কত অজানারে!
এমনিতে মাছ টাছ তেমন খাইনা। কঁটা বাছতে গেলে মনে হয় দু হাতে কুলাচ্ছেনা। আরো দুই তিনটা হাত, ম্যাগনিফাইং গ্লাস, চিম্টা, চামচ এইসব থাকলে ভাল হত। কিন্তু ‘মাছে ভাতে’র বাঙালী হয়ে যখন জন্মেছি মাছতো খেতেই হবে। ছোট মাছ সব আগেই বাদ।
মাঝারি সাইজের মাছ খাবার সময় মা পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। বেছে বেছে পাতে দিয়ে দেয়। আগে খাইয়েও দিত। এখন সে সুবিধাটা হাত ছাড়া হয়ে গেছে, ছোট বোনদের কল্যানে। তার উপর এই লেখার বাকি অংশ পড়লেই বুঝতে পারবেন যে আমি কত বড় হয়ে গেছি!! এখন কি আর মায়ের হাতে খাওয়া যায়? তাই বেছে দেওয়া পর্যন্ততেই সন্তুষ্টি খুঁজি।
তবে মাছ বেশি বড় হলে সাহসে ভর করে অপারেশনের দায়িত্ব নিজ হাতেই নিয়ে নিই।
সেরকম এক অপারেশন চলছে। ইয়া বড় এক বোয়াল মাছের বড় সড় এক পিস আমার পাতে। এই মাছে তেমন কাঁটা নেই। তাও যা আছে তা সব একেকটা চশমার ডাটির মত মোটা! তাই অপারেশন চলছে একেবারে স্মুথলি।
এই সুযোগে মা একটু রেস্ট নিচ্ছে। সমস্যা করেছে কাজের বুয়া। সে বড় বোয়াল মাছ ধরার টেকনিক শেখাচ্ছে আমার বোনদের। এই মাছ নাকি ধরে ইয়া বড় বড় বড়শি দিয়ে! খুবই সিম্পল টেকনিক। মেগা সাইজ বড়শিতে ইঁদুর বা ছুঁচো মেরে গেথে, গাঙ্গে ফেলে রাখ রাতে।
সকালে এসে বোয়াল মাছ তুলে নাও। যত বড় ইঁদুর তত বড় বোয়াল!!! আমার বোনরা বোয়াল মাছের মত বড় হা করে সেই রোমহর্সক গল্প শুনছে। তারা বোয়াল মাছ খায় না। এদিকে গল্প শুনে আমার পেটের মধ্যে বোয়ালের যতটুকু ঢুকেছিল সেটুকু মনে হয় জীবন্ত হয়ে গেছে! এখন লাফ দিয়ে আমার পাতের উপর পড়তে চাচ্ছে।
আমি পাতেরটা সামলাবো নাকি পেটেরটা সামলাবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা।
এর মধ্যে মাথায় ক্যালকুলেশন চলছে আমার পাতের বোয়ালের জন্য কত বড় ইদুর লেগেছে তার। ফলাফল হতাশা ব্যাঞ্জক। কাটা কুটার আগে এই মাছ আমি দেখেছি। কম করেও বিড়াল সাইজের একটা ইদুর দরকার! এর মধ্যেই পেটের বোয়ালটুকু দিল এক লাফ! সেটা সামলাতে গিয়ে মুখের বোয়াল আমার গলায় কি যেন বিধিয়ে দিল। বোয়াল মারা বড়শিই বুঝি!
গলায় মোটাসোটা এক কাঁটা নিয়ে আমি খাবি খেতে লাগলাম।
আঙ্গুল দিয়ে খোচা খুচি করে কোন লাভ হচ্ছে না। মাঝখান দিয়ে আরো কেটে ছড়ে যাচ্ছে। এই কাঁটা এমনিতে যাবেনা। বক লাগবে। ঈশ্পের গল্পের সেই বক! সেই যে, বাঘের মুখ থেকে যে কাঁটা বের করেছিল, তাকে।
আর আমিই বা ‘বাঘ’ কম কিসে? যাই হোক এই সময়ই ঘটল আসল ঘটনা। একটু বিব্রতকর বিষয়। তাই এতক্ষন বোয়াল মাছের বর্ণনা দিয়ে মূল কাহিনী বিলম্বিত করলাম। আমার ছোট বোন জিজ্ঞেস করে, “ভাইয়া তোমার মনোভাব কি?”!!! আরে ছুড়ি! বুঝিস না? আমার তখন কাঁটার ঘায়ে কুত্তা পাগল অবস্থা। এর মধ্যে আবার মনভাব!! মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না তাই হাত পা ছুড়ে কোন রকমে মনের ভাবটা প্রকাশ করে দেই।
আমার আরেক বোন বুঝতে পারে মিসকম্যুনিকেশন হচ্ছে। তাই সে পুরো কাহিনী বর্ণনা করে। আমার বাবার চুল তেমন পাকেনি এখনো। কিন্তু হুঠ করে এই গত সপ্তাহে সে খেয়াল করে তার কলির দিকে কিছু চুল পাকা!! পাকা চুল দর্শন করে কোথায় একটু নামাজ কালামে আরো মনযোগী হবে, মক্কা, আজমীর দর্শনের সখ হবে, তা না। তার হয়েছে ‘নাতি মুখ’ দর্শনের সখ!! আমাকে তো আর কিছু বলতে পারে না।
