লেখার চেয়ে পড়ায় আগ্রহী। ধার্মিক, পরমতসহিষ্ণু।
অনেক গড়িমসি এবং চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে কওমি মাদরাসা-বিষয়ক একটি কর্তৃপক্ষীয় রূপ পরিগ্রহ করতে যাচ্ছে বলে সংবাদ-মাধ্যমের আভাস। ভালই ভালই তা সম্পন্ন হতে পারলে ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত হবে, নিঃসন্দেহে।
এদেশেরই জনসংখ্যার ক্ষুদ্র একটি অংশ কওমি মাদরাসার শিক্ষার সঙ্গে জড়িত।
কিন্তু এর শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচীর কূপবদ্ধ প্রকৃতির দরুণ তা জাতীয় স্রোতের সঙ্গে কোনো রকম সংযোগ রক্ষা করতে পারছে না। আবদ্ধ জলাশয়ের মতো তা পরিশোধনের পথ খুঁজে পাচ্ছে না। এ-কমিশনের মাধ্যমে এ সবের প্রতিকার হবে বলে আশা করা যায়।
বর্তমানে প্রচলিত কওমি শিক্ষা-ব্যবস্থার বয়স শতবর্ষ পেরিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ ভারত এবং ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানে তা জাতীয়করণের বা সমন্বিতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশে তা কেন যেন শুধু বিপরীত মুখেই উত্তাল বেগে ছুটছে তো ছুটছে। এর জন্য অবশ্য দায়ী কওমি শিক্ষা-ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কর্তৃপক্ষীয় ব্যক্তিবর্গ ও তাদের মতানৈক্য।
তাদের যুক্তি হল, কওমি মাদরাসা ও শিক্ষা-ব্যবস্থা একটি স্বতন্ত্রধারার প্রতিষ্ঠান। সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ এর এ-বৈশিষ্ট্যকে হুমকির মুখে ফেলবে। আধুনিক ধারার সর্বগামী রাজনীতি ও সরকারের কার্যক্রম দেখলে এ আশঙ্কা অমূলক মনে হয় না সত্যি।
কিন্তু সরকারের হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকতে হলে যে ধরনের বিধি-ব্যবস্থার দরকার, তা কওমি মাদরাসায় শুরু থেকেই নেই। উপরন্তু জ্ঞানবিজ্ঞান যে ক্রম-উন্নয়নমূলক বিষয়, তা এখানকার পাঠ্যসূচী ও পাঠদান-পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। আর তাই বিচ্ছিন্ন দ্বীপের এই এই কওমি মাদরাসা ও শিক্ষা-ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদেরকে জনবিচ্ছিন্ন করে রাখছে অবিরত।
এর শিক্ষা-ব্যবস্থাও খামখেয়ালি রকমের অগোছালো। কোথাও এর শিক্ষা সমাপ্তি ঘটে মাত্র সাত বছরের মধ্যে;, কোথাও আট বছরের মাঝে; তবে সর্বোচ্চ বারো বছরের কোর্স।
কোথাও কোথাও ষোল বছরের একটি বিন্যাস অছে। কিন্তু এগুলোতে নিয়মতান্ত্রিক কোনো ছাত্র নেই। আবার একই ধারার শিক্ষা পদ্ধতির অঞ্চল-বিশেষ ও রাজধানীনির্ভর নানা নামের বোর্ড রয়েছে। যার যে-রকম ইচ্ছা, ঠিক সে-রকমভাবেই চলছে বোর্ডগুলো।
কওমি মাদরাসায় সাধারণত দরিদ্র, প্রায়-দরিদ্র বা মাধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের দেওয়া হয়।
ধর্ম ও শিক্ষার নাম থাকলেও বাস্তবে এর উপস্থিতি খুব সামান্য। এখানে মাতৃভাষার মূল্যায়ন নেই, জাতীয় বিষয়কেন্দ্রিক কোনো পাঠ্য নেই, সমকালীন যুগ-বাস্তবতার কোনো স্পর্শই নেই। আর তাই এর পড়–য়া গোষ্ঠী অমানুষিক পরিশ্রম করেও শেষপর্যন্ত দান-দক্ষিণা-নির্ভর মসজিদ মাদরাসাতেই নিজেদের সীমিত রাখতে বাধ্য হয়।
সরকারের বিশেষ তত্ত্বাবধানে দেশের বিশিষ্ট আলেমগণ এর রূপরেখা তৈরি করেছেন। নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের লড়াইয়ের জন্য একে বাধাগ্রস্ত করা উচিত হবে না।
এদেশের আলেম-সমাজ যত তাড়াতাড়ি তা বুঝতে পারবেন, ততই মঙ্গল। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।