"দারিদ্রতা জাদুঘরে সংরক্ষিত হবে। " সম্ভবতঃ ডঃ ইউনুস ঘোষনাটি দেন। গ্রামিন ব্যাংকের মডেল কাজে লাগাতে বিশ্বের তাবৎ হিতাকাংখীরা মাঠে নেমেছেন। যুক্তরাষট্র ভিত্তিক "ফলাফল" নামের একটা সংগঠন, যাদের কাজ মুলতঃ লবিং করা, তাদের জার্মান শাখার আমন্ত্রনে আলোচনা সভায় যোগ দেই।
গ্রামিন ব্যাংকের গ্রামের মানুষ হিসাবে আমি সেখানে শুধু সাক্ষী।
বিশেষজ্ঞগন এর মধ্যে বাংলাদেশ জরিপ করে এসেছেন। ডঃ ইউনুসের ভূয়সী প্রসংশায় আমি বাংগালী হিসাবে খুব তৃপ্ত। বাংলাদেশ সম্পর্কে এত ভাল ভাল কথা এর আগে এদের মূখে কখনো শুনিনি।
একজন অথর্নীতি বিদ বললেন: দেখুন আপনি সে দেশের মানুষ, আপনার কী মনে হয়? দারিদ্রতার কারণ অনেক আছে। আমরা দূরথেকে অভাব দেখে, তা মোচনে অনেক সময় মোটা অংকের টাকা সাহায্য দেই।
কিন্তু পরের বছর আবার সেই, অভাব।
বলাই বাহুল্য: আমরা বিরতির সময় কফির পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে গল্প করছিলাম।
আমার তাৎক্ষনিক ভাবে যা মনে হল:
এক: বেশীর ভাগ মানুষ (এদেশেসর) মনে করে গরীবরা খুব ফাউল (অলস)।
আসলে ঠিক তা নয়; দৈনিক ১২ ঘন্টা কাজ গরীবদের জন্য কোন বিরল ঘটনা নয়। কিন্তু পারিশ্রমিক হিসাবে ধান, চাল, পরনের কাপড় ইত্যাদি পায়।
নগদ অর্থ অনেক সময় হাতে আসে না।
দুই: নিজেদের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় ঝগড়া-বিবাদ।
অনেক সময় তাদের কোন সার্থনেই এমন বিষয় নিয়ে ঝগড়া করে খুন জখম পর্যন্ত করে বসে।
তিন: শিক্ষার অভাব। প্রচলিত শিক্ষা ব্যাবস্থায় আংশ গ্রহণ এদের পক্ষে সম্ভব নয়।
আর এদের শিক্ষার সুযোগ দেয়া যায় এমন কোন ব্যাবস্থা নিয়ে কেউ ভাবছে না। বেশীর ভাগ মানুষ ব্যাপারটি অসম্ভব বলে, এদিকে ভাবতেই চায় না।
সেই মানুষটি আমার কথা খুব বিশ্বাস করলেন বলেই মনে হল।
তিনি বলেন: দেখুন বাইরে থেকে আমরা হয়তো কিছু অর্থ সাহায্য দিতে পারব। কিন্তু একটা দেশের উপযোগী উন্নয়ন কাঠামো সে দেশের মানুষদেরই খুজে বের করতে হবে।
তার কথাটি আমার মনে খুব দাগ কেঁটেছে।
ব্লগিং করতে না পারলে এ কথা কোন দিন কাউকে হয়তো বলতেই পারতাম না! জয়তু ব্লগিং।
ব্লগে অনেকের ইচ্ছাটি টের পাই। তাদের সমাজতন্ত্রের পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা অসম্ভব রকম জ্ঞনগর্ব। একেকজনের এ বিষয়ে পড়ালেখা ঈর্ষা করার মত।
কিন্তু সবাই মনে করেন সমাজতন্ত্র কায়েম হলে শোষন হীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলে দারিদ্রতা নিরক্ষরতা আপনা থেকেই দূর হবে। হয়তো তাদের কথা ঠিক। বড় বড় মনিষী যেমন কমরেড মনিসিং এ স্বপ্ন দেখতে দেখতে জীবনটা পার করে দিয়েছেন।
একটাই মন্ত্র সমাজ তন্ত্র, একটাই যুক্তি শোষন মুক্তি।
কিন্তু সেটা কায়েম করতে আর কত শতাব্দী অপেক্ষা করব?
ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের প্রবক্তারাও মনে করেন সৎ মানুষের শ্বাসন আর আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত হলে সব অনাচার দূর হবে।
তাই নিয়ে আপাততঃ সংগ্রাম চলছে। চলুক।
জনগন বা প্রান্তিক, অনেকে বলেন আম জনতা, তাদের যে কোন একটা বিষয় বুঝাতে হলে অক্ষর জ্ঞানটি অন্ততঃ খুব সুবিধা দিতে পারে। আশা করি এব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই।
এবার আসুন কি করে নিরক্ষরতা দূর করা যায় তা নিয়ে দুটো কথা বলি।
অনেকে মনে করেন! সর্বহারা অধিকার সচেতন নয়। হয়তো ক্ষেত্র বিশেষে কথাটা ঠিক। কিন্তু তারা জানে কখন অধীকার আদায়ের সংগ্রামটি করলে ফল হবে। আপাততঃ কী ভাবে টিকে থাকতে হবে , সেটা অনুধাবন করলে অবাক না হয়ে পারা যায় না। একটা রিক্সাওয়ালা ঠিক জানে কখন বেশী ভাড়া আদায় করার চেষ্টা করতে হবে এবং কখন থাপ্পরটি খেয়েও চুপচাপ কেটে পড়তে হবে।
এদের শিক্ষার আওতায় আনতে হলে;
এক: দেশে প্রতিষ্ঠিত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈশ বিভাগ চালু করতে হবে। আপাততঃ সেচ্ছাসেবক ভিত্তিতে পাঠ দান করতে হবে। শিক্ষকদের একটা প্রশিক্ষনের ব্যাস্থা করতে হবে।
দুই: সরকার যাতে এটাকে তাদের কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত করে তার জন্য চাপ বা লবিং করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের লক্ষ্য হিসাবে রাজনৈতিক ইসু হিসাবে কর্মসূচীতে বিষয়টি অর্ন্তভূক্ত করার জন্য চাপ দিতে হবে।
তিন: ব্লগে অনেক ব্লগার আছেন যারা আর্থিক ব্যাপারটি হিসাব করতে পারবেন। তার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করার চেষ্টা করতে হবে।
পরিশেষে বলব: আমি হয়তঃ দিবা স্বপ্ন দেখছি, আমার দেখায় ভুল থাকতে পারে, সে জন্যই আপনাদের মতামত পরামর্শ একান্ত জরুরী। আসুন আমরা ভাষা দিবসে, "ভাষাটি" দেশের সব মানুষের লেখার ও পড়ার সুযোগ করে দেবার চেষ্টার অঙ্গীর করি!
ধন্যবাদ সবাইকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।