Shams
নিরাপদ সরকারি চাকরি পেলেই হবে না, পেতে হবে তার মধ্যে থেকে সেরা চাকরিটাই। এটাই যদি ভাবেন, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই বিসিএস -এর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু আর একটু নির্দিষ্ট পথে চালাতে হবে আপনার পড়ার পদ্ধতিটি। কীভাবে?
এখন সবাই চান সরকারি চাকরি। সরকারি চাকরির পরীক্ষায় একবার সফল হওয়া মানেই নিশ্চিন্ত, নিরাপদ জীবন।
সরকারি চাকরির নানা রকমফের আছে। কিন্তু সব মিলিয়ে যে সরকারি পরীক্ষায় সফল হওয়ার চাহিদা সবচেয়ে বেশি, তা বিসিএস। সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের অনেকেরই স্বপ্নের চাকরি। কিন্তু বিস্তৃত সিলেবাস এবং পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপের কারণে সেই স্বপ্নপূরণ হয়ে ওঠে না। অনেকেই বেশ দিশাহারা হয়ে পড়েন, কী করে এই চাপ সামলাবেন তা নিয়ে।
তবে এটাও ঠিক, নিয়ম করে পড়াশোনা করলে আর সঠিক প্রস্তুতি নিলে আসতে পারে সাফল্য। প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে জেনে নেওয়া দরকার। সবার আগে পরীক্ষার পদ্ধতি ও পড়াশোনার এলাকা ঠিক করে নিতে হবে। সকলেই জানেন, মূলত তিন ধাপে এই পরীক্ষা হয়ে থাকে৷ প্রাথমিকভাবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়, তারপর হয় মূল পরীক্ষা এবং সব শেষে হয় ইন্টারভিউ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয় দু’শো নম্বরের।
প্রত্যেকটি প্রশ্নের জন্য থাকে ৪টি করে উত্তর। হিসেব করে দেখলে বোঝা যায় প্রত্যেকটি প্রশ্নের জন্য গড়ে পঁয়তাল্লিশ সেকেন্ড করে সময় পাওয়া যায়। পাশাপাশি খেয়াল রাখা দরকার, ভুল উত্তরের জন্য প্রতি তিনটি প্রশ্নের ক্ষেত্রে এক নম্বর করে কাটা যাবে। সেই কারণেই একেবারে নিশ্চিত না হয়ে কোনও প্রশ্নের উত্তর না দেওয়াই ভালো। বেশ কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে এই পরীক্ষার জন্য।
ইতিহাস, ভূগোল, সংবিধান, ইংরাজি, অর্থনীতি ও বিজ্ঞানের ওপর ভালো দখল রেখেই পরীক্ষা দিতে যেতে হবে। তাই পরীক্ষার আগে বিশেষ মনোযোগী হয়ে সব বিষয়গুলির ওপর দখল আনা দরকার। একটিমাত্র বিষয় নয়, সমস্ত বিষয়কেই আলাদা আলাদা ভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যদিকে ভাষা অনেকের ক্ষেত্রেই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তাই বাংলা মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীদেরও উচিত ইংরাজি ভাষার যথেষ্ট চর্চা রাখার।
তাতে পরীক্ষা সহজ হয় এবং পরবর্তীকালে কর্মক্ষেত্রেও সুবিধা হয়। বিসিএস-এর শিক্ষক বাতেন সরকারের মতে, প্রিলিমিনারিতে ১২০ নম্বর পেলেই মূল পরীক্ষায় সুযোগ পাওয়া যায়৷ বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীই ৯০-১০০ নম্বরের মধ্যে আটকে পড়েন। তাই হিসেব করে প্রস্তুতি নিলে এই নম্বরকে সহজেই অতিক্রম করা যায়৷ সব মিলিয়ে বলা যায়, সময় পরিকল্পনা, সিলেবাস পরিকল্পনা করে পড়াশোনা করাই সাফল্য পাওয়ার একমাত্র উপায়।
অনেকেই এই পরীক্ষা সফল হওয়ার জন্য বছরের পর বছর প্রচেষ্টা চালিয়ে যান৷ তাঁদের জন্য কয়েকটি সাজেশন-
মাথায় রাখুন
● সাধারণ মানের ছাত্রদের কম করে ৩ বছর নিয়মিত পড়াশোনা করা প্রয়োজন। কেননা সঠিক পরিমাণে পড়াশোনা না করলে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না।
● কোনও একটি বিশেষ বিষয়কে গুরত্ব না দিলেই ভালো। কেননা এই পরীক্ষার জন্য সমস্ত বিষয়কে সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। না হলে কোনও একটি অংশ দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
