আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সত্যিকারের স্বাধীন হবো



প্রচন্ড একটা হৈ চৈ শুনে আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো। বাসের সামনের দিকে থাকায় ঘটনাটা বুঝতে বেশি দেরি লাগলো না। মাথাটা ঘুরিয়ে গেটের দিকে তাকালাম। চলন্ত বাস। কন্টাকটার ছেলেটার সাথে কিছুটা বাক-বিতন্ডা চলছে প্যাসেঞ্জার আরেক ছেলের।

কন্টাকটারের সাথে তুলনা করলে অপর ছেলেটা বয়সে একটু বড়ই হবে। হাত উচিয়ে চড় লাগানোর ভঙ্গি করলো কয়েকবারই। ভাবখানা এমন যেন কন্টাকটার ছেলেটা কোন অমার্জনীয় অপরাধ করে ফেলেছে। যার ফলে গোবেচারার মত গালি গালাজ হজম করছে। কিন্তু আসল ঘটনা উল্টো।

আপনারা নিশ্চই জানেন ঢাকা শহরে বেশ কিছু বাস আছে যেগুলোতে টিকেট কেটে উঠতে হয়। এবং স্টপেজ ছাড়া যেখানে সেখানে দাঁড়ায় না। তেমনই একটা বাসের কথা বলছি। ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকা আমাদের বাসে হুট করে উঠে পড়লো চ্যাংড়া টাইপের দুটো ছেলে। গলায়, কানে, হাতে অলংকারের (!) কমতি নেই।

বাসে উঠতে গিয়ে কন্টাকটারের বাধার সম্মুখীন হয়েছে বলে ওরা চড়াও হয়েছে। শেষমেষ জোর করে ওঠার চেষ্টা করলে ড্রাইভারের অনুমতিতে কন্টাকটার উঠতে দিলো। ঘটনার সূত্রপাত এখান থেকেই। বাসে উঠেও ড্রইভারকে চোখ রাঙ্গানো, আর কন্টাকটারকে যাচ্ছেতাই বলে গালাগালি...। অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে বাসে সীট পেয়ে যেন সোনার হরিণ পেয়েছি।

আরাম করে বসে বিভিন্ন ভাবনায় ডুবে ছিলাম। কিন্তু ছেলেগুলো আর আরাম করতে দিলো না। আকষ্মিক এই ঘটনা সবার মনোযোগকেই বিচ্ছিন্ন করে দিলো। ঘটনাটা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু ওরা হতে দিলো না.... "ওই মামু! কলেজের গেটে থামাইবা কইলাম...." ওদের নির্দেশে কলেজের ঠিক সামনেই বাস থামালো ড্রইভার।

পরের ঘটনায় অবাক হয়ে গেলাম! কন্টাকটারকে শার্টের কলার ধরে টেনে নামালো ওরা। আবার কি হলো!! নিজেদের কলেজের সামনে এসে গায়ের জোর বেড়ে গেলো বুঝি! রাস্তায় নামিয়েই সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিলো ওর মুখের উপর। সংগে সংগে নাক ফেটে রক্ত বের হতে লাগলো। তার সাথে আরও কিছু বন্ধু-বান্ধব এসে যোগ হলো। টানতে টানতে গেটের ভেতরে নিয়ে গেলো ছোট ছেলেটাকে।

বিশাল এক পাথর খন্ড হাতে নিয়ে তেড়ে এলো ওর মাথায় মারবে বলে। ভয়ে আমার নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। হায় হায়! ছেলেটাকে মেরেই ফেলবে নাকি! ড্রাইভার লাফিয়ে নেমে ওদেরকে অনেক আকুতি ভরে সামলানোর চেষ্টা করলো। আর কন্টাকটার ছেলেটা ওদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে প্রাণ ভয়ে গাড়ীর ভেতর দৌড়ে এলো। তখনও ওর নাক থেকে রক্ত ঝরছে।

বাস ভরা লোক, কেউ কিছুই বললো না। উত্তেজনায় কেউ কেউ বসা থেকে দাড়িয়ে পড়লো। এতটুকুই। ছেলেগুলো ড্রাইভারকে শাসিয়ে দিলো, আর যেন এমন না হয়। ড্রাইভার ফিরে এসে কন্টাকটারকে কড়া কন্ঠে বললো, "জানিস না ওরা কেমন! বাধা দিলি কেন?" বাসের গন্যমান্য ব্যক্তিদেরও একই কথা।

আর আমি এক নিরব দর্শক, ঘটনাটা নিরবে প্রত্যক্ষই করলাম শুধু। কন্টাকটার ছেলেটার জন্য খু্ব মায়া হলো। চুপচাপ সে তার দায়িত্ব পালন করছে। পরবর্তী স্টপেজগুলোতে নামার সময় সব যাত্রীই ওর দিকে করুনার দৃষ্টিতে একবার তাকায়। আর আমি বসে ভাবি এই ছেলেটা কী অন্যায় করেছিলো? সে তো তার মালিকের নিয়ম মেনেই কাজ করছিলো।

অথচ দোষ-গুন যাই হোক, ওরাই সব সময় মার খায়। তার চেয়েও বড় ব্যাপার হলো, তথাকথিত কিছু ছাত্রের হাতে বাস ভর্তি সব মানুষেরা কতই না অসহায়। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এমনই এক বাধনহারা শক্তি, যে শক্তি কারো পরোয়া করে না। ঠিক-বেঠিক চিন্তা করে না। নিজেদের ছাড়া অন্যদের মনে করে হাতের পুতুল।

যার উদাহরণ আমরা দ্খেতে পাই কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুটিকয়েক ছাত্রের সারা দেশকে অস্থির করে তোলার মাধ্যমে। অথচ আর কয়েক বছর পর এরাই আর ছাত্র থাকবে না, হয়ে যাবে দেশের সাধারণ মানুষ। তখন এরাই আবার পরবর্তী ছাত্রদের কাছে জিম্মী হয়ে যাবে। হবেই তো! কেননা এ পথ তাদেরই দেখিয়ে যাওয়া। ভাবতেই গা শিউরে ওঠে।

কিন্তু কেন? এই ছাত্ররাই কি একাত্তরে দেশ স্বাধীনের আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে নি? বাংলার মানচিত্রকে পৃথিবীর বুকে স্থান করে নেয়ার পেছনে এই তরুণদেরই ভূমিকা ছিলো সবচে বেশি। আর আজ আমরা স্বাধীন হয়েও তাদের হাতে যখন তখন জিম্মী হয়ে যাই। সেদিন ড্রাইভারকে সবাই বলেছিলো, গাড়ীটা কলেজের সামনে না থামালেই তো ছেলেটার মার খেতে হতো না। জবাবে ড্রইভার বলেছিলো, ওরা পরে যখন বাস ভংচুর করবে, তখন কোম্পানি এত বিশাল ক্ষতি কিভাবে পূরণ করবে? কন্টাকটার ছেলটার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছে, অরে তো হোমিওপ্যাথী নইলে এ্যালোপ্যাথীর একটা ট্যবলেট খাওয়াই দিলেই সুস্থ হয়ে যাবে। আর বাস ভাইঙ্গা ফালাইলে তা কি দিয়ে ঠিক করবো?? তখন আমার মনে একটাই প্রশ্ন জেগেছিলো, যারা অল্পতেই উত্তেজিত হয়ে, কান্ডজ্ঞান হারিয়ে মানুষের ক্ষতি করে, তাদের জন্য কোন ট্যাবলেট টা কার্যকর হবে........???



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।