দুর্নীতি ও ঋণ কেলেঙ্কারিতে মুমূর্ষু রাষ্ট্র মালিকানাধীন চার বাণিজ্যিক ব্যাংককে বাঁচাতে এবার বিশ্বব্যাংকের দ্বারস্থ হতে যাচ্ছে সরকার। এর ফলে দাতা সংস্থার বিভিন্ন শর্তের জালে পড়ে ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এরই মধ্যে দাতা সংস্থাটি একটি প্রেসক্রিপশন দিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি বেড়ে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ফলে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ লেনদেনের ক্ষেত্রে এগুলো উচ্চপর্যায়ের ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যাংকগুলোর এলসি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর এ ভয়াবহ অবস্থা এড়াতে বিশ্বব্যাংককেই ডাক্তার মানছে সরকার। এ ক্ষেত্রে দুই ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আপাতত দাতা সংস্থাটির সহায়তা নিয়ে মূলধন বাড়ানো, যাতে ব্যাংকগুলো বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। আর দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা হচ্ছে, বিভিন্ন পর্যায়ে সংস্কারের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সারসংক্ষেপটি অনুমোদনের জন্য ৫ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম। মন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই ব্যাংকগুলোর জন্য সহায়তা চেয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকে প্রস্তাব পাঠানো হবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশন : রাষ্ট্র মালিকানাধীন চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দাতা সংস্থাটি নতুন করে মূলধন জোগানোর পরামর্শ দিয়েছে। পুনর্মূলধনীকরণের সঙ্গে সঙ্গে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও ঋণদান কাঠামোর পরিবর্তন করে পরিচালন দক্ষতা বাড়ানো দরকার বলেও মনে করছে সংস্থাটি।
ব্যাংকগুলোর আর্থিক কাঠামো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যৌথ আলোচনার ভিত্তিতে সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ ও নির্ধারিত সময়ে তা বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে বিশ্বব্যাংক। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক শক্তিশালী করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাও বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যা বলেছে : অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের সহায়তা প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি দুই দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফলে ব্যাংকগুলো আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। পাশাপাশি এই 'ইনসলভেন্সি'র কারণে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে আত্দবিশ্বাসের সংকট সৃষ্টি হতে পারে।
এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোয় মূলধন বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যায়ে সংস্কারের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা দরকার। সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবে কিছু সংস্কারমূলক সুপারিশ রয়েছে, যা ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত সংস্থাটির বার্ষিক সভায় বিস্তারিত আলোচনা করে প্রণীত। ব্যাংক শক্তিশালী করা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, রেগুলেশন ও সুপারিভশন শক্তিশালী করা এবং আইনের প্রয়োগ- এ চারটি বিষয়ে প্রাধান্য দিয়ে সংস্কার কার্যক্রমের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। পরে বিস্তারিত আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে ব্যাংকগুলোর বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মূলধন ঘাটতি পূরণ ও অটোমেশন কার্যক্রমের গুরুত্ব বিবেচনা করে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা নেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সম্মতি দেওয়া যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন থেকে ব্যাংকগুলো বিশ্বব্যাংকের সহায়তা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হবে তখন থেকেই এর কার্যক্রমের জন্য সংস্থাটির কাছে জবাবদিহি করতে হবে। অর্থাৎ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের নিয়োগ, ঋণের লক্ষ্যমাত্রাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। চলতে হবে সংস্থার শর্ত মেনে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, 'এটি ঠিক যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা নিলে তাদের শর্ত মেনেই ব্যাংকগুলোকে চলতে হবে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিয়োগেও নিতে হবে অনুমোদন।
এতে আর্থিক খাতের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হলেও অন্তত ব্যাংকগুলোকে বাঁচানো যাবে। ' তিনি অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, 'সরকারি ব্যাংকগুলোয় পরিচালক, চেয়ারম্যান ও এমডি নিয়োগে এত বেশি রাজনৈতিকীকরণ হয়েছে, যারা ব্যাংকগুলোকে শেষ করে দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী সচেতন হলে এ পরিস্থিতি এড়ানো যেত। '
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।