আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাক্ষাৎকারে সমারতœ দিসানায়েক



সমারতœ দিসানায়েক। শ্রীলঙ্কার মানুষ। ১০ম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন। সর্বোপরি তিনি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। নিজেই স্ক্রিপ্ট লেখেন, নিজেই পরিচালনা করেন এবং নিজেই প্রযোজনা করেন।

শুধু চলচ্চিত্রেই নয় থিয়েটার ও টেলিভিশনেও তিনি সমান সরব। তাকে নিয়ে বলতে হলে একটু পেছন থেকেই শুরু করা ভাল। তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তার পেছনের কথা জানতে চেয়েছিলাম। উত্তরটা তার মুখ থেকেই শোনা যাক। ‘আমি দরিদ্র পরিবারের ছেলে।

কেবল মেধার জোরেই এতদূর এসেছি। বরাবরই ভাল ছাত্র বলে সুনাম ছিল। মেডিকেলে পড়াশুনা শেষ করার পর লন্ডনে একটা উচ্চতর ডিগ্রির স্কলারশিপ পেয়ে যাই। দেশে ফিরে এসে ডাক্তারিতে আর মন বসছিল না। ভাবলাম ক্রিয়েটিভ কিছু করা দরকার।

অবশ্য স্কুলজীবন থেকেই লেখালেখি করতামÑকবিতা লিখতাম। থিয়েটার আমাকে খুব টানত। ঝুঁকে পড়লাম সেদিকে। নাটক লেখা থেকে শুরু করে নির্দেশনা, প্রযোজনা, এমনকি অভিনয়ও করতাম। সফলও হই।

কিন্তু মুশকিল হল থিয়েটারের দর্শক যেহেতু অল্প খরচ যা হয় তা ওঠে না। একসময় বেশ ধার-ধেনা হয়ে গেল। আমার পরিবারও আমার উপর ক্ষিপ্ত। ঠিক করলাম, এবার সিনেমা নিয়ে কাজ করব। কিন্তু টাকা? সিদ্ধান্ত নিলাম বিদেশ গিয়ে এ নিয়ে পড়াশুনাও করব আর টাকাও উপার্জন করব।

অস্ট্রেলিয়াতে মেডিকেলের ওপর একটা স্কলারশিপ নিয়ে চলে যাই। পরবর্তী সময়ে ভাল রেজাল্ট করায় সেখানকার শিক্ষক হয়ে যাই। একটানা পনের বছর আমি সিডনি ছিলাম। সবাই ধরে নিয়েছিল আমি আর কোনদিন দেশে ফিরব না। কিন্তু না, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ইউনিভার্সিটি থেকে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশনের ওপর এমএ করে ’৯৭ সালে আমি দেশে ফিরে যাই এবং ছবি বানানো শুরু করি।

আমার প্রথম ছবি সুরিয়া অ্যারানা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। শ্রীলঙ্কার চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এটি রেকর্ড পরিমাণ ব্যাবসা করে। এরপর আমিও একের পর এক ছবি বানাতে থাকি। আমার প্রতিটি ছবিই দেশে বক্স অফিস হিট করেছে এবং প্রতিটি ছবিই এক-একটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। শুধু তাই নয় আমার সব ছবিই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছে।

আমি নিজের গর্ব করার জন্য বলছি না, এটা সত্যি যে শ্রীলঙ্কার চলচ্চিত্রে আমি নতুন বিপ্লব আনতে সমর্থ হয়েছি। ’Ñএই পর্যন্ত বলে সমারতœ তৃপ্তির নিশ্বাস ফেললেন। ফেলারই কথা, যতটুকু বললেন তা শুনে আমরা যারা শ্রোতা ছিলাম সবাই স্তুভিত হয়ে গেছি। সমারতœ বাংলাদেশে এবারই প্রথম নয়। এর আগেও তিনবার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন।

২০০০ সালের চলচ্চিত্র উৎসবে তার ছবিটি এখানে পুরস্কারও জেতে। তবে এবারই প্রথম তিনি চলচ্চিত্র উৎসবে এসেছেন ছবির পরিচালক হিসেবে নয়, প্রযোজক হিসেবে। ছবিরটির নাম সাঙ্কারা। এর পরিচালক প্রসন্ন যায়াকোদি। ছবি প্রযোজনা সম্পর্কে সমারতœ বললেন, আমি আমার কাজ নিয়ে দেশে এবং বিদেশে অনেক প্রশংসা পেয়েছি।

এখন আমি মনে করি আমার সময় এসেছে শ্রীলঙ্কান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির উন্নতির জন্য কিছুৃ করা। আমি তাই সম্ভবনাময় তরুণ ডিরেক্টরদের প্রমোট করার চেষ্টা করছি। আমার নিজের ছবির লাভ দিয়ে আমি প্রসন্ন যায়াকোদির ছবিটি প্রযোজনা করেছি। চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণের ব্যাপারে সমারতœ সবসময়ই আগ্রহী। এতে এশিয়ান ফিল্মমেকাররা আলোচনায় আসার সুযোগ পান বলে তিনি মনে করেন।

তবে এবারের ১০ম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এসে কিছুটা হতাশ তিনি। এবারকার আয়োজন তাকে তেমন টানেনি। তার ভাষায়, এই বছর আগের বছরগুলোর মতো অনেক ছবি প্রদর্শিত হয়নি। এবং ছবি দেখতে আসা দর্শকের সংখ্যাও কম। এই নিয়ে আয়োজকদের সাথে আমি কথা বলেছিলাম, তারা জানালেন, এবার উৎসব আয়োজনে অনাকাক্সিক্ষত ঝামেলায় পড়তে হয়েছে।

তবে যাই হোক, এই ধরনের উৎসব নিয়ে আমি সবসময়ই আশাবাদী। শ্রীলঙ্কার চলচ্চিত্র ও সেখানকার বর্তমান প্রজন্মের এ নিয়ে আগ্রহ সম্পর্কে জানতে চাইলে সমারতœ জানান, আমাদের দেশে কোন ফিল্ম ইনস্টিটিউট নেই এবং প্রয়োজনীয় টেকনিকাল সাপোর্টও নেই। কিছু উদ্যমী তরুণরা বিদেশ থেকে ফিল্মের ওপর পড়াশোনা করে দেশে এসে ফিল্ম বানাচ্ছে এবং সেসব ফিল্ম কান, টরেন্টোর মতো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার জিতছে। ভারতীয় চলচ্চিত্রের তুলনায় আমি তো বলব শ্রীলঙ্কার চলচ্চিত্রের অবস্থা বেশ ভাল। কারণ ভারতে বছরে হাজারের ওপর ছবি তৈরি হয়।

এ থেকে এক-দুটি ছবি আন্তর্জাতিক পুরস্কার হয়তো পায়। আর শ্রীলঙ্কায় বছরে বড়জোড় ২০-২৫টি ছবি তৈরি হয়। কিন্তু এ থেকে প্রতি বছর দুই-তিনটি ছবি অবশ্যই পুরস্কার জেতে। চলচ্চিত্রে এই যে আপনার সফলতা, এর পেছনে রহস্য কী? কেন আপনার ছবি দর্শক-জনপ্রিয়তা পায় বলে আপনার মনে হয়? সমারতœ হেসেই ফেললেন, বললেন, আমি সবসময় আমার ছবিতে সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুগুলি দেখানোর চেষ্টা করি। এতে সহজেই আমার ছবি দর্শকের সাথে কমিউনিকেট করতে পারে, তাদেরকে গভীরভাবে স্পর্শ করে।

এটা শুধু আমার না যে কোন ছবিই জনপ্রিয় হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তাছাড়া আমি চেষ্টা করি দর্শকের মেজাজটা বুঝতে। এগুলোই মনে হয় আমার ছবির জনপ্রিয়তার মূল রহস্য। সমারতœ দিসানায়েকের সাথে কথা হয়েছিল অনেক। কিন্তু সব তো আর লেখা সম্ভব না।

উল্লেখযোগ্য অংশগুলোই তুলে ধরা হল। তার সঙ্গে কথা বলে মুগ্ধ হয়ে গেছি। অসম্ভব মেধাবী একজন মানুষ। শুধু তার দেশ নিয়েই না পুরো দক্ষিণ এশিয়ার চলচ্চিত্র নিয়েই অনেক ভাবনা, অনেক আশাবাদী তিনি। ওহ, শেষ করার আগে সমারতেœর ছবিগুলোর নাম বলে যাই।

সরোজা, পাচি সুরানজনাভি, সুরাইয়া অরানা, সমানালু ঠাটু।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.