তাই মা কে জিজ্ঞেস করেছে, “তোমার গুনধর পুত্রের মনোভাব কি?” মাও সন্তসজনক উত্তর খুঁজে না পেয়ে আমার বোনদের জিজ্ঞেস করেছে, “ওই তোদের ভাই এর মনোভাব কি?” কিন্তু এই প্রশ্ন সরাসরি আমাকে করায় বিপদ আছে! আমার বক্তৃতা দেওয়ার স্বভাব। এই প্রশ্ন আমার অন মুডে করে ফেললে যৌবনের (এবং ব্যাচেলর হুডের) এক নং ধজ্জা ধারী হিসেবে, কেন আমাদের পারিবারিক বন্ধনে না জড়িয়ে দেশ গড়ার কাজে নিজেকে শতভাগ বিলিয়ে দিতে হবে। তার এক বিশাল দার্শনিক ব্যখা ও বর্ণনা শুনে ফেলার শতভাগ সম্ভবনা রয়েছে। তাই বোয়াল মাছ আমার গলা চিপে ধরেছে দেখে এই মোক্ষম সময়েই তারা এই প্রসঙ্গ তুলেছে।
আন্ডার গ্রাড শেষ করেছি কেবল তিন মাস।
সফটয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছি এক নাম না জানা ফার্মে। এখনো ছাত্র গন্ধ কাটেনি গাঁ থেকে। তাই বলে বিয়ের বয়স হয়ে গেছে নাকি? আপনিই ভেবে দেখেন। তার উপর নাতি পুতি উৎপাদনই নাকি এখানে মূল উদ্দেশ্য!!!ইয়াক্, ডিসঘাস্টিং!! ভাবলেই গায়ে কাটা দেয়। আরে, তাইলে পি,এইচ,ডি’টা করবে কে? দেশটা গড়বে কে? আরো কত হাজার কাজ আছে পড়ে।
তবে বাবা মাকে তো আর এইভাবে হতাশ করা যায় না। তাই বলি, “দেখাও, পাত্রী দেখাও”। বিয়ে করতে আপত্তি থাকতে পারে তাই বলে পাত্রী দেখতে তো আর আপত্তি নেই। এর মধ্যে হুমায়ুন আহমেদের ‘মধ্যাহ্ন ২’ পড়ে পাত্রী পরীক্ষার নতুন এক টেকনিক শিখেছি। ‘সুতা পরীক্ষা’ ! একটা সুতা পাত্রীর পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে দিয়ে দেখতে হবে পায়ের আঙ্গুল জোড়া লাগানো কিনা! চাইলে পাত্রীও আমার উপর সুতা পরীক্ষা করুক! আহা, একজন আরেকজনের পায়ের আঙ্গুলে সুতা দিয়ে টানাটানি করছে।
দৃশ্যটা রোমান্টিক না হলেও কিচুটা ইরোটিক টাচ আছে মনে হয়।
আর যারা আমার এই পাত্রী দেখার ইচ্ছাটাকে ‘মধ্যযুগীয় বর্বরতা’ ভাবছেন তাদের জন্য বলে রাখি। না হয় সিদ্ধ মাছটা বেছে খেতে পারিনা, তাই বলে ‘ব্লাইন্ড ডেট’ শব্দটা শুনিনি এমন ভাবা অন্যায়। আজকালকার মেয়েরা এবং ছেলেরা অহরহই এরকম কাজ করছে। আমার অনেক বন্ধুকেই দেখেছি কত! এ ওর কাছ থেকে তার নাম্বার নেয়, সেও ওর কাছ থেকে এর নাম্বার নেয়।
এর পর দুয়েকটা কথা বার্তা(খাজুরে আলাপ)। এর পরেই ‘পিজ্জা হাটে’ দেখা করা(ব্লাইন্ডডেট)!! একে অপরের আকার আকৃতি পছন্দ হলে তো হয়েই গেল। নাইলে কি আর করা! লস যা, সেতো শুধু ছেলেটার। বড় সড় একটা পিজা (পিট্সা) কোন ‘হস্তিনী’র সাথে সেয়ার করা। ‘পদ্মিনী’ বা ‘শঙ্খিনী’ হলে তো পোয়া বারো।
এই ব্যপারটা গুরুজনদের পাত্রী দেখার চেয়ে ঢের বেশি খারাপ। রীতিমত অশ্লীল!
আর বিয়েই যখন কেউ করবে একটু দেখে শুনে করবে না?!! স্থুল উদাহরণে বলি। যেখানে বাজার থেকে বোয়াল মাছ কিনতে গেলেও খেয়াল করতে হয় গালের মধ্যে ছুঁচো কিংবা ইঁদুর বিধে আছে কিনা! সেখানে এটা তো জীবনের ব্যপার! আর যদি বলেন এসব ভাগ্য! তাহলেতো কষ্ট আরো কমে গেল। এই আমিই দুদিন চেষ্টা করলেই এমন একটা প্রোগ্রাম লিখে ফেলতে পারবো যে ভোটার আইডি লিস্ট থেকে র্যান্ডোম দুই জন বিবাহ যোগ্য পাত্র পাত্রী সিলেক্ট করে তাদের বিবাহও রেজিস্ট্রি করে ফেলবে। খলি পাত্র পাত্রী তাতে সাইন করে আর হুজুর ডেকে কলেমা পড়িয়ে কবুল বলা বাকি!! কোন পাজী কাজির কারবার নেই! যেসব ভাই/বোন রা পাত্র/পাত্রী পাচ্ছেন না।
তাদের জন্য অবশ্য এই সমাধানটা লুফে নেবার মতই।
বুঝতেই পারছেন। কাঁটা বিধেছে গলায়, হাতে তো আর ফুটেনি! তাতেই এই আব্জাবের মধ্যে বক্তৃতা বিবৃতি সব দিয়ে দিলাম। আমার বোনরা কি আর সাধেই ‘মোক্ষম সময়’ ছাড়া আমার সাথে আলোচনায় যায় না!
বিদায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।