● কেবলমাত্র একবার পরীক্ষা দিয়ে ব্যর্থ হলে দমে যাওয়া উচিৎ নয়। এই পরীক্ষার জন্য অনেকদিন সময় পাওয়া যায়।
তাই একবার পরীক্ষা দিয়ে থেমে না গিয়ে, বার কয়েক পরীক্ষা দেওয়াই যেতে পারে।
● পরীক্ষা দিয়ে সাফল্য পাওয়ার জন্য প্রবল মনোযোগ দরকার। বিসিএস পরীক্ষার পূর্ববর্তী সময়ে পড়াশোনা কেবল এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করেই হওয়া উচিত। অন্য কোনও পরীক্ষায় এই সময় মনযোগ না দেওয়াই ভালো।
● পরীক্ষার সিলেবাসটি পুরোটা পড়া উচিত।
সাজেশান ভিত্তিক পড়া নয়। আগে গোটা সিলেবাসটি ভালো করে জেনে নিতে হবে। তারপর মূল অংশগুলো ভালো করে পড়তে হবে। প্রথমেই বাদ দিয়ে পড়ার অভ্যাস একেবারেই কাজের কথা নয়।
● আলাদা করে কোচিং খুবই প্রয়োজনীয়।
ব্যক্তিগত স্তরে হোক বা প্রাইভেট কোচিং সেন্টারে, আলাদা করে পড়াশোনা করলে উপকার হতেই পারে। কেননা নির্দিষ্ট পথে পড়াশোনা না করলে, এত বড় সিলেবাস সব সময় সামলানো যায় না।
বাতেন সরকার প্রায় বেশ কিছুদিন বিসিএস-এর প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছেন৷ তাঁর মতে , প্রথমত বিসিএস-এর ক্ষেত্রে স্ট্র্যাটেজিক পড়াশোনা বিপুল মাত্রায় প্রয়োজন। কেননা বিপুল সিলেবাসে নিয়মমাফিক পড়াশোনা না করলে অল্প সময়ে একে সামলানো মুশকিল। পরীক্ষা সম্পর্কে পরীক্ষার্থীর স্বচ্ছ ধারণা থাকা একান্ত দরকারি।
ঠিক কত বয়স থেকে কত বয়স পর্যন্ত পরীক্ষা দেওয়া যায়, তাও মাথায় রাখা দরকার। অনেক সময়েই দেখা যায়, সঠিক সময়ে সঠিকভাবে পরীক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিয়ে উঠতে পারেন না, ফলে ব্যর্থতায় হতাশা বাড়ে। তাই নিয়মমাফিক পড়ুন, হিসেব করে পড়ুন। বিসিএস পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে গুটিকতক টিপস দিলেন শিক্ষক বাতেন সরকার।
কেমন করে সাফল্য
● সব সময় আশা করবেন না, প্রিলিমিনারিতে প্রতিটি বিষয় থেকে আলাদা আলাদা করে ২৫ নম্বরের প্রশ্ন আসবে।
কিন্তু সেই ২৫ নম্বরের ভাগটা যে কোনও বছর পাল্টে যাবে না, তা-ও জোর গলায় বলা যায় না। কোনও একটি বিষয়ে ২৮ আর অন্য একটি বিষয়ে ২২ নম্বরের প্রশ্ন হয়েই যেতে পারে। তাই অন্যরকম নম্বর -বিভাগের জন্য প্রস্তুত থাকুন। প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে যাতে সমস্যায় না পড়ে যেতে হয়।
● চার -পাঁচ মাস পড়েই পরীক্ষায় বাজিমাত করে দেবেন ভাবলে, ভুল ভাবছেন৷ গোটা সিলেবাসটা পুরোপুরি গুছিয়ে নিতে সময় লাগবে ন্যূনতম ১৫ মাস।
তাই অপেক্ষা করুন, ধৈর্য হারাবেন না।
● নতুন সিলেবাসের মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী হলে পুরনো সিলেবাসের বই জোগাড় করে পড়ুন। কেননা নতুন সিলেবাসে পড়াশোনা অনেক সীমিত। আর বিসিএস-এ সফল হতে গেলে বিস্তৃত পড়াশোনা দরকার।
● রোজকার খবর রাখুন।
সংবাদপত্র ভীষণ মন দিয়ে পড়ুন। সাধারণ জ্ঞানের বইয়ের ওপর ভরসা না রেখে নিজেই সাম্প্রতিক ঘটনার ডেটাবেস তৈরি করুন।
● সব বিষয় গভীরভাবে পড়ুন। কেবলমাত্র সাজেশনের উপর ভরসা করবেন না। কেননা শেষ কয়েক বছরের ইতিহাস বলছে কেবল মাত্র সাজেশন-ভিত্তিক পড়াশোনা সমস্যায় ফেলে দিতে পারে পরীক্ষার্থীদের।
● প্রশ্নপত্র তৈরি করে অনুশীলন করা ভীষণভাবে দরকার। তাই পরীক্ষার আগে কোচিং নিতে হবে। তবে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কোচিং নেওয়ার বদলে ব্যক্তিগত স্তরে কোচিং নেওয়া বেশি উপকারি।
বিসিএস-এর ক্ষেত্রে স্ট্র্যাটেজিক পড়াশোনা বিপুল মাত্রায় প্রয়োজন। কেননা বিপুল সিলেবাসে নিয়মমাফিক পড়াশোনা না করলে অল্প সময়ে একে সামলানো মুশকিল।
পরীক্ষা সম্পর্কে পরীক্ষার্থীর স্বচ্ছ ধারণা থাকা একান্ত দরকারি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।