পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল বেরোচ্ছে আগামীকাল রবিবার। আর তার পরের দিন, সোমবারেই দিল্লি যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দিল্লিতে তার কোনও সরকারি কর্মসূচি নেই। তা হলে? তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকেই বলছেন, সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ততক্ষণে পাঁচ রাজ্যে ফলের সূত্র ধরে মানুষের মনের আঁচও মিলে যাবে খানিকটা।
তাদের ধারণা, বেহাল অবস্থাই হবে কংগ্রেসের। অন্যদিকে, নরেন্দ্র মোদীর হাওয়ায় বিজেপি যতটা ভাল ফল আশা করছে, তাও হবে না। ছত্তীসগঢ়ে যেমন বিজেপি বিশেষ সুবিধা করতে পারবে না, তেমনই দিল্লিতে কংগ্রেস পর্যুদস্ত হলেও পদ্ম ফোটা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বরং সেখানে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম-আদমি পার্টির ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা রয়েছে। এই অবস্থায় তৃতীয় শক্তির উত্থানের সম্ভাবনা দেখছেন তৃণমূল নেতৃত্ব, যে ফ্রন্টকে মমতা বর্ণনা করছেন ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ফ্রন্ট হিসেবে।
এই পরিস্থিতিতে তাই দিল্লিতে জনসংযোগ আরও বাড়াতে সফর মমতার। বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে গল্প আড্ডায় যেমন তিনি বুঝে নিতে চাইবেন তাদের মনোভাব, তেমনই ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ফ্রন্টের জন্য প্রাথমিক ভিতও গড়ে রাখতে চাইছেন এর মধ্যে। দলীয় সূত্রের খবর, সংসদের সেন্ট্রাল হলেও যাবেন মমতা। সেখানে বেশ কিছু সময় তার থাকার কথা।
তাদের পাখির চোখ যে এখন দলকে দিল্লির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিয়ে যাওয়া, সেটা এ দিন তৃণমূল যুবার ডাকে সংহতি দিবসের মঞ্চ থেকেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব।
ময়দানে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে এই সভা থেকে দিল্লিতে 'মা-মাটি মানুষের সরকার’ প্রতিষ্ঠার ডাক দেন তৃণমূল যুবার সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই অভিষেক তার বক্তৃতায় স্পষ্ট বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে এ বারের লোকসভা ভোটে তৃণমূল একলাই লড়বে। " অভিষেক যখন এই বক্তৃতা করছেন, তখন অবশ্য মমতা সভায় আসেননি। কিন্তু মঞ্চে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত বক্সীর মতো তৃণমূল নেতারা ছিলেন।
অভিষেকের বক্তব্যের সূত্রে কলকাতার দুটি বড় মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের অনেকেই মমতাকে প্রধানমন্ত্রী করার আবেদন জানান।
তাদের বক্তব্য, বাংলায় মমতা সুশাসন এনেছেন। দেশ বাঁচাতেও তার মতো নেত্রী দরকার। জানুয়ারিতে ব্রিগেডের সভার আগে এ দিনও সমাবেশে ভিড় দেখে অভিষেকরা লোকসভা ভোটের প্রচারের মহড়া দিলেন।
মমতা দিল্লিতে সরকার গড়ার বিষয়ে কোনও কথা বলেননি। বরং তার আধ ঘণ্টার বক্তৃতায় বাবরি ধ্বংসের নিন্দা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিজেপি-র নাম না করলেও বাবরি ধ্বংসের সমালোচনা করেন মমতা। তিনি বলেন, "বাবরি ধ্বংসের আমরা নিন্দা করেছি। করছি। করব। " লোকসভা ভোটের আগে বাবরি ধবংসের ব্যাপারে মমতার প্রতিবাদ কার্যত বিজেপির বিরুদ্ধে সমালোচনার সামিল।
এমনকী, ধর্মকে সামনে রেখে রাজনীতি করারও নিন্দা করেন তিনি।
দলের অনেক নেতাই এখন বলছেন, এ দিন সংহতি সভা থেকে একাধিক বার্তা দিতে চেয়েছে তৃণমূল। প্রথমত, বাবরি ধ্বংসের বার্ষিকীর দিনে সংহতি দিবসের আয়োজন করে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী লড়াইয়ে সিপিএমের জমি কাড়তে চেয়েছেন মমতা। দ্বিতীয়ত, বাবরি ধ্বংসের নিন্দা করে বিজেপি বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদীর থেকে দূরত্ব বজায়ের বার্তাও দিয়েছেন। তৃতীয়ত, জাতীয় স্তরে সম্ভাব্য তৃতীয় ফ্রন্ট থেকে প্রকাশ কারাটদের সরানোর যুদ্ধটাও জোরদার করতে চান তিনি।
তার দিল্লি যাত্রার অন্যতম কারণও সেটা। সিপিএমকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, "৩৪ বছর সুযোগ পেয়েছেন। এখন চুপ থাকুন। কাজ করতে দিন। " এখনও যারা কংগ্রেসে, 'সোনার বাংলা' গড়তে সভা থেকেই তাঁদের তৃণমূলে আসার আহ্বান জানান যুবা-প্রধান অভিষেক, ঘটনাচক্রে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর ভ্রাতুষ্পুত্র।
সূত্র: আনন্দবাজার
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।