কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...
সাহিত্যিকেরা চিন্তাবিদও হয়...তাদের চিন্তা, জীবন-যাপন, বিশ্বাসের উপলক্ষ্য এইসব একটা জাতির দৃষ্টিভঙ্গী কিম্বা উদ্দেশ্যমূখীনতা পাল্টাইয়া দিতে পারে...পরিবর্তনে চাই সামষ্টিক চেতনাগত বিষ্ফোরণ...কিন্তু একজন ব্যক্তির উপলব্ধিও যে পারে একটা জাতিরে দিক নির্দেশনা দিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর না জন্মাইলে মনে হয় পৃথিবীর সকল জনপদই অজ্ঞ থাকতো, অনাস্থা থাকতো তাগো মূল্যায়নে। রাজনৈতিক বা সামাজিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়া এইরম অনেক ব্যক্তিই হয়তো আসছেন ইতিহাসের ধারাবাহিকতায়...কিন্তু একজন সাহিত্যিকের চিন্তাগত অবস্থান যে এতোখানি নাড়া দিতে সক্ষম, সেইটা আমি নিজেও বুঝতে পারতাম না যদি ইতিহাসের চক বোর্ড থেইকা রবীন্দ্রনাথের নাম মুইছা দেওয়া হইতো...বা যাইতো, কিন্তু শত চেষ্টাতেও রবী ঠাকুরের পরিচয়-অবদান-ইতিহাস মুইছা ফেলা সম্ভবপর হয় না।
এইরম একজন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়োজনীয়তা নিয়া কোন প্রশ্ন তুলন যায় না...ইতিহাসে তিনি থাকেন তার ভুলভ্রান্তি সমেত, ইতিহাসে তিনি আলোকিত থাকেন তার স্মরণীয় সৃষ্টির আলোকবর্তীকায়। এই ২০০৮ সালে আইসাও আমাগো অনেকের কাছেই তারে আধুনিক ঠেকে। মনে হয় আমাগোর প্রানের কথাই তিনি লিখছেন আজ থেইকা একশো ছোঁয়া বছর আগেই! বিস্ময়!
বৃটিশ বেনিয়ারা যখন তাগো ব্যবসার প্রয়োজনে একটা জাতিরে অধস্তনঃ রেপ্লিকা সংস্কৃতিমতো চালাইতে চাইলো...এই দেশের কিছু মানুষ তাগো চামচামি করনের স্বরূপে যখন ইংরেজ আর ইংরেজীরে ঠিক নিয়মমতোন অপভ্রংশ রূপে নিলো, তখন আরেকদল বিদ্রোহে সমর্পিত করলো তাগো প্রাণ।
হয় আপোষ নয় বিদ্রোহ এই দুই নীতির বাইরে ভাবতে যেই বুর্জোয়া আধুনিক যূগীয় মূল্যবোধ হয়, বৃটিশ বা পাশ্চাত্যের যেই ব্যক্তিকেন্দ্রীক অনুভব প্রয়োজন হয় তার ছাপ দেখা যায় নাই ইতিহাসে বহুকাল...আচমকা আসলেন রবী ঠাকুর!
তিনি নিজের কথা, নিজের অনুভূতির কথা লিখলেন...
ঈশ্বর আর সমাজ, এই দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের ভিন্ন উপলব্ধির পরিসর খুললেন তিনি। ঈশ্বর এইখানে ব্যক্তির নিকটজন হইলেন...ব্যক্তির ভালোবাসা বড় হইলো, প্রতিবাদে ব্যক্তির ভূমিকা প্রধান হইলো, তিনিই প্রথম বাঙালী, যে কেবল অভ্যাসেই বুর্জোয়া হইলেন না, তার চিন্তায়-সাহিত্যে তার প্রতিফলন দেখা দিলো...রবী ঠাকুর বাঙালীরে ব্যক্তিকেন্দ্রীকতা শিখাইলেন...রবী ঠাকুর আইকন হইলেন!
আইকন বিরোধী একটা মানসিকতা এই সময়ে আইসা প্রবল সংশয় তৈরী করছে সামাজিক মানসিকতায়। সংশয় কইতে চাই কারন আইকন নিয়া অবসেস্ড হইতে চায় না এই সময়ের উত্তরাধুনিক মানুষ...কিন্তু প্রায়শঃই পুরানা আইকনিক চরিত্রসমূহের আলোচনায় তাগো পিছুটান দেখি। আর এই পিছুটানের কারনে নতুন আইকনের প্রতি বিরূপ হইলেও পুরান আইকন যেরম, রবী ঠাকুর-ঈশ্বর চন্দ্র-শেখ মুজিব নিয়া যদি কেউ কিছু কয় তাইলে টেম্পারামেন্ট হারানের অবকাশ পায়।
রবী ঠাকুরের যেই ব্যক্তিকেন্দ্রীক চেতনা, সেই চেতনার পরতে পরতে গ্রন্থিত আছে শ্রেণীর মৌতাত...ঔপনিবেশিক বেনিয়াগোত্রের বিরুদ্ধে, সামন্তীয় সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যার অবদান অস্বীকার সম্ভব না, তারেই এই সময়ের প্রবাহে প্রশ্নকরনটা জরুরী হয় আমার কাছে।
বুর্জোয়া ব্যক্তিকেন্দ্রীকতা সমাহিত হওনের সম্ভাবনা জাগায় শ্রেণী চেতনার পরাকাষ্ঠায়। আইকনিক রাবীন্দ্রিক শুদ্ধবাদী চেতনা যখন শাসকের বা স্বঘোষিত সুপিরিয়র শ্রেণী চেতনায় পর্যবসিত হয় তখন একটু ভাবতে বসি। অন্য সংস্কৃতিরে হেয়করণ বা অপমানের হাতিয়ার হইয়া রবী ঠাকুর যখন জাজ্জ্ব্যল্যমান হ'ন তখন আমার খুব বেশী জুইত লাগেনা।
রবি বাবুর জন্মদিবসের দিনে তাই আমার প্রশ্ন জাগে, বিদ্যমান ক্ষয়াটে বুর্জোয়াতন্ত্রের হাতে তার ব্যবহারিক বাস্তবতা নিয়া। এই প্রশ্ন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুররে অপমান বা বিস্মরণের তাগীদে না...রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অপব্যবহারের দৃষ্টান্তে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।