সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
মেলা শুরু হওয়ার ১৪ তম দিনে প্রথম মেলায় যাওয়ার ঘটনায় আমি নিজেও বিস্মিত। কিন্তু কী করবো, এই কাজ ওই আকাজ করতে করতে আর মেলায় যাওয়া হয় না। ফুসরৎ পাওয়া গেল অবশেষে ১৪ ফেব্রুয়ারি মোতাবেক ২ রা ফাল্গুন, বৃহস্পতিবার। একটু ভয়ে আছিলাম, না জানি কত ভিড় হয়, শাহবাগ থেকে লাইন দিয়ে ঢুকতে হয় কি না।
ভিড়ের চাপে চ্যাপ্টা হয়ে যাবো কি না। তাই বার বার শামীম আর রনিকে ফোন দিচ্ছিলাম যেতে যেতে। কী ভিড় কীরাম? ওনারা দেখি ভিড় বোঝে না। একজন বলে ভিড় আছে, আরেক জন বলে ভিড় নাই। বুঝলাম ভালোবাসার প্রকোপ মেলায় কম পড়ছে।
তবে খুব কম পড়ছে বলে মনে হয় না। যাইতে যাইতেই অদিতি ফাল্গুনী ফোন দিলো। কোনো কারণে তোর আজকে মেলায় আসার সম্ভাবনা আছে? আমি কইলাম, হ আসতেছি। রওনা হইছি, কারণ বাজারে বাসে উঠার চেষ্টা করতেছি। অদিতি বললো, আয়।
আজকে আমার কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। বাঙলায়নের স্টলে আছি আমি। ওইখানে না পাইলে বহেড়া তলায় লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে। শাহবাগে নেমে বুঝলাম, বাস থেকে যত লোক নামতেছে সবাই মেলাতেই ঢুকবে। ফলে, ভিড় কম না।
মেলায় সিগারেট খাওয়া যায় না বইলা একটা সিগারেট খেয়ে নিলাম আগে ভাগেই। লাইন পাইলাম টিএসসির কাছে।
মেলায় ঢোকার সময় এইবার দেখলাম মোবাইল আর চাবির রিং বের করে ইয়েটা পার হতে হচ্ছে না। ভালই তো! প্রথমেই চোখে পড়লো ধূলা। সন্ধ্যা বেলাতেও যে ধূলা দেখা যায় সে তো অনেক ধূলা।
কিন্তু দিনের ধূলায় মানুষ নাক চেপে ধরলেও রাতের ধূলা কেন জানি অবচেতন মনে খায়। সোজা লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে গিয়া জুটলাম। কেউ নাই কেউ নাই করতে করতে একসময় দেখি শাপলু আর দুপুর মিত্র। বললাম, ল' ঘুরান দিয়া আসি। শাপলু কয়, না ঘুরান দিয়া কাম নাই।
এইহেনেই খাড়া। কি করি? খাড়াইলাম। লিটল ম্যাগাজিন স্টলে এক ফাঁকে এট্টু ঘুরান দিলাম। গাণ্ডীব সম্পাদক তপন বড়ুয়ার গল্পের বই বের হইছে। নতুন শিড়দাঁড়া বের হইছে।
ঘুরতে ঘুরতে দেখি কয়েকজন প্রবাসী লেখক নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করতেছে। ঘুরান দিয়া আমরা এক তর্ক ফেনাইতে যাব এই সুমায় অদিতি আইলো। আমি ওর হাতে ওর প্রথম কবিতার বইটা দেখলাম। প্রচ্ছদ সুন্দর হয়েছে। দাম ৭০ টাকা।
অদিতি কবি শামীম আজাদের লগে পরিচয় করায়া দিল। শামীম আজাদ কইলেন, আমারে জানি কেমনে আগে থিকাই চিনেন উনি। গর্বে বুকটা ফুলে উঠলো।
দূর থেকে দেখলাম আহমেদুর রশিদ আমার দিকে চাইয়া মিটিমিটি হাসে। আমিও সরাম একটা মিটি হাসি দিলাম।
নাসরিন জাহান আমাদের পাশ দিয়া যাইতেছিলেন। আমি কইলাম, নাসরিন দি'। নাসরিনদি' বরাবরের মতোই খোশমেজাজে। আমার সঙ্গে আমার বউ ছিলেন। তার সঙ্গে নাসরিন দি'র পরিচয় করায়া দিলাম।
নাসরিন দি' কয়, বাচ্চা কাচ্চা গুলা বড় হয়ে এখন দেখি বিয়াও করতে শুরু করছে। জিগাইলাম, আপনের কয়টা বই এবার? নাসরিন দি' কয়, কয়েক বছর ধরে তো একটা করেই লিখছি। এবারও একটা। উপন্যাস। অন্যপ্রকাশ থেকে বের হইছে।
