আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিনতি লতা ( পর্ব - ০২)


(মিনতি লতা পর্ব - ০১, আপলোড ০৬/০৯/২০১৩) ---------------------------------------------------------------- পর্ব - ০২ লতার ছবির দিকে তাকিয়ে রয়েছেন ওসি মোস্তফা কামাল। চোখের মনি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তিনি পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছেন। যদিও তিনি স্রেফ ছবি দেখছেন। কিন্তু এতে বেশ বিব্রতবোধ করছি আমি। কেননা কেউ যদি স্বামীর সামনে তার স্ত্রীর দিকে গভির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, তাতে বিব্রত হওয়ারই কথা।

হোক না সেটা ছবি। তবুও বউতো। ওই ছবিতে লতাকে খুব সুন্দর দেখা যাচ্ছে। হাস্যজ্বল মায়াবী একটা ভাব ফুটে উঠেছে সেখানে। যেকোন মানুষেরই ইচ্ছে করবে বারবার দেখতে।

আসলে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় হাতের কাছে যে ছবি পেয়েছি, সেটি নিয়ে চলে এসেছি থানায়। এখন মনে হচ্ছে অন্য কোন ছবি আনলে ভাল হতো। কেননা আটাসাটা জামায় লতার শরিরের গঠন বেশ ভাল মত বোঝা যাচ্ছে । হয়তো এ কারণেই অনেকক্ষুণ ধরে ছবিতে আটকে গেছে ওসির চোখ। আমি তার টেবিলের সামনের চেয়ারে চুপচাপ বসে আছি।

পাশের চেয়ারে বসে আছেন এ্স আই সনিয়া। থানায় এসে প্রথমে তার সাথে আমার সাক্ষাত হয়। তার কাছেই দিয়েছিলাম অভিযোগপত্র। ওসি সাহেব এবার আমার দিকে খুব গম্ভির ভাবে তাকালেন। তারপর জানতে চাইলেন, আমার নাম দু:খবন্ধু মিত্র কিনা।

বললাম, জ্বি। স্ত্রীর নাম মিনতি লতা বর্মন। জ্বি। সাং নাউতাড়া, ডিমলা। জ্বি।

এই মিয়া এত জ্বি জ্বি করেন কেন। বউ কি এমনি পালাইছে। মিয়া, এত সুন্দর বউ সামলে রাখতে পারেন না। ওসি সাহেবের এমন মেজাজে থতমত খেয়ে গেলাম। এ কেমন ব্যবহার।

তার রুমে ঢোকার সময়তো দেখলাম, বয়স্ক এক লোককে গালমন্দ করছেন। তিব্র ভাষায় তাকে বকাঝকা করে তাড়িয়ে দিলেন। সেই মেজাজে তিনি আমার সাথেও কথা বলা শুরু করলেন। ওসির কথার তালেতালে মাথা নাড়াতে থাকলেন সনিয়া। আমি তার দিকে তাকিয়ে খুব স্পষ্ট গলায় বললাম, শুরু থেকে একটি বিষয় নিয়ে আপনারা ভুল করছেন।

আমার স্ত্রী পালায়নি। সে নিখোঁজ হয়েছে। এ কথা বলার পর পরই ওসি সাহেব আমার দিকে তাকালেন। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললেন, অভিযোগে আপনি লিখেছেন দুপুরে কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে আপনি আপনার স্ত্রীকে কোথাও খুজে পাননি। জ্বি।

সন্ধ্যা পেরিয়ে যাওয়ার পরও তার কোন খবরা খবর না পেয়ে আপনি আশেপাশের প্রতিবেশীদের বাসায় খোঁজ করেন। হ্যা ঠিক তাই। আপনার মিসেসের বাপের বাড়িতে খোঁজ নিয়েছেন? না। কেনো? আমার শ্বশুরকুলের কেউ নেই। কোথায় আপনার শ্বশুর বাড়ি? ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাবড়ায়।

লতার পক্ষে সেখানে একা একা চলে যাওয়া সম্ভবপর নয় মটেও। আপনি বাংলাদেশের মানুষ বিয়ে করেছেন ভারতে গিয়ে ? নাকি আপনারা দুজনই ভারতের নাগরিক বাংলাদেশে অবৈধ ভাবে বসবাস করছেন। হাসতে হাসতে ওসি সাহেবকে রিপ্লাই করলাম, না, না, দুজনই বাংলাদেশের নাগরিক। আমি জন্মস্থানসুত্রে বাংলাদেশী এবং আমার স্ত্রী লতা বৈবাহিক সুত্রে বাংলাদেশী। আপনাদের দুজনার ন্যাশনাল আইডি কার্ড থানায় এনে আমাকে দেখিয়ে নিয়ে যাবেন।

আর একটি বিষয়। আমি সন্দেহ করছি, বিয়ের আগে আপনার মিসেসের সাথে কোন ছেলের সম্পর্ক ছিল । না, ছিলনা বলেই আমি জানি। তাহলে বিয়ের পর কারোর সাথে ..... ওসির কথা শেষ হওয়ার আগেই বললাম, না ওসি সাহেব। সে খুব ভাল মেয়ে।

তাকে সন্দেহ করার মত কোন কিছু কখনও আমি দেখিনি বা শুনিনি। সে খুব সহনশীল একটি মেয়ে। তবে কিছুদিন ধরে সে কোন না কোন অসুস্থতায় ভুগছিল। আমার কাছে পরিস্কার করে কিছু বলতোনা। সে একটু চাপা স্বভাবের মেয়ে।

ওসি সাহেব বললেন, সে মানষিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল বলে কি আপনার মনে হয়? সেটি হলেও হতে পারে। তার ভেতরে এক ধরণের বিষণ্নতা কাজ করছিল। আমি তাকে একজন মনোচিকিৎসকের কাছে নেয়ার কথা ভাবছিলাম। কই, অসুস্থতার কোন কথাতো অভিযোগপত্রে আপনি লেখেননি। কর্কশ গলায় বললেন ওসি।

লিখিনি কারণ আমি নিজেও নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। কেননা তাকে কখনও হাসিখুশি, কখনও মনমরা, কখনও খিটখিটে মেজাজ করতে দেখতাম। ভাবতাম, এই মফস্বলে থাকতে থাকতে বোধ হয় তার একঘেয়েমি লেগে যাচ্ছে। ওসি সাহেবকে আর কিছু বললাম না। তিনি নিজেও কিছু জিজ্ঞাসা করলেন না।

শুধু বললেন, লতার মানষিক অসুস্থতার কথা তুলে ধরে নতুন একটি অভিযোগপত্র লিখে দিতে। ডিউটি অফিসার এস আই সনিয়াকে বিষয়টি সাধারণ ডায়রী হিসাবে নথিভুক্ত করতে বললেন। আমি ওসি সাহেবকে সালাম দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালাম। তিনি বললেন, পত্রিকায় ছবিসহ একটি নিখোঁজ বিজ্ঞাপন দিয়ে দিন । হাসপাতালগুলোতে খোঁজ করুণ।

আত্নীয় স্বজনদের বিষয়টি জানিয়ে রাখেন। নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই। তবে স্রেফ পুলিশের ভরষায় বসে থাকলে চলবেনা। (চলবে......) আগামী ১৩ সেপ্টম্বর'২০১৩ শুক্রবার ৩য় পর্ব।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।