আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশজুড়ে সংস্কারের হাওয়া ও বাম নেতাদের ধর্মীয় ফাতওয়া

আল্লাহ আমার রব, সেই রবই আমার সব। দমে-দমে তনু-মনে তাঁরই অনুভব।

দেশে আসলেই সংস্কারের হাওয়া লেগেছে। সংস্কারটা আসলে কোথায় হচ্ছিল এদ্দিন বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল আমার। গতকাল ঢাকার বকশী বাজারে কাদিয়ানীদের ৮৪তম ন্যাশনাল "সালানা জলসা"র দ্বিতীয় দিনের তৃতীয় অধিবেশনে বাম নেতাদের জমজমাট উপস্থিতি আমার চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিল সংস্কারটা আসলে কোথায় হচ্ছে।

সাবাশ বাম নেতারা সাবাশ। সংস্কারের ঠেলায় বামপন্থী নাস্তিক নেতারাও দেখি আজকাল ফতোয়াবাজ মোল্লা বনে গেছেন। কাদিয়ানীদের ঘোষণা অনুযায়ী এটি একটি ধর্মীয় সভা হলেও ঝাঁকে ঝাঁকে বাম নেতারা অতিথি পাখি হিসেবে সেখানে গেলেন। তারা সেখানে অন্তত: তিনটি ঐতিহাসিক কাজ করেছেন। ১।

নিজেরা আজীবনের ধর্ম বিরোধী হয়েও সদলবলে ধর্মীয় অনুস্ঠানে যোগ দিলেন। এর মাধ্যমে ধর্ম বিরোধী সকল নাস্তিকদের নিয়মিত ধর্মীয় অনুস্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য উৎসাহিত করলেন কিনা তা অবশ্য বুঝা গেলনা। জানার চেস্টা করেছিলাম, তাবলীগের ইস্তেমা, বায়তুল মোকাররমের জুমা'র খোতবা, কিংবা খতমে নবুয়তের জলসাও এদের সমানভাবে আকর্ষণ করে কিনা। উত্তর মিলেছে নেগেটিভ। কে যেন একজন হেসে বললেন, এতো অস্থির হচ্ছো কেন, সংস্কারের হাওয়া সবেতো লেগেছে! আমি কিছু বললাম না।

চুপ করে শুনলাম। ২। এসব নেতাদেরই দেখতাম সালাত, কুরআন, ইত্যাদি আরবী শব্দের পরিবর্তে নিয়ে প্রতিদিন বাংলা শব্দ ব্যবহার করার জন্য আমাদের নিয়মিত সবক দেন। কাদিয়ানীদের "সালানা জলসা"য় যোগ দিয়ে কিন্তু একটি বারের জন্যও বললেন না নামটা বদলাও। বাংলা বলো, বাংলায় লিখো।

সংস্কারের হাওয়া আর কাকে বলে! ৩। যারা বক্তৃতা দিলেন ওখানে, দু'একজন বাদে সবাই রাজনৈতিক নেতা। দু'একজন যাদের বাদের কথা বললাম তারা পেশাজীবি হলেও রাজনৈতিক ময়দানে খুব সক্রিয়। এরা সবাই ধর্মীয় সভায় রাজনীতিকদের, রাজনীতিকদের সভায় ধর্মীয় লোকদের উপস্থিতির বিরোধী। কিন্তু কাল দেখলাম এসব রাজনীতিকরা ধর্মীয় সভায় রীতিমতো ফতওয়া দিয়ে গেলেন।

আসুন এবার তাদের ফাতওয়া গুলো মনযোগ সহকারে পড়ি। অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বললেন, "সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হলে সবাইকে বিভিন্ন ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। পাশাপাশি ধর্মীয় অধিকার সংরক্ষণে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। " এক পর্যায়ে তিনি বললেন, "যার যার ধর্ম তার তার, রাষ্ট্র সবার। রাষ্ট্র থাকবে রাষ্ট্রের জায়গায়, ধর্ম থাকবে ধর্মের জায়গায়।

" রাষ্ট্রকে ধর্মীয় অধিকার সংরক্ষণে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে বললেন। আবার বললেন রাষ্ট্রের জায়গায় রাষ্ট্র ,ধর্মের জায়গায় ধর্ম। বুঝা গেলনা রাষ্ট্র যদি ধর্ম নিয়ে চিন্তা নাই করে তাহলে ধর্মীয় অধিকার সংরক্ষণে রাষ্ট্র এগিয়ে আসবে কিভাবে? সংস্কারের ঠেলায় স্ববিরোধি প্রলাপ! আরো একটি স্ববিরোধিতার নমুনা দেখুন, "ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। অথচ একশ্রেণীর মানুষ এই ধর্মকে সঠিকভাবে ব্যবহার না করে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, দেশ ও জাতির কল্যাণে ধর্মকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।

আমি এমন একটি ধর্ম পালন করছি যার শুরু থেকেই রক্তপাত ছিল। ইসলামের ইতিহাসের পাতা উল্টালেই তা দেখা যাবে। " মাইনুদ্দিন খান বাদল শুনে ভালোই লাগলো যে মাইনুদ্দিন খান বাদল ইসলাম ধর্ম পালন করেন! ইসলামের ইতিহাসের শুরু থেকেই রক্তপাত ছিল এটা জেনেও উনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন ইসলাম শান্তির ধর্ম। একশ্রেণীর মানুষ যে ইসলাম ধর্মকে সঠিকভাবে ব্যবহার না করে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে এটাও স্বীকার করলেন। অন্তত: এ জাতীয় লোকদের নেতাদের নাম জানালে আরো খুশি হতাম।

মাইনুদ্দিন খান বাদল একজন আত্মস্বীকৃত নাস্তিক, জানতে খুব ইচ্ছে করে, নাস্তিকতার চর্চা করেও ইসলাম পালন করা যায় কেমনে? উনি ইসলাম ধর্মকে সঠিকভাবে ব্যবহার করেন? নাকি মানুষের মধ্যে কেবল বিভ্রান্তিই ছড়ান? "আহমদিয়াদের প্রতি সংহতি জানানো কর্তব্য মনে করেছি। প্রত্যেকটা মানুষের ধর্ম পালনের অধিকার আছে। প্রত্যেক মানুষের নিজ নিজ ধর্মের স্বাধীনতা থাকা উচিত। আমাদের সংবিধানও এ অধিকার দিয়েছে। তবে তা মানা হয় না।

" মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম নাষ্তিক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম তাহলে ধর্মের অস্তিত্ব, মানুষের জীবনে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা এবং মানুষের ধর্ম পালনের অধিকারকে স্বীকার করেন। সাথে সাথে আমার ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকা উচিত বলেও বিশ্বাস করেন। এরপর আপনার নাস্তিকতার প্রয়োজনীয়তা থাকে কোথায়? "আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সব ধর্মের মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ স্বাধীন হয়েছিল। " সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর ধন্যবাদ মনসুর সাহেব "স্বাধীনতা যুদ্ধে সব ধর্মের মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল" আপনার নেতারা এ কথা স্বীকার না করলেও আপনি স্বীকার করে সৎ সাহসের পরিচয় দিয়েছেন।

এবার কালকের সভায় যেসব মাওলানা (?) ওয়ায়েজ ছিলেন তাদের কয়েকজনের নাম জানা যাক। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন মাওলানা মোবাশ্বের আহমদ কাহলুন। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের নির্বাহী সভাপতি মাঈনুদ্দিন খান বাদল, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য হায়দার আকবর খান রনো, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান আহমদ মনসুর, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক পারভিন হাসান, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শওকত আরা হোসেন, বিডিএস’র নির্বাহী পরিচালক শরিফ এ বাকী, কারিতাস বাংলাদেশের সিস্টার রোজলিন কস্তা ও ফাদার টিম, বিচারপতি কে এম সোবহানের পুত্র কাজী রেহান সোবহান ও আদনান সোবহান প্রমুখ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.