দুপুর একটা সিগারেট জোগাড় করছে। এইটাকে অবৈধ পন্থায় খাওয়া দরকার বলে আমরা মসজিদ সংলগ্ন বিডিনিউজের স্লাইড শো'র পাশে গিয়া দাঁড়াইলাম। অগ্নিসংযোগ ও ধূম্রযোগের পর একটা ঘুরান দেয়া শুরু করলাম। সংবেদের স্টলে উঁকি দিয়া দেখলাম পারভেজ হোসেনের বই বারাইছে। বিষকাঁটা।
পারভেজ ভাই ভালো মনে কইরা একটা বই দিল।
বইটা নিয়া অন্যপ্রকাশের স্টলের সামনে দিয়া যাইতেছিলাম। পুরা জায়গাটারে হুমায়ূন ভক্তরা চাপাইয়া দিছে। অন্যপ্রকাশের জন্য খোলা মাঠে অন্য একটা জায়গায় স্টল দেয়া গেলে ভাল হইতো। হুমায়ূন আহমেদও শান্তিতে ভক্ত সংবরণ করতে পারতেন।
কোনো রকমে একটু এগিয়ে দেখা পাইলাম, তাত্ত্বিক ও টিভি ব্যক্তিত্ব আজফার হোসেন ও কবি ও টিভি ব্যক্তিত্ব আলফ্রেড খোকনের। আজফার হোসেনের এই মেলায় তিনটা ইংরেজি তিনটা বাংলা মেটা ছয়টা বই রে হওয়ার কথা। একটাও এখনও আসে নাই। খোকনদার আইছে, দুইটা। ননফিকশন একটা।
কবিতা একট। ঐতিহ্যের সমানে গিয়া উঁকি দিবো, এই সুমায় মৃদুল মাহবুবের ফোন। উনিও কাছাকাছি আছেন। দেখা হইলো। কতদিন পর মৃদৃলরে দেখলাম।
বললাম, আমারে কাগজ প্রকাশনীর স্টল কোথায় বলতে পারেন? উনি কইলেন, হ পারি। সবাই মিলে কাগজের দিকে রওনা দিলাম। একদম একপাশে পড়ছে। লিটল ম্যাগাজিন কর্নারের পিছনে। বাংলা একাডেমীর নতুন ভবনের পাশে।
২০০৬-এ আমার একটা বই বের করছিল কাগজ। সেইটানে গেলাম। আমার বই দেখি, মেলা ছাড়া আর কোথায় পাওয়া যায় না। তাই নিজের বই বিক্রি হইতেছে কি না জিগাইলাম। স্টলে আছিলেন কাগজ প্রকাশনীর কর্মকর্তা ও কবি সফেদ ও কবি জুয়েল।
বললেন, ভাল যাইতেছে। আমি, কইলাম। কেমনে সম্ভব? ওনারা কয় সত্যি। আমি কইলাম, তাইলে আমিও কিছু কপি কিনতে চাই। সামনের দিন আইলে কিনবো।
নিজের বই কেনার মজাই আলাদা।
স্টলগুলা বন্ধ হইতেছে ক্রমে। আমরা লিটল ম্যগাজিন চত্বরে আইসা আবার একটা গোল জমায়েত করলাম। আহমাদ মোস্তফা কামাল আইলেন। ওনার প্রেমের গল্প সংকলন বের হইছে ঐতিহ্য থিকা।
আমি কইলাম, এবার মেলায় তো বোমাটা ফাটাইলো পাপড়ি আপায়। মাওলা পাপড়ি রহমানের আড়াইশো পৃষ্ঠার উপন্যাস বাইর করছে। বাংলার জামদানি শিল্প নিয়া লেখা উপন্যাস। না বয়ন। নব্বই দশকের লেখকেদের মধ্যে পাপড়ি আপাই প্রথম একটা বড় উপন্যাস লিখলেন।
মেলা থেকে বাইর হওয়ার সময় রক্ত দান কর্মসূচির মেয়েরা ধরলো। বললো, রক্ত দিয়া যান। আমি কইলাম, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। তবে ভাই আজইকা না। আরাকদিন।
বের হইতে হইতে দেখি, পাঠসূত্রের স্টলে মাহমুদ সীমান্ত। স্টল বন্ধ হয় হয়। তাড়াহুড়া কইরা ওইখানে মানস চৌধুরী ও সুমন রহমানের বই দেখলাম। বাইর হয়ে প্রথমেই একটা সিগারেট ধরাইলাম।
ফিরতে ফিরতে চিন্তা করলাম, বাংলা একাডেমী না কইলো হেরা সব প্রকাশকদের স্টল বরাদ্দ দিতে পারতেছে না জায়গার অভাবে।
পাড়ার ক্লব থেকে শুরু করে, পোস্টার ছাপানো এনজিও পর্যন্ত সবাইরে স্টল দিল কেমনে। রাজনীতির সোনার ছেলেরাও স্টল পাইছে। মিডিয়াগুলা পাইছে। ওই স্টল গুলাতে স্রেফ আড্ডা চলতেছে। অথচ, শুনা যায় প্রকাশকরা স্টল পাইতেছে না।
আর এই কারণে বাংলা একাডেমী মেলা নিয়া অন্য জায়গায় চইলা যাইতে চায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।