ষপাত করে একটি লেখা ছাপা হয়। এর বিরুদ্ধে গোটা ভারতবর্ষের মুসলমানরা প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ঢাকাবাসীও জেগে ওঠে। শহরের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে হাজার হাজার জনতা বিক্ষোভ মিছিল সহকারে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সমবেত হয়। সৈন্যরা প্রাথমিকভাবে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়।
অত:পর কামানের গুলী ভর্তি করে তা চালাতে উদ্যত হয়।
শেরে বাংলা ফজলুল হক তখন ঢাকায় অবস্খান করছিলেন। বাথরুমে গোসল করতে গিয়ে জনৈক ব্যক্তি কর্তৃক ঘটনাটি অবগত হয়ে কোন রকম গোসল সেরে দৌড় দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে হন্তদন্ত হয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে গিয়ে উপস্খিত হন। জনতার মধ্য থেকে হুড়মুড় করে এগিয়ে গিয়ে কামানের সামনে হাজির হয়ে তার বিরাট বক্ষখানি পেতে দিয়ে বললেন, “আমার শরীর গুলীবিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত একজন মুসলমানের গায়ে গুলী লাগাতে দেবো না। হে বৃটিশ তোমাদের রাজস্ব এখানেই খতম করবো।
” শেরে বাংলার এই আচরণ ও দাম্ভিকতা দেখে সৈন্যরা কামান থেকে গুলী সরিয়ে ফেলে। অত:পর পরিস্খিতি আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার বলেছেন, “ফজলু তুমি রাজনীতিজ্ঞ না হয়ে শুধু সাহিত্য সাধনা করলে বিশ্ব বরেণ্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে যেতে পারতে। ” নিখিল ভারত মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা নবাব স্যার সলিমুল্লাহ বলেন, “তোমার মাথাটা আমাকে দাও আমার গদিটা তুমি নাও। ” স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় বলেন, “শেরে বাংলার পায়ের গোড়ালি থেকে মাথার চুল পর্যন্ত খাঁটি বাঙ্গালি ও মুসলমান।
বাঙ্গালিরা তাকে মূল্যায়নে ব্যর্থ হলে এ জন্য তাদেরকে বহু খেসারত দিতে হবে। ”
স্যার জেটল্যান্ড তাঁর বাকপটুতা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘ফজলুল হকের বক্তৃতায় তরুণ পীটের তেজস্বিতা, গ্লাডস্টোনের ক্ষিপ্রতা, ডিজরেলির সম্মোহনী শক্তি এবং ব্রাইটের আবেগময় নৈতিক আবেদনের প্রকাশ দেখলাম। '
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন শেরে বাংলা স্মৃতি সংসদ কর্তৃক আয়োজিত তিন নেতার মাজারে শেরে বাংলার জন্ম ও মৃত্যু দিবসের উপরে কয়েকটি আলোচনা সভায় যোগদানের সৌভাগ্য হয়েছে। তাঁর বহুমুখী প্রতিভার মূল্যায়ন করতে গিয়ে বক্তারা যে তত্ত্ব ও তথ্যবহুল আলোচনা রেখেছেন এখন তার অংশ বিশেষের উদ্ধৃতি দিচ্ছি।
শেরে বাংলার পরিবার বিরল কৃতিত্বের অধিকারীর মূল্যায়ন করতে গিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আজিজুল হক নান্না মিয়া ছোট্ট একটি ঘটনার অবতারণা করেন এভাবে- “পূর্ব বাংলার এককালীন গভর্নর স্যার ব্যামফিল্ডদে ফুলার একবার বরিশালে শুভেচ্ছা সফরে এলে নগরবাসী শহরস্খ বেল্স পার্কে এক নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করে।
তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলা বোর্ডের সভাপতি কাজী ওয়াজেদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি চলাকালে এক পর্যায়ে গভর্নর তাকে জিজ্ঞেস করেন, “ঐড়ি সধহু সঁংষরস মৎধফঁধ:ব ধৎব :যবৎব রহ ইধশবৎমধহম ফরং:ৎরপ:? জবাবে তিনি বলেন, ঙহষু সু ংড়হ ধহফ সুংবষভ“ মন্ত্রী আরো বলেন, ১৯২৪ সালে অবিভক্ত বাংলার শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন শেরে বাংলা চাকরির ক্ষেত্রে মুসলমান শিক্ষিত যুবকদের জন্য শতকরা ৫০% কোটা প্রবর্তন করেন।
পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জনাব আতাউর রহমান খান বলেন, “আমি যখন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম তিনি তখন গভর্নর ছিলেন। আমাদের মধ্যে কোন দিন কোন বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়নি। ঢাকা হাইকোর্টে তার সাথে একত্রে বহুদিন কাজ করেছি অথচ কোন দিন ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়নি। আমরা দেশের জন্য সামান্য কাজ করলেই লোকজনের কাছে তা পুন:পুন: বলে আত্মতৃপ্তি ও অহঙ্কার করে থাকি।
অথচ তিনি অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ‘ঋণ সালিশী বোর্ড', ‘মহাজনী খাতক আইনসহ' নানা আইন পাস করে কোটি কোটি গরীব কৃষক প্রজার অসাধারণ উপকার সাধন করে গেছেন। অথচ তিনি কোন দিন এ নিয়ে অহঙ্কার করেননি। ”
তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও মেধার মূল্যায়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি নূরুল ইসলাম বলেন, “স্যার আশুতোষ মুখার্জী যখন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি তখন শেরে বাংলা ফজলুল হক তাঁর জাজমেন্ট লেখার প্রধান কলামিস্ট ছিলেন। তার পুত্র শ্যামা চরন মুখার্জী ও স্ত্রীর সহায়তায় ১৯৩৫ সালে শেরে বাংলা ফজলুল হক কলকাতার প্রথম মুসলমান মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্যার আশুতোষ মুখার্জীকে তিনি পিতৃতুল্য ভক্তিশ্রদ্ধা করতেন।
”
বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তার বলেন, “শেরে বাংলার রাজনীতির মূল লক্ষ্য ছিলো গরীব চাষী, কৃষক, শ্রমিকের ডাল-ভাতের ব্যবস্খা করা আর আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে নিজেদের জন্য রুটি-রোজগারের ব্যবস্খা করা। তার সাথে আমাদের পার্থক্যটা এখানে। ”
পাকিস্তানের সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী খান এ সবুর বলেন, “শেরে বাংলা এবং সোহরাওয়ার্দীর সাথে তাদের কলকাতায় রাজনীতির শেষ এক যুগ পরম সান্নিধ্যে থাকার সুযোগ পেয়েছি কলকাতা গড়ের মাঠ, ইডেন গার্ডেন, মহাম্মদ আলী পার্কসহ মফস্বলে বহু জনসভায় যোগদানের সৌভাগ্য আমার হয়েছে। তাদের বক্তৃতা শোনার জন্য হাজার হাজার হিন্দু-মুসলমান জনতা দূর-দূরান্ত থেকে রেল, বাস, ট্রামযোগে জনসভায় উপস্খিত হতো। মুসলমানদের চেয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সমাগম বেশি হতো।
হিন্দুরা তাদেরকে দেবতার মত শ্রদ্ধা করতেন। ”
সাতুরিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জনাব আ: হামিদ জমাদ্দারের সাক্ষাৎকার নেয়ার সুযোগ পেয়েছি কয়েক বার। তিনি বলেন, “শেরে বাংলার কলকাতার রাজনীতির শেষ যুগটিতে তাঁর পার্ক সার্কাস স্ট্রীটের বাস ভবনে থাকার সুযোগ পেয়েছিলাম। তিনি আমাকে স্নেহ করে আ: হামিদ ডুবানী বলে ডাকতেন। হাইকোর্টে বই-পুস্তক নথিপত্র পৌঁছানো থেকে শুরু করে বাজার করা, অতিথি আপ্যায়ন, গৃহকত্রীর ফরমায়েশ পালনসহ নানা দায়িত্ব পালন করতাম।
দীর্ঘ দিনের এই সংস্পর্শে তিনি আমাকে কোন দিন এই কাজটি কেন করেছ বা করনাই বলে বিরক্ত করেননি। ১৯২৭ সালে ২রা মার্চ পোনাবালীয়ার কুলকাঠীতে একটি মসজিদের পবিত্রতা রক্ষাকরণকে কেন্দ্র করে হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে এক সাম্প্রদয়িক দাঙ্গা সংগঠিত হয়েছিল। ডি,এম ঊ.ঘ বালান্ডীর নির্দেশে গুর্খা সৈন্যদের গুলীতে সেদিন ঘটনাস্খলে ১৯ জন মুসলমান শাহাদাত বরণ করে। পরের দিন শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ও স্যার আ: রহিম ঘটনাস্খলে উপস্খিত হন। লাশগুলোর তখনো সৎকার হয়নি।
সেগুলো দেখে তিনি শিশুর মতো হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন। সে দৃশ্য আমি স্বচক্ষে দেখেছি। সেদিন তিনি অশ্রুর বন্যায় বুক ভাসিয়ে ছিলেন। ঐ দিনই তাকে আমি প্রথম দেখেছিলাম। তিনি একজন খাঁটি মুসলমান ছিলেন।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজান্তে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করতেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে পড়তেন এবং শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়তেন। যুক্তফন্সন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে তার সাথে আমি বহু স্খানের সফর সঙ্গী ছিলাম। ৩,৪
মৃত্যুর একদিন পূর্বে হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে শেরে বাংলা কেবল নীরবে অশ্রু বিসর্জন করছেন। তাকে দেখার জন্য সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার, ইউসুফ আলী মোহন মিয়াসহ কয়েকজন নেতা সেখানে উপস্খিত হন। জনাব আবু হোসেন সরকার বিনীতভাবে নেতার অশ্রু বর্ষণের কারণ জিজ্ঞাসা করলে শেরে বাংলা বলেন, “আবু হোসেন আমি ৫০ বছরের ঊর্ধ্বকাল ধরে এ দেশের কৃষক প্রজার জন্য ডাল-ভাতের জন্য চেষ্টা করেছি কিন্তু আজো বাংলার কৃষক প্রজার ডাল-ভাতের সমস্যার সমাধান হয়নি।
আমি আল্লাহর কাছে কি জবাব দেব?”
(সুত্র: উইকি)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।