আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একদিন বিকেলে



বিকেল হলেই আমার ভেতরটা যেন কেমন করে ওঠে! এই চৈত্রের বিকেলে। জীবনানন্দ কতটা কবি আর কতটা দার্শনিক তা আমি জানি না, তবে তার রসায়নবিদ হওয়া উচিৎ ছিল। উচিৎ ছিল এজন্য বলছি যে আমি চাইলেও তাকে একদাগে দার্শনিক বলতে পারি না, কিন্তু মোটামুটি সমালোচকদের মুখরোচক আলোচনায় তাঁর দার্শনিক ভাবমূর্তি অনেকটাই ফুটে ওঠে ; রসায়নবিদ হিসেবে কখনও উঠেছে শুনিনি। তিনি কি জন্ডিসের রোগী ছিলেন? আমার মায়ের আবেগী দোষারোপ ছিল একসময়। কারণ তিনি সবকিছুতেই গন্ধ পেতেন।

ধানের গন্ধ, মাটির গন্ধ, রোদের গন্ধ, নরম জলের গন্ধ, সবুজের গন্ধ ইত্যাদি। আর আজ আমি তাকে রসায়নবিদ বলতে চাই এ কারণে যে তিনি যে রোদের গন্ধ আবিষ্কার করেছিলেন এটা আমি আজ নিখুঁতভাবে উপলব্ধি করছি। কবিদের একদল লোক বলে পাগল, ভাবের পাগল। আসলে নির্জ্ঞানব্যক্তিই এমন বলে থাকেন। আসলে তাদের কল্পনা শক্তি, অনুধাবন-পারসেপশন, অনুভবের ক্ষমতা ।

ন্যদের চে অনেক প্রবল এবং ভিন্ন হয় তাই তারা খালিচোখে দেখা সাধারণ বস্তুর ভিতর আবিষকার করেন নানান তত্ত্বগত উপাদান। রোদেরগন্ধ জীবনানন্দ দাশের কবিতায় পড়ে আমি ভেবেছিলাম আসলে এগুলো কবিদের বাড়াবাড়ি, যা মনে আসে তাই বলে ফেলে, দুচারজন ভক্ত বাহবা দেয় তাতেই তারা মনে করে অনেক জ্ঞানী হয়ে গেছেন! কিন্তু এখন উপলব্ধি করি সত্যিই রোদেরও গন্ধ আছে। বিশেষকরে চৈত্রের রোদের। চৈত্রের দুপুরের রোদের গন্ধ মনে করিয়ে দেয় সেই শৈশবে ক্যানেলে গোসলকরে ফেরার কথা। কেন মনে পড়ে? সেই একই ঘটনাতো আজ ঘটেনা! তাহলে? আজতো যান্ত্রিক শহরে কোনও রকম দুইমগ পানি ঢেলে ... আমাকে সাঁতার শিখিয়েছিল কুড়িগ্রামের ময়না আপা।

তার স্কাট ফুলিয়ে সে সামনে এগুতো আর আমি সেই ঢোলটা ধরে পা দাপাতাম। আজ সেই স্মৃতিটি রোদের এক ঝামটায় মনে পড়ে যায়। বিকেলে বাইরে বেরুলে বা ছাদে গেলে হুবহু সেই বহুবছর আগের দৃশ্যগুলো মনে ভেসে ওঠে। সেই রোদের অনুভব এখনও কেমনকরে লেগে আছে? আরসব স্মৃতিগুলো বাইরে ঠেলে কেন এটাই বেশি মনে পড়ে? এটাইকি রোদের গন্ধ? এক বিকেলে আমি সোমা, সুমি এবং শিরী আপু গিয়েছিলাম পাশের কলোনীতে বেড়াতে। সাথী-মুক্তিদের বাসায়।

উদ্দেশ্য হলো মুক্তির আম্মু আন্টি বড়ইর আচার বানিয়েছে তাই খেতে হবে। দুপুরটা কেমন একা একা লাগত, চৈত্রের দুপুরটা বোধয় সবচে বড় হয়. গরমে কেমন যে লাগত! গোসল মনে হয় ১০০বার করতে পারলে ভালো লাগত। ক্যানেলের পাড় দিয়ে হাঁটার সময় ইচ্ছে হত লাফ দেই পানিতে। আর বিকেল হলে যেন একটু না বেড়ালেই নয়। ওই কলোনীতে ছিল শিরী আপুর পছন্দের মানুষ মিলনভাই।

তিনবার ডিগ্রি পরীক্ষা দিয়েও যিনি কৃতকার্য হতে পারেননি। তবু বেচারাকে কেউ নকল করাতে পারেনি। তখন নকলের প্রচলন ছিল খুব। সেই মিলন ভাইর সঙ্গে দুয়েকটি খুনসুটি তারপর আইসক্রিম আদায় করা এই ছিল মেন্যু। অবশ্য আমরা পেয়েছিলাম আটআনা দামের আইসক্রিম আর শিরী আপুর জন্য ছিল সবচে দামী ২টাকার আইসক্রিম।

ওটা ছিল আইসক্রিম আর আমরা যেটা খেতাম সেটার নাম ছিল মালাই। জিনিসতো প্রায় একই! তো মিলনভাই আমাদের আড়ালকরে আপুর সঙ্গে চাইলেন একটু আলাপ করতে। মাথা চুলকাচ্ছিলেন, কিন্তু আমরাতো ছাড়ছি না। শেষে শুক্রবার আমাদের হার্ডিঞ্জব্রিজ দেখাতে নিয়ে যাবেন এই শর্তে ছাড়া হলো । এদিকে মিলনভাইর ছোটভাই বাবু এসে এক কাণ্ড করে বসলো... শিরী আপুর কাধে চড়তে গিয়ে তাকে ফেলে দিলো বটির উপর, আন্টি কেবলই সেটা রেখেছেন কিছু করবেন।

যা হবার হলো । পা কেটে সেকি রক্ত! আমি ভয়ে প্রায় কেঁদে ফেলছিলাম.. অন্যরাও। সুমিতো কান্নাই জুড়ে দিল হারামিটা আমার আপুকে মেইরে ফেললো ওও... সুমি শিরী আপুর সহোদর। একসপ্তাহ পর্যন্ত আপু আর ঠিকমত হাঁটতে পারলেন না। সুস্থ হলেন ঠিকই, কিন্তু আমাদের আর একসঙ্গে হার্ডিঞ্জব্রিজ দেখতে যাওয়া হলো না।

সেইদিনের তারিখটা মনে নেই তবে আজকের বিকেলের রোদের গন্ধের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়, আর সেজন্যই এভাবে মনে পড়ে সেই বিকেলটাকে। ..